#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্ত বয়স্কদের ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
বিনার কথায় মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সমুদ্র। একেবারে ঠিকঠাক মতো কথা বলছে সাথে আবার এক রুমে থাকার আবদার!
” ঘটনা কী? হঠাৎ রঙ বদল?”
সমুদ্র আলমারি থেকে টি-শার্ট আর লুঙ্গি বের করে। রাতে সব সময় লুঙ্গি পরে ঘুমায় সমুদ্র। বাইরের পোশাক পাল্টাতে বাথরুমের দিকে এগুলো সে। বিনা কিছু বলেনি। মনে মনে ভাবছে ঠিক কী উত্তর দেওয়া যায়। কন্ঠ আপার কথা তো বলা যাবে না। বিনা অপেক্ষা করছে। কখনো বাথরুমের দিকে উঁকিঝুঁকি মারছে আবার কখনো বিছানায় বসে পা দুলিয়ে যাচ্ছে। মিনিট দশেক পরে সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে বের হলো।
” আপনি বসেন আমি ঘরে নিয়ে আসি খ-এ খাবার। ”
” ধ-এ ধন্যবাদ। আমি ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেয়ে নিবো। তুমি নিজের চরকায় তেল দাও।”
নিজের আবার চরকা থাকে? কিন্তু সেটা আবার কী? বিনার অবুঝ মন বোঝে না সেই চরকা কোথায় আছে। তেল না হয় ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা আছে। কিন্তু চরকা কই?
” সমুদ্র সাহেব, আমার নিজের চরকা কোথায়? বললেন না তেল দিতে। যদি দেখিয়ে দিতেন তাহলে ড্রেসাং টেবিলের উপর থেকে তেলটা সেই চরকায় লাগাতাম।”
বিনার কথা শুনে সমুদ্র শুধু মুখেই বিষম খেলো। বিনা বিছানা থেকে উঠে টি-টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে দ্রুত সমুদ্রর হাতে দিলো। পানি পান করে কিছুটা শান্ত হলো সমুদ্র। বিনার উদ্বিগ্ন মুখখানা দেখে সমুদ্রর একইসাথে রাগও হচ্ছে আর হাসিও পাচ্ছে। মেয়েটা এতটা বোকা? সমুদ্র পানির গ্লাস বিনার হাতে দিলো।
” ওটা ড্রেসিং টেবিল,ড্রেসাং না। আর চরকায় তেল মানে নিজের কাজ করো গিয়ে আমার কথা ভাবতে হবে না। ”
” ওওওও বুঝতে পেরেছি এবার। ”
” ধন্য হলাম। তুমি খেয়েছো?”
” আপনি তো খেতে বলেননি। ”
” আমি খেতে বলার পরে তুমি খাবে?”
” দুপুরে বললেন না, আপনার কথা ছাড়া যাতে কিছু না করি।”
সমুদ্র বিছানায় বসেছে। বিনাও সমুদ্রর পাশে বসে পা দুলিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র আর কন্ঠর সামনেই ওর যত চঞ্চলতা।
” বিনা আমি বলেছি কোনো কাজ করবে না। তাই বলে খেতেও কি অনুমতি লাগে? এতো বোকা বলেই এভাবে আমার সাথে আঁটকে বিয়ে দিতে পেরেছে তোমার এলাকার লোকজনগুলো।”
” আমি বোকা না। আর ওঁরা ভেবেছিল আপনি বিয়ে করতে রাজি হবেন না। আপনাকে মেরে ফেলাই ছিলো উদ্দেশ্য। ”
” থাক এসব কথা। মন মানসিকতা খারাপ হয়ে যায়। চলো খেয়ে আসি। ”
” আচ্ছা। ”
দু’দিন হলো বিছানায় শুয়ে আছে কন্ঠ। কোমরে ভালোই চোট পেয়েছে মেয়েটা। সারাদিন এভাবে ঘরে শুয়ে থাকতে কার ভালো লাগে? ডাক্তার এসেছিল গতকাল বিকেলে। বলেছেন এক সপ্তাহ বিছানায় বিশ্রাম নিতে। সঙ্গে কতগুলো ঔষধ দিয়েছেন। প্রহরকে নিয়ে ভীষণ জ্বালায় আছে কন্ঠ। ছেলেটা কাছাকাছি আসলে কতো ভালো আচরণ করে। অথচ চোখের আড়ালে গেলেই তার কতশত ব্যস্ততা! আজ দু’দিন হলো একটা টেক্সট পর্যন্ত করেনি। কন্ঠ যে মেসেজ দিয়েছে সেটা সিনও করেনি। অথচ সারাদিন ডাটা অন থাকে। অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপে তার অফিসের কাজ করতে হয় বলেই অনলাইন দেখায় বলে দাবি করে প্রহর। গতরাতে ভীষণ কেঁদেছে কন্ঠ। না পারছে প্রহরের এই সময় না দেওয়াকে মেনে নিতে আর না পারছে ওর সাথে একেবারে কথা বন্ধ করতে। এভাবে দিন দিন অশান্তি আর সহ্য হচ্ছে না। একটা মানুষ থেকেও যদি না থাকার মতো হয় তখন কেমন লাগে?
” কোমরের খবর কি রে?”
হঠাৎ পুরুষালী গম্ভীর কন্ঠে কন্ঠর ভাবনার সুতো ছিঁড়ে গেলো। দরজার দিকে তাকিয়ে না দেখেও বুঝলো ইফতি এসেছে। কী প্রশ্নের শ্রী! লোকে বলে ব্যথার কী খবর আর উনি কোমরের খবর!
” কোমর আপাতত জ্ঞানহীন। ”
” কী আবোলতাবোল বকছিস। ডাক্তার এসে কী বললেন? ”
” সাত দিন বিশ্রাম আর সাথে ঔষধ। ”
” হুমম গুড। ”
” হ বালের গুড।”
মনে মনে কথাটা বললেও মুখ ফুটে বিরক্তি প্রকাশ করতে পারলোনা কন্ঠ। সেদিন যদি ইফতি ভাইয়া তাকে পড়ার আগেই ধরে ফেলতো তাহলে তো এরকম হতোনা। শয়তান লোক একটা। এজন্যই তো ছাত্রছাত্রীরা চোখে দেখতে পারে না তাকে।
” শুয়ে থেকে ফোন না টিপে তো বই পড়তে পারিস। এই মাসেই তো পরীক্ষা শুরু তোর।”
” পারলে তোমার গলাও টিপে দিতাম। ”
অস্ফুটে স্বরে বললো কথাটা কন্ঠ।
” কিছু বললি?”
” আরে না ভাইয়া। আচ্ছা ভাইয়া নয়নাকে তোমার কেমন লাগে?”
কন্ঠর প্রশ্নে ইফতি অবাক হলো। মেয়েটার সাহস তো কম না! সামনে যে ইফতির বিয়ে সে বিষয় কি কন্ঠ জানে না? অবশ্য এখনও তো কিছু ঠিকঠাক হয়নি।
” এসব লাগালাগিতে আমি নেই। তুই কি প্রেম-ট্রেম করিস না-কি আবার?”
কন্ঠ চমকালো। কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে প্রসঙ্গ? কন্ঠ ফিক করে হেসে বলে,
” প্রেম আমার সাথে যায় ভাইয়া?”
” গুড গার্ল। শোন প্রেম-ট্রেম ভালো না। সোজাসুজি বিয়ে করবি। পাড়ার সজল বললো কবে না-কি তোকে একটা ছেলের সাথে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে? ”
কেলেঙ্কারির বুঝি রক্ষা হবে না। সজলকে একবার পেলে বুঝিয়ে দিবে কন্ঠ কতো ধানে কতো চাল হয়।
” আবরিশাম ভাই ছিলো। আমার বান্ধবী অর্ষার হবু বর। আমার মাথা ব্যথা ছিলো তো এজন্য। ”
ইফতি কতক্ষণ চুপ থেকে বললো,
” দেখ কন্ঠ কিছু হলে বাসায় জানাস। আজকাল ছেলেরা কিন্তু… গেলাম আমি। ”
ইফতি কথাটা শেষ না করলেও কন্ঠর বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেই কথার মানে। হুট করেই প্রহরের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো কন্ঠর। খারাপ লাগছে খুব।
” ইফতি চলে গেছে! ”
” হ্যাঁ আল্লাহ বাঁচিয়েছে আমাকে। উনি তো শিক্ষক না হয়ে পুলিশ কিংবা সাংবাদিক হলে ভালো হতো। ওরে বাবা এতো এতো প্রশ্ন! ”
মেয়ের কথায় হাসলেন শারমিন সুলতানা। উনার হাতে নুডলসের বাটি। ইফতির জন্য নিয়ে এসেছিলো।
” তুই যেমন তোর সাথে আচরণও তেমন করে। তুই খেয়ে নে এখন এগুলো। ”
” আমি খাবো না। তুমি তোমার ইফতি বাবাকেই দিয়ে এসো বরং। ”
কন্ঠ মুখ ঝামটি দিয়ে বললো। কন্ঠর মা সত্যি সত্যি আরও কিছুটা নুডলস নিয়ে সমুদ্রের বাসায় গেলো।
টিপ টিপ বৃষ্টি বাইরে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রহর। ফেব্রুয়ারিতেও এরকম বৃষ্টি সচারাচর দেখা যায় না। চাকরির সূত্রে শহরে একাই থাকে প্রহর। মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে তার। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে কিছু দৃশ্য ভেসে উঠলো।
ঘড়িতে সময় রাত এগারোটা। বাইরে বৃষ্টি। বলতে গেলে মুশলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। ঐশী রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় শুয়েছে। ঐশী একটা শপিংমলে সেলস গার্ল হিসেবে কাজ করে। মূলত লেখাপড়ার জন্য শহরে থাকা। মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে ঐশী। আজকে বাসায় একা ঐশী। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকে দু’জন। স্মৃতি ঐশীর বান্ধবী। স্মৃতির মা অসুস্থ হওয়ার জন্য গ্রামে গেছে সে। কানে হেডফোন গুঁজে গান প্লে করতেই যাবে এমন সময় কলিংবেলের শব্দে নড়েচড়ে উঠলো ঐশী। এতরাতে কে এলো? ভাবুকতা পিছনে ফেলে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ঐশী। আলতো করে দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে প্রহর এসেছে কাক ভেজা হয়ে। ঐশী দ্রুত দরজা খুলে প্রহরকে ভেতরে আসতে বলে।
” একেবারে ভিজে গেলাম গো। ফোনটাও ভিজে গেছে। ভাবলাম তোমার এখানে বসি,বৃষ্টি কমলে ফিরবো।”
তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বললো প্রহর। ঐশী মুচকি হাসলো।
” না ফিরলেও সমস্যা নেই। স্মৃতি বাসায় নেই। আমি একাই আছি। চাইলে থেকে যেতে পারো তুমি। ”
” ভয় করবে না? ”
” কীসের ভয়?”
” আগুন আর ঘি একসাথে থাকলে যে ভয় পায় লোকে সেই ভয়।”
” হাহা! তুমি ভীষণ মজা করো। বসো আমি খাবার গরম করছি।”
ঐশী রান্নাঘরের দিকে এগুলো। প্রহর বসার ঘরে বসেই শরীর মুছছে। যদিও মজার ছলে সেই রাতে কথাগুলো বলেছিল কিন্তু মাঝরাতে সেটাই হলো! কন্ঠর সমস্ত অস্তিত্ব ভুলে প্রহর ঐশীর সাথে অন্তরঙ্গতায় ডুবে গিয়েছিল!
তাই গতরাতের ঘটে যাওয়া ঘটনায় বেশ চিন্তিত প্রহর। কন্ঠর সামনে কীভাবে দাঁড়াবে সে? কন্ঠ তো মরেই যাবে এসব জানলে। কাল থেকে ঐশীর সাথেও কোনো রকম যোগাযোগ করেনি প্রহর। নিজেকে নরকের কীট মনে হচ্ছে। যে মেয়েটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসলো তাকে কীভাবে ঠকালো সে?
চলবে,
গল্প দিতেই চেয়েছিলাম না তবুও কেনো জানি লিখলাম। তবে বড়ো লেখা সম্ভব হয়নি।
আগের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=388886830458935&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=390116230335995&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz