#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_৩||
” এমন সময়ে অহি বা ইচ্ছে কেউই অনুভবকে আশা করেনি। দুজনেই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এখন কি বলা উচিত তাই ভাবছে। হঠাৎ ইচ্ছের ফোন বেজে উঠলো। সাথে সাথে রিসিভ করে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো। অনুভব এমন একটা কথা শুনেছে যার কি রিয়াকশন দেওয়া উচিত তাই ভাবছিলো। ফোন বাজার শব্দে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এখনকার দিনে সচারাচর কারো হাতে বাটন ফোন দেখা
যায় না। অহি এতোক্ষণে কথা সাজিয়ে নিয়ে মুখ খুললো,
“ভাইয়া তুমি ওকে কিছু বলো না। ওর কোনো দোষ নেই। হয়েছে কি….
” সমস্যা নেই থাক আসছি।
বলেই বেরিয়ে গেলো। মূলত তখন তাদের সাথে কথা বলতে পারেনি জন্য এখন বলতে এসেছিল। তবে এরকম অদ্ভুত কথার সম্মুখীন বানা হবে ভাবেনি। বলে তো আসলো রাজনীতিতে সবাই ভাই। তবে মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,
“আমার ছেলে আমাকে ভাই ডাকলে কেমন শুনাবে!!
হঠাৎ কেউ ডাক দিতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে কাজে লেগে পড়ল। একটু পরে খেতে দিতে হবে সবাইকে। কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখা অনুভবের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
“কি রে তোর ভাই গেছে?”
-“হুম গেছে বেরিয়ে আয়।
অহির কথায় গুডিগুডি পায়ে বেরিয়ে আসলো ইচ্ছে। সোজা গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে বলল,
“এই জন্যই তোর ওই খুঁইসঁটা ভাইটারে আমার পছন্দ না। কি দরকার ছিল দুটো মাইয়ার মাঝে এসে তার হাতির মতো নাকটা ঢুকিয়ে কথা বলার! যতসব।”
অহি চশমটা ঠিক করতে করতে ইচ্ছের পাশে গিয়ে বসলো। এখন কিছু বললেই ইচ্ছে রেগে যাবে তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে রঙ্গনের কথা বলল। সব কিছু শুনে ইচ্ছে হাত তালি দিতে দিতে বলল,
“ফাটিয়ে দিয়েছিস। এই না হলে আমার সই। তবে যাই বলিস ব্যাডার সাহস কিন্তু কম না এমপির বোনের সাথে লাইন মারতে চায়। সে যাইহোক আবার বিরক্ত করলে বললি মেরে হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে দিবো।”
-“তুই ওদের সাথে পারবি?
-“অবশ্যই পারবো। সব সময় গায়ের জোর দিয়ে হয়না বুঝছিস। বুদ্ধি লাগে বুদ্ধি।
-“তা কি করবি শুনি?
-“কঁচু খাইয়ে মেরে দিবো।
-“থাক এতো বড় উপকার তোর করতে হবে না।
-“আচ্ছা তবে আমারে ওই সাহসী বখাটেটারে দেখাস তো।
অহি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,
“সাহস না ছাই। বখাটে গুন্ডা কোথাকার।
” তাও তোর ভাইয়ের চেয়ে ভালো আছে।”
ইচ্ছের কথা শুনে হতাশ হলো অহি। তার ভাইয়ের ওপরে এই মাইয়ার এতো রাগ কেনো মাথায় ঢুকে না। ছোট ছোট করে বলল,
-“বখাটে আবার ভালো হয় কেমনে?
-“শোন বখাটেরা যা করে সবার সামনে। আর এইসব রাজনীতিবিদ যা করে রাতে আড়ালে অন্ধকারের আবডালে। ধরি মাছ না ছুঁই পানি হুহ।
অহি অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। তার চাওয়া বোধহয় কোনো দিনই পূরণ হবে না। কানের কাছে সারাদিন ভাইয়ের নামে প্রসঙ্গ করেও এই মেয়ের মন গলাতে পারেনি। মাঝে মাঝে তো এটাও বলে,
“তোর ভাইয়ের মাঝে কোনো খুঁ’ত নেই বলেই আমার তাকে পছন্দ নয়। একটা মানুষ এতোটা পারফেক্ট কেমনে হয়? তার কোনো সমস্যা নেই বলেই আমার সমস্যা।
তাদের গল্পের মাঝেই নিচে থেকে ডাক পড়ল। দুজনকেই খেতে ডাকছেন তনিমা বেগম। মায়ের ডাক শুনেই ইচ্ছেকে তাড়াহুড়ো করে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। অনিমা বেগম দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
” তোদের বাহিরে গিয়ে খেতে হবে না। এখানে বসেই খেয়ে নে। ”
দুজনেই মাথা নাড়িয়ে বসে পড়ল। তনিমা সব কিছু এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-“আমার কাজ আছে যাচ্ছি। তোরা এখানে থেকে সব নিয়ে নিয়ে খাবি। আর ইচ্ছে মা একদম লজ্জা পাবি না কিন্তু বুঝতে পেরেছিস।
কথার উত্তরের বিনিময়ে ইচ্ছে মুচকি হাসলো। খাওয়া শুরু করলো দুজনেই। ইচ্ছে খেতে খেতে বলল,
“রান্নাটা কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে।
-” ঠিক বলেছিস।
-“তবে একটা কথা কি জানিস তোর ভাই কিন্তু এসব ঘু’ষ দিচ্ছে।
-“মানে?
-“এই যে ভোট দেওয়াতে সবাইকে ঘু’ষ হিসেবে গরু খাওয়াচ্ছে।
অহি খাওয়া বাদ দিয়ে। বাম হাত দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই থা’প্পড় মারলো। এই মেয়ে যে কিভাবে কিভাবে তার ভাইয়ের দোষ বের করে তা নিয়ে হতাশ।
!!
কলেজ শেষ করে ইচ্ছে আর অহি কোচিং এ যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠে বসলো। তাদের ক্লাস হয় ২টায়। আর কোচিং শুরু হয় ২.৩০টায়। এই আধাঘন্টা বাড়ি যেতে যেতে রিকশাতেই কেটে যায়। তাই আর কেউ বাড়িতে যায়না। কলেজ থেকে সোজা কোচিং। আর কোচিং শেষ হলে বাড়ি। ইচ্ছে বকবক করছে আর অহি মনোযোগ সহকারে শুনছে। মূলত সে কথা বলার থেকে শুনতে বেশি পছন্দ করে। আর ইচ্ছে বলতে বেশি পছন্দ করে। হঠাৎ রিকশা থেমে যেতেই ইচ্ছে জিজ্ঞেস করলো,
-“মামা কি হলো?”
-” রাস্তায় মারামারি লাগছে মামা।
দুজনেই সামনে তাকালো। অহি মারামারি করা লোককে দেখে চোখ মুখ কুঁচকালো। ইচ্ছে তা দেখে বেশ আগ্রহ নিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
“মামা আরেকটু রিকশাটা এগিয়ে নিয়ে যান। মারামারিটা ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না।”
রিকশাওয়ালা বেশ অদ্ভুত ভাবে পেছনে তাকালো। ইচ্ছে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
“কি হলো চলেন।
রঙ্গন মা’রতে মা’রতে ক্লান্ত হয়ে সরে দাঁড়াল। সাথে সাথে একজন দৌড়ে গিয়ে একটা চেয়ার এনে দিলো তাকে। পায়ের উপর পা তুলে বসলো। কি সব বলছে তা অহি বা ইচ্ছে কেউই শুনতে পাচ্ছে না। ইচ্ছে কথা শুনতে না পেয়ে বলল,
” এই ব্যাডা এতো ধীরে কথা কেনো বলছে? মারামারি করতে গিয়ে গলার ভলিউম কমে গেলো নাকি রে?
অহি বিরক্ত ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলল,
“তা ওই বখাটেকে গিয়ে জিগা। আমি কি করে বলবো।
ইচ্ছে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” এটাই কি তোর সেই রঙ্গন পা’ঠা?
অহি মাথার উপর একটা চাটি মেরে বলল,
– “আমার মানে কি?
-” আরে খেপিস কেন এই কি সেই নাকি তাই বলছিলাম।
-“হ্যাঁ।
রঙ্গনের হঠাৎ রিকশায় বসে থাকা মেয়ে দুটির দিকে চোখ গেলো। মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে আসলো এদিকে। রিকশাওয়ালা ভয় পেয়ে চুপ করে থাকলো। অহি ইচ্ছের হাত শক্ত করে ধরে রইলো।
“কোচিং এ যাচ্ছিস??
অহি শক্ত হয়ে বসে রইলো উত্তর দিলো না। ইচ্ছে ভ্র কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনারো কি আমার দাদিজানের মতো বদ অভ্যাস আছে নাকি।
রঙ্গন পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে ধরাতে বলল,
-“বুঝিয়ে বল!
-” দাদিজান সবাই কে তুই বলে। তুমি তার মুখেই আসে না। চেনা জানা লাগে না তার সবাই কে তুই বলবে। আপনিও কি তেমন?”
রঙ্গন হাসলো। মুখে সিগারেট নিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,
-“হু । এটা কে হয়?
-“সই। আপনার?
-“ভবিষ্যৎ বউ।
ইচ্ছে হাত দিয়ে নাক ধরে বড় বড় করে তাকালো মনে মনে বলল এই ব্যাডা তো সেই জিনিস। অহির কোনো হেলদোল নেই। সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আশেপাশে কি হচ্ছে তার কোনো খেয়াল নেই। রঙ্গন এবার সরকারি ডাক দিলো।
-“সেদিন রাতে তো খুব কথা বলছিলি আজকে চুপ করে আছিস কেন?
হঠাৎ অহি কাশতে শুরু করলো। ইচ্ছে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
“ভাইয়া ওর সিগারেটে সমস্যা হয়। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান নইলে ফেলে দিন। ”
রঙ্গন সত্যি সত্যি ফেলে দিলো। বলল,
“কি রে এমপির বোন তোর ভাই তো আমার খবর টবর করতে আসলো না? বলিস নি নাকি। আর এই মেয়েটা কি সত্যি তোর সই?
-” না আমার ভাইয়ের বউ।
-“উল্টো পাল্টা কথা বললে কিন্তু এই ব্যাডার লগে তোরে সত্যি সত্যি বিয়ে দিয়ে দিব।”
দুজনেই তর্ক বাধিয়ে দিলো।
রঙ্গন এবার নিজেও বিরক্ত হলো। কিছুটা রেগেও গেলো দুজনের উপর। জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“রাস্তা পরিষ্কার কর। এদের যেতে দে।
এতো জোরে চেচিয়ে উঠেছে উপস্থিত তিনজনই কানে হাত দিয়ে রইলো। এক মিনিটের ব্যবধানে রাস্তা পরিষ্কার হয়েও গেলো। রিকশা চলতে শুরু করলো। অহি আর ইচ্ছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
রঙ্গন তাকিয়ে দেখলো সেই দৃশ্য। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলল,
” তুই সত্যি ওই মাইয়ার প্রেমে পড়ছিস?
রঙ্গন গুনগুন করে উঠলো,
“কারো একদিন হবো
কারো এক রাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না।”
!!
অনুভব একটা জরুরি কাজে পাঁচদিনের জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিল। শ্রাবণকেও সাথে নেয়নি এদিকে খেয়াল রাখতে বলেছিল। আজকে পার্টি অফিসে এসেছে। এখানে আগেই থেকেই উপস্থিত ছিল শ্রাবণ। মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে। অনুভব টেবিলে বসে কিছু ডকুমেন্টস দেখতে দেখতে শ্রাবণ কে জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু হয়েছে রে চিন্টু?
শ্রাবণ শুকনো ঢোক গিলে বলল,
-” জ্বি ভাই। এই সপ্তাহে তিনটে চিঠি এসেছে। আমি চেক করেছি। তার মধ্যে একটা চিঠি সেই দিনের মেয়েটার।
অনুভব ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আবারো চিঠি?”
!!
#চলবে…