মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon {লেখনীতে} ||পর্ব_২০||

0
410

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_২০||

ইচ্ছে সেজেগুজে বসে আছে এদিকে অহির আসার কোনো খবর নেই। বিরক্ত নিয়ে রুমের জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে বারবার উঁকি ঝুঁকি মারছে। কিন্তু না এই মেয়ের কোনো খোঁজ খবর নেই। শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াল। ঠিক করল রাস্তার দিকে একটু এগিয়ে যাবে। দাদাজান আর দাদিজানকে বলে বেরিয়ে পড়ল। কিছু দূর যাওয়ার পরেও চোখে পড়ছে না। মাথায় হাত দিয়ে বলল,

“এই বেডি ম’রে টরে গেলো নাকি আবার! আসে না কেন। নাকি রঙ্গন ভাইয়াকে বিয়ে টিয়ে করে শশুর বাড়ি চলে গেলো। কিন্তু এটা তো কথা ছিল না! কথা ছিল সে আমাকে দাওয়াত দিবে।”

ইচ্ছে এসব আজগুবি কথা বিড়বিড় করতে করতে হাঁটছিল হঠাৎ মনে পড়ল ফোনের কথা। নিজের মাথায় নিজেই একটা চাঁটি মেরে ফোন বের করতে লাগলো। এতো গাধা সে কবে হলো? একটা ফোন দিলেই তো অনেক আগেই সমাধান হয়ে যেতো। কাঁধে থেকে ব্যাগ নামিয়ে ফোন বের করল। অতঃপর কল দিলো। অহি রিসিভ করল না কল কেটে দিয়ে নিজে ব্যাক করল। ইচ্ছে রিসিভ করেই ঝাড়ি মারলো,

“ফাজিল বেডি কি সমস্যা তোর? ম’রে টরে গেছিস নাকি? এতো সময় লাগে আসতে?”

অহি যেনো প্রস্তুত ছিল এসব শোনার। তাই বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
” রাগ করিস না। এইতো চলে এসেছি। আসলে আমি গাড়ি আনি নাই রিকশায় আসছি।”

“ও আচ্ছা। বুঝেছি।

” এইতো তোকে দেখতে পেয়েছি। ওখানেই দাঁড়া।

ইচ্ছে ফোন কেটে সামনে তাকাতেই দেখলো অহি হাত নাড়িয়ে তাকে ইশারা করছে। মিনিটের মধ্যে রিকশাটা তার সামনে এসে দাঁড়াল। ইচ্ছে নিজেও উঠে পড়ল। অহি তাকে এটা ওটা বলে সাতপাঁচ বুঝ দিতে থাকলো তার কেনো দেরি হয়েছে। মূলত তারা কাল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাবে। সাবজেক্ট চয়েসের রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু দিন হয়ে গেছে। ভর্তির ডেটও দিয়েছে। অনুভব দুই দিন একটু ফ্রি আছে তাই এই সুযোগে ভর্তি করে দিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে। কাল সকাল সকাল বের হতে হবে। যেহুতু ইচ্ছেদের বাড়ি উল্টো রাস্তায় তাই অনিমা বেগম আজকে রাতটা তাদের বাড়িতে থাকতে বলেছে। দাদাজান অনুমতি দেওয়াতে ইচ্ছে আর কোনো আপত্তি করেনি।

দুজন রিকশায় বসে বকবক করছিল হঠাৎ রিকশা থেমে যাওয়াতে দুজনেই সামনে তাকালো। রঙ্গনকে এ সময়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনেই অবাক হলো। অহি কিছু বলার আগেই ইচ্ছে বলল, ” আরে ভাইয়া আপনি?”

রঙ্গন হালকা হেসে বলল,”হুম আমি। নেমে পড় দুজন কথা আছে।

অহি আর ইচ্ছে একে অপরের দিকে তাকালো। অহি মাথা নেড়ে না বোঝালো। ইচ্ছে রঙ্গনের দিকে তাকাতেই সে নামতে ইশারা করল। ইচ্ছে কনফিউজড হয়ে গেলো কি করবে। তাই জিজ্ঞেস করল,
” ভাইয়া নামবো কেনো?”

রঙ্গন আঁড়চোখে অহির দিকে তাকিয়ে বলল, কেউ তোদের দেখতে চেয়েছে যাবি?

“কে??

“আমার দাদিমা। দেখা করবি?

ইচ্ছে কিছু সময় ভেবে নেমে পড়ল। সাথে অহিকেও টেনে নামালো। বেচারি এখনো চুপ করে আছে। আসলে সেদিনের পরে আর অহি সত্যি করেই রঙ্গনকে কল দেইনি। সে দিলেও রিসিভ করেনি। রঙ্গন ভাড়া মিটিয়ে দুজনকে ইশারা করে তারা পিছু নিতে বলল। ইচ্ছে তাই করল। তার কেনো জানি না রঙ্গনকে খারাপ লাগে না। ওকে যখন তুই বলে মনেহয় বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। কিন্তু একটা অদ্ভুত বিষয় রঙ্গনকে সে এর আগে কখনো দেখেনি। এ বিষয়ে অবশ্য রঙ্গন নিজেই তাকে ক্লিয়ার করে দিয়েছে সে ছোট থেকেই ঢাকা থাকে।

রাস্তার অন্য পাশে রঙ্গন জিপ রেখে গিয়ে ছিল। এপাশে আসতেই বলল, ” দুজনই উঠে বস।

আমরা কি আপনার বাসায় যাবো এখন?
“হুম।

অহি বেঁকে বসলো। বলল,
” ইচ্ছে তোর যেতে হলে যা। আমি যাবো না। চললাম বাড়ি।

অহি চলে যাওয়ার আগেই রঙ্গন তার সামনে এসে দাঁড়াল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” শোন তোর ভাইকে কোলে তোলার অভ্যাসও আমার আছে আর তুই তো এতটুকু। কথা না বাড়িয়ে উঠে পড় সন্ধ্যার আগে বাড়ি পৌঁছে দিবো।”

অহি বড় বড় করে তাকালো। কি বলে এই লোক? না না এরে বিশ্বাস নাই। উঠাতেও পারে। মুখ ফুলিয়ে জিপের মধ্যে উঠে বসলো। ইচ্ছে মুখ চেপে হাসছে। রঙ্গন নিজেও হাসলো। সিটি বাজাতে বাজাতে জিপ টান দিলো।”

জিপ থামলো একটা বড় বাড়ির সামনে। উপরে বড় বড় করে লেখা ” কুঁঞ্জ ভিলা” ইচ্ছে আগেই বের হলো। এতো বড় বাড়ি দেখে সে অবাক হলো। হওয়ার অবশ্য কারণ আছে এটা অনুভবদের থেকেও অনেক বড়। অহি জানে পাঠান বংশের লোকেরা বড়লোক হয়। তবে রঙ্গনের বেশভূষা দেখে এতোটাও ভাবেনি। তাদের ধ্যান ভাঙলো রঙ্গনের ডাকে।

“কি রে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন আয়?

ইচ্ছে শখ করে চলে তো আসলো। এখন তার নিজেরও একটু কেমন যেনো লাগছে। তবে সে বুঝতে পেরেছে রঙ্গন হয়তো তার পরিবারকে অহিকে দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে। কিন্তু রঙ্গন আসলে কি জন্য এনেছে এটা একমাত্র সেই বলতে পারবে।

ইশতিয়াক পাঠান বাসায় নেই। তিনি তার মাকে নিয়ে চেকআপ করাতে নিয়ে গেছেন। রঙ্গন মূলত ইশতিয়াক পাঠানের ফুপি শর্মিলা বেগমের সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছেন। তার দাদার বোন সম্পর্কে তার দাদি হয়। ছোট থেকেই এই বাড়িতে এক মাত্র তার সাথেই একটু ভালো সম্পর্ক রঙ্গনের। সে ইচ্ছে এবং অহি দুজনের কথাই শর্মিলা বেগমের কাছে বলেছে। তখনই তিনি দুজনেই সাথে দেখা করতে চান। আর এই কারণেই তাদের এখানে নিয়ে আসা। রঙ্গন একটা বড় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঠকঠক শব্দ করল। শর্মিলা বেগম শুয়ে ছিলেন। এমন শব্দে তার মুখে হাসি ফুটলো। উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে প্রাণহীন কন্ঠে বললেন, আয়!!

রঙ্গন ভেতরে ঢুকে তাকে আগে উঠে বসতে সাহায্য করল। অতঃপর পাশে বসে। ওদের দুজনকে এগিয়ে এসে বসতে বলল। শর্মিলা বেগম ইচ্ছের দিকে একধীনে তাকিয়ে রইল। মুখের ফেইস দেখেই সে চিনতে পরেছে। রঙ্গন হয়েছে তার অনুপমার মতো আর ইচ্ছে হয়েছে ইশতিয়াক পাঠানের মতো। রঙ্গন দুজনের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিলো। তবুও তিনি বার বার ইচ্ছের দিকে তাকাচ্ছিলেন। অহি সেদিকে খেয়াল করেনি। সে এখনো মুখ ফুলিয়ে বসে রয়েছে। বেশ কিছু সময় কথা বার্তা বলে রঙ্গন উঠে দাঁড়াল। বেশি দেরি হলে অনুভব সন্দেহ করবে। আর দেরি করল না দুজনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। অহিরা আজকেই প্রথম জানলো রঙ্গনের মা নেই। এটা নিয়ে অহির অনেক মন খারাপ হলো। তার প্রিয় দুটো মানুষেরই মা নেই। সে তো মা ছাড়া কিছু কল্পনায় করতে পারে না। তাহলে এই দুটো মানুষ কি করে কল্পনা করে? ইচ্ছের মা বাবা আছে কিনা সে কিছু জানে না। শুধু সে নয় ইচ্ছে নিজেও জানে না। ছোট বেলায় একবার শফিক সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু তার রাম ধমক খেয়ে আর কখনো সাহস করে উঠেনি। আসলে তার দাদাজান আর দাদিজান তাকে এতো বেশি ভালোবাসে সে কখনো এই অভাবটা হয়তো বুঝতে পারেনি। এটা অহির ধারণা।

বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নামিয়ে দিতেই দুজনে চলে যাচ্ছিল। রঙ্গন পেছন থেকে অহিকে ডাক দিলো,
“অহি!

অহি পেছনে না ঘুরেই দাঁড়িয়ে পড়ল। ইচ্ছে কিছুটা এগিয়ে গেলো। রঙ্গন অহির সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো। গিফটের প্যাকেট দিয়ে মোড়ানো। অহি হাত না নিয়েই বলল, ” কি এটা?
“আগে ধর পরে বলছি!
” না নিবো না।

“দেখ রাগাস না। আমি একবারে বেশি ভালো করে বলতে পারিনা।”

অহি হাত বাড়িয়ে নিলো। রঙ্গন চলে যেতে ইশারা করল। অহি কিছুটা দূরে যেতেই রঙ্গন মাথা চুলকিয়ে বলল,
“মিস করি তোকে, কল করলে ধরবি।”

অহি বড় বড় করে তাকিয়ে পেছন ঘুরলো। কিন্তু না কেউ নেই। এই বেডা আজকেকেউ প্রথম এতো নরম কন্ঠে কিছু বলল তাকে।

ইচ্ছে দূরে দাঁড়িয়ে তাকে তাড়া দিলো। বাড়ির ভেতরে আসতেই অনুভবের সাথে দেখা হলো। সে মুখ গোমড়া করে বসে ছিল। ওদের আসতে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“অহি তুই রুমে যা তোর সইয়ের সাথে আমার কথা আছে।”

ইচ্ছে অহির হাত চেপে ধরার আগেই সে চলে গেলো। ইচ্ছে কিছুটা ভয় ভয়ে তাকালো। এই বেডা তাকে কি বলতে চাচ্ছে!
অনুভব ইচ্ছের মতিগতি দেখে থমথমে গলায় বলল,

“শোনো মেয়ে আমি বাঘ নই যে তোমায় খেয়ে ফেলবো। যা ভাবছো সে বিষয়ে এখন আমি কিছু বলব না। ভয় পাবার দরকার নেই। তোমার সাথে হিসাব আমি পরে মিলাবো। আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দরকার এসো আমার সাথে।”

#চলবে….

||#নোট: একটু অগোছালো লাগতে পারে।আমি অসুস্থ তাই দুইদিন গল্প দিতে পারি নাই। বলে দিয়েছিলাম তবুও অনেকে জিজ্ঞেস করেছেন তাই আবার বলে দিলাম। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তবে আপনারা অপেক্ষা করেন তাই ছোট হলেও গল্প দিবো ঠিক করেছি। তবুও যদি বলেন বড় পর্ব দিতে তাহলে একদিন পর পর দিবো। এখন আপনারা যেটা বলবেন! ছোট নাকি বড়? ||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here