মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon {লেখনীতে} ||পর্ব_১১

0
551

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_১১

পরীক্ষা শেষ বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। ভার্সিটিতে চান্স পেতে মেহনত করতে হয়। শফিক সাহেব নিজে যেতে পারবে না তাই অনুভবকে জানায় ঢাকায় কোনো একটা ভালো কোচিং এ তাদের ভর্তি করে দিয়ে আসতে। অনুভব দ্বিমত করেনা কাজের সুত্রে এখন সপ্তাহে পাঁচ দিন তার ঢাকাতেই থাকতে হচ্ছে। সে জানায় আগে কোচিং ঠিক করে তারপর ইচ্ছে আর অহিকে নিয়ে যাবে। সব ঠিক থাকলেও বেঁকে বসে ইচ্ছে সে কিছুতেই দাদাজান দাদিজান কে ছেড়ে যেতে চায়না। শফিক সাহেব পড়াশোনার বিষয় ভীষণ সিরিয়াস। সব দিকে ছাড় থাকলেও এদিকে তিনি কাউকে ছাড় দেননা। তেমন ইচ্ছের এই বায়নাও কানে তুলেননি। বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করতে বলেছেন। কোচিং এ ভর্তির টাকা আর কাগজ পত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য আজকে অনুভবকে ডেকে পাঠিয়েছেন।

অহি যখনই শুনেছে ভাইয়া ইচ্ছেদের বাড়ি যাবে। রেডি হয়ে নিচে এসে বসে আছে। অনুভব নিচে নামতেই অহি হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” আহা! ভাইয়া এতো দেরি করলে কেনো তাড়াতাড়ি চলো।

অনুভব তার দিকে চেয়ে ভ্র নাচিয়ে বলল,
“তুই কোথায় যাবি?

“কেনো আমার সইয়ের বাড়ি।
” তোর যেতে হবে না। আমার ফিরতে রাত হবে।

অহি নাছোড়বান্দার মতো বলল,
” রাতে হবে আমি জানি। দাদাজান তোমাকে পিঠা খাওয়ার দাওয়াতও দিয়েছে। সাথে আমাকেও দিয়েছে না গেলে কষ্ট পাবেন। আর আমি কোনো গুরুজন কে কষ্ট দিতে পারবো না। ”

অনুভব আর কথা বাড়ালো না। তার বোনের জন্য সে সব কিছু এনে দিতে পারবে। এটা তো সাধারণ একটা বিষয়।

ইচ্ছে দাদিজানকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। সে জানে না আজকে তাদের বাড়িতে অনুভব আসবে। শুধু জানে তাদের বাড়িতে আজকে কেউ আসবে। দাদাজান কে বারান্দায় চেয়ারে বসিয়েছে। হাতে আরিফ আজাদের বই।

আনোয়ারা বেগম পিঠা বানাতে বানাতে তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“শুনছ! গরম গরম পিঠা খাইবা?

শফিক সাহেব বইয়ের মধ্যে ডুবে ছিলেন কথাটা শুনতে পায়নি। আরো তিন চারবার ডাকার পরেও যখন শুনলো না। তখন রেগে ইচ্ছেকে বললেন,
” দৌড়ে গিয়ে ওই বইটা নিয়ে নে যাহ।

ইচ্ছে তাই করলো। দাদাজান দাদিজানের এইসব মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া দেখতে তার বেশ লাগে। শফিক সাহেবের থেকে বই কেড়ে নিতে চোখ তুলে তাকালেন। ইচ্ছেকে দেখে বললেন,
” কি রে বই নিলি কেন?

“তোমার বেগম ডাকে শুনছ না কেনো! রেগে গেছে দেখো।

শফিক সাহেব আনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখলেন কথা সত্য চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। তিনি মুচকি হেসে বললেন,
” বিবিজান কিছু কইবা?

“গরম গরম পিঠা..
” বুঝেছি। হ্যাঁ খাবো ইচ্ছে যা নিয়ে আয়।

ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে কিছু পিঠা এনে দিলো তাকে। শফিক সাহেব এক বার মুখে দিতেই কেউ ডাকলো দিলো।

” আসসালামু আলাইকুম স্যার আসব??

শফিক সাহেব উত্তর নিয়ে বললেন,
“তোকে না বলছি এখন দাদাজান ডাকবি স্যার বলিস কেন?

অনুভব হাসলো। বলল,
” ভালো লাগে এটা বলে ডাকতেই।

ইচ্ছে বড় বড় করে তাকালো। তারমানে এই বেডার জন্য এতো আয়োজন। হঠাৎ পেছন থেকে অহি গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। তাকে পেয়ে ইচ্ছে তো মহা খুশি হয়ে গেলো। টেনে ঘরে নিয়ে গেলো। তার ফোন দেখাতে। দাদাজান তাকে নতুন এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছে। কিন্তু ফোন সম্পর্কে খুব একটা কিছু জানে না সে। অহির যেহেতু আগে থেকেই ফোন ছিল এই বিষয়ে ওর অভিজ্ঞতা বেশি। তাই ইচ্ছে তাকে বলল,

“আমার ফোন দেখে বলত কেমন হয়েছে?
” ওয়াও অনেক সুন্দর হয়েছে।

“অহি এবার আমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে। ফেসবুক খুলে দে।
” আচ্ছা দিচ্ছি।

দুজন ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করা শুরু। দুটো এক সাথে বসলে আর কোনো দিকে খেয়াল থাকে না।

শফিক সাহেব অনুভবের সাথে বেশ অনেক দিন পরে গল্প গুজব করলেন। আনোয়ারা বেগমও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। তবে রাত হয়ে যাওয়াতে এবার খাওয়ার জন্য তাড়া দিলেন। ইচ্ছেদেরও ডাক দিলেন। সবাই এসে এক সাথে খেতে বসলো। আনোয়ারা বেগম এটা ওটা দিতে দিতে অনুভব কে বললেন..

” কি গো এমপি মশাই বিয়েসাদী করতা না?

অনুভব আঁড়চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই বুড়ো বয়সে কি বউ জুটবে?

“বুড়ো!! কে বুড়ো! যে তোরে এই কথা কইছে হের চোখ কানা। আর তার কপালেই বুড়ো জামাই জুটবে দেখিস।

অনুভব হাসলো। ইচ্ছে রেগে তাকালো। সে জানে তার দাদিজান এতো কিছু ভেবে বলেনি। কিন্তু এই লোকের হাসি দেখে তার মেজাজ বিগড়ে গেলো। তবে কিছু বলল না। খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই অনুভব তাড়া দিলো। আনোয়ারা বেগম শফিক সাহেবকে তার ঘরে রাখতে গেলেন। অহি বাহিরে হাত ধুচ্ছিল। ইচ্ছে একা একা জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখছিল। অনুভবকে দেখে বলল,

” আপনি তখন হাসলেন কেন?
“তো হাসতে কি মানা ছিল?
” মানা থাকবে কেনো যতখুশি হাসুন। দরকার হলে মাইক এনে হাসুন।

” আমার হাসি দেখে তোমার জ্বলছে কেনো?

ইচ্ছে উত্তর করলো না। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
” তা ব্যাপার কি এমপি মশাই আজকাল আপনাকে
দেখাই যায়না।”

অনুভব তার দিকে তাকালো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কাজে ব্যস্ত থাকি।

” ওহ। আমি আর অহি কোথায় থাকব?
“হোস্টেলে।

” শুনুন আপনি কি, আমার আর অহির সাথে থাকবেন?

অনুভব অবাক কন্ঠে বলল,
” আমি গার্ল হোস্টেলে কেনো থাকতে যাবো?

ইচ্ছে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মেরে বলল,
“ওহ ভুলেই গিয়ে ছিলাম আপনি ছেলে মানুষ।

অনুভব তাকে টিটকারি মারতে ছাড়ল না। ভ্র কুঁচকে বলল,

” দেখো মেয়ে কোনো দিন আবার এটা ভুলে যেওনা
তুমি মেয়ে মানুষ।”

তাদের কথা মাঝেই অহি চলে আসতেই অনুভব বলল,
” অহি এবার যেতে হবে আমাদের।

অহিও বিদায় নিলো সবার থেকে। চলে যাবে এমন সময় ইচ্ছে তার হাতে চুপিচুপি একটা চিঠি দিয়ে বলল,

“তোর খুইঁসটা মার্কা ভাইরে দিবি নিজে খুলবি না।

অহি কিছু বলতে গিয়েও পারলো না অনুভব তাড়া দিলো। চিঠি নিয়েই বেরিয়ে পড়ল।

বড় রাস্তার মোরে এসে অহি গাড়ির জানালা খুলতেই রঙ্গনকে দেখতে পেলো। চায়ের দোকানে বসে সিগারেট টানছে। বিরক্ত হলো কিছুটা। বিড়বিড় করে বলল,
” এই লোকের কি এটা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

“জানালা খুললি কেনো ঠান্ডা বাতাস আসছে বন্ধ কর।

অহি বন্ধ করে। অনুভব হঠাৎ বলল,
” তুই রঙ্গন কে চিনিস?

অহি চমকে তাকালো। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আমতা আমতা করে বলল,
“কেনো ভাইয়া?

” এমনি। না চিনলে চেনার দরকার নেই।

সারা রাস্তা আর কোনো কথা বলল না কেউ। বাড়ি ফিরতেই অহি তার হাতে চিঠি না দিয়ে টুপ করে পকেটের মধ্যে দিয়ে দিলো। রুমে গিয়েই ফোন হাতে নিয়ে রঙ্গন কে কল দিলো। প্রথম বার রিং হতেই ধরলো। সে কিছু বলার আগেই ওপাশে থেকে বলল,

” তুই কি তোর ভাইয়ের সাথে সংসদে যাওয়া শুরু করলি নাকি?

অহি কিছুটা ভড়কে গিয়ে বলল,
” না না ইচ্ছেদের বাড়িতে গেছিলাম।
” ওহ।

“আচ্ছা আপনি সব সময় সিগারেট কেনো খান। মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করে কি শান্তি পান! কি আছে এতে?

“খেয়ে দেখতে পারিস।

অহি চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
আমি একদম পছন্দ করি না সিগারেট খাওয়া।

” কোনটা তোর বেশি অপছন্দ আমার তুই ডাক নাকি সিগারেট?

অহি কিছু সময় ভাবলো। মূলত দুটোই তার অপছন্দ। তাই বলল,
“দুটোই আমার অপছন্দ।

রঙ্গন হেসে বলল,
” আর আমি?

অহি কিছু না ভেবেই বলল,
” আপনিও।

“বেশ ভালো কথা। ঘুমিয়ে পড় রাত হয়ে গেছে।”

অহি কিছু একটা ভেবে বলল,
“আচ্ছা আপনি ভদ্রলোক হয়ে থাকতে পারেন না?

” তো আমি কি অভদ্রলোক?

অহি বিরক্ত হয়ে বলল,
” না আপনি আমার দেখা সেরা ভদ্রলোক।
“ভুল উত্তর।

অহি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“আজকে গান শুনাবেন না?

রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তোরা মাইয়া জাতি মানেই প্যাঁ’চ যুক্ত উন্নত জাতের প্রাণী। কি বলিস নিজেরাও বুঝিস না। যাকে অপছন্দ তার কাছেই গান শুনতে চাস?

অহি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। এই বেডা জন্মের ঘাড় ত্যাড়া। প্রথমদিন নিজেই গান শুনালো। আর আজকে শুনতে চেয়েছে বলে তার দোষ?

!!

আজকে অহি আর ইচ্ছে ঢাকা রওনা দিয়েছে। যাওয়ার আগে দুজনেই বেশ কান্না কাটি করেছে। আপন জনদের ছাড়া থাকতে প্রায় সবারই কম বেশি কষ্ট হয়। দুজনেই প্রতিযোগিতা লাগিয়ে কান্না করছে অনুভব শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে কিছু বলছে না। কিন্তু এক ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন থামলো না। তখন ধমকে বলল,
” ড্রাইভার চাচা গাড়ি ঘুরাও। আমরা বাড়ি ফিরবো।

ব্যস দুজনের কান্না বন্ধ। ইচ্ছের কিছুটা রাগ হলো। কান্না করেও শান্তি নেই। হুট করে অহিকে বলল,
“অহি একটা গান শুনাতো?

অহি বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
“আমার গলায় গান আসে না তুই বল।

” তাহলে একটা কবিতা বল?

“মনে পড়ছে না। তুই বল!

ইচ্ছে যেন এটারই অপেক্ষা করছিল। বলতে শুরু করলো,

” বাড়ির কাছে এমপির বাড়ি, তারপরেতে আমার বাড়ি,
সেই বাড়িতে থাকে আমার জামাইয়ের দাদা দাদি।

#চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here