মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon {লেখনীতে} ||পর্ব_১৩

0
570

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_১৩

আজকে কোচিং শেষে কয়েক বন্ধুবান্ধব মিলে ঘুরতে বের হয়েছে। তার অবশ্য একটা কারণ আছে জিহান তাদের ট্রিট দিবে। রিকশা থেকে নেমে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়াল চারজনই। জিহান তাদের দাঁড়াতে দেখে বলল,
“কি রে যাচ্ছিস না কেনো?

ইচ্ছে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তুই আগে আগে যা।

“কেনো?
ইচ্ছের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জিনিয়া বলল,
” যদি তুই ভেগে যাস তখন?

জিহান কথা বাড়ালো না। বিরক্ত নিয়ে ওদের দিকে একবার তাকিয়ে আগে আগে হাঁটতে লাগলো। রেস্টুরেন্টেটা চার তলায় তাই সবাই গিয়ে লিফটে উঠলো। ফোর্থ ফ্লোরে গিয়ে আগেই বেরুলো জিহান। ভেতরে ঢুকবে এমন সময় ইচ্ছে ডাক দিয়ে বলল,
” আরে তুই আগে ঢুকছিস কেন?
“তো কি করবো?

অহি বলল,
” কাঁচের দরজটা ধরে রাখ আগে আমরা ঢুকবো।

জিহান সবার দিকে একবার করে তাকিয়ে বলল,
“বললেই পারিস দরজা খোলার মতো শক্তি নাই। এতো প্যাঁচাতে হবে কেনো?

জিনিয়া মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,
” তোর ওতো ভাবতে হবে না। যা বলছি তাই কর।

সকলে ভেতরে গিয়ে বসে পড়ল। ইচ্ছেরা যে টেবিলে বসেছে তার চারপাশ জুড়ে বেশ কয়টা কাঁপল বসেছে। কেউ হেসে হেসে গল্প করছে। কেউ বা খাইয়ে দিচ্ছে। এসব দেখে ইচ্ছে মুখ ভেঙিয়ে বলল,
“দেখেছিস কত ঢং।

তার কথার দ্বিমত জানিয়ে জিহান বলল,
” ঢং হবে কেনো রে ছেমরি? এটা ভালোবাসা বুঝেছিস।

“না আমার ওতো বোঝার সময় নেই।

জিহান আফসোসের সুরে বলল,
” আহারে!! আমার যদি একটা বউ থাকতো। মাথা তুলে রাখবতাম। কিন্তু কি কপাল জীবনে একটাও সিঙ্গেল মেয়ে পেলাম না।

ইচ্ছে তার কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলল,
” আমি কিন্তু পিওর সিঙ্গেল আছি।

জিহান বড় বড় করে তাকিয়ে হাত দুটো এক সাথে করে বলল,

“মাফ কর বোইন। বান্ধবীরা হচ্ছে উন্নত জাতের প্রাণী এদের বিয়ে খেতে হয়, দেখতে হয়, বিয়ে করতে হয়না। ”

জিহানের কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। সবাই মিলে বিরিয়ানি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। হঠাৎ অহির চোখ গেলো একদম শেষে বসা তার ভাইয়ের দিকে। মাথায় হাজারো প্রশ্ন আসলো। তৎক্ষনাৎ ইচ্ছেকে গুতা মেরে ফিসফিস করে বলল,
“ইচ্ছে দেখ ওটা ভাইয়া না?

অহির কথা শুনে সেদিকে দৃষ্টিপাত করলো ইচ্ছে। হ্যাঁ কথা সত্য শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরে বসে আছে এমপি মশাই। তবে অবাক হলো তার পাশে বসা পায়েল খন্দকারকে দেখে। ইচ্ছে উঠে দাঁড়াল। সবাই এক সাথে বলে উঠলো,
” কোথায় যাচ্ছিস?

“দাঁড়া এমপি মশাই রে একটু জ্বালিয়ে আসি।

অহি মুচকি হেসে সম্মতি দিলো। জিহান আর জিনিয়া সেদিকে তাকিয়ে রইলো। কি হয় দেখার আশায়।

অনুভব কিছু একটা নিয়ে পায়েলের সাথে আলোচনা করছিল। বিষয়টা যে সিরিয়াস তাদের ভাবভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবুও ইচ্ছে পিছু হাঁটল না। এগিয়ে গেলো। এই ব্যাডা তাকে কিছু না বলায় দিনের পর দিন তার সাহস বেড়েই চলেছে। হুট করে গিয়ে অনুভবের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে বলল,
” এমপি মশাই আপনি আমাকে না নিয়েই একা একা রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছেন?

দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। পায়েলের বিষয়টা বুঝতে একটু সময় লাগলো। অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তুমি এখানে?

“কেনো আসতে পারি না?

পায়েল হেসে বলল,
” কেনো পারবে না পিচ্চি? অবশ্যই পারবে। আমি নেতা সাহেবকে বলেছিলাম তোমায় নিয়ে আসতে কিন্তু বলল তুমি নাকি পড়াশোনায় ব্যস্ত?

ইচ্ছে অভিযোগের সুরে বলল,
“আপু এই লোকের কথা একদম বিশ্বাস করবেন না। আমি অলওয়েজ ফ্রী কিন্তু তার তো আমার জন্য কোনো সময়ই নেই।

পায়েল অনুভবের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এসব কি শুনছি নেতা সাহেব?

অনুভব কি বলবে বুঝলো না। চুপ করে রইলো। এ সময় সে মোটেও ইচ্ছেকে আশা করেনি। পায়েল উত্তর না পেয়ে ইচ্ছেকে বলল,
” বুঝলে ইচ্ছে সময় থাকতে তাকে আঁচলে বেঁধে নেও।

ইচ্ছে বুঝতে না পেরে বলল,
“মানে?

” মানে আবার কি সময় থাকতে বিয়ে করে নেও। এখন তোমায় পাত্তা দিচ্ছে না। বিয়ের পরে তুমি পাত্তা না দিয়ে শোধ তুলবে।

ইচ্ছে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। তবুও হাসার চেষ্টা করে বলল,
” বিয়ে করারও সময় নেই তার।

পায়েল কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনুভব তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,

” কে বলেছে সময় নেই? চলো মেয়ে আজকেই তোমায় আমি বিয়ে করবো। তারপর চব্বিশ ঘন্টা শুধু তোমাকেই সময় দিবো।”

ইচ্ছে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” না না আজকে আমি ব্যস্ত অন্য দিন বিয়ে করবো কেমন।

বড় বড় ধাপ ফেলে চলে গেলো। পায়েল সেদিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
” পিচ্চিটা কিন্তু ভীষণ দুষ্ট নেতা সাহেব দেখে শুনে রাখবেন।

অনুভব মুচকি হেসে বলল,
“অবশ্যই। এখন আমরা আবার আলোচনা শুরু করি?
” আচ্ছা। শুরু করুন!

ইচ্ছে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে টেবিলে বসলো। এতো সবাই তাকিয়ে থাকলেও তাদের কোনো কথায় শুনতে পায়নি। শুধু তাকিয়ে ছিল। তাকে এভাবে আসতে দেখে জিনিয়া বলল,
“কি রে তোর কি ওই ব্যাডা রে দেখে হাঁ’পা’নি উঠে গেলো।

” তুই চুপ থাক বেডি।

এবার অহি জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে রে?

ইচ্ছে থমথমে গলায় জবাব দেয়,
” তোর ওই খুঁইসটা ভাই এতো চালাক কেন রে?

“কেনো কি হয়েছে?

ইচ্ছে সব খুলে বলতেই সবাই এক দফা হাসলো। জিহান তো বলেই বসলো,
” যাই বলিস এই ব্যাডা এমপির সাথে কিন্তু তোর সেই জমবে। ”

“তুই চুপ থাক ফাজিল।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার গন্তব্যে চলে গেলো। বিকাল ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামলো বলে। হোস্টেলে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে বাড়িতে কল দিলো বেশ কিছু সময় কথা বলে। দুজনেই পড়তে বসলো। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা আর বাঁদরামির সময় বাঁদরামি। অহি পড়তে পড়তে হঠাৎ বিরক্ত হয়ে বলল,
” ইচ্ছে একটা কবিতা শুনাতো?

ইচ্ছে সাথে সাথে দাঁত কেলিয়ে বলল,

ছোট বেলায় স্যারের বারি খেয়ে শিখেছি জ্যামেতির অঙ্কন
আমার বান্ধবী প্রেমে পরেছে সেই ব্যাডার নাম রঙ্গন। ”

অহি কিছুটা লজ্জাবোধ করলো। তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“চুপ উল্টো পাল্টা কথা বলবি না।

” গরুর হয়েছে তিনটে বাচ্চা,
আমার বান্ধবী পাচ্ছে লজ্জা। ”

অহি বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোর আর ওই ব্যাডা রঙ্গনের কারোরই কোনো লজ্জা সরম নেই। তোরা কি নিজের ভাইবোন নাকি বলত?

ইচ্ছে ভাব নিয়ে বলল,
” শোন লজ্জা না থাকা বড় মনের পরিচয়।

অহি অবাক কন্ঠে সুধায়,
“মানে?

” এই যে যাদের লজ্জা সরম কম থাকে তারা কারো কথায় কিছু মনে করে না। খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে মাফ করে দেয়। আর মাফ করে দেওয়া কিসের লক্ষণ জানিস?

তাকে বলার সুযোগ না দিয়েই অহি বলে,
“বড় মনের।

ইচ্ছে অহির পিঠের ওপর থা’প্পড় মেরে বলে,

” দেখেছিস আমার সাথে থাকতে থাকতে তোর কত
বুদ্ধি হয়েছে। ”

বেশ কিছু সময় গল্প করে ইচ্ছে আবার পড়ায় মন দিলো। কিন্তু অহি সামনে বই নিয়ে মনে করলো সেই দিনের কথা। রঙ্গন হসপিটালে রেখে আসার পর অহি তাকে কল করেছিল।

!!

“হ্যালো শুনছেন?
” বল শুনছি?
“কেমন আছেন?
” খুব ভালো পার্টি করছি।

অহি হতভম্ব হয়ে বলল,
“কিন্তু আপনি তো অসুস্থ হসপিটালে?

রঙ্গন বিরক্ত হয়ে বলল,
” জানিসই হসপিটালে আছি তবুও কেন জিজ্ঞেস করছিস কেমন আছি।

অহি স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
“বলতে চেয়েছি এখন কেমন আছেন?
” যেমন দেখে গিয়েছিস।

“আপনাকে কে মে’রেছিল?
” তোর ভাই।
” অসম্ভব আমার ভাই কাউকে আঘাত করে না।

রঙ্গন হাসলো। বলল,
” এতো বিশ্বাস?

“হুম অবশ্যই।
” ভালো।

অহি কিছু একটা ভেবে বলল,
আচ্ছা একটা কথা বলুন আপনাকে কেউ খু”ন করতে চাইলে আপনি তাকে কি করবেন?

অহির এমন কথায় রঙ্গন হাসে। মাথার উপরে ছাদের পানে চেয়ে স্বভাবসুলভ ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ভাবলেশহীন শীতল কণ্ঠে বলে উঠে,

“খু’নিটা যদি অন্য কেউ হয় তাহলে পরপারে পাঠিয়ে দিবো। আর খু’নিটা যদি তুই হোস! তবে বিয়ে করে রঙ্গনের রঙবিহীন কঠোরে নিয়ে গিয়ে বলবো নে এবার মা’র।”

অহি চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” আমার মনে হয়না আপনি এমন কিছু করতে পারবেন!

রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তোর কি আমাকে ভালো মানুষ মনেহয়?

অহি টিটকারি মেরে বলল,
” আপনাকে তো আমার মানুষই মনে হয়না, ভালো মানুষ
তো দূর।

” বেশ ভালোই চিনেছিস তবে।

অহি কথা না বাড়িয়ে বলল,
“ঠিক আছে দেখে শুনে থাকবেন রাখছি।

” ধরে রেখেছে কে? রাখ।

” আপনি একটা অসহ্যকর লোক জানেন?

“হ্যাঁ জানি।

অহি রেগে বলল,
” আপনার মতো খুঁইসটা লোকের কপালে জীবনেও বউ জুটবে না

রঙ্গন খুব জোরে হেসে উঠে বলল,

” শোন তুই যদি মনে করিস এই কথার বিপরীতে আমি তোকে বলবো। তাতে কি বউ না পেলে তোকে বিয়ে করবো। তাহলে ভুল ভাবছিস। কারণ বউ পাই বা নাই বিয়ে আমি তোকেই করবো। ”

অহি রেগে বলল,
” আপনার সাথে যদি আমি আর জীবনে কথা বলি তাহলে…

রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
তাহলে তোর ভাইয়ের নামটা পাল্টে রাখবো।

অহি আশাহত হয়ে ঘুমন্ত ইচ্ছের দিকে তাকায়। এই দুটো সব সময় তার ভাইকে টানবেই। এই শ’য়তান দুটো তাকে পাগল বানিয়ে পাগলা গারদে না পাঠানো পর্যন্ত বোধহয় শান্তি পাবে না।

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here