#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_১৭||
সকাল হতেই ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলো দুজনে। এখন অপেক্ষা অনুভব আসার। হোস্টেলের নিচে এসে কল দেওয়ার কথা তার। ইচ্ছে আর অহি দুজনেই রেডি হয়ে বসে আছে। এক ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও যখন অনুভব আসছে না। তখন ইচ্ছে রেগে অহির ফোন কেড়ে নিয়ে অনুভব কে কল দিলো। অনুভব মিটিং এ ছিল এ সময় ফোন আসায় বিরক্ত হলো। সাথে তার দলের লোকজন। তবে হাতে নিয়ে যখন দেখলো অহি কল দিয়েছে। এক সাইডে গিয়ে ধরে বলল,
“অহি বনু আজকে যেতে পারবো না। কাজের প্রচুর চাপ। অনেক ব্যস্ত আছে কালকে বাসায় নিয়ে যাবো।”
ইচ্ছে রেগে বলল,
“থাকুন আপনার কাজ নিয়ে আমি আর অহি চললাম। যতসব খুঁইসটা লোকজন। মুডটাই নষ্ট করে দিলো।”
অনুভব রাগলো না থমথমে গলায় বলল,
” অহিকে দাও।
ইচ্ছে দিয়ে দিলো। অনুভব অহিকে বুঝিয়ে বলে ফোন রেখে দিলো। ইচ্ছে রাগে রীতিমতো কাপছে। অহি ভয়েভয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন যে তাকে কি বলে ঠিক নেই। ইচ্ছে আবার তার হাত থেকে ফোন নিয়ে রঙ্গনকে কল দিলো। রঙ্গন ঘুমিয়ে ছিল এ সময় কল আসায় নাম্বার না দেখেই কল কেটে রেখে দিলো। বেশ কয়েকবার আসার পরে বিরক্ত হয়ে সামনে ধরলো। অহির নাম্বার থেকে এতো গুলো কল দেখে ব্যাক করলো। ইচ্ছে সাথে সাথে রিসিভ করেই বলল,
“ভাইয়া ফ্রি আছেন? একটু আসতে পারবেন?
রঙ্গন অবাক হলো। হঠাৎ এই কথা বলছে কেন বুঝলো না। কোনো বিপদে পড়ল না তো? তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করলো,
” কেনো বনু কোনো সমস্যা? কিছু হয়েছে তোরা ঠিক আছিস??
অহি বড় একটা শকট খেলো। রঙ্গন এতো ভালো করে কথা বলতে পারে তার জানা ছিলনা। তবে ইচ্ছে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
” ওই বেডা অনুভব মির্জা আসে নাই। আজকে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই ভদ্রলোক নাকি ব্যস্ত। তাই আজকে আর যাওয়া হবে না। তাই আমরা আপনার সাথে ঘুরতে যাবো নিয়ে যাবেন?”
একদমে কথাগুলো বলে থামলো ইচ্ছে। রঙ্গন হাসলো হাতে থাকা ঘড়ি দেখে নিয়ে বলল,
” আধা ঘণ্টা সময় দে আসছি।
ঠিক আছে।
অহি মাথায় হাত দিয়ে বসে বলল,
“পাগল তুই ভাইয়া দেখে ফেললে কি হবে?
ইচ্ছে রেগে গিয়ে তার চুল টেনে ধরে বলল,
” ফাজিল বেডি যখন দিনরাত ফোনে কথা বলিস তখন তোর ভাই কই থাকে? থাক তোর যাওয়া লাগবে না। আমি জিনিয়া আর জিহান যাবো।”
কিহ ওদের ও নিবি?
হ্যা অবশ্যই। দাঁড়া ওদের রেডি হয়ে রাস্তার মোরে দাঁড়াতে বলি।
ঠিক আছে।
শেষমেষ ইচ্ছের কথাই রাখতে হলো। রঙ্গন নিচে এসে কল দিতেই তারা নেমে পড়ল। রঙ্গন তাদের বলল রিকশায় উঠে পড়তে আগে থেকেই নিয়ে এসেছিল। ইচ্ছে জানায় সামনে আরো দুটো ফ্রেন্ড আছে। রঙ্গন বলল,
“সমস্যা নেই। আগে তোরা উঠে পর। ওদের জন্য সামনে থেকে রিকশা নিয়ে নিবো।
” আচ্ছা। কিন্তু আমরা যাবো কোথায়?
“বই মেলা হচ্ছে যাবি??
ইচ্ছে বলার আগেই অহি বলল,
“যাবো।”
অবশেষে সবাই মিলে বই মেলায় হাজির হলো। সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে বই দেখতে লাগলো। রঙ্গনের কথা জিহানরাও জানে তাই আর কোনো প্রশ্ন করেনি আলাদা করে। তবে এখানেও কাঁপল দেখে বলল,
“দেখছিস এখানেও এরা! এদের জন্য কথাও গিয়ে শান্তি নেই। সব জায়গায় হাজির।”
ইচ্ছে টিটকারি মেরে বলল,
“তাতে তোর কেনো এতো জ্বলে?
আমার তো জ্বলবেই কারণ আমার নেই।
জিনিয়া বলল,
এখন থাকলে কি করতি?
বই কিনে দিতাম।
জিনিয়া সাথে সাথে টেনে ধরে বলল,
” গফ নাই তাতে কি বোন তো আছে। আমাদের তিনজনকে কিনে দিবি চল।
বলেই টানতে টানতে একটা স্টলে নিয়ে গেলো। অহিও যাচ্ছিল তবে তার আগেই রঙ্গন তার সামনে দাঁড়াল। অহি চশমা ঠেলে হাতে নিয়ে বলল,
“কি??
“তোরা যারা চোখে কম দেখিস তারা চশমা ছাড়া কানেও
কম শুনিস নাকি?”
অহি আবার চশমা পরে নিয়ে বলল,
“নাহ। বাজে কথা বলবেন না।
“বেশ বই কিনবি??
“না টাকা আনতে মনে নেই।
“চল আমার সাথে।
“কোথায়?
” চান্দে।
“কিহ!
রঙ্গন আরেক দিকে পা বাড়ালো। অহি দোটানায় পড়ে গেলো কোন দিকে যাবে। রঙ্গন বেশ কিছুটা যাওয়ার পরে যখন দেখলো আরেকজন হদিস নেই। তখন ডাক দিলো,
“কি রে আসবি নাকি পালকি আনতে হবে?
অহি বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
” না না আসছি।”
রঙ্গন তাকে বলল,
” পছন্দ মতো বই নিয়ে নে।”
অহি কিছু না বলে বই দেখতে লাগলো। হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটা নিয়ে কিছু সময় নাড়াচাড়া করে বলল,
“এটা নিবো।
আচ্ছা ইচ্ছের জন্য একটা নে।
অহি আরেকটু খুঁজে খুঁজে আরিফ আজাদের ‘বেলা ফুরবার আগে’ বইটা নিয়ে বলল,
” এই দুটোই থাক শেয়ার করে পড়ব।
ইচ্ছে আর জিনিয়া মিলে জিহানের থেকে বই নিয়ে তবেই ছাড়ল না। জিহান হতাশ সুরে বলল,
“তোদের মতো ভদ্র মহিলাদের সাথে আমি আর কোথাও কোনো দিন যাবো না।”
দুজনেই মুখ ভেঙচি দিয়ে চলে গেলো। অহি ততক্ষণে আগের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। রঙ্গন টাকা মিটিয়ে নিজেও এসে বলল,
“এখন কোথায় যাবি??
ইচ্ছের আগেই জিনিয়া জবাব দেয়,
” আগে কিছু খাবো।
রঙ্গন তাদের নিয়ে একটা সামনে আগালো। একটা ফাস্টফুডের দোকান দেখে সবাই কে গিয়ে বসতে বলল। যে যার মতো খাবার নিলো। অহি জানালো সে কিছু খাবে না। রঙ্গন কিছু সময় ভ্রু কুঁচকে চেয়ে তার পাশে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে ফিসফিস করে বলল,
” কি সমস্যা তোর? এতো ভাব দেখাচ্ছিস কেন? থাপ্পড় কতপ্রকার জানিস? একটা বাড়তি কথা বলালে উদাহরণ সহ দেখিয়ে দিবো।”
অহির প্রচন্ড মন খারাপ হলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। নাক টেনে বলল,
“আপনি খুব খারাপ।
তুই আর তোর ভাই এটা ছাড়া অন্য কোনো শব্দ জানিস না?
অহি চুপ করে রইলো। রঙ্গন তার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” শোন তোর রাগের কারণ আমি হলেও রাগ ভাঙানোর উপায় আমার জানা নেই। তাই অযথা রাগ করে সময় নষ্ট করিস না। আমার এতো ধৈয্য নেই দেখা যাবে তোর রাগ ভাঙাতে গিয়ে দুটে থাপ্পড় দিয়ে বসে আছি। তখন ভালো লাগবে??”
ইচ্ছের এখন ভালো লাগছে। বেশ অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করে সবাই যে যার গন্তব্য চলে গেলো। পরেরদিন অনুভব সময়ের আগেই চলে এসেছে। অহিকে কল দিয়ে নামতে বলেছে এক ঘন্টা হয়ে গেলো তবুও কেউ নামছে না। মূলত ইচ্ছে জেনে বুঝে এমন করছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে আর মিটিমিটি হাসছে। অহি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্ড দেখেছে। এক ঘন্টা পার হতেই ইচ্ছেকে টেনে বের করলো। অতঃপর দুজনেই গিয়ে অনুভব কে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো। অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এতো দেরি হলো কেনো??
ইচ্ছে আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,
” ব্যস্ত ছিলাম।
অহি বিষয়টা সামলাতে বলল,
“ভাইয়া আসলে কিছু জিনিস তোলা হয়েছিল না। এখন চলো তাড়াতাড়ি দেরি হয়ে যাচ্ছে না তোমার?
অনুভব ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে উঠে বসলো। অতঃপরে রওনা দিলো। বেশ কয়েক ঘন্টা জার্নি করে আপনজনদের কাছে ফিরলো। আনোয়ারা বেগম সকাল থেকে ভালো মন্দ রান্না করে বসে আছে। ইচ্ছে বাড়ি ফিরতেই থাকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কান্নাকাটি করলো। শফিক সাহেব তাকে থামাতে ইচ্ছে কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
” ইচ্ছেরানী বলত এখানে সব থেকে ছোট কে??
ইচ্ছে ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“কেনো আমি!!
” আরে ধুর। যে কথায় কথায় কাঁদে সেই হচ্ছে সব থেকে ছোট মানুষ। ”
ইচ্ছে হাসলো। আনোয়ারা বেগম কান্না বন্ধ করে চোখ গরম করে তাকালেন।
!!
সাতদিন পর,
আজকে ইচ্ছেদের ঢাবির রেজাল্ট দিয়েছে। সকাল থেকে সে কি টেনশন দুজনের। অহি তো কয়বার কেঁদেছে ঠিক নেই। তবে রেজাল্ট দিতে দিতে একবারে সন্ধ্যা গিয়ে দিলো। ইচ্ছে তো রেগে কিছু সময় গালমন্দও করলো। এতো দেরি করার কি দরকার ছিল? আরেকটু হলে তো জানটাই বের হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে আশাপূরণ হয়েছে। ভালো নম্বর পেয়েছে। তবুও টেনশন কমলো না যদি আলাদা সাবজেক্ট আসে? তখন তো সব সময় এক সাথে থাকা হবেনা। এসব নিয়েই দুজন ফোনে আলাপ আলোচনা করছিল। হঠাৎ অহির মা অনিমা বেগম ভেতরে এসে অহিকে বললেন,
“একটু ফোনটা দে তো ইচ্ছের সাথে একটু কথা বলবো।
অহি মাথা নাড়িয়ে ফোন দিয়ে দিলো। অনিমা বেগম ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ইচ্ছে সালাম দিলো,
” আসসালামু আলাইকুম আন্টিজান কেমন আছেন?
অনিমা বেগম হাসলেন। সবার সাথে জান লাগানোটা ইচ্ছের ছোট বেলার স্বভাব। তবে এই ডাকটা ইচ্ছের মুখে শুনতে বড্ড ভালো লাগে। অবশেষে উত্তর নিলেন,
” ওয়ালাইকুম আসসলাম। আলহামদুলিল্লাহ একটু ভালো ছিলাম। তবে আমার দুই মেয়ের রেজাল্ট শুনে আরো ভালো আছি। আচ্ছা যে জন্য ফোন নিলাম আগে সেটা বলি! কালকে আমরা সবাই মিলে এক জায়গায় যাবো। তবে অহিকে নিয়ে যাবো না। ও একা একা থাকবে তুই কি একটু আসতে পারবি। তুই থাকলে একটু শান্তি পেতাম।
ইচ্ছে হেসে বলল,
“কেনো পারবো না?? অবশ্যই পারবো। আমি সকাল সকাল পৌঁছে যাবো।
” আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তবে রাখছি।
“আচ্ছা।
অনিমা বেগম ফোন রেখে অহির দিকে তাকালো। অতঃপর দুজনেই হাসলো।
পরেরদিন ইচ্ছে আসলো তবে একটু দেরি করে। এসে দেখলো আগে থেকেই অনিমা বেগম আর অনুভব রেডি হয়ে বসে আছে। সে আসতেই অনিমা বেগম তার দিকে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
” এতো দেরি হলো কেন রে ইচ্ছে মা??
“আর বলো না ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে।
” ও আচ্ছা সমস্যা নেই। এখন তাহলে আমরা বের হই। আমরা না আসা পর্যন্ত কিন্তু বাড়ি যাবি না।
“ঠিক আছে ঠিক আছে যাবো না।
অনিমা বেগম আগে আগে বের হয়ে গেলেন। পিছু পিছু অনুভবও বের হচ্ছিল। ইচ্ছে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,
” কি এমপি মশাই এতো সেজেগুজে কই যাচ্ছেন?
“তুমি জেনে কি করবে?
“এমপি কখন কি করে তা জনগণ তা জানার অধিকার রাখে।”
অনুভব মুচকি হেসে বলল,
“শোনো মেয়ে এমপি কি করতে যাচ্ছে জনগণ তা খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে।”
#চলবে….