#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_৯||
কথায় বলে চোরে নিয়ে গেলে তাও কিছু না কিছু রেখে যায় কিন্তু আগুনে ধরলে সব পুড়িয়ে তারপরে যায়। ফায়ারসার্ভিস আসতে আসতে এক ঘন্টা লাগিয়ে দেয়। প্রতিবেশীরা তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছে। কিন্তু কি কারণে আগুনটা লেগেছে তা এখনো ধরতে পারিনি। অনুভব খবর পেয়েই তার দলবল নিয়ে চলে এসেছিল। শফিক সাহেবের শখের বাড়িটা বেশ অনেকটাই পুড়ে শেষ।
আগুন লেগেছে বুঝতে পারেন সবার প্রথম শফিক সাহেব নিজেই। তিনিই চিৎকার করে উঠেন। ইচ্ছে ছুটে আসে। তাকে আগেই বের করে দেন শফিক সাহেব। আনোয়ারা বেগম ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমান। তাকে টেনে বের করতে গিয়ে শফিক সাহেব আটকা পড়ে যান। তাকে গিয়ে বের করে অনুভব। শফিক সাহেবর ডান পাশের বেশ অনেকটাই পুড়ে গেছে। তাকে আপাতত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডক্টর জানিয়েছে ভয়ের কিছু নেই।
ইচ্ছে চুপচাপ এক কোণে বসে ফুঁপিয়ে কান্না করছে । আনোয়ারা বেগম কেবিনের ভেতরে রয়েছে। এতো সময় সে ইচ্ছের কাছেই ছিল তবে শফিক সাহেবকে বেডে দিয়েছে শুনে সে ভেতরে চলে গেছে। এখন চোখ থেকে পানি না দেখা গেলেও তার ফুঁপানোর শব্দ বেশ ভালো ভাবে শুনা যাচ্ছে। বার বার নাক টানছে।
অনুভব ডক্টরের সাথে কথা বলে বাহিরে আসে। ইচ্ছের দিকে তাকাতেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেয়েটা কান্না কাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ধুপধাপ পা ফেলে এসে ইচ্ছের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসে পড়ে। শরীরে তার টি-শার্ট আর টাউজার বাসায় যেভাবে ছিল সেভাবেই বের হয়েছিল। পকেটে হাত দিয়ে টিস্যু খুঁজল। তবে টিস্যু না পেলেও একটা রুমাল পেলো। সেটাই ইচ্ছের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এই যে সাহসী মেয়ে চোখ মুখ মুছে নাও তোমার দাদাজান ঠিক আছে।
ইচ্ছে বিনাবাক্যে নিয়ে নিলো। তবে মুখে কিছু বলল না। মাথা নিচু করেই রাখল। অনুভব ঘড়ি দেখে নিলো। ছয়টা বাজে। শীতের দিন ছয়টা মানে ভোর।
” তোমার কি ঘুম পেয়েছে?
ইচ্ছে এবার মাথা তুললো। নাক টানতে টানতে বলল,
“আমার কি ঘুম পাওয়ার কথা?
” না তবে ঘুমানো উচিত। তুমি বললে আমি একটা কেবিন বুকিং করে দিতে পারি।
“লাগবে না। আপনি গিয়ে ঘুমান।
ইচ্ছে আবারো কান্না করে ফেললো। অনুভব তার হাতটা এগিয়ে নিয়ে গেলো ইচ্ছের মাথায় রাখার জন্য তবে কিছু একটা মনে করে আবার সরিয়ে নিলো। উঠে দাঁড়াল। বলল,
” তোমার দাদাজান কে দেখবে?
ইচ্ছে চট করে উঠে দাঁড়াল। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। অনুভব সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। ইচ্ছেও পিছু নিলো। কেবিনে দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ল। ইচ্ছেকে ইশারা করলো। কাঁচের দরজা হওয়াতে ভিতরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
শফিক সাহেবের সেন্স ফিরেছে। ডান হাত নড়াতে না পারলেও তার বাম পাশে ঘুমিয়ে পড়া অর্ধাঙ্গিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বাম হাত দিয়েই। মুখে কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছে। আনোয়ারা বেগমের ঘুম পাতলা ছিল কয়েকবার মাথায় হাত রাখতেই ঘুম ভেঙে গেলো। ফুপিয়ে কেঁদে উঠলেন। শফিক সাহেব তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে আধো আধো কন্ঠে ধীরে ধীরে বললেন,
“কাঁদছ কেনো গিন্নি আমি ঠিক আছি তো।”
“আমি অনেক ভয় পাইয়া গেছিলাম। মনে হচ্ছিল আর বোধহয় তোমার লগে থাকা হইবো না।”
শফিক সাহেব মুচকি হাসার চেষ্টা করলেন।
“তোমাকে ফেলে আমি কোথায় যাবো বিবিজান?
” কোথাও যাবে না। ম’রণ হইলে এক লগে ম’রমু। এখন আর কথা বইলো না ডাক্তার নিষেধ কইরা গেছে। ”
শফিক সাহেব শুধু মাথা নাড়িয়ে স্ত্রী আবার বেডে মাথা রাখতে ইশারা করলো। আনোয়ারা বেগম তাই করলেন।
এই দৃশ্য কাঁচের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ তরুণী দেখলো। ইচ্ছে এখন মিটিমিটি হাসছে। অনুভব তা দেখে ভ্রু কুঁচকালো বলল,
“হাসছ কেনো?
” দেখেছেন আমার দাদাজান আর দাদিজানের মধ্যে কত মোহাব্বত।”
অনুভব এবার মুচকি হেসে বলল,
“হুম এটা তো সবাই জানে।
“তাদের দুজকে এক সাথে দেখলে আমার বড্ড শান্তি লাগে।
ইসস আমিও যদি দাদাজানের মতো একটা জামাই পেতাম জীবন আমার ধন্য হয়ে যেতো।”
“বয়স কত তোমার?
” কেনো?
“প্রশ্ন নয় উত্তর করতে বলেছি।
” উনিশ যদিও সার্টিফিকেটে এক বছর কমানো আছে। আপনার?
“কাগজে কলমে পঁচিশ তবে আসল সাতাশ।
বলেই অনুভব উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো। আবারো গিয়ে বসে পড়ল। ইচ্ছেও তার পিছু নিলো। যেতে যেতে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
” আপনার বয়স ত্রিশের কম?
“কেনো বিশ্বাস হয়না?
ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। অনুভব কিছু একটা ভেবে বলল,
” আসলে আমি দুই ক্লাস গ্যাপ দিয়ে উপরে উঠে ছিলাম। থ্রি, ফোর না পড়ে ফাইবে ভর্তি হয়েছিলাম। আর সার্টিফিকেটে বয়স কম বাবা দিয়েছিল। ”
“ইচ্ছে হঠাৎ প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
” আপনি আমাকে নরমাল করতে এতো কথা বলছেন তাইনা? অন্য সময় তো বো’ম মে’রেও আপনার মুখ থেকে কথা বের করা যায় না।”
অনুভব সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
“এটা তোমার জামাই নিয়ে ভাবার বয়স নয় পড়াশোনা করার বয়স। ভালো করে পড় নইলে রেজাল্ট খারাপ হবে।
ইচ্ছে হতাশার সুরে বলল,
“জামাই নিয়ে সংসার করার বয়সে পড়াশোনা করলে রেজাল্ট তো খারাপ হবেই।”
“এখনকার মেয়েদের মাথায় কি শুধু এসবই চলে?
” সবার জানিনা তবে আমার চলে।
অনুভব আর কথা বাড়ালো না। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। ঠান্ডা ঠান্ডাও লাগছে। একটু চা হলে ভালো হতো। ক্লিনিকের নিচে চা বা কফি পাওয়া যাবে। উঠে দাঁড়াল। সোজা নিচে গিয়ে দুই কাপ কফি নিয়ে আসলো। একটা ইচ্ছেকে দিলো। অপরটায় নিজে চুমুক দিলো। ইচ্ছে খেতে খেতে বলল,
“আপনি কিন্তু ওতোটাও খারাপ নোন। ”
“হঠাৎ ভালো কেমনে হয়ে গেলাম?
“এই যে রিস্ক নিয়ে দাদাজানকে বের করে আনলেন এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
“এভাবে ধন্যবাদ?
” তো এখন কি আপনাকে বিয়ে করে ধন্যবাদ দিতে হবে।
অনুভব বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে বলল,
“তুমি বড্ড বেশি অপ্রয়োজনীয় কথা বলো মেয়ে।
অনুভব চলে যেতেই ইচ্ছে মিটিমিটি হাসলো। এমপি মশাই রে জ্বালাতে ইদানিং তার বেশ ভালো লাগে। হঠাৎ দাদাজানের কথা মাথায় আসতেই আবারো মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
!!!
অহি ইচ্ছেদের খবর শুনে রাতেই বায়না ধরেছিল আসার জন্য কিন্তু অনুভব তাকে নিয়ে যায়নি। কান্না করেও ভাইয়ের মন গলাতে পারেনি। তার এক কথা সেখানে গিয়ে তুই কি করবি। তোর ইচ্ছে কে আমি দেখে রাখবো। তারপর অহি কিছু বলতে পারেনি। সারা রাত ঘুম হয়নি তার একটু পর পর অনুভবকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে। তখনই জেনে নিয়েছিল কোন হসপিটালে কত নাম্বার বেডে রয়েছে।
সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েছে। উদ্দেশ্য হসপিটাল। তনিমা বেগমের শরীরটা ওতোটা ভালো না নইলে তাকে বললেই নিয়ে যেতেন। বাড়িতে আপাতত আর কেউ নেই।
এখান থেকে অটো করে হসপিটালে যেতে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। এদিক ওদিকে তাকিয়ে অটো খুঁজছে। হাতে টিফিন বক্স সবার জন্য খাবার নিয়েছেন। খাবারটা আকলিমা বেগম সাজিয়ে একটা ব্যাগে তুলে দিয়েছেন। যদিও তিনি জানেন না অহি একা যাবে তাকে বলেছে অনুভব বড় রাস্তার মোরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অহি এদিকে ওদিক তাকিয়ে অটো দেখতে না পেলেও রঙ্গনকে দেখতে পেলো। কিছু একটা ভেবে তার দিকেই গেলো। রঙ্গন তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। অহিকে এদিকে আসতে দেখে তার বন্ধুরা ইশারা করে পেছনে তাকাতে বলল। রঙ্গন পেছন না তাকিয়েই হাসলো। অহি পেছনে এসে ডাক দিলো,
” শুনছেন?”
রঙ্গন উত্তর করলো না। অহি এবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল,
“আমাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যাবেন?
” আমাকে কি তোর অটোওয়ালা মনে হয়?
“না তা নয়। তবে এতো সকালে মনে হয়না অটো পাবো একটু যদি নিয়ে যেতেন খুব উপকার হতো।”
“তোর ভাই জানে?
অহি চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রঙ্গন উঠে দাঁড়াল বাইকে বসে অহিকে ইশারা করলো। অহি খুব খুশি হলো। গিয়ে বাইকের পেছনে উঠে বসলো। রঙ্গন তার হাত থেকে টিফিনটা নিয়ে সামনে বাধিয়ে রাখলো। অহি বাইকের পেছনে ধরলো তবুও রঙ্গন কে ধরলো না। ঠিক হয়ে বসতেই বাইক টান দিলো।
বেশ কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পরও দুজনেই চুপ করে রয়েছে কেউ কথা বলছে না। এভাবে কত সময় চুপ থাকা যায়। অহি নিজেই কথা বলল,
” আচ্ছা আপনার বাড়িতে কে কে আছে?
“কেনো বরর্যাত্রি কয়জন যাবে গুনে রাখবি?
অহি কিছুটা বিব্রতবোধ করল। বলল,
” আপনি তো বললেন আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।
“বলেছিলাম নাকি?
” হুম বলেছিলেন।
“আমি গিয়েছি নাকি তুই এসেছিস?
অহি হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। বেশ কিছু সময় পরে বলল,
” আচ্ছা আপনি কি সব মেয়েকেই এভাবে বিরক্ত করেন?
রঙ্গন বাইকের আয়না দিয়ে অহির মুখের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বলল,
” না তবে তুই বললে করবো।
“তাহলে আমাকে কেনো…
তাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই রঙ্গন বলল,
” তুই অনুভব মির্জার বোন তাই।
“মানে?
” মানে পরিষ্কার আমার শা”লা হবে এমপি আর আমি হবো তার দুলাভাই।”
অহি কৌতূহল নিয়ে বলল,
“আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?
” নাহ তো।
অহি চুপ হয়ে গেলো। পুরো রাস্তা কোনো কথা বলল না। হুট করেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। রঙ্গন তাকে হসপিটালের সামনে নামিয়ে হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিলো। অহি হাতে নিয়ে কিছু না বলে চলে যাচ্ছিল। তখনই রঙ্গন পিছু ডাকলো,
” তবে কাউকে ভালো লাগে থেকে ভালোবাসায় পরিণত হতে বোধহয় খুব বেশি দেরি নেই।”
বলেই বাইক টান দিয়ে নিয়ে চলে গেলো। অহি কেমন রিয়াক্ট করবে বুঝলো না। শুধু চেয়ে রইলো সেদিকে। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে ভেতরে পা বাড়ালো।
#চলবে….
|| রি-চেক করা হয়নি। আজকের পর্বটা কি এলোমেলো লাগছে!??🥺||