#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সকাল সকাল দারোয়ানের কল পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো মেঘলা।
এলোমেলো চুলগুলো সামনে এসে পড়ে আছে, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে সাজ্জাদের।
সাজ্জাদের এমন অবস্থা দেখে অবাক হলো মেঘলা। দ্রুত ওর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ কি হয়েছে…!!?’
সাজ্জাদ কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো মেঘলার শ্যামবর্ন মুখটার দিকে।
মেঘলা কিছু বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ আপনি রাজি! আপনি রাজি মেঘলা!.? এখানে আপনাকে জোর করা হলে আমাকে বলুন আমি সব কিছু ঠিক করে দিব।’
মেঘলা কিছুই বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ কিসের কথা বলছে.?
সাজ্জাদঃ মেঘলা..
মেঘলাঃ আপনি কিসের কথা বলছেন.? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
সাজ্জাদঃ আপনি সত্যি বুঝতে পারছেন না!.?
মেঘলা মাথা নেড়ে না বুঝালো।
মেঘলাঃ বাসায় আসুন বসে কথা বলি।
সাজ্জাদঃ আপনি তো বলে ছিলেন তিন মাস পর ডিভোর্স তাহলে আবার বিয়ে কেন.?
মেঘলাঃ মানে…? আমি আপনাকে কখন বলেছি? আর কিসের কথা বলছেন.?
সাজ্জাদ বাড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর মেঘলার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে বাড়ির সাজগোছ দেখিয়ে বললো,’ তারপরও আমার বুঝিয়ে বলতে হবে মেঘলা। আপনি একজন সিআইডি হয়ে এতোটুকুও বুজেন না!.?
মেঘলা চুপ হয়ে গেল। মনের ভেতর উঁকি দিয়ে থাকা সব সন্দেহ প্রশ্ন কেমন সত্যি হয়ে যাচ্ছে।
সাজ্জাদ দুই পা এগিয়ে এসে মেঘলার হাত ধরতে নিলে মেঘলা পিছিয়ে গেল।
মেঘলাঃ সাজ্জাদ বাসায় যান আপনাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে।
সাজ্জাদঃ আমার সুস্থ হওয়ার সব কিছু আপনার হাতে আপনি আমার হয়ে যান মেঘলা আমি সুস্থ হয়ে যাব।
মেঘলাঃ আমি আপনার বন্ধুর ভাইয়ের বউ আপনার লজ্জা থাকা উচিত সাজ্জাদ।
সাজ্জাদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ এটা বিয়ে নয় গেইম ছিল।’
মেঘলাঃ আপনাকে আমি কখনো বলেছি গেইম ছিল.? কখনো বলেছি এই বিয়ে আমি মন থেকে মানি না.? কখনো বলেছি.? অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেওয়া পুরুষদের পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আমি মনে করি। বিয়ে যেভাবেই হোক আমি কারো বউ নিজের চোখ সংযত করুক। আমার চোখের সামনে দ্বিতীয় বার যেনো আপনারকে কখনো না দেখি।
সাজ্জাদ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে।
মেঘলা রেগে গেইট শব্দ করে বন্ধ করে ভেতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
সাজ্জাদ গেইটের বাহির থেকে তাকিয়ে আছে সাজানো বাড়িটার দিকে।
এই প্রথম কাউকে মনে ধরে ছিল, ভালো লেগে ছিল আর তাকেই এভাবে হারাতে হচ্ছে!
মেঘলা বাসায় এসে রায়হান সাহেবের সাথে রাগারাগি করে নিজের রুমে চলে গেল। সে বুঝতে পারছে না এখানে লুকোচুরি কেন খেলা হচ্ছে.??? সব রাগ গিয়ে জন্মালো শ্রাবণের উপর। শুধু একবার সামনে পাই মেঘলা কি সেটা বুঝিয়ে দিবে।
_____________
ছোঁয়া সোফায় বসে টিভি দেখছে আর চা খাচ্ছে।
নির্জন এসেই ছোঁয়ার পাশে বসে পড়লো।
ছোঁয়া নাকে হাত দিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছিঃ দূরে গিয়ে বস না ঘা থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে।’
নির্জন রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই গন্ধ শোনার জন্য কতো মেয়ে পাগল জানিস.? তুই জানবি কিভাবে তুই তো মেয়েই না, মেয়েদের কাতারেই পড়িস না, এটা কে গন্ধ নয় ঘ্রাণ বলে। আর মেয়েরা ছেলেদের এই ঘ্রাণেই পাগল। ‘
ছোঁয়া হ্যাঁ করে নির্জনের কথা গুলো শুনে হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
ছোঁয়াঃ ভাই উল্টা পাল্টা কি খেয়ে এসেছিস বলতো.? তোর পাশে বসেই আমার বমি আসতেছে।
নির্জন ইচ্ছে করে ছোঁয়ার ঘা ঘেঁষে বসলো। ছোঁয়া দূরে সরে যেতে চাইলে নির্জন ছোঁয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেললো।
ছোঁয়া চেঁচামেচি শুরু করলো ছেড়ে দিতে।
নির্জনঃ ছোঁয়া..
ছোঁয়া চুপ হয়ে গেল হৃদপিণ্ড থমকে গেল, কেমন উদাসীন দৃষ্টিতে তাকালো নির্জনের দিকে।
নির্জন ছোঁয়ার মুখের উপর ফু দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে দিল।
সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিল ছোঁয়া।
নির্জন তা দেখে মুচকি হাসলো। ধীরে ধীরে ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ বিশ্রী ঘ্রাণে মাতার মাতার স্মেল আছে নারে ছোঁয়া!! ‘
ছোঁয়া লজ্জায় নির্জনের থেকে দূরে সরে যেতে চাইল।নির্জনের এক হাত ছোঁয়ার কোমরে অন্য হাত ঘাড়ে। নির্জন ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাকা আমার দিকে।’
ছোঁয়া লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
নির্জনঃ একবার তাকা।
ছোঁয়াঃ উঁহু..
নির্জনঃ ছোঁয়া রাণী আপনি তাকাবেন আপনার জাহাপনার দিকে।
ছোঁয়া নির্জনের দিকে না তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আম্মুওও!!’
সাথে সাথে নির্জন ওকে ছেড়ে দিল।
ছোঁয়া ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো, ‘ আসছে আমার জাহাপনা হতে ভিতুর ডিম..’
নির্জনঃ ছোঁয়া এটা চিটিং…
ছোঁয়া সোফা থেকে বালিশ নিয়ে ছুড়ে মারলো নির্জনের দিকে।
______________
মহুয়া রেগে বসে আছে কি আজব! মামিকে জিজ্ঞেস করলো বাড়িতে কি হচ্ছে..? মামি হাসতে হাসতে উত্তর দিল মিমের বিয়ে। মানে কি..? ডিভোর্স হয়নি এক জনের সাথে আবার বিয়ে! আর মিম আজও ভালো হলো না বিয়ের কথায় নাচতে নাচতে কিভাবে রাজি হলো.? এতো কিছুর পরেও এই মেয়ে ভালো হবে না।
দুপুরের দিকে পার্লার থেকে দুইটা মেয়ে এসে হাজির হলো মহুয়ার রুমে।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাদের দিকে।
তাদের পেছন পেছন এসে হাজির হলো মিম আর ওর দুই ভাবি।
মহুয়াঃ এরা কারা.??
মিমঃ ভাবিদের সাথে পরিচয় হয়ে যাও।
মহুয়া কথা বললো ভাবিরাও ভীষণ মিশুক।
মিমঃ তোমার জন্য আজ অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে।
মহুয়া একটু হাসলো যদিও এখন মিম কে দেখলেই রাগ হচ্ছে তাও জোর পূর্বক হাসলো।
ভাবিঃ মহুয়া দেখো তো সব কিছু পছন্দ হয় কিনা! অবশ্য প্রিয় মানুষের আনা সব কিছুই পছন্দ, অপছন্দ জিনিসটাও পছন্দ হয়ে যায়।
মহুয়াঃ মানে.??
মিম চোখ ঘুরিয়ে ভাবিকে কিছু একটা ইশারা করতেই ভাবি চুপ হয়ে গেল।
তারা জোর করেও কেউ মহুয়াকে কিছু পড়াতে পারলো না। মহুয়া উল্টো রেগে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কিসের সারপ্রাইজ! উল্টো মনে হচ্ছে মিমের নয় বিয়েটা ওর।
সময় গড়িয়ে যায় রুম থেকে নিচের হৈচৈ শুনতে পায়। তাহলে কি জামাই চলে এসেছে.? একবার কি গিয়ে দেখা উচিত!.? সব কিছু ছেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে মোবাইল হাতে নিল। আজকে আহনাফ কে একটু বেশিই মিস করছে।
কিছু সময় পর দরজায় নক হতেই মহুয়া বিরক্তিকর দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালো। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ভূত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে রইলো।
______________
মেঘলা খুব সুন্দর করে সেজেছে বিয়ে সাজগোজ নিয়ে কখনো সখ ছিল না মেঘলার তারপরও আজ সে মন ভরে সেজে নিচ্ছে। শ্রাবণ কি মনে করেছে সে মেঘলাকে চমকে দিবে!.? মোটেও না আজ মেঘলা ওকে চমকে দিবে। নিশ্চয়ই মেঘলা কে দেখেই শ্রাবণ ভাঙা মন নিয়ে বলবে ” মেঘলা তুমি অন্য কারো জন্য এতো ভারিভারি সাজে সেজেছো!.? নিশ্চয়ই ছ্যাঁখা খাওয়া লোকদের মতো বড় বড় ডায়লগ দিবে ভাবতেই হাসি পেল মেঘলার।
নিচে হৈচৈ শুনে রুম থেকে বাহির হয়ে ছাদে গেল। পেছন পেছন পার্লারের মেয়েরাও গেল। ওরা নিশ্চয়ই ভাবছে কি উদ্ভুত মেয়ে নিজের বিয়ের সাজ নিজে সাজছে তাহলে আমাদের বসিয়ে রাখছে কেন.? মেঘলা পেছনের দিকে তাকিয়ে একটা মেয়ের হাতে মোবাইল দিয়ে বললো,’ ভিডিও করুন তো, এটাই আপনাদের কাজ।’
পার্লারের লোকদের ফটোগ্রাফার বানিয়ে দিল!
~ আপু আমাকে দেন আমার তো ছোট থেকেই ফটোগ্রাফার হওয়ার সখ ছিল। যদিও আপনার বিয়েতে অনেক ফটোগ্রাফার এসেছে তবে সব নিচে আপনার কাছে কিছুই নেই।
মেঘলা হেঁসে বললো,’ বিয়েটা শুধু ছেলে আর ছেলে পক্ষের হচ্ছে তাই সব কিছু ওদের হাতে। ‘
~ এটা কেমন বিয়ে.?
মেঘলা হেঁসে বললো,’ এটাই তো মজার। ‘
~ আপনি দেখছি অনেক খুশি বিয়েতে।
আরেকটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ জামাই তো নয় যেনো নায়ক।’
মেঘলা হেঁসে বললো,’ তাই নাকি.?’
~ কেন আপু আপনি এখনো নিজের জামাই দেখেন নি.?
মেঘলা ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ নাহ্..!’
___________
মহুয়া সামনে আহনাফ কে দেখেই খুশি হলেও অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিল।
মহুয়াঃ আপনি এখানে.?
আহনাফ এক হাতে কপাল স্লাইড করে বলে উঠলো, ‘ রেডি হওনি কেন.?’
মহুয়াঃ আজ তো আপনার বিয়ে ছিল! এখানে কেন.?
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ বউ সাজছে না তাই বিয়ে ছেড়ে বউয়ের কাছে চলে আসতে হয়েছে। ‘
মহুয়াঃ মানে.?
আহনাফঃ মানে, বউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে মানে! মানে! করছে তাও বর চিনছে না।
মহুয়ার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেল।
আহনাফ রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
আহনাফ মহুয়াকে বিছানায় বসিয়ে সব কিছু ওর সামনে রেখে বললো পাঁচ মিনিটে রেডি হও।
মহুয়া রেগে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি কিছু পড়বো না। ‘
আহনাফঃ কেন.?
মহুয়াঃ আপনারা সবাই আমাকে বোকা বানালেন.?
আহনাফঃ আমরা তো শুধু সারপ্রাইজ…
মহুয়াঃ থামুন প্লিজ।আপনার সারপ্রাইজ কারো কাছে বিষের থেকেও বিষাক্ত ছিল। কতোটা কষ্ট পেয়েছি জানেন.!!
আহনাফ মহুয়া সামনে বসে ওর গালে হাত রাখতেই মহুয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আহনাফঃ সরি মেহু..
মহুয়া আহনাফের হাত সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।
আহনাফঃ যতো শাস্তি দেওয়ার বাড়িতে গিয়ে দাও তাও রেডি হয়ে নাও, সবাই বসে আছে তোমার অপেক্ষা করছে।
মহুয়া সবার কথা ভেবে রাডি হতে শাড়ি হাতে নিল।
মহুয়া রেডি হয়ে প্রথম আহনাফের সামনে আসলো। সাথে সাথে আহনাফ কথা বলতে ভুলে গেল৷ বুক পকেট থেকে হাত দিয়ে কিছু খুঁজলো।
“তোমার ঐ চোখ দেখে আমি সব ভুলে গেছি।আর তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা কিনে ছিলাম নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। আর তুমি এতোই সুন্দরী কি বলবো হায় আল্লাহ..
ছাড়ো এইসব,,,,,
আমি পরের লাইন ভুলে গেছি।
মহুয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।
____________
নির্জন সেই ভাবসাব নিয়ে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে গেলেই ছোঁয়া মাঝে গিয়ে গন্ডগোল করে দিচ্ছে।
নির্জনঃ তোর সমস্যা কি.?
ছোঁয়াঃ আমার তো কোনো সমস্যা নেই শুধু তোর মতো ফ্লার্ট বাজের হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করছি।
নির্জন পাশ থেকে একটা ফুল এনে ছোঁয়ার কানে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখন তোকে রক্ষা করবে কে.!??’
চলবে…
( সবাই কে বিয়ের দাওয়াত গিফট ছাড়া খাবার দেওয়া হবে না😇 সবাই দামী দামী শাড়ি,বই গিফট নিয়ে আসবা🌚)
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।