#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_৫||
সাতদিন পর অহিদের বিদায় অনুষ্ঠান। পরীক্ষার বেশি দিন নেই। আজকে কলেজে শেষ ক্লাস ছিল। অনেক কিছু দাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইচ্ছে যেতে পারেনি। প্রচন্ড জ্বর এসেছে মেয়েটার। প্রাণ প্রিয় বান্ধবী অসুস্থ যেন অহি আর কলেজ শেষে কোচিং এ যায়নি। ইচ্ছেদের বাড়িতে গিয়ে ছিল তাকে দেখতে। সেখান থেকেই ফিরছে এখন। তবে এদিকের রাস্তায় নতুন করে কাজ চলায় অনেকটা পথ হেঁটে আসতে হয়েছে এবং এখনো হেঁটেই যেতে হবে। বড় রাস্তার মোরে গিয়ে রিকশা নিতে হবে। আপাতত এদিকে কোনো প্রকার যানবাহন যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ইচ্ছের দাদাজান তাকে এগিয়ে দিতে চেয়ে ছিল কিন্তু সেই নিষেধ করছে। বয়স্ক মানুষটাকে আর কষ্ট দিতে চায়নি।
অহি গুনগুন করতে করতে হাঁটছিল। হঠাৎ কিছুর সাথে বেঁধে ঠাস করে পড়ে গেলো। বসে থেকেই ফুপিয়ে উঠলো। চশমাটাও নিচে পড়ে গেছে। সব কিছু ঝাপসা লাগছে। হাত দিয়ে এদিক ওদিক দেখছিল। পেয়েও গেলো চোখে দিতেই হুট করে কিছু হাসির শব্দ কানে ভেসে আসলো। সামনে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। চশমার এক কাঁচ ফেটে গেছে আরেক কাঁচ ভালো আছে। সাইডে তাকিয়ে কাউকে দেখতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। সাথে অপমানিত বোধও করলো। সেই দিনের সব ছেলেগুলো সাথে ওই বখাটেটাও আছে। তবে অদ্ভুত বিষয় সবাই হাসলেও রঙ্গন হাসছে না। তার দিকে তাকিয়ে থেকে সিগারেট টানছে।
“সারাজীবন এখানেই বসে থাকবি নাকি?”
হঠাৎ এমন কথায় হকচকিয়ে গেলো অহি। উত্তর দিলো না। তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়াল। হাত পায়ে বেশ কিছুটা ছিলেও গেছে। তবে আপাতত সে চিন্তা করলে চলবে না। এখান থেকে যেতে হবে। নিচে থেকে ব্যাগ তুলে হাঁটতে শুরু করলো।
” দেখলি কি তেজ উত্তরই দিলো না।”
“অনুভব মির্জার বোনের তেজ যে থাকবে স্বাভাবিক বিষয়।
রঙ্গনের কথা শুনে সবাই বিরক্ত নিয়ে তাকালো। এর মাথায় কি চলছে কেউ বুঝতে পারছে না। বাদল বলল,
” তুই বলত তুই কি করতে চাচ্ছিস?
“ওকে পৌঁছে দিতে।
” অসম্ভব ওই মেয়ে কিছুতেই তোর সাথে যাবে না।
“যদি যায়?
” গেলে আমি আর জীবনে সিগারেট খাবো না।
সিগারেটখোর জনির মুখে এমন কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। রঙ্গন উঠে দাঁড়াল।
“ঠিক আছে তোরা এখন বাড়ি চলে যা।
” তুই একা যাবি?
“তো প্রেম করতে কি মানুষ গুষ্টি শুদ্ধো লোক নিয়ে যায়??
” ও ভালো মেয়ে তোর সাথে জীবনেও প্রেম করবে না।
রঙ্গন উঠে দাঁড়াল অদ্ভুত ভাবে হেসে বলল,
“ভালো মেয়েরা খারাপ ছেলের প্রেমেই বেশি পড়ে। এখন বল তোদের কি নিয়ে যাওয়া যায়?
সবাই বড় বড় চোখ করে তাকালো। মাথা নাড়িয়ে না জানাতেই রঙ্গন একটু আগে গিয়ে বাইকে উঠে বসলো। আর কোনো কথা না বলেই বাইক স্টার্ট দিলো। অহি তাড়াহুড়ো করে হাঁটার চেষ্টা করছে কিন্তু পায়েও ব্যাথা পাওয়াতে সেভাবে আগাতে পারছে না। বিড়বিড় করতে করতে হাঁটছিল। হঠাৎ কুকুরের ডাক শুনে চমকে উঠলো। রাস্তার ওই পাশে সাত আটটা কুকুর বালিতে বসে থেকে চেচাচ্ছে। অহি কুকুর থেকে প্রচন্ড ভয় পায়। এক সাথে এতোগুলা দেখে তো তার জা’ন যাওয়ার অবস্থা। দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
হঠাৎ তার সামনে এসে কেউ বাইক থামালো। চমকে উঠলো। রঙ্গনকে দেখে রেগে বলল,
” আপনার সমস্যা কি বলুন তো পিছু কেনো করছেন?
“উঠে বস।”
অহি বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
“কোথায়?
” আমার ঘাড়ে।
অহি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলো। তবে পারলো না। তার আগে রঙ্গন হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“বাইকে উঠে বস। এতক্ষানি রাস্তা হেঁটে যেতে তোর সকাল হয়ে যাবে। ”
” যাক। আমি সকালেই বাড়িতে যাবো তাও আপনার সাথে যাবো না।”
পেছনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল,
“বেশ ধরেক, ওই খে’পা কু’ত্তা গুলো তোরে তাড়িয়ে ধরলো। দৌড় দিতে পারবি?
” মানে কি বলতে যাচ্ছেন?”
“এক কথা দুইবার আমি বলিনা। দাঁড়া দেখাচ্ছি।
রঙ্গন রাস্তা থেকে একটা পাথরের টুকরো তুলে। কুকুর গুলো দিকে ঢিল মারলো। সাথে সাথে কুকুর গুলো দৌড়ে আসতে শুরু করলো। অহি তো ভয়ে জমে গেলো।
” কি করলেন এটা।
“তাড়াতাড়ি উঠ নইলে…
কথা শেষ করার আগেই অহি উঠে বসলো। রঙ্গন বাঁকা হেসে বাইক জোরে টান মারলো। পেছন পড়ে রইলো কিছু কৌতূহলী মুখ। আসিফ হাসতে হাসতে বলল,
” জনি রে জীবনের শেষ সিগারেটটা খেয়ে নে,,
!!
ভাই মেয়েটার পুরো নাম জান্নাতুল তাজরিন ইচ্ছে। বয়স আঠারোর কাছাকাছি। বাবা মা নেই। দাদা দাদির কাছে মানুষ। প্রচন্ড চঞ্চল একটা মেয়ে। অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকতে পারেনা না। আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে সে মাষ্টারমশাইয়ের নাতনি।
একদমে কথা গুলো বলে থামলো শ্রাবণ। অনুভব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“শফিকের স্যারের নাতনি?
” জ্বী ভাই।
“কিন্তু আমার জানা মতে উনার তো কোনো ছেলে মেয়ে ছিল না। নাতনী কই থেকে আসলো?”
“তা জানি না ভাই।
” আচ্ছা ঠিক আছে এখন যা।
“আচ্ছা ভাই।
অনুভব গভীর মনোযোগ সহকারে কিছু ভাবছিল। হঠাৎ ফোনে শব্দে মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেলো। কিছুটা বিরক্ত নিয়েই ফোনের দিকে তাকালো। তবে মায়ের নাম্বার দেখে মূহুর্তেই বিরক্ত ভাব কেটে গেলো। রিসিভ করলো,,
” হ্যালো অনুভব শুনছিস?
“হুম মা বলো শুনছি।
” তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি এবার তোর পছন্দ হবেই।
অনুভব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“আবারো মেয়ে দেখেছো?
” আবারো মানে তুই কি কোনোদিন বিয়ে করবি না?
“বিয়ে কেনো করবো না। অবশ্যই করবো।
” আর কবে করবি বুড়ো হলে? তখন তোর ছেলে তোকে বাবা না বলে দাদু বলে পরিচয় দিবে দেখিস।”
অনুভব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরো কিছু কথা বলে ফোন রেখে দিলো। অত:পর মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড়
করে বলল,
“কেউ বলে ছেলে ভাই ডাকবে আর কেউ বলে দাদু ডাকবে। কিন্তু আমার তো মনেহয় ছেলে আমার নাম ধরেউ ডাকবে।”
!!
“ভালো করে ধরে বস নইলে পড়ে যাবি।”
কুকুরের ভয়ে কুমিরের ডেরায় আশ্রয় নিয়েছে অহি। মনে পড়তে ভয়ে আঁটিসাঁটি হয়ে বসে রইলো। রঙ্গন তাকে ধরে বসতে বললেও সে ধরেনি। ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে। ভাইয়া দেখলে যে কি হবে সেটাই মনে মনে ভাবছে।
“তোর ভবিষ্যৎ প্ল্যান কি?”
“তোকে তুলে আ’ছাড় মারা।
বলেই মুখ চেপে ধরলো অহি। এভাবে সে বলতে চায়নি মুখ ফসকে মনের কথা বেরিয়ে এসেছে। হুট করে বাইক থেমে গেলো।
” নাম।
“অনাহিতা।
“তোর নাম জিজ্ঞেস করেনি নিচে নামতে বলেছি।
অহি ঝটপট নেমে পড়ল। আমতা আমতা করে বলল,
” আসলে আমি এভাবে বলতে চায়নি।
“ওজন কত তোর?”
“৪৫ কেজি।
” আমার ৭০ কেজি। এই শরীর নিয়ে আমায় তুলবি?
বলেই হাসলো রঙ্গন। অহি অপমানিত বোধ করলো একমিনিটের ব্যবধানে হাসি থামিয়ে বলল,
“তোর ভাই কি তোকে খেতে দেয়?
” নাহ আপনি দেন।
টিটকারি মেরে বলল অহি। রঙ্গন আবারো হাসলো। অহি অবাক চোখে তাকালো। এই লোকের হাসিটা মাশাআল্লাহ তবে আচার ব্যবহার আস্তাগফিরুল্লাহ।
“বাড়ি যা।”
অহি আশেপাশে তাকালো। তাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাইক থামিয়েছে। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললো। কিছু না বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
“কেউ উপকার করলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
অহি পেছন ঘুরে বলল,
“আর কেউ জুতা মেরে গরু দান করলে তাকে কি দিতে?
রঙ্গন এক চোখ মেরে বলল,
“ভালোবাসা।
অহি উত্তর না দিয়ে দৌড় দিলো। কেউ দেখে ফেললেই তার ভাই কে বলে দিবো। রঙ্গন তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
” তুই এখানে কি করছিস?
রঙ্গন উত্তর দিলো না। সিগারেট বের করলো আবারো। অনুভব তার সামনে এসে দাঁড়াল,
“কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
” তোর বোনকে রাখতে এসেছিলাম।
অনুভব সে কথা বিশ্বাস করলো না। হেসে বলল,
“আমার বোন তোর সাথে আসবে হাউ ফানি?
“বিশ্বাস করলে কর না করলে নাই।
বলেই বাইক নিয়ে চলে গেলো। অনুভব তাকিয়ে রইলো বোঝার চেষ্টা করলো কথাটা সত্যি কি মিথ্যা।
” সে কি একবার অহিকে জিজ্ঞেস করবে?
!!
ইচ্ছে একটা কাগজ নিয়ে বসে আছে। সন্ধ্যার দিকে পাশের বাড়ির মলি তাকে এটা দিয়ে গেছে। বলেছে তাকে নাকি একটা ছেলে এটা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। ইচ্ছে প্রথমে নিতে চায়নি। তবে পরে কৌতূহল না সামলাতে পেরে নিয়েছে। তাকে কে চিঠি দিয়েছে সে দেখতে চায়। ভাগ্যিস দাদিজানের চোখে পড়েনি। নইলে নির্ঘাত ভাবত ইচ্ছে প্রেম করছে।
ইচ্ছে চিঠি খুলে উপরে লাইন না পড়ে শেষ লাইন পড়ল আগে। চোখ তার বেরিয়ে আসার জোগাড়। হতভম্ব হয়ে গেলো। মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“আজব ঘটনা এই লোক তাকে কেনো চিঠি দিয়েছে?
#চলবে….