#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_৪||
“একটা কথা বলার ছিল।”
আঁড়চোখে অহির দিকে তাকিয়ে বলল ইচ্ছে। অহি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো,
“কি কথা বল?
” তোর ভাইয়াকে আবার চিঠি দিয়েছি”
বড় বড় করে তাকালো অহি। তাকে এভাবে তাকাতে দেখে ইচ্ছে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই বলল,
“ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
” কি শুরু করেছিস বলত ভাইয়া জানতে পারলে তোরে কাঁচাই চি’বি’য়ে খাবে। ”
ইচ্ছে হাত দিয়ে মুখ ধরে উঁকি আসার অভিনয় করে বলল,
“দেখেছিস তোর ভাইয়ের কত বড় একটা অ’পরাধ এতো দিন লুকিয়ে রেখেছিলি।”
“মানে!কিসের অ’পরাধ?
“কাঁচা মানুষ চিবিয়ে খাওয়া কোনো অপরাধ নয়? আচ্ছা দাঁড়া দাঁড়া শুধু মানুষই খায় নাকি হাস মুরগীও? তার মানে সোনার মায়ের মুরগীটারে বেঁ’জিয়ে নিয়ে যায়নি তোর ভাই খেয়েছে?
অহি হতভম্ব হয়ে গেলো। এই ফাজিল কোথাকার কথা কথায় নিয়ে গেলো। সে তো শুধু কথার কথা বলছিল। কিছু না বলে শুধু চেয়ে রইলো।
” ওভাবে কি দেখছিস? শোন এই রকম মানুষ আশেপাশে থাকাও রিস্ক। তাকে ঘরে বন্ধ করে রাখা উচিত। আমার দেশের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে না? আজকে বাড়ি গিয়ে আন্টিকে বলবি তাকে আঁটকে রাখতে।
“এই মেয়ে দাঁড়াও।”
তিনবার ডাক দেওয়ার পরেও যখন স্যারের কথা ইচ্ছের কান অব্দি পৌঁছাল না তখন পেছন থেকে তাকে একটা মেয়ে গু’তা মারলো। ইচ্ছে সামনে না তাকিয়ে পেছন ঘুরে সেই মেয়েকে বলল,
” কি রে সকিনা বেগম কি সমস্যা তোর গুতাগুতি করছিস কেন? শোন এটা গরু দের জায়গা নয়। তুই মাঠে গিয়ে গুতাগুতি কর যা।”
“ঠিক বলেছো এটা গরুদের জায়গা নয়।”
-“ইচ্ছে কখনো ভুল বলে না….
কথা শেষ করার আগেই থেমে গেলো। একটা শুকনো ঢোক গিলে সামনে তাকালো। খায়রুল স্যার দাঁড়িয়ে আছে। এই ব্যাডা তাদের কলেজেরই স্যার। বদমেজাজি লোক।
ইচ্ছে ভুলেই গেছিলো তারা ক্লাসে আছে। আসলে সে একবার কথা বলতে শুরু করলো কোনো দিক খেয়াল করে না। এখন যে কি হবে। ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়াল। অহি জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
“এতোক্ষণ কি পড়াচ্ছিলাম?”
ইচ্ছে মাথা নিচু করে ফেললো। সে আসলে কিছুই শুনেনি।
“কি হলো কথা বলছো না কেনো?
” ভালো স্টুডেন্ট জন্য মনে করোনা তোমাকে কিছু বলবো না। এখনই আমার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও।”
ইচ্ছে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়াল। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে। হাত উঁচু করে বলল,
“বাঁচ্চারা পরের বার ভোটটা কিন্তু আমাকেই দিও।
সাথে সাথে হাসির রোল পড়ে গেলো। স্যার ধমকে উঠতেই সবাই থেমে গেলো। এবার অহি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তাকে দাঁড়াতে দেখে। স্যার বেশ নরম সুরে বলল,
” আরে আরে অহি মা তুমি কথায় যাচ্ছো? তোমার যেতে হবে না তুমি ক্লাস করো।
“না স্যার আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আজ যাই।
” ওমা সেকি বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে নাকি?
“না না যেতে পারবো।
বলেই বেরিয়ে পড়ল। ইচ্ছে তাকে দেখে হাসলো। সে রুমে বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে জানত অহিও চলে আসবে।
“এই ব্যাডা খায়রুল সুন্দরীর এক চোখে নুন আরেক চোখে তেল বেঁচা স্বভাব জীবনেও যাবে না। ”
অহি সহমত পোষণ করলো। এমপির বোন বলে তাকে একটু বেশি কদর করে খায়রুল স্যার। অথচ সারাক্ষণ সবার সাথে খিঁকখিঁক করে। অহি চশমাটা ঠিক করে বলল,
“চল বাড়ি যাই।
” বাড়ি গিয়ে কি করবি চল সামনের মাঠে গিয়ে বসি।”
“আচ্ছা চল।
দুজনেই এসে মাঠে বসে পড়ল। বেশ কিছু সময় গল্পও করলো।
” কি রে রসায়ন নোট এনেছিস?”
“ভুলেই তো গেছিলাম দিচ্ছি দাঁড়া।
ইচ্ছে ব্যাগ থেকে একটা মোটা খাতা বের করে দিলো। অহি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“এতো মোটা? আমার এই ছোট্ট ব্যাগে তো আঁটবে না।”
“তাহলে হাতে নে।”
“আচ্ছা চল এখন উঠি।
দুজনেই উঠে রাস্তায় গিয়ে রিকশা ডেকে উঠে বসলো। এর মধ্যে অহি চিঠির কথাটা ভুলে গেছে। তাই তার আর জানা হলো না এবার কি লিখেছে ইচ্ছে।
!!
” চিঠিটা আমাকে দে।”
চয়ন বাঁধ্য ছেলের মতো কোনো প্রশ্ন ছাড়াই দিয়ে দিলো। অনুভব ভ্রু কুঁচকে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই পড়েছিস?
চয়ন একবার না বলল একবার হ্যাঁ বলল।
অনুভব বুঝে ফেললো সে পড়েছে।
” তুই বাহিরে গিয়ে বস।
“জ্বি ভাই।
চয়ন চলে যেতেই অনুভব চিঠি খুলে সামনে ধরলো।
!!
সু-অপ্রিয়,
নেতাজি ওরফে এমপি-মশাই,
ভালো আছেন তো? ভালো যে আছেন তা অবশ্য আপনার গরু খাওয়ানো দেখেই বুঝেছি। এই যে আপনি গরু খাওয়ালেন তার মতলব কি আমি বুঝি না নাকি? পরের বছরের ভোটটাও ফ্রিক্সট করে রাখলেন। কি অবাক হলেন তো আপনার মতলব ধরে ফেলায়? সে যাইহোক এখন আসি আসল কথায়। আগের চিঠিতে যা বলেছিলাম দেখলাম ভালোই কাজে লেগে পড়েছেন। কাদের আলীর নাকি খবর নিয়েছেন। শুনে বেশ ভালো লাগল। তবে ভাববেন এই জন্য আপনার প্রশংসা করবো। এটা আপনার দায়িত্ব ছিল তাই করেছেন।
আজকে আবার কিছু কাজ দিতে চিঠি লিখতে বসেছি।
শুনুন এলাকায় চোরের উপদ্রব বেড়েছে। যে সে চোর নয় একদম ডাকাত মার্কা চোর। রাতের বেলায় কোনো মহিলা বের হলেই তার সোনার গহনা নিয়ে দৌড় দিচ্ছে। তাই কিভাবে জানেন? জানবেন কেমনে খবর তো আর রাখেন না। আমিই বলে দিচ্ছি। সেদিন মলির মায়ের কান থেকে কানের দুল ছিড়ে নিয়ে দৌড় দিছে। সেকি সাংঘাতিক ব্যাপার! র’ক্ত দিয়ে দুই কাঁধ ভিজে গিয়েছিল সে কি কান্না তার। শুধু তারই না। এমন অনেকের সাথেই হচ্ছে সবার তো আর আমি নাম জানিনা। সবার তো আর সামর্থ নেই রুমে মধ্যে বাথরুম দেওয়ার। হয় সবার বাড়ির রুমে রুমে বাথরুম দিয়ে দিবেন নইলে চোরটাকে ধরবেন। বুঝেছেন দুটো অপশন দিলাম। গতকাল কি করেছে জানেন! আমার সোনার গলার চেইনটাও সোনা ভেবে নিয়ে গেছে। আমি আসলে সবাইকে একটা মিথ্যা বলেছিলাম। যেই জিজ্ঞেস করত আমি বলতাম আমার সোনার জন্য সোনার চেইন বানিয়ে দিয়েছি। সোনা হচ্ছে আমার বিড়ালের নাম। আহারে আমার একশো বিশ টাকার মালাটা। দোকানদার গ্যারান্টি দিয়েছিল পাঁচ বছরের আগে রঙ উঠবে না। যে করেই হোক ওটাও খুঁজে বের করবেন। মাঝে মাঝে অসহায় মানুষদের
কি মনেহয় জানেন? আমি নিজেই এমপি হয়ে যাই তারপর সবাইকে দেখিয়ে দেই কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে সেটা আমি করবো না। কারণ রাজনীতি আমার পছন্দ নয়। শুধু নিজেদের পকেটে টাকা না ভরে পাবলিকের যত্ন নিন। উপরওয়ালা খুশি হবেন। আজ এতটুকুই। যাইহোক আপনাদের নিয়ে একটা গান লিখেছি। শেষে এটাই শুনাচ্ছি থুক্কু লিখছি।
” যদি বারে বারে একই সুরে জনগণকে কাঁদায়,
তবে নেতা কোথায় আর এমপি বা কোথায়?
যদি দিশেহারা ইশারাতে মানুষই ডেকে যায়
তবে আপনারা কোথায় আর সমাধান কোথায়?
যদি সত্যি মনে হয় সব পুরোনো কথাই,
যদি চিঠির ভাজে জমে নীরবতা
তবে বুঝে নিয়েন সাধারণ মানুষ কত নিরুপায়।
লাল লা লা লা লা…………………..!!!!
ইতি,
সব দিকে খেয়াল রাখা সুযোগ্য নাগরিকা।
চিঠি পড়া শেষ হতেই সেটা ভাজ করে পাঞ্জাবির পকেটে রাখলো অনুভব। আজকে আর তার রাগ লাগছে না। বরং নিজের দলের লোকদের ওপর রাগ লাগছে। একটাও কাজের না। কোনো দিক নিজে থেকে খেয়াল রাখে। সে যতটুকু বলবে ঠিক ততটুকুই করে সব কয়টা। মেয়েটা মজার ছলে হোক আর যেভাবেই হোক তাকে এভাবে খবরাখবর দিলে তারই লাভ। কোনো দিকে কমতি থাকবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই চয়ন ভেতরে আসলো। এটা অবশ্য তার বিষয় একটা পাওয়ার পারমিশন ছাড়াই ভেতরে আসতে পারে। কিছু একটা বলতে এসেছিল কিন্তু তার বলার আগেই অনুভব বিড়বিড় করে বলল,
“শোনো মেয়ে, তুমি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতে, তাহলে তোমায় আমার এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে নিতাম। কিন্তু আফসোস তুমি মেয়ে।”
এ কথা বিড়বিড় করে বললেও চয়নের কান অব্দি পৌঁছে গেলো। শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো। সে ভেবে ছিল ভাই রেগে যাবে। ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“কি দরকার ভাই এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে অফিসে আমার সতিন আনার। তার থেকে ভালো বউ বানিয়ে বাড়ি নিয়ে যান।
তবে মনের কথা মনেই রয়ে গেলো মুখে বলতে পারলো না। তবে গলা খাঁকারি দিতেই অনুভব তার দিকে তাকালো। ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। চয়ন বলতে শুরু করলো। কথা শেষ হতেই অনুভব উঠে দাঁড়াল। বাড়ি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
অহি আর অনুভব একই সাথে এসে সদর দরজায় দাঁড়াল। দুজন দুজনকে দেখে হাসলো। হাসির কারণ তাদের বাড়ি ফিরার টাইমিং মেলে গেছে।
” কি রে কোচিং শেষ। ”
অহি মাথা নাড়লো৷ মুখে কিছু বলল না। অনুভব পায়ের জুতা খুলে সবে ভেতরে ঢুকছিল। অহি পেছন থেকে ডাক দিলো। কাঁধে ব্যাগ নিয়েছে সেটা নিয়ে সমস্যা না হলে খাতা নিয়ে জুতা খুলতে পারছে না। তাই বলল,
“ভাইয়া একটু খাতাটা ধরো তো।
” আচ্ছা দে।”
অহি জুতা খুলছিল। অনুভব এতো মোটা একটা খাতা দেখে পৃষ্ঠা উল্টালো। তারও এক সময় এমন মোটা মোটা খাতায় নোট করত। অতীত মনে পড়তেই হাসলো। নড়েচড়ে দেখছিল। মাঝ বরাবর আসতেই এক পৃষ্ঠা বাংলা লেখা দেখা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এতোক্ষণ বিক্রিয়ার সাথে দুই এক লাইন করে লেখা থাকায় সেভাবে খেয়াল করিনি। তবে এবার বেশ ভালো ভাবে খেয়াল করলো। অহি হাত বাড়িয়ে খাতাটা চাইলো। অনুভব কোনো বাক্য ছাড়াই দিয়ে দিলো। অহি কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতেই বলল,
“এটা কার খাতা রে?”
“লেখা সুন্দর জন্য জানতে চাইছো তাইনা?
অনুভব হাসার চেষ্টা করলো। অহি নিজেও হেসে বলল,
” আমার সই ইচ্ছের।
“আচ্ছা যা।
অহি চলে যেতেই বার কয়েক নামটা বিড়বিড় করলো,
” ইচ্ছে।”
!!
#চলবে..