#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon
#পর্ব_১০
দেখতে দেখতে বেশ অনেকটা সময় কেটে গেছে। শফিক সাহেব এখন বেশ অনেকটাই সুস্থ। তবে ডান পাশের বেশ কিছু জায়গায় সাদা হয়ে গেছে। হসপিটালে যে কয়েকদিন ছিলেন তার মধ্যেই অনুভব বাড়িটা মেরামত করে দেয়। বেশি লোক কাজে লাগায় খুব বেশি সময় লাগেনি। এই সময়টা তার খুব একটা খারাপ যায়নি। মাষ্টারমশাই অসুস্থ যেনে অনেক ছাত্র ছাত্রী তাকে দেখে গেছেন। পুরনো দিনের অনেক গল্প চলেছে। আহা! কতই না সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।
ইচ্ছের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। সেন্টার পরেছে একটু দূরে। শফিক সাহেব গাড়ি রিজার্ভ করে দিতে চেয়েছিলেন তবে অহি করতে দেয়নি। সে জেদ ধরে ইচ্ছে তার সাথেই যাবে নইলে সে নিজেও যাবে না। সাধারণত সে গাড়ি করে চলাফেরা করে না। দম বন্ধ লাগে তার। তবে প্রতিদিন ঠিক সময়ে অটো পাওয়া রিস্ক বিষয় হয়ে যাবে। ইচ্ছের এমনিতেও আপত্তি ছিল না। শুধু দাদাজানের পারমিশনের অপেক্ষায় ছিল।
পরীক্ষার মাঝে খুব বেশি ছুটি না থাকায় পরপর অনেকগুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। অহি আর ইচ্ছে দুজনেই ভালো স্টুডেন্ট। পাশাপাশি সিট পড়লেও খুব একটা কেউ কারো থেকে হেল্পের প্রয়োজন হয়নি।
আজকে শেষ পরীক্ষা ছিল এর মধ্যে অহির সাথে রঙ্গনের দেখা হয়নি। হুট করে একটা মানুষ কোথায় উধাও হয়ে গেলো তার মাথায় আসছে না। রাস্তায় উঁকি ঝুঁকিও মেরেছে তার বন্ধুদের দেখতে পেলেও তাকে পায়নি। কেনো জানে না অহি তাকে মিস করছিল। খারাপ লাগছিল তবে কেনো এমন লাগছে নিজেও কনফিউজড। তবে পরীক্ষার চলাকালীন সময়টা চেষ্টা করেছে নিজেকে পড়াশোনার মধ্যেই ব্যস্ত রাখা।
অনুভব ইদানিং খুব ব্যস্ত সময় পাড় করছে। জনগণের সেবা করা সাথে সংসদে উপস্থিত থাকা। সব দিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছে। অন্য দিকে তাদের অফিস সেটা নিয়ে আপাতত খুব বেশি সময় দিতে পারছে না। তবে ম্যানেজার বেডারে তার বড্ড সন্দেহ হয়। তার গতিবিধির দিকে খোঁজ খবর রাখার দায়িত্ব চয়নকে দিয়েছে।
আজকে বোনের শেষ পরীক্ষা। ঠিক করেছে সে নিতে যাবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। কলেজের পূর্ব পাশে গিয়ে দাড়াল। সামনের দিকে অতিরিক্ত ভীড় হওয়াতে অহিরাই ড্রাইভারকে এখানে দাঁড়াতে বলেছে। অহি আর ইচ্ছে হলরুম থেকে বের হতে হতে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছে। গাড়ির কাছে এসে অহি ড্রাইভারের জায়গায় অনুভব কে দেখে খুশি হয়ে গেলো। ইচ্ছের ভাবভঙ্গি দেখে খুশি অখুশি কিছু বোঝা গেলো না। সে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।
অহি এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ভাইয়া তুমি এসেছো?
” হুম পরীক্ষা কেমন হলো?
” আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো হয়েছে। এখন শুধু প্র্যাকটিকেল বাকি তবে ওটা নিয়ে টেনশন নেই।
অনুভব এবার ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার পরীক্ষা কেমন হলো।
“ভালো।
অনুভব আবার অহির দিকে তাকিয়ে বলল,
” কোথাও ঘুরতে যাবি?
দুজনেই খুব ক্লান্ত থাকায় কেউ রাজি হলো না। অনুভব আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে উঠতে বলে বাড়ির রাস্তা ধরলো। ইচ্ছে প্রতিদিন বড় রাস্তার সামনে এসে নেমে যায়। যদিও এখান থেকে আরো একটু ভেতরে যেতে হয়। তবুও উল্টো রাস্তায় যেতে হবে জন্য ইচ্ছে প্রতিদিন এখানেই নামে। আজকেও ব্যতিক্রম হলো না।
ইচ্ছে অহির থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়ল। তাকে নামতে দেখে অনুভবও নেমে পড়ল। অহি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চশমাটা পড়ে নিয়ে প্রশ্ন গুলো আবার দেখতে লাগলো।
অনুভবকে নামতে দেখে ইচ্ছে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
“নেতা মশাই কিছু বলবেন?
অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” হুম।
“বলুন?
” তুমি আমাকে আর চিঠি দাওনা কেনো?
হুট করে এমন প্রশ্ন ইচ্ছে চমকালো থমকালো। কিছুটা সময় নিয়ে বলল,
“আসলে এখন স…..
কথাটা শেষ করলো না। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বলল,
“শুনুন নেতা মশাই, লেখার শেষে থাকে ইতি,
আমি আর দেবো না আপনাকে চিঠি।
অনুভব আরো একটু গম্ভীর হয়ে বলল,
” শোনো মেয়ে তোমার চিঠির জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি না।
বলেই ধুপ করে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়ি নিয়ে চলেও গেলো। ইচ্ছে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে বিড়বিড় করে আওড়াল,
“নেতা মশাই বোধহয় পাগল হয়ে গেলো। ”
!!
রাতে অহি ফোন হাতে করে বসে আছে। রঙ্গনের নাম্বার একবার তুলছে একবার কাটছে। কল দেওয়া ঠিক হবে কিনা ভাবছে। রঙ্গন তাকে শুধু দুই দিন ফোন দিয়েছিল। অহি দুটো নাম্বারই ব্লক করে রেখেছিল তারপর আর কল দেয়নি। অনেক ভাবনা চিন্তা করে ঠিক করলো কল দিবে।
প্রথম বার ফোন বাজতেই রিসিভ করলো রঙ্গন। অহি কথা বলছে না চুপ করে আছে।
” ফোন কি নিঃশ্বাসের শব্দ শুনাতে দিয়েছিস?”
অহির বড্ড অভিমান হলো। ফোন কেটে দিলো। অপেক্ষা করলো কল আসার। কিছু সময় পরে রঙ্গন নিজেই কল করলো,
“কথা না বলে ফোন কাটবি না।
” আচ্ছা।
অহির ছোট্ট জবাব।
“আমাকে মিস করেছিস?
অহি উত্তর দিলো না। রঙ্গন আবার বলল,
” গান শুনবি?
উত্তরের অপেক্ষা না করেই গাইতে শুরু করলো,
“” মন আকাশে বৃষ্টি আসে
রৌদ্র মেঘের জুটি
আজ নতুন আলয়
আধার কালোর খুনসুটি
ঝরের বেসে এলো কেসে
কাজল সে চোখ দুটি
দিল কঠিন কথার,ভিষন্নতার ছুটি…
তারি সাথে খেলনাপাতে, অযথা হাসাহাসি
হাজার বারন আরো কারন,তবুও সে দারেই আসি
চলনা সুজন মিলে দুজন,নিলয় আকাশে বাসি
দেখুক লোকে এ দুচোখে,তোর অই দুচোখের হাসি
চলনা সুজন হারায় দুজন,বিনা দুষেই হোক ফাসি
দেখুক লোকে অবাক চোখে,কতটা ভালবাসি!!””🖤
রঙ্গনের গানের গলা বেশ ভালো। অহির মন ভালো হয়ে গেলো। ঠোঁটের কোণে হাসি জমলো। বলল,
“বাহ আপনি তো বেশ ভালো গান গাইতে পারেন।
রঙ্গন সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
” শুধু গান নয় গানের তালে তালে মানুষজনকে নাচাতেও পারি।”
“আপনি কি নাচ শিখান?
” তুই যে এতো রাতে আমাকে কল করেছিস তোর ভাই জানে?
অহি চমকে উঠে বলল,
“না না। আসলে আপনাকে আর দেখিনা তাই খোঁজ নিতে কল দিয়েছি।
” ও আচ্ছা আমি বেশ আছি। পরীক্ষা তো শেষ এবার প্ল্যান কি?
“কি আবার ভার্সিটিতে ভর্তি হবো।
রঙ্গন হেসে উঠলো। তাকে হাসতে দেখে অহি বলল,
” হাসছেন কেনো?
“রান্না জানিস?
” না। কখনো করি নাই।
রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এতো পড়াশোনা করে কি হবে একদিন তো ঠিকই কোমরে শাড়ি গুঁজে আমার জন্য রান্না করতে হবে। তার থেকে ভালো আগেই শিখে রাখ। ভবিষ্যৎ কাজে দিবে।”
#চলবে….