#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_১২
ইচ্ছে যেন এটারই অপেক্ষা করছিল। বলতে শুরু করলো,
” বাড়ির কাছে এমপির বাড়ি, তারপরেতে আমার বাড়ি,
সেই বাড়িতে থাকে আমার জামাইয়ের দাদা দাদি।”
অনুভব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো এমন কবিতা সে বাপের জীবনে শুনে নাই। অহি একবার ইচ্ছের দিকে তাকাচ্ছে একবার ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে হুট করে হেসে ফেললো। তাকে হাসতে দেখে তাল মিলালো ড্রাইভার নিজেও। এভাবে সারা রাস্তা গল্প গল্প করতে করতে ঢাকা পৌঁছাল তারা। কালকে হোস্টেলে উঠিয়ে দিবে আজকে অনুভবের ফ্ল্যাটে থাকবে দুজন। এমন পরিকল্পনা করেই এসেছে অহি আর অনুভব তবে এ বিষয়ে ইচ্ছে অবগত নয়। গাড়ি এসে থামলো একটা এপার্টমেন্টের সামনে। অনুভব গাড়ি থেকে নেমে যেতে যেতে ওদেরও নামতে বলল। কিছু ব্যাগ পত্র নিজে নিয়ে বাকিগুলো ড্রাইভারকে নিয়ে আসতে বলল।
যেহেতু অহি এখানে আগেও থেকেছে তাই সব কিছুই তার চেনা। ঝটপট গাড়ি থেকে নেমে পড়তে লাগলো। ইচ্ছে তাকে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল,
“এটা কি হোস্টেল?
” না না এটা আমাদের ফ্ল্যাট আজকে এখানেই থাকতে হবে কালকে আমরা হোস্টেলে চলে যাবো।
“এখানে কে থাকে?
” বেশিরভাগ সময় ভাইয়া থাকে।
ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে নেমে পড়ল। সারা রাস্তা বকবক করে মাথা ব্যাথা করছে। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে লিফটে উঠলো। সবার হাত সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল অনুভব। ওরা আসতেই চালু করে দিলো।
“কয় তলায় যাবে?
” সাত তলায়।
“ওহ।
অনুভব কিছু একটা ভেবে বলল,
” তোমাদের নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে!
অহি মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হুম ভীষণ।
” ঠিক আছে আমি তোদের রেখে খাবার নিয়ে আসছি।
ইচ্ছে এতে নাকচ করে বলল,
“না না আমি বাহিরের খাবার খেতে পারিনা। আমি রান্না করবো।
অনুভব আঁড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” অহি তোর সই থেকে শুনে নে পারবে নাকি।
ইচ্ছে অপমানিত বোধ করলো। বলল,
“ও কেনো জিজ্ঞেস করবে আপনি জিজ্ঞেস করুন।
” ঠিক আছে! রান্না জানো?”
“ইয়েস ইচ্ছে সব পারে।
” বেশ পরে কিন্তু আমি আর বাহিরে যাবো না।
“রান্নার জিনিস পত্র আছে তো আবার?
” হুম সব আছে।
কথা বলতে বলতে গন্তব্যে পৌঁছল সবাই। অনুভব আগে গিয়ে চাবি খুলে ভেতরে চলে গেলো। ইচ্ছে রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। এতো সুন্দর পরিপাটি করে রাখা সব কিছু। কে বলবে এখানে একটা ছেলে থাকে??
“অহি তোরা ফ্রেশ হয়ে নে। আমিও ফ্রেশ হতে গেলাম।
অনুভব চলে যেতেই অহি আর ইচ্ছেও একটা রুমে চলে গেলো। ইচ্ছে ফ্রেশ হয়ে আসতে অহি গেলো ফ্রেশ হতে। ইচ্ছে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখছে সব কিছু। উঠে দাঁড়াল হাঁটতে হাঁটতে বেলকনির দিকে গেলো। দোলনা দেখতে পেয়ে তো খুশিতে মনটা নেচে উঠলো চট করে গিয়ে বসে পড়ল। চারপাশে দেখত লাগলো। আশেপাশে শুধু বড় বড় বিল্ডিং আর বিল্ডিং। বেলকনিতে টবে করে বেশ কয়েক রকমের ফুল গাছ লাগানো। চারপাশটা বেশ পরিষ্কার। যে কেউ দেখলেই বুঝবে গাছগুলোতে অনেক যত্ন নেওয়া হয়। টব দেখে একটা কালো রঙের গোলাপ ছিড়ে কানে গুজলো। আজকে প্রথম নিজের চোখে কালো রঙের গোলাপ দেখলো। এর আগে কখনো দেখেনি। ইচ্ছে মনে মনে ভাবলো। এমপি মশাইয়ের তো এতো সময় নেই তাহলে এগুলোর যত্ন কে করে? কে আবার নির্ঘাত কাজের লোক। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে আবার নিজেই উত্তর করছে। তার ভাবনার মাঝেই অহি এসে তার পাশে বসে পড়ল। মেয়েটা সবে গোসল দিয়ে বের হয়েছে। ইচ্ছে তাকে দেখে বলল,
” কি রে এই শীতে গোসল করলি নাকি?
“হ্যাঁ রে বড্ড ক্লান্ত লাগছিল। এখন অনেক আরাম লাগছে।
ইচ্ছে আর কিছু না বলে চারপাশ দেখতে লাগলো। অহি তার আরেকটু কাছাকাছি বসে বলল,
” আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বলত!
ইচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল,
“একটা কথা।
অহি তার মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,
” আগে শোন ফাজিল।
“তুই আমাকে ফাজিল বললি?
” নাহ কই! তুই কেনো ফাজিল হবি আমি ফাজিল।
ইচ্ছে সাথে সাথে বলল,
“নাহ তুইও ফাজিল না তোর ভাই ফাজিল।
অহি চশমাটা টেনে ভালো করে পড়ে নিয়ে বলল,
” তুই সব সময় আমার ভাইয়াকে কেনো টানিস বলত? গাড়ির মধ্যেও কি কবিতা বললি। আবার চিঠি দিস উল্টো পাল্টা তোর ভয় লাগে না।
ইচ্ছে হেসে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। অর্থাৎ তার ভয় লাগে না।
“কেনো লাগে না!?
ইচ্ছে পা উঠিয়ে বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে বলল,
” তার তিনটে কারণ আছে।
“কি কি বল?
” প্রথমত,তোর ভাইকে ছোট থেকেই বেশ অনেকবার দেখেছি। তাই তাকে বাড়ির কাছের মানুষ মানুষ লাগে।
দ্বিতীয়ত, তোর ভাই আমাকে কিছু বলবে না আমি জানি। হেই বেডা তো ভদ্রলোক মাইয়া মানুষরে কিছু বলে না।
তৃতীয়ত, আমি রাজনীতিবিদের পছন্দ করি না। আর চিঠি দেই গ্রামের মানুষের সমস্যা জানিয়ে। এটা আমার দায়িত্বের কাতারে পরে। বুঝেছিস ভদ্রলোকের ভদ্র বইন?”
অহি বড় বড় করে তাকালো। সে আগে ভাবত হুটহাট এমন কাজ করে এই মেয়ে কিন্তু এখন বুঝলো না এই মেয়ে তো পরিকল্পনা করেই সব করে।
!!!
অনুভব রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানাটা আগে সুন্দর করে গুছিয়ে নিলো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। তবে শুয়ে পরার আগে বাড়ি থেকে কিছু জামা কাপড় এনেছে সেগুলো ব্যাগ থেকে বের করে করে বিছানার উপর রাখতে লাগলো। এখানে আগে থেকেই কিছু কাপড় ছিল তবে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। তাই এবার সাথে করে নিয়ে এসেছে। একটা একটা করে কাপড় আলমারিতে তুলে রাখছিল। হঠাৎ পকেট থেকে একটা কাগজ নিচে পরে গেলো। অনুভব ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো কিছু সময় অতঃপর কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। কাগজের ভাজ খুলতেই বুঝে ফেললো এটা কে দিয়েছে। পড়তে শুরু করলো,
সুঅপ্রিম,
এমপি মশাই,
ভালো আছেন তো? অবশ্যই ভালো আছেন নইলে তো আর দাওয়াত খেতে আসতেন না। পরীক্ষার কারণে এতোদিন এলাকা বাসির সেভাবে খবর রাখতে পারিনি। তাই আপনাকে চিঠি দেওয়াও হয়নি। সে যাইহোক আগের কাজ গুলো দেখলাম ঠিকঠাকই করেছেন। চো’রটারেও ধরেছেন। কিন্তু আমার সোনার চেইন? সেটা তো পেলাম না। সবার জিনিস ফেরত দিলেন আমারটা কেনো দিলেন না? এটা কিন্তু ভাড়ি অন্যায়। কালকে আমি স্বপ্নে দেখেছি আপনি আমার সোনার চেইনটা গলায় দিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। এটা আমি কি করে মেনে নেই? তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিবেন। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। আপনার দলের লোকেরাই বেশি রাস্তা ঘাট ময়লা আবর্জনা ফেলে। তাদের একটু টাইট দিয়ে দিবেন।
এবার আসি আরেক কথায় দাদিজান না বুঝে কথাটা বলেছে আপনি হাসলেন কেনো? খুব মজা পেয়েছেন না! শুনুন আমার জামাই হবে একদম নায়কের মতো। বুড়ো টুরো হবে না। ভার্সিটিতে উঠেই বিয়ে করে নিবো। অবশ্য আমার বিয়েতে আপনাকে দাওয়াত দিবো। রান্না বানা করে দিবেন। শুনেছি আপনি নাকি খুব ভালো রান্না জানেন। আরো আছে হাতে হাতে খাবার পরিবেশনও করে দিবেন। সবাই কথা খুশি হবে জানেন? সবাই বলে আহা!! দেখেছো আমাদের এমপি কত দয়াবান। খবর কাগজে বড় বড় হেডলাইন হবে,
” উনিশশো একাত্তর সালে ছিল পাকিস্তানের হানাদার,
এখন আছে আমাদের এমপি অনুভব মির্জার মতো পাকদার।
ইতি,
বুঝেই গেছেন আর বলতে চাচ্ছি না।
!!
চিঠি পড়া শেষ হতেই অনুভব শীতল চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। কিছু সময় পরে উঠে দাঁড়াল। আলমারির এক পাশে রেখে দিলো। বেডে গিয়ে আবার বসবে তার আগেই কিছু পরে যাওয়ার শব্দ পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। রান্না ঘরে যেতেই দেখলো ময়দা রাখা টিনের ডিব্বাটা নিচে পরে আছে। চারিদিকে ময়দার ছড়াছড়ি। অহি আর ইচ্ছে দুজনেই বসে ময়দা তুলছে। তা দেখে অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এখানে কি হচ্ছে?
ইচ্ছে প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে তাকালো। লোকটা কি চোখে কম দেখে নাকি। উঠে দাঁড়িয়ে না তাকিয়েই বলল,
” কাবাডি খেলা হচ্ছে খেলবেন?
অনুভব বেশ শীতল চোখে তাকিয়ে বলল,
“দশ মিনিটের মধ্যে আমার সব কিছু ঠিকঠাক চাই।
টাইম স্টার্ট নাও।
বলেই দুমদাম পা ফেলে চলে গেলো। ড্রয়িংরুমে সোফায় গিয়ে বসলো। এখানে থেকে রান্না ঘরটা পরিষ্কার দেখে যায়। সেদিকে থেকে চোখ সরিয়ে ফোনে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। অনুভব শীতল কণ্ঠে বললেও তার মধ্যে কিছুটা ছিল। ইচ্ছে আবার বসে পড়ল। দুজন মিলে সব কিছু পরিষ্কার করে ফেললো। ইচ্ছে অহিকে জিজ্ঞেস করলো,
” কি খাবি তুই?
“তুই যা বানাবি।
” ঠিক আছে তাহলে পরোটা, অমলেট আর চা চলবে?
“চলবে মানে দৌড়াবে।
ইচ্ছে কাজে লেগে পড়ল। কিছু একটা মনে হতেই অহিকে বলল,
” তোর বদ ভাইয়াটা কি খাবে শুনে আয়।
অহি চেচিয়ে বলল,
“ভাইয়া তুমি কি খাবে?
অনুভব ফোন থেকে মুখ না সরিয়েই বলল,
” যা বানাবি তাই খাবো।
ইচ্ছে পরোটা বেলতে লাগলো। অহি নিজেও বায়না ধরলো সেও বানাবে। ইচ্ছে তার কাছে দিতেই অহি বেলতে গিয়ে প্রথমেই বেলনা ফেলে দিলো। অতঃপর ময়দা দিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার করলো। ইচ্ছে রেগে তার কাছে থেকে বেলনা কেড়ে নিয়ে বলল,
” খু়ঁইসটা মহিলা এটা কি করলি? সামন্য পরোটা বেলতে পারিস না। তোর জামাই কি বিয়ের পরে তোকে কাজ না করিয়ে আলমারিতে তুলে রাখবে নাকি?
অহির চট করে রঙ্গনের কথা মনে পরে গেলো। সেদিনের পরে আর তার সাথে কথা হয়নি। না সে ফোন দিয়েছে না অহি ফোন দিয়েছে। মনে মনে ঠিক করেছে তাকে কল না দিলে সেও দিবে না। বাচ্চাদের মতো ফেইস বানিয়ে বলল,
” আমি নাহয় একটু পারিনা তাই বলে এভাবে বলবি? আমি রান্না পারিনা এটা কি আমার দোষ বল? আমার জামাইয়ের কপালের দোষ।”
ইচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে হাসলো। গাল টেনে বলল,
“ওলে বাচ্চাটা কাঁদে না। দোয়া করি তোর কপালে এমন জামাই জুটুক যে তোকে রান্না করে খাওয়াবে।
তাদের গল্পের মাঝেই তাড়া দিলো অনুভব। ড্রয়িংরুমে থেকে চেচিয়ে বলল,
” আর কয়দিন লাগবে?
ইচ্ছে মুখ ভেঙচি দিয়ে ঝটপট কাজে হাত লাগালো। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে গিয়ে টেবিলে গেলো। খাওয়ার টেবিলে আর কোনো কথা হলো না। পরেরদিন সকাল হতেই অনুভব ওদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আগে কোচিংটা চিনিয়ে দিলো। পরে হোস্টেল। বেশি দূরত্ব না। কোচিং থেকে তাদের হোস্টেলটা বিশ মিনিটের রাস্তা। অনুভব তাদের রেখে যাওয়ার সময় বার বার বলে দিয়েছে কোনো সমস্যা হলে তাকে জানাতে। ইচ্ছে জানায় কোনো সমস্যা হবে না। আর হলে জানাবে। তবে অনুভব কিন্তু তাকে টিটকারি মারতে ছাড়েনি। অহি যখন গাড়ি থেকে ব্যাগ বের করছিল।
অনুভব তখন ইচ্ছের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিল,
“যে কবিতা লিখো। ভবিষ্যতে তো দেখছি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে যাবে। যাইহোক এটা তোমার নিজের বাড়ি নয়। বাঁদরামি কমিয়ে দুজনেই ভদ্র হয়ে থাকবে। শোনো মেয়ে সবাই কিন্তু তোমার সুঅপ্রিয় এমপির মশাইয়ের মতো নয়।
এটাই ছিল শেষ কথা অনুভবের সাথে। তারা এখানে এসেছে দুই সপ্তাহ হলো। অহির সাথে অনুভবের কথা হলেও তার হয়নি। ইচ্ছে আর অহি টু বেডের রুম নিয়েছে। তাই সিনিয়র জুনিয়রের প্যারা নেই। প্রথম প্রথম বাড়ির জন্য প্রচন্ড মন খারাপ লাগত। কয়েকদিন বাড়িতে ফোন দিয়ে কান্না কাটিও করেছে। তবে ধীরে ধীরে খারাপ লাগা ভাবটা কমে গেছে। আপাতত পড়াশোনা নিয়ে দুজনেই ব্যস্ত। কোচিং এ তাদের দুটো ফ্রেন্ড হয়েছে। জিনিয়া আর জিহান যমজ ভাই বোন তারা। দুজনেই বেশ মজার।
অহি আর ইচ্ছে কোচিংয়ের গেইটের সামনে রিকশা থেকে নামাতেই জিনিয়া এসে ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“দোস্ত জানিস আজকে আমি খুব খুশি।
” কেনো রে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে নাকি?
“আরে না আমার ক্রাশ কালকে ট্রফি জিতেছে।
ইচ্ছে কৌতূহল নিয়ে বলল,
” কে রে?
” মুনাওয়ার ফারুকী।
“ওহ কি জিতেছে?
জিনিয়া নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
” আরে বিগ বস রে বিগ বস। তুই দেখিস না? জানিস ওকে আমার কত ভালো লাগে। দেখলেই বিয়ে করতে মন চায়।
ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। সে চিনে না। অহি এতো সময় নিরব থাকলেও এবার কথা বলল। চশমটা ঠিকঠাক মতো পরে নিয়ে বলল,
“কিন্তু ওই বেডার তো ক্যারেক্টরে সমস্যা আছে। আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। যদিও বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। কিন্তু তার তো একটা ছেলে আছে সাথে তিনটে প্রেমিকা।”
“তাতে কি?
ইচ্ছে জিনিয়ার মাথায় একটি চাটি মেরে বলল,
” আমি কনফিউজড এই ব্যাডার ক্যারেক্টার বেশি ঢিল নাকি তোর।”
সবাই হেসে বলল জিহান হাসতে হাসতে বলল,
“দুজনেরই।
ক্লাস শেষ করে ফিরছিল রিকশায় চরে ফিরছিল। এমন সময় ইচ্ছে চেচিয়ে বলল,
” অহি ওই দেখ ওটা তোর সেই বখাটেটা না?
অহি চমকে তাকালো। সেদিকে রঙ্গন রাস্তার মধ্যে বসে আছে। মাথা থেকে র’ক্ত পড়ছে। রিকশাওয়ালা কে সাইডে দাঁড়াতে বলে দুজনেই নেমে পড়ল। রঙ্গন হাত দিয়ে র’ক্ত ঝাড়ছিল। বাইক উল্টে পরে গেছে। ভাগ্যিস রাস্তার সাইডে পরেছে। মাঝখানে পরলে তো আরেক গাড়ির তলে গিয়ে পড়ত। তবে এমনি এমনি পরেনি। কেউ ধাক্কা মেরেছে। তবে কে মেরেছে দেখার সুযোগ পায়নি। হঠাৎ কোনো ছায়া দেখতে পেয়ে উপরে তাকালো। অহিকে এই জায়গায় দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
“তুই এই জায়গায়?
অহি উত্তর করলো না। ইচ্ছে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” ভাইয়া আপনার তো অনেকটা মাথায় লেগেছে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
দৌড়ে গিয়ে রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে একটা অটো ডেকে দিতে বলল। রিকশাওয়ালার তাই করলো। অটোওয়ালা রঙ্গনকে অটোতে তুলে ওদের দুজনকে উঠে বসতে বলল। হসপিটালে নিয়ে গেলো। ডাক্তার ড্রেসিং করে দিতে দিতে অনেক কিছুই বলছিল। এতো কথা রঙ্গনের সহ্য হলো না রেগে বলল,
“তুই ডাক্তার মানুষ তুই সেবা যত্ন করবি এটাই তোর কাজ। ভাষণ দিতে কে বলেছে? ভাষণের দেওয়ার জন্য এমপি মন্ত্রী আছে। ”
ডাক্তার নিজেও রেগে গেলো। অবস্থা বেগতিক দেখে অহি ডাক্তারের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ডাক্তার আংকেল উনার মাথায় একটু সমস্যা আছে কিছু মনে করবেন না।
ডাক্তার বোধহয় কথাটা বিশ্বাস করলো। আবার হাত লাগালো। অহি আবারো নিরবতা পালন করলো। এবার ইচ্ছের একটু সন্দেহ হলো অহিকে একটা গুতা মেরে বলল,
” শোক পালন করছিস নাকি?
অহি মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না আমি ঠিক আছি।
” তোর মতিগতি কিন্তু ভালো নয়।
আর কিছু বলার আগেই ডাক্তার বলল,
“রুগীর সাথে কি আপনারা দুজন এসেছেন?
ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝাতেই বলল,
” ঠিক আছে একজন আসুন আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি।
ইচ্ছে ডাক্তারের পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। অহি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। রঙ্গন তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এদিকে এসে বস।
অহি এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল। বসলো না। রঙ্গন ধমকে বলল বসতে বলেছি। অহি বসে বলল,
কিছু বলবেন?
” তুই ডাক্তারকে কি বললি আমি পাগল?
অহি দাঁতে দাঁত চেপে বলল
“হ্যাঁ। বলেছি এখন কি আমাকে মারবেন?
” নাহ একটা কাজ করে দে।
কি?
” একটা সিগারেট এনে দে
অহির খুব রাগ হলো কত বড় বেয়াদব এই অবস্থায় সিগারেট চায়। থমথমে গলায় বলল,
“না পারবো না। তবে বি”ষ এনে দিতে পারবো খাবেন?
রঙ্গন হাসলো। বলল,
” এখন মনে হচ্ছে তুই অনুভবের বোন।
অহি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“আপনার বাড়ির লোকজনকে খবর দিন। আপনার বেডের পাশে ফোন রাখা আছে। কাচ ভেঙে গেছে দেখুন তো কল দেওয়া যায় কিনা নইলে আমার ফোন নিন। রঙ্গন ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অবস্থা ভালো নয়। তবে বোধহয় কল যাবে। বন্ধুর নাম্বারে কল দিয়ে তাকে আসতে বলল।
অহি অবাক হয়ে বলল,
” বাড়িতে না জানিয়ে তাদেরকে কেনো জানালেন।
“তোর কোনো সমস্যা আছে?
অহি কিছু বলার আগেই ইচ্ছে আসলো। রঙ্গন দুজন কে তাড়া দিয়ে বলল,
” তোদের এখন যাওয়া উচিত। আমার বন্ধুরা আমাকে নিতে আসবে।
ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে কাগজটা তার হাতে দিয়ে অহিকে ইশারা করলো বেরোনোর জন্য। অহি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখন পেছন থেকে রঙ্গন বলল,
” মাইয়া মানুষ বড্ড চালাক। তোকে বকা ভেবেছিলাম তুই তো দেখছি আরো চালাক। তোকে আমার প্রেমে পড়তে বলেছিলাম, উল্টে তুই আমাকে প্রেমে ফেলতে চাচ্ছিস! ভালো হইয়া যা।”
অহি হতভম্ব হয়ে কিছু সময় তার দিকে তাকিয়ে রইলো। পুরো বিষয়টা তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। তাকে থেমে থাকতে দেখে রঙ্গন আবারো ধমকে বলল,
“যাচ্ছিস না কেনো? এখন কি তোকে কোলে করে বের করতে হবে!?।”
#চলবে….