“তোর সুনামধন্য এমপি ভাইকে আমি লাভ লেটার দেয়নি অহি দিয়েছি সার্ফ এক্সেল লেটার বুঝছোস? তাই এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।
এমন অদ্ভুত লেটারের নাম শুনে ভ্রু কুঁচকে আসলো অহির। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে উত্তেজিত কন্ঠে সুধালো,
“তার মানে তুই কি চিঠিতে ভাইয়াকে গালিগালাজ করেছিস?
দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো ইচ্ছের। মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠে,
“তোর কি আমাকে খুঁইসঁটা মহিলা মনে হয়?যে গালিগালাজ করতে যাবো? সব সময় বেশি বুঝোস ক্যা? আগে কথা শুনবি পরে চিল্লাবি।”
“আচ্ছা আচ্ছা বল শুনছি!”
ইচ্ছে চিঠির বিষয়বস্তু খুলে বলল। দুজনের কথা শেষ করতে করতে বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেলো। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। দুজন যাবে দুই রাস্তায়। তাই আর সময় নষ্ট করলো না। একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে দুজনেই রিকশা ডেকে উঠে পড়ল। অহি কপাল থা’প্পড়াইতে থা’প্পড়াইতে বিড়বিড় করতে লাগলো,
“কোথায় ওরে আমি আমার ভাইয়ের বউ বানাইতে চাইলাম। আর এই ফাজিল উল্টে শ’ত্রু হয়ে বসে রইলো ধুর ভাল্লাগে না।”
______________________________________
!!
সু-অপ্রিয়,,
গন্য মান্য যঘন্য থুক্কু স্বনামধন্য নেতাজী!!
নেতাজী বলিলাম জন্য ভাবিবেন না সুভাষ চন্দ্রবসুর সঙ্গে তুলনা করিয়াছি। সে কথা এখন রাখিয়া দিলাম।
তা শরীর মন ভালো তো? এতোক্ষণ ভালো থাকিলেও এখন আর থাকিবে না। যাইহোক পত্রকথনের শুরুতেই বলিয়া রাখি ইহা লাভ লেটার নহে। ইহা একটা সার্ফ এক্সেল লেটার। অথাৎ আপনাকে ধৌঁত করিতে ব্যবহার করিবে। হয়তো ভাবিয়াও পাইবেন না আপনার মতো সুদর্শনী নেতাকে কোন মহামান্য ব্যক্তি এসব বলিতে পারে? আমি হে বৎস আমি।
অনেক হইয়া গিয়াছে এখন রাখি সাধু ভাষা,,
এখন আসি কাজের কথায় রাস্তা ঘাট ঠিক করবেন বলে যে আমার চৌদ্দ গুষ্টির থেকে ভোট নিলেন। এই রাস্তা সারছেন?আমাদের উত্তর দিকের রাস্তার কি অবস্থা জানেন? আজকে রিকশা থেকে পরে গিয়ে আমার কোমর প্রায় ভেঙেই গিয়েছিল। উপরওয়ালার দয়ায় এই যাত্রাতে বেঁচে গেছি। কিন্তু আমি বাঁচলেও আমার আইসক্রিম দুটো বাঁচেনি। তাদের আপনি হ ত্যা করেছেন। আমার কোলে থাকা বিড়ালছানা আহত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রাস্তা ঠিক করবেন নইলে আপনাকে আমি ছাড়বো না। আর রাস্তা ঘাটে কি প্লাস্টিকের ডাস্টবিন দিয়েছেন যে দুদিনই গেলো না চুরি হয়ে গেলো? এই আবার বলেছিলেন বাড়ি বাড়ি এসে দুঃখ ভাগ করে নিবেন! কই পরশু দিন কাদের আলীর বউ আরেক জনের সাথে ভেগে গেলো আপনি তো তার দুঃখ নিতে আসলেন না? মুখে মুখে ফুলের ঝুড়ি কাজের বেলায় লা ত্থি গুড়ি হুহ।
আজকে এতটুকুই থাক। শুনুন আমি যদিও এবার ভোট দিতে পারি নাই। তাতে কি পরেরবার জামাইসহ দিবো। তাই হেলাফেলা করবেন না। আরো একটা কথা এসব বই টই মার্কা বাদ দিয়ে পরের বার হার্পিক মার্কায় ভোটে দাঁড়ান বুঝছেন। এটা নিয়ে কেউ কখনো দাঁড়াননি। সবাই হাসতে হাসতেই ভোট দিয়ে দিবে।
মার্কা যদি হয় হার্পিক
আমি একাই ভোট দিবো
অধর্শতাধিক।
যদিও মিললো না চিললো তো! নিজ দ্বায়িত্বে বুঝে নিবেন।
ইতি…
প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নাগরিকা।
অনুভব এতক্ষণ চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে ছিল। শ্রাবণ ভয়ে ভয়ে পড়া শেষ করে অনুভবের দিকে তাকালো। শুকনো ঢোক গিললো। উপস্থিত সবাই ভড়কানো চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের নতুন এমপিকে এমন চিঠি কে দিলো? হিসাব মিলছে না। অনুভব বেশ শান্ত কণ্ঠে বলল..
-“চিঠি-টা কে দিয়েছে বের কর চিন্টু।
শ্রাবণ থতমত খেয়ে গেলো। সবার সামনে তাকে চিন্টু বলে ডাকবে ভাবেনি সে। তবুও সে দিকে পাত্তা না দিয়ে ছোট ছোট করে বলল..
-“ভাই আপনি এলাকার লোকেদের জন্য যে অভিযোগ বক্স স্থাপন করেছেন ওখানেই কেউ রেখে গেছে । আর আপনি তো বলেছিলেন ওখানে কোনো ক্যামেরা না রাখতে। মানুষ যাতে নির্দ্বিধায় অভিযোগ করতে পারে। আজকেই প্রথম অভিযোগ এসেছে। তাও এমন একটা।
অনুভব কিছু সময়ে ভেবে বলল..
-”উত্তর দিকের রাস্তাটা একবার গিয়ে দেখে আসবি। আর কাদের আলীর খবর নিবি।
শ্রাবণ বোকা বোকা কন্ঠ বলল..
-“ভাই আপনি কি তাকে বউও দিবেন?
অনুভব রাগি চোখে তাকাতেই চুপসে গেলো। মাথা নিচু করে বলল..
-“জ্বি ভাই। এখনই যাবো?
বলেই শ্রাবণ পা বাড়াতেই চাইলো। অনুভব ইশারা করে বোঝালো মিটিং শেষ হোক।
অনুভব গিয়ে তার চেয়ারে বসলো। পায়ের উপর পা তুলে সামনের দিকে তাকালো। সামনে ম্যানেজার বসা। তার বাবার বিশ্বস্ত লোক মতিন সিকদার। মূলত এই দিনটায় অনুভব নিজের লোকদের নিয়ে একটু বসে। এলাকার খোঁজ খবর নেয়।
অনুভব মতিন সিকদারের আপাদমস্তক পরখ করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল..
-“রাস্তা ঘাট ঠিক করার টাকাটা আপনাকে দিয়েছিলাম মতিন সিকদার। কাজ ঠিক মতো করেছিলেন?
মতিন সিকদার ঘাবড়ে গেলো। হঠাৎ তার গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল..
-“স্যার ঠিকই তো আছে। ওই মেয়েটাই মিথ্যা বলছে।
অনুভব আরো গম্ভীর হলো। উপস্থিত তার দলের লোকজন কে চলে যেতে বলল। এক এক করে সবাই বের হয়ে গেলো। অনুভবের মাথায় আবারো নাড়া দিলো চিঠির কথা। টেবিল থেকে একটা কলম তুলে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল..
-“শোনো মেয়ে তুমি ছোট হলেও বড্ড চালাক। একবারে এমপি বরাবর চিঠি দেওয়া সহজ কথা নয়। আমার দুইদিন আগে খোলা অভিযোগ বক্সের প্রথম চিঠি তোমার। অভিযোগ সত্য হলে তুমি বেঁচে গেলে আর মিথ্যা হলে তোমাকে আমি ছাড়বো না। অনুভব মির্জাকে তুমি চিনো না।
!!
!!চুমকি চলেছে একা পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে!!
সুরবিহীন গলায় গান গেয়ে কুটিল হেসে একে অপরের উপর পরছে পাঁচ জন ছেলে।
অহি রিকশা করে বাড়ি যাচ্ছিল। এমন কর্কশ গলায় গান শুনে সামনে তাকালো। পাঁচ জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সচারাচর তাকে কেউ বিরক্ত করার সাহস পায়না। ছেলেগুলো দেখে বিরক্ত হলো। কোচিং থেকে ফিরছিলো। আজকে একটু সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তেমন কেউ নেই। হঠাৎ করে মনের মাঝে ভয় উদয় হলো। শুকনো ঢোক গিলে রিকশাওয়ালা কে বলল তাড়াতাড়ি যেতে। রিকশা চালাক বলল..
-“আফা রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কেমনে যাইমু?
অহি আতংকের সাথে সামনে তাকালো। তবে নিজেকে যতটা পারে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। রিকশা থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই সামনে এসে কেউ বলল…
-“কি গো সুন্দরী একা নাকি!”
-“একা কেনো হবো? রিকশাওয়ালা মামা আর আপনাদের দিয়ে মোট সাত জন।
সবাই বেশ অদ্ভুদ ভাবে তাকালো। এভাবে কোনো মেয়েকে তারা কিছু জিজ্ঞেস করলে ভয় পায়। কিন্তু এই মেয়ে তো মোটেও ভয় পেলো না। উল্টে রিকশা থেকে নেমে তাদের দিকে এগিয়ে আসলো।
অহি ধীর গলায় বলল..
“রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ান আমাকে যেতে হবে।”
“তো যাও ধরে রেখেছে কে তোমায়?”
“আপনারা কিন্তু বেয়াদবি করেছেন জানেন আমি কে?”
-“না গো কোন দেশের রানী তুমি?”
বলেই আবার হাসাহাসি শুরু করলো দুজনেই।
“আমি অনুভব মির্জার বোন। ভাইয়া জানতে পারলে মনে রাখবেন কাউকে ছাড়বে না।”
হঠাৎ সবাই হাসি থামিয়ে দিলো। একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। রঙ্গন এতোক্ষণ গাড়ির মধ্যে শুয়েছিল। মেয়ে মানুষের গলার আওয়াজ বেড়িয়ে আসলো। হাতে থাকা জলন্ত সিগারেট পায়ে ফেলে পিসে দিলো। চোখ তুলে মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিলো। পড়নে কলেজ ড্রেস। দুটো বিনুনি করে কাঁধের দুপাশে রাখা। চোখে গোল গোল দুটো চশমা। মূলত তাদের জিপটা হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে এসে নষ্ট হয়ে গেছে। মেকার ডেকে পাঠিয়েছে। অহি বিরক্ত চোখে তাকালো। সিগারেটের গন্ধ সে সহ্য করতে পারে না। তবে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।
-” নাম কি তোর?
অহি উত্তর দিলো না। তুই শব্দটা তার পছন্দ হয়নি।
-“কি রে বোবা হয়ে গেলি নাকি আমাকে দেখে?
অহি রাগান্বিত কন্ঠে বলল..
“আপনি আমাকে তুই করে কেনো বলেছেন? কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না? বাড়িতে কেউ শিখায়নি?”
সবাই ভয়ে ভয়ে রঙ্গনের দিকে তাকালো। কিন্তু রঙ্গন অদ্ভুত ভাবে হেসে মেয়েটার কথার উত্তর দিলো।
-“না শেখায়নি। তুই শিখাবি নাকি?
-“নাহ। রাস্তা ছাড়ুন আমাকে যেতে হবে।”
-“তুই অনুভব মির্জার বোন?
অহি জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
-‘হ্যাঁ।
সাথে সাথে সবাই কানে আঙুল দিলো। রঙ্গন বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
” তোরা মাইয়া মানুষ এতো চিল্লাস কেন? আওয়াজ নিচে। আর শোন তোর ভাইকে গিয়ে বলবি তার বোনকে আমার মনে ধরেছে। আমার ভবিষ্যত সা’লা বাবুরে রেডি থাকতে বলিস।”
বলেই সবাইকে গাড়ি ঠেলে সরিয়ে দিতে ইশারা করলো। সবাই তাই করলো। অহি এতোক্ষণ রেগে কটমট করতে করতে তাকিয়ে ছিল। কাউকে কিছু না বলে রিকশায় গিয়ে উঠে বসলো। রিকশা চলতে শুরু করলো আপনগতিতে। রঙ্গন সে দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,
” ওই মাইয়ারে সত্যি তোর মনে ধরেছে?
রঙ্গন প্রথমে মুখে কিছু বলল না শুধু হাসলো। পকেটে থেকে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল,
” আসিফ মেয়েটার সব খবরাখবর এনে দিবি। কখন কই যায় কি করে কার সাথে মিশে সব। ”
” ও কিন্তু অনুভব মির্জার বোন।”
-”তো?
-“দুনিয়ায় উল্টে গেলেও ওই মাইয়ার মন তুই পাবি না।
রঙ্গন অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠলো। হঠাৎ হাসি থামিয়ে। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বলে উঠে,
“মাইয়া মানুষের মন কই মাছের জানের মতো। কাঁটা দিবে দুঃখ দিবে আবার জ্বালাও দিবে নিজেও জ্বলবে অপরকেও জ্বলাবে তবুও ক্ষান্ত হবে না। নিজেই আবার ছটফট করবে ধরা দেওয়ার জন্য। আহা৷ বড়ই আজব প্রাণী তাহারা!”
#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি ❤️🩹
#Mishka_Moon
#সূচনা_পর্ব
#চলবে….