#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_২৩||
ইচ্ছেরা ঢাকায় চলে এসেছে। ক্লাস নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তবুও এই ব্যস্ত সময়টাতেও অনুভবকে বড্ড মিস করে। আজকে ছুটির দিনে আরও বেশি মিস করছে। তার সাথে অনুভবের বিয়ে ঠিক করে রাখা এ কথা শুনে প্রথম চমকালেও এখন নিজেও মেনে নিয়েছে। না নেওয়ার কারণ তো নেই পছন্দ সে নিজেও করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এমপি মশাইয়ের কাছে স্বীকার করেনি।
ইচ্ছে শুয়ে থেকে গুনগুন করছিল। হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো ইচ্ছে পাশ ফিরে দেখলো অহির ফোন। রিসিভ না করে অহিকে ডাকলো।
“তোর কল এসেছে!
অহি বেলকনিতে কাপড় মেলে রোদে দাঁড়িয়ে ছিল। ডাক শুনে ভেতরে চলে আসলো। কিছু না বলে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো চয়নের কল। প্রচন্ড অবাক হলো। সাধারণত চয়ন তাকে কল দেয়না। সেই অনুভবকে কল দিলে,না পেলে চয়নকে কল দেয়। সাথে সাথে রিসিভ করে বলল,
” হ্যালো চয়ন ভাইয়া?
“হুম অহি তোমাকে কিছু বলতে চাচ্ছি তুমি কিন্তু উত্তেজিত
হবে না।”
এভাবে বলাতে অহি আরো টেনশনে পড়ে গেলো। কিছুটা ঘাবড়েও গিয়েছে তবে বুঝতে দিলো না। বলল,
” ঠিক আছে ভাইয়া বলুন?
“অনুভবের এ”ক্সিডেন্ট হয়েছিল হসপিটাল থেকে ভাইয়ের বাসায় নিয়ে এসেছি। তোমাদের জানাতে নিষেধ করেছে কিন্তু টেককেয়ার করার একটা বিষয় আছে না! আন্টি তো অসুস্থ তাকে জানানো যাবে না। তোমরা একটু আসতে পারবে??
ফোনের সাউন্ড জোরে থাকায় ইচ্ছেও শুনতে পেয়েছে দুজনেই কান্না করে ফেললো। তাড়াহুড়ো করে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
!!
অনুভব হেঁটে হেঁটে আসছিল। পেছনে থেকে একটা গাড়ি তাকে অনেকক্ষণ যাবত ফলো করছিল। বিষয়টা সে যখন খেয়াল করল ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ধা’ক্কা দিবে এমন সময় কেউ হাত ধরে টান দিয়ে সরিয়ে নেয়। কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে না পেরে রাস্তার মধ্যেই পড়ে যায়। মাথা গিয়ে ঠেকে ইটের উপরে। বেশ অনেকটাই ব্যাথা পেয়েছে। কাল সারারাত হসপিটালেই ছিল পরের দিন জেদ ধরে ফ্ল্যাটে চলে এসেছে। তার অবশ্য কারণ আছে এমপি এ’ক্সিডেন্ট করেছে শুনলে মানুষজন হুড়োহুড়িয়ে আসবে। সেটা এখন চাচ্ছে না অনুভব। তবে অবাক কার বিষয় হচ্ছে তাকে যে সরিয়ে নিয়েছে সে আর কেউ নয় রঙ্গন। ভাবা যায়!
অনুভবের যখন সেন্স ফিরে তাকিয়ে দেখে রঙ্গন তার পাশে বসে সিগারেট টানছে আর একটা ডাক্তারের সাথে ঝগড়া করছে। ঝগড়ার মূল বিষয় বস্তু এখানে সিগারেট খাওয়া যাবে না রুগীর সমস্যা হবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা!
অনুভব বিষয়টা থামাতে ছোট ছোট করে বলল,
“রঙ্গন তুই এখানে?
রঙ্গন ডক্টরের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে অনুভবের দিকে তাকালো। ভ্র কুঁচকে বলল,
” নাহ আমার ভূত এখানে।
মুখ চোখ কুঁচকে ফেলে আবার জিজ্ঞেস করল,
“কিভাবে এলি??
” পায়ে হেঁটে এসেছি। তোর মতো কোলে করে আসিনি।”
অনুভব বিরক্ত হয়ে থম মেরে গেলো। এই ঘ্যাড়ত্যাড়া নিজে থেকে না বললে সে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না বলে ঠিক করল।
রঙ্গন সারারাত তার কাছেই বসে রইল কিন্তু সোজাসাপ্টা কোনো উত্তর করল না। অনুভব চয়নকে আগেই কল দিতে চেয়েছিল কিন্তু রঙ্গন দিতে দেয়নি। সকালে নিজে থেকেই চয়ন কে ফোন দেয়। বেচারা ঘুমোচ্ছিল ফোনের বিকট শব্দে ভোর বেলা ঘুমটা ভেঙে গেলো। আননোন নাম্বার দেখে ঠিক করল কিছু বকাঝকা দিবে কিন্তু ফোন ধরতেই ঝাড়ি খেয়ে চুপ করে রইল,
“কি রে চাঁমচা খালি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাইলে চলবে? এদিকে তোর নেতা যে পরপারে যেতে যেতে বেঁচে গেছে সে খবর রাখবে কে?”
চয়ন থতমত খেয়ে বলল,
” মানে কি হয়েছে? কে বলছেন আপনি?
“আমি তোর নানা! এতো প্রশ্ন করিস কেন? ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি এসে এটাকে নিয়ে যা।”
বলেই ফোন কেটে দিলো। অনুভব চুপচাপ বন্ধুর কর্মকান্ড দেখছিল। এখন চলে যাবে বুঝতে পেরে ডাক দিলো,
” চলে যাবি?
“তো কি শুয়ে থাকব?”
” সোজা ভাবে উত্তর দে।”
“পারবো না।”
অনুভব কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল,
” বাঁচালি কেনো? তোর সব রাগ এক নিমেষে মিটে যেতো।
রঙ্গন তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল,
“আমার বোনের কারণে বাঁচিয়েছি। তোর জন্য তার চোখে আমি পানি দেখেছি। তা মিথ্যা নয়।
“নইলে বাঁচাতি না?
রঙ্গন চুপ হয়ে গেলো। অনুভব উঠে বসার চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু পারলো না। কিছু সময়ের ব্যবধানে চয়ন চলে আসতেই রঙ্গন কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল। এসবই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল অনুভব হঠাৎ কারো ডাকে ধ্যান ভাঙলো।
” ভাইয়া!!
চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল। বোনের গলা স্বর শুনে তাকালো। অহি দৌঁড়ে এসে অনুভবের পাশে গিয়ে বসলো। নাক টানতে টানতে বলল,
” আমরা কি এতোটাই পর তোমার ভাইয়া! যে এতো বড় একটা কথাও গোপন করতে চাইলে?
অনুভব হাসার চেষ্টা করে বলল,
” কান্নাকাটি করবি জন্যই তো বলতে চায়নি। আগে কান্না বন্ধ কর।
অহি বেশ কিছু সময় ধরে এটা ওটা বলল। অনুভব তার সবগুলো অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। হঠাৎ অহি বলল,
” এবার তোমাকে বিয়ে দিতেই হবে। আমি আজকেই মায়ের সাথে কথা বলব।
বিয়ের কথা বলতেই অনুভব দরজার দিকে তাকালো। মনে মনে ভাবলো অহি কি একাই এসেছে? নাকি মহারানীও এসেছে। বেশকিছু দিন ধরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সেভাবে খোঁজ খবর নিতে পারেনি। অহি ভাইয়ের মনোভাব বুঝে বলল,
ইচ্ছেও এসেছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
অনুভব কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলো। অহি বেরিয়ে গেলো। ইচ্ছে দরজার পেছনে লুকিয়ে ছিল। অহিকে বের হতে দেখে দৌঁড়ে গিয়ে সোফায় বসে পড়ল।
“ইচ্ছে যা ভাইয়া ডাকছে।
ইচ্ছে কথা বাড়ালো না। চুপচাপ উঠে দাঁড়াল। ছোট ছোট ধাপে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। ভেতরে ঢুকতেই অনুভব তাকে বসতে ইশারা করল। কিন্তু সে বসলো না ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল।
” বসবে না?
“না।
” আচ্ছা। কেমন আছো?
“ভালো কি রেখেছেন যে থাকব?
অনুভব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
” মানে আমি কখন খারাপ রাখলাম?
” তা আপনার না জানলেও চলবে। এখন কেমন আছেন?
“আলহামদুলিল্লাহ।
“এমন কি করে হলো? চোখ কি সংসদে রেখে হাঁটেন?”
“না সাথে নিয়েই হাঁটি।
ইচ্ছে আর কি বলবে বুঝলো না। অনুভবকে এভাবে দেখে তার প্রচন্ড খারাপ লাগছে। আবার রাগও লাগছে। রাস্তা ঘাটে ঠিকঠাক হাঁটতে পারে না। কিছু সময় ভাবনা চিন্তা করে বলল,
” শুনুন এমপি মশাই এবার অন্তত নিজের খেয়ালটা রাখতে শিখুন। বয়স কি আর কম হলো?
অনুভব মুচকি হাসলো বলল,
” শাসন করার জন্য একটা বউ দরকার। তুমি হবে নাকি অনুভব মির্জার বউ?
“না।”
“তাহলে দেখছি অন্য জায়গায় পাত্রী দেখতে হবে।
ইচ্ছে রেগে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে
বলল,
“আমি আছি রাজি,
পাঠান তবে কাজী।”
“শোনো মেয়ে একবার যখন রাজি হয়েছো আর দেরি নয়। এক সপ্তাহের মধ্যে অনুভব মির্জা আসছে। তোমাকে বিয়ে করতে রেডি থেকো।”
!!
রঙ্গন শুয়ে শুয়ে অনুভবের কথাই ভাবছিল। একটা খবর নেওয়া দরকার। ফোন দিবে কি দিবে না ভাবছিল। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিলো অহিকে কল দিবে। যে ভাবা সেই কাজ।
অহি রুমে আসতেই দেখলো রঙ্গন কল করেছে অহি রিসিভ করতেই সে বলল,
” তোর ভাই কেমন আছে?
অহি যেন আকাশ থেকে পড়ল। কার মুখে কি শুনছে সে। আশ্চর্য কন্ঠে বলল,
” আপনার শরীর ঠিক আছে তো?
” ঠিক আছে। যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে।”
“হুম এখন অনেকটাই বেটার। আমি আর ইচ্ছে এসেছি ভাইয়ার কাছে দুদিন থাকব। কিন্তু আপনি কেমনে
জানলেন?
“বলব না।
অহি প্রশ্ন করল না। জানেই বলবে না। তাই বলল,
“আচ্ছা কি করছেন আপনি?”
“শুয়ে আছি। তোর ভাইরে কোলে নিয়ে হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে একটু টিপে দিয়ে যাহ। আর ওইটারে বলিস একটু কম খেতে।”
“কিহ আপনি ভাইয়াকে কোলে নিয়ে ছিলেন? তার মানে আপনিই ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলেন?
” হ।
“একটা সত্যি কথা বলুন তো তার সাথে আপনার কি
সম্পর্ক?”
“আপাতত শালা দুলাভাই।”
” দেখুন কথা ঘুরাবেন না।
” চল বিয়ে করি।”
” আপনি আমাকে বিয়ে করে কি খাওয়াবেন?”
“সিগারেট।
” ছিহ আস্তাগফিরুল্লাহ। আমি এসব খাইনা।
” তুই কি আমাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করবি নাকি তোকে তুলে আনব?
“উল্টো পাল্টা কথা বন্ধ করুন। আগে নিজে কিছু করুন। আর সব থেকে বড় কথা আপনি আমাকে তুই ডাকা কবে বন্ধ করবেন?
“যেদিন তুই আমার বউ হবি।”
অহি হাঁটতে হাঁটতে বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসে পড়ল। একটু রয়েসয়ে বলল,
” আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করতে চান?
“জুতা টানার জন্য!
” কিহ?
“গাধার মতো কথা বলছিস কেন বিয়ে মানুষ কেনো করে?”
অহি বিরক্ত হলো। একটু থেমে বলল,
” ভালোই তো বাসেন না বিয়ে কেনো করবেন?
“ভালোবাসি কি বাসি না! তা জানার জন্য হলেও আগে তোর বউ হতে হবে।”
!!!
শফিক সাহেব একটু হাঁটা হাঁটি করতে বের হয়েছিল। এদিকে ওদিকে ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিচ্ছিল। একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসতেই হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। বুক পকেট থেকে বের করে দেখলো অনুভবের কল রিসিভ করতেই বলল,
” আসসালামু আলাইকুম স্যার কেমন আছেন?
“আলহামদুলিল্লাহ। আছি বেশ তা এমপি মশাইয়ের কি খবর?
” খবর ভালো নয়।
“কেনো?
অনুভব বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
” ইচ্ছে রাজি হয়েছে এবার বিয়ের ব্যবস্থা করুন দাদাজান।”
শফিক সাহেব হাসলেন। অতঃপর বললেন,
” ঠিক আছে। পাত্রী নিয়ে চলে এসো নাতজামাই।”
#চলবে….
|| কয়েকদিন লেখালেখি নেই আজকে লিখতে বসে হাত কেমন যেনো চলছিল না। তাই ছোট্টই দিলাম। এতোগুলা সমস্যার কথা একবারে লিখতেও ইচ্ছে করছে না। তাই আর লিখলাম না। কাল বা পরশু বাসায় চলে যাবো। আবারো রেগুলার গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ। অপেক্ষা করার জন্য ভালোবাসা পাঠক মহল।💝||