শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #অন্তিম_পর্ব

0
619

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#অন্তিম_পর্ব

ঋতুতে মাঘ মাস চলছে। প্রায় টানা এক সপ্তাহ ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ শেষে আজকে ঝলমলে রোদ উঠেছে।রোদের তাপে শীতের তীব্রতা অনেকাংশেই কম অনুভূত হচ্ছে।।পরিষ্কার আকাশ। সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল ঝলমলে সোনালী দিন।মধ্য দুপুর।জারিফ রুমে প্রবেশ করে।হাতে কয়েকটা প্যাকেট থাকে।প্যাকেট গুলো বিছানার উপর নামিয়ে রাখে। অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত থেকে রিচওয়াচটা খুলতে থাকে।এমন সময় ওয়াশরুম থেকে এক দৌড়ে ছুটে আসে জাহারা । গায়ে সাদা টাওয়েল পেঁচানো।এসেই দুইহাতে জারিফকে জড়িয়ে ধরে।

মন ভোলানো কন্ঠস্বরে বলে,,”বাবা,বাবা।কখন এলে তুমি?ভাই বললো তুমি চকলেটস আনতে গিয়েছো?”

জারিফ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।জাহারার চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।জারিফ দুইহাতে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,,”প্রিন্সেস তোমার চুল থেকে পানি ঝরছে। ভেজা চুলে তো তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

জারিফের কথাটা শেষ হতে না হতেই জাহারা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে,,”আমার চকলেটস কই বাবা?আমার চকলেটস চাইই চাই?”

জারিফ ব্যালকনি থেকে একটা শুকনো টাওয়েল এনে মেয়ের চুল মুছে দিতে থাকে। শান্ত গলায় বলে,,”আগে ড্রেস-আপ করে নাও। দেন চকলেটস দিচ্ছি কেমন।”

জাহারা টুপ করে জারিফের গালে একটা চুমু খায়। মিষ্টি হেসে বলে,,”ওকে বাবা।”

এরমধ্যে জয় ওয়াশরুম থেকে বের হয়।জয়ের পেছনে লিয়া।জয় এসে এক লাফে বিছানায় দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখায়ব করে। ঠোঁট উল্টিয়ে ভারী গলায় বলে,,”বাবা তুমি আমার চুলগুলোও মুছে দিবে। শুধু বোনেরই নয়, হুঁ।”

জাহারা ফোড়ন কে’টে বলে,,”ভাই তোর তো মাত্র এইটুকু এইটুকু চুল।ওটা আবার ভালো করে মুছার কি আছে।”

জাহারার কথা শুনে জয় গাল ফুলিয়ে থাকে।লিয়া ইশারায় জাহারাকে চুপ থাকতে বলে।লিয়া জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,”জয় আমি মুছে দিচ্ছি কেমন। বেশি সময় ভেজা চুলে থাকলে অসুখ করবে তো।এমনিতেই ঠান্ডা ওয়েদার।”

জয় ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”নাহ্, মাম্মাম।আমি বোনের মতো বাবার কাছেই মুছতে চাই।”

ছেলের জেদ মূলক কথাটা শ্রবণ হতেই লিয়ার খানিকটা রা’গ হয়।লিয়া তপ্তশ্বাস ছাড়ে।জারিফ একনজর লিয়ার দিকে দৃষ্টি বুলায়।শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজা লিয়ার। চুলগুলো খোঁপা করা।খোপাতে কাঠের স্টিক গোঁজা।কপালের উপর ছোটো ছোটো এলোমেলো চুল পড়ে আছে।জারিফের কাছে এই লুকে লিয়াকে বেশ সুন্দর লাগছে।সাথে একদম সংসারী বউ লাগছে।বাচ্চাদের গোসল করাতে গিয়ে শাড়ির নিচের দিক অনেকটা ভিজে গিয়েছে।জারিফ লিয়াকে উদ্দেশ্য করে শীতল কন্ঠে বলে,,
“লিয়া তুমি জাহারাকে ড্রেস-আপ করিয়ে দাও।আমি জয়কে দেখছি।আর তুমি তো অনেকটা ভিজে গিয়েছো ‌।তাই জাহারাকে ড্রেস পড়িয়ে তুমি দ্রুত শাওয়ার নিয়ে নাও। এমনিতেই তোমার কোলড এলার্জি আছে।ভেজা কাপড়ে থাকলে সমস্যা হবে তো।”

লিয়া জাহারাকে ড্রেস পড়িয়ে দেয়। সুন্দর করে চুলগুলো চিরুনি করে দেয়।জাহারা লং হোয়াইট ফ্রক পড়েছে। শুভ্র গায়ে শুভ্র রঙের জামায় একদম শুভ্র পরি লাগছে।জয় হোয়াইট আর রেড এর মিশ্রন গেঞ্জি পড়েছে।আর ছাই রঙা হাফ জিন্স প্যান্ট।

জারিফ বিছানার একপাশে রাখা প্যাকেটের মধ্য হতে একটা প্যাকেট হাতে নেয়।ভেতর থেকে দুইটা চকলেট বক্স বের করে। একটা ছেলের হাতে দেয় অন্যটা মেয়ের হাতে।তখন সেলুন থেকে জয়ের হেয়ার কাট দিয়ে ড্রাইভারের সাথে জয়কে বাসায় পাঠায়।জারিফের কিছু কাজ থাকায় টাউনহলে যায়।জয় ড্রাইভারের সাথে ফিরতে রাজি হচ্ছিলো না।সেই সময় জারিফ বলেছিলো,তুমি বাসায় যাও আমি তোমাদের জন্য চকলেটস,আর খেলনা নিয়ে ফিরছি।”

জয় চকলেটের প্যাকেট একহাতে নেয়।আবার অন্য হাতটা জারিফের সামনে মেলে ধরে বলে,,”বাবা খেলনা।খেলনা কই?”

জারিফ কিঞ্চিত হাসে।তারপর আর দুইটা প্যাকেট হাতে নেয়।প্যাকেট থেকে দুইটা খেলনা গাড়ি বের করে ছেলে মেয়েকে দেয়।ছেলে মেয়ে দুজনেই মহা খুশি হয়।দুজনেই জারিফকে জড়িয়ে ধরে। দুজনেই জারিফের দুইগালে চুমু খায়।জারিফ দুইহাতে ছেলে মেয়েকে আগলে নেয়।

বিকেলে জয় জাহারা বাবা মায়ের সাথে পার্কে ঘুরতে যায়।ভাই-বোন পার্কে বিভিন্ন ইভেন্টে উঠে। পার্ক থেকে ফেরার সময় স্ন্যাকস করে বাসায় ফিরতে থাকে।জারিফ লিয়া দুইপাশে আর মাঝে জয় আর জাহারা বসে ক্যাটবেরি খাচ্ছে আর বিভিন্ন কথা বলছে।ড্রাইভার একমনে ড্রাইভ করছে ।নগরীতে সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ আগেই।রাতে শহরের পিচঢালা রাস্তা দিয়ে চলতে বেশ লাগে। রাস্তার পাশের দোকান পাটের বিভিন্ন আলোক সজ্জায় শহরের পরিবেশটাই অন্যরকম আকর্ষণীয় লাগে। রাতের শহরটা আজ কুয়াশার চাদরে মুড়ানো।সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বাচ্চাদের কে হুডিওয়ালা শীতের পোশাক পড়িয়ে দেয় লিয়া।লিয়ার গায়ে শাল জড়ানো।জারিফ ব্লাক হুডি জ্যাকেট পড়েছে।এরমধ্যে জয় সিট ছেড়ে জারিফের কোলের উপর বসে জানালা দিয়ে বাইরের আলো অন্ধকার দৃশ্য দেখতে থাকে।জাহারাও সাথে সাথে লিয়ার কোলের উপর বসে পড়ে।

জারিফ লিয়ার দিকে কিছুটা চেপে বসে। কিয়ৎক্ষন পরেই মুচকি হেসে লিয়ার কানের পাশে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,”বিয়ের পর বউকে নিয়ে ঠিকমতো ঘুরাঘুরিই করতে পারলাম না।বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর অথচ,মনের মতো করে বউকে নিয়ে ঘোরাফেরা করাই হলো না।”

লিয়া জারিফের দিকে শীতল চাহনিতে চেয়ে নির্বিকার গলায় বলে,,”কারনটা কি ? আপনার মনের মতো করে ঘোরাফেরা করতে না পারার মহান কারনটা কি,জনাব?”

জারিফ শুকনো ঢোক গিলে নেয়। দৃষ্টি সরু করে কপাল কুঁচকে বলে,,”কারন আমার বাচ্চারা।একসাথে দুইটা বাচ্চা নার্সিং করা যে কতটা জটিল।সেটা আমি হারে হারে টের পেয়েছি।পড়াশোনা কালীন সময়ে ,জটিল জটিল ক্যালকুলাস অনায়াসেই সলভ করেছি। চাকরিতে জটিল জটিল কেস সলভ করছি।এসব এতটা কঠিন নয়।যতটা কঠিন এখন লাগে বাচ্চা লালন-পালন করায়।তারপরে ঠিকমতো বউয়ের আদর পাইনা।বউকে ফ্রি পাওয়া মানে যেনো,আকাশের চাঁদ পাওয়া সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে বাচ্চা হওয়ার পর থেকে।দিনে তো তোমাকে ফ্রি পাওয়া যায়ই না।রাতে আদর করবো।সে কপালও ফুটো আমার।একজন ছেড়ে অন্যজন তাদের মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।আমার তো মনে হয় ঘুমের মধ্যেও আমার বাচ্চারা তাদের মাম্মাম কে পাহারা দেয়।যাতে নতুন করে তাদের কোনো ভাগীদার না আসে।সেইজন্য।”

জারিফের কথা শুনে লিয়ার ভীষণ হাসি পায়।লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শব্দহীন হাসে। তারপর জারিফের কানের পাশে মুখ নিয়ে একদম মৃদুস্বরে বলে,,”কি করার? এরা তো আপনারই ভালোবাসার নিদর্শন। তাহলে বোঝেন এবার এরা কতটা ক্লেভার।”

এরমধ্যে জারিফের অফিসিয়াল পাজেরো গাড়িটা বাসার সামনে থামে।জারিফ জয়ের হুডিটা মাথায় তুলে দেয়। তারপর একহাতে গাড়ির ডোর খুলে নিচে নামে।নিজে নেমে ছেলে মেয়েকে নামায়।লিয়া অপর পাশের গেইট দিয়ে নামে।বাসায় গিয়ে লিয়া ফ্রেশ হয়ে নেয়।জয় জাহারা বাসায় এসেই এক দৌড়ে ছুটে দাদুভাই – দাদুমনির রুমে চলে যায়। বাইরে থেকে আসলে এরা দুজনে হয় জারার কাছে নয়তো দাদুর রুমে যায়। বিভিন্ন গল্প করতে।বাইরে গিয়ে কি কি দেখলো সেসব গল্প করতে।লিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়।জারিফ ফোনে অফিসিয়াল কথা বলছিলো ব্যালকনির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।লিয়া তোয়ালেটা আনতে ব্যালকনিতে যেতে নেয়।জারিফকে পাশ কাটিয়ে ব্যালকনিতে যেতে নেয় লিয়া।ঠিক সেই মুহূর্তে লিয়ার হাতে টান পড়ে।লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে জারিফের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝায়,,”কি হয়েছে?”

জারিফ ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”এখন আমি বাসায় আছি।আপনি কালকে অফিসে দেখা করবেন।আর নয়তো অফিস আওয়ারে ফোন দিয়েন।”

কথাটা শেষ করেই জারিফ কল কে’টে দেয়।ফোনটা টাউজারের পকেটে পুরে রাখে। লিয়া ইশারায় হাতটা ছাড়তে বলে।জারিফ লিয়ার হাতটা না ছেড়ে লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।লিয়ার মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।জারিফ লিয়ার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের পানিগুলো মুছে দেয়।জারিফ লিয়ার মুখের দিকে এগোতে নেয়।লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঢুক গিলে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ভরাট গলায় বলে,,”ছাড়ুন। বাচ্চারা চলে আসবে যেকোনো সময়।”

জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”সব সময় আমার রোমান্সে বাধা সৃষ্টি করার জন্য আমার ছেলে-মেয়ে যেমন আছে। ঠিক তেমনি আমার বউটাও।জয় জাহারা আব্বু আম্মুর রুমে আছে।এখনই আসবে না।”

লিয়া কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,,”রাতের জন্য রান্না করতে হবে।আমাকে এখন কিচেনে যেতে হবে।”

জারিফ তপ্তশ্বাস ফেলে।জারিফ বিরক্তিকর ফেস করে বলে,,”সবার দিকে,সব বিষয়ে তোমার নজর আছে। শুধু নজর নেই আমার দিকে।সবার আগে নিজের বরের দিকে নজর দাও।বরকে সন্তুষ্ট করো। পরে অন্যসব।”

কথাটা শেষ করে জারিফ লিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। লিয়ার ঠোঁট ছেড়ে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে ঠোঁট মুছে নেয়।লিয়া বুক ভরে বারকয়েক শ্বাস টেনে নেয়।ব্যালকনি থেকে শীতল মৃদু বাতাস আসতে থাকে।লিয়ার গায়ে শীতের পোশাক না থাকায় লিয়ার ভীষণ শীত করতে থাকে।লিয়া দুই হাতের তালু ঘসে নেয়।লিয়ার পাতলা ওষ্ঠদ্বয় মৃদু কম্পমান।লিয়ার কম্পমান ওষ্ঠ দেখে জারিফ স্মিত হাসে।জারিফ লিয়াকে লক্ষ্য করে ওর গায়ে কোনো শাল না থাকায় শীত করছে।লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে অস্ফুট স্বরে বলে,,”ঠান্ডা বাতাস আসছে।শীত করছে তো।”

লিয়ার কথাটা বলতে দেরি।জারিফের লিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে দেরি হয়না।জারিফ লিয়ার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়।লিয়া জারিফের হাতের কাছে জ্যাকেট মুঠ করে ধরে।জারিফ সফট ভয়েজে বলে,,”আমি আছি তো।তুমি চাইলে তোমার শীতলতা দূর করতে পারি। তোমার উষ্ণতা হতে পারি।”

জারিফের কথার মাঝেই জাহারা রুমে এসে দুই হাত কোমড়ে রেখে হাঁক ছেড়ে ডেকে বলে,,”বাবা মাম্মাম।”

জাহারার ডাকটা শ্রবণ হতেই লিয়া জারিফ দু’জনেই ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়।লিয়া লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে নিশ্চুপ থাকে।জারিফ একহাতে মাথা চুলকিয়ে বলে,,”হ্যা প্রিন্সেস বলো।তোমার গল্প করা শেষ?”

জাহারা ঘাড় নাড়িয়ে বলে,,”হ্যা শেষ তো।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।তাই চলে আসলাম।”

জারিফ সময় দেখে নিয়ে বলে,,”আজ এত দ্রুতই ঘুম পাচ্ছে।কেবল রাত আটটা বাজতে চলছে।এক্ষুনি ঘুম পাচ্ছে। রোজ তো রাত দশটা -এগারোটা পার করে দাও ঘুম আসতে।”

জাহারা নাক মুখ কুঁচকে বলে,,”বাবা তুমি মাম্মাম কে হাগ করেছিলে।তুমি মাম্মাম কে আদর করছিলে। কিন্তু মাম্মাম তো অনেক বড়।আমার স্কুলের মিস বলেন, ছোটদের কে আদর করতে হয়।আর বড়দেরকে রেসপেক্ট করতে হয়। তাহলে তুমি কেনো মাম্মাম কে আদর করছিলে বাবা। মাম্মাম তো ইয়া বড়।”

একহাত দিয়ে উঁচু করে দেখিয়ে শেষের কথাটা জাহারা বলে।মেয়ের কথা শুনে জারিফের শুকনো কাশি উঠে যায়।লিয়াও বেশ লজ্জায় পড়ে যায়।মনে মনে জারিফকে খানিকটা বকে নেয়।জারিফ কয়েকবার কেশে নিজেকে স্বাভাবিক করে।জাহারাকে কোলে তুলে নেয়। তারপর শীতল কন্ঠে বলে,,
“মাম্মামকে অনেক কষ্ট সয্য করতে হয়েছে তোমাদেরকে এই পৃথিবীতে আনতে। মাম্মাম তোমাদের কে কত কেয়ার করে ভালোবাসে।সো তোমার মাম্মাম ডিজার্ব করে এটা।তোমার মাম্মাম গুড গার্ল।আর গুড গার্লরা সবার আদর-ই ডিজার্ব করে। ক্লিয়ার?”

জাহারা জারিফের কাঁধে মাথা রাখে। কিয়ৎক্ষন পরেই নরম গলায় বলে,,”হুম।আমিও মাম্মাম এর মতো গুড গার্ল হবো।আর বেশি বেশি সবার আদর পাবো।”

জারিফ মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে মুখটা মলিন করে রাশভারী গলায় বলে,,”আমার প্রিন্সেস কে আমি বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই রাখব।বাইরে গেলেই ভাবি কখন বাসায় ফিরবো।আর আমার প্রিন্সেস আর প্রিন্স কে দেখতে পাবো।বাসায় ফিরে এদের দু’জনের মিষ্টি মুখটা না দেখলে আমার ভালোই লাগে না।তাই ভাবছি প্রিন্সেস কে বিয়ে দিলে ঘরজামাই রাখব।যাতে সবসময়
চোখের সামনেই থাকে।”

জারিফের কথাটা শেষ হতেই লিয়া নির্বিকার ভাবে বলে,,”এরকমটা একসময় আমার আব্বুও বলতো।অথচ দেখুন, বর্তমান অবস্থা।বাবার বাড়ি গিয়ে দুইদিনও তো ঠিকমতো থাকতে দেননা।ফোনের পর ফোন করতেই থাকেন।কখন আসবো?কখন আসবো?এই গুলোই থাকে প্রতিটা বরের মূখ্য বাক্য।ঠিক বলেছিনা?”

লিয়ার প্রশ্নে জারিফের মুখটা বেশ থমথমে হয়ে যায়।লিয়া বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,,”আজকে দুপুরে এরা ঘুমায়নি । সেইজন্য তো আজ এত আর্লি ঘুম পাচ্ছে।তা জয় কোথায়?তার ঘুম পাচ্ছে না।”

জাহারা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”আমি জানিনা মাম্মাম।তুমি ভাইয়ের থেকে জেনে নাও।আর ভাই ফুপ্পির সাথে খেলছে তো।”

এরমধ্যে জয় রুমে চলে আসে।এসেই বড় করে হামি দিতে থাকে।লিয়া বলে,,”তোমরা থাকো আমি দ্রুত দুধ গরম করে আনছি।”

লিয়া কিচেন থেকে দুই গ্লাস দুধ এনে দুজনের হাতে দেয়। দু’জনেই ঢকঢক করে গ্লাস ফাঁকা করে দেয়।লিয়া টিস্যু দিয়ে দু’জনের মুখ মুছে দেয়। তারপর বলে,,”আজকে তোমরা বাবার কাছে ঘুমাও।আমার কাজ আছে।কাজ শেষ করেই আসছি। তোমাদের দাদুমনি কিচেনে আছেন।আমি যাচ্ছি হেল্প করতে।তাই আজকে আর ঝামেলা করো না কেমন।”

জয় জাহারা দুজনেই মাথা নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেয়।তবে জারিফ লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”লিয়া আমার কাছে শোয়া নিয়ে এরা ঝ’গড়া বাঁধিয়ে ছাড়বে।কে কোথায় শুবে তাই নিয়ে।সো তুমি ঘুম পাড়িয়ে দাও।আর তোমাকে এখন রান্না করতে হবে না।আমি চারুকে বলছি সব করতে।”

লিয়া ছোট করে বলে,,”ঠিক আছে।”

লিয়া বালিশ গুলো ঠিক করে বলে,,”গুড গার্ল আর গুড বয়ের মতো এবার শুয়ে পড়ো। আর ফাস্ট ঘুমিয়ে পড়ো।”

দু’জনেই একসাথে বলে উঠল,,”মাম্মাম গল্প শুনবো।”

লিয়ার দুইপাশে দুইজন শুয়ে রবিনহুডের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে।লিয়া দু’জনের গায়ে ব্লাঙ্কেট টা ভালো করে দিয়ে বিছানা থেকে নিঃশব্দে নামে।জারিফ ব্যালকনিতে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো।লিয়া ব্যালকনিতে গিয়ে জারিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“ডিনার করবেন চলুন।আমার ঘুম পাচ্ছে।”

জারিফ দৃষ্টি ফোনে রেখেই বলে,,”এখন ক্ষুধা নেই।একটু পর ডিনার করি।”

লিয়া আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসে। এসে রুমজুড়ে ছড়িয়ে – ছিটিয়ে থাকা খেলনা গুছিয়ে রাখে। অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো চিরুনি করে নেয়। চুলগুলো বেনুনি করতে থাকে। সেই সময় লিয়ার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস পড়ে।জারিফ লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে।আয়নাতে দু’জনের চোখাচোখি হয়।জারিফ নরম গলায় বলে,,”চলো ডিনার করে নিই।আমারো প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।তোমাকে জড়িয়ে ধরে প্রশান্তিময় একটা লম্বা ঘুম দেবো।আর এর থেকে বেশি কিছু যদি আবদার করি।তাহলে তো তুমি বলবে, সারাদিন বাচ্চারা জ্বালায় আর রাতে বর।সো মনের ইচ্ছে গুলোকে আপাতত দমিয়েই রাখি।”

লিয়া স্মিত হাসে।এরমধ্যে শব্দ করে লিয়ার ফোনটা বেজে উঠে।জারিফ বিরক্তিকর মুখায়ব করে লিয়াকে ছেড়ে দুই হাত জ্যাকেটের পকেটে গুঁজে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে থাকে।লিয়া একহাত দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনে Orin নামটা।মাঝে মধ্যেই কথা হয় লিয়ার সাথে।ফিহা অরিন তুলি সবারই বিয়ে হয়েছে।সবাই যার যার সংসার বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত লাইফ লিড করছে।অরিনের সাথে ভালো- মন্দ অনেক কথাই হলো।দুইজনেই কুশলাদি বিনিময় করে বাচ্চাদের কথা জিগ্গেস করে।
ফোনের ওপাশ থেকে অরিন চঞ্চল গলায় বলে,,”লিয়া তুই তো খুব দক্ষ।একসাথে দুইটা বাচ্চাকে কিকরে সামলাস হ্যা?যেখানে আমি একটা বাচ্চা সামলাতেই হিমশিম খেয়ে বসি।আমাকে একটু বলনা দোস্ত।কিকরে এত সুন্দর করে সবটা হ্যান্ডেল করিস।”

লিয়া কিঞ্চিত হাসে। ঠোঁট প্রসারিত করে ফাজলামি করে বলে,,”সিক্রেট। সিক্রেট আছে বোহেনা।সো বলা যাবে না।”

অরিন গমগমে স্বরে বলে,,”ওকে বলতে হবে না।তার আগে বল বাচ্চা কারটা বেশি জ্বালায়।নিজেরটা না শ্বাশুড়ির টা?”

অরিনের কথা শুনে লিয়া বিস্মিত হয়না।কারন লিয়া ভালো করেই জানে,সব কিছু পাল্টালেও অরিনের চঞ্চল আর ঠোঁট কাঁটা স্বভাব পাল্টাবে না ইহজীবনে।লিয়া উত্তর না দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু ভেবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।লিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,”তুই আগে বল না হয়।তোরও তো বেশ অভিজ্ঞতা আছে।তোর অভিজ্ঞতা থেকেই বল।”

অরিন চিলমুডে বলতে থাকে,,”হুম।সে তো আছেই।আমার মনে হয় শ্বাশুড়ির টা।দিনে নিজের বাচ্চা আর রাতে শ্বাশুড়ির বাচ্চা।আই মিন মাই হ্যাজবেন্ড।”

অরিনের কথা শুনে লিয়া খিলখিলিয়ে শব্দ করে হাসতে থাকে।অরিনের সাথে কথা বলছে বুঝতে পেরেই জারিফ প্রথমেই রুম থেকে প্রস্থান করে। আরো ভালো-মন্দ কথাবার্তা চলে দুই বান্ধবীর।

কয়েকদিন পর,,
সকালে জয় জাহারাকে স্কুল ড্রেস পড়িয়ে রেডি করে লিয়া। তারপর ব্রেকফাস্ট করাতে ডায়নিং এ নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই জারিফ,জারিফের বাবা ছিলেন।ওমলেটস আর নুডুলস ডায়নিং টেবিলে দেখে জাহারা কপাল কুঁচকে বলে,,”মাম্মাম আমি নুডুলস খাবো না।আমি পাস্তা খাবো।”

জয় ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,,”আমি তো নুডুলসই খাবো।”

জয়ের কথা শুনে জাহারা মুখ ভেংচি কা’টে।লিয়া মৃদু ধমকের সুরে বলে,,”জাহারা স্কুলের টাইম হয়ে যাচ্ছে তো।তাই বলছি আজকের মতো নুডুলসই খাও।কালকে পাস্তা করে দিবো।”

জাহারা ঠোঁট উল্টে বলে,,”নো।আমার পাস্তা-ই চাই।”

লিয়া চোখ রাঙিয়ে কিছু বলতে যাবে।সেই সময় জারিফ কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,,”লিয়া জাহারা যখন বলছে নুডুলস খেতে ইচ্ছে করছে না।তখন থাক না জোর করার কি আছে।পারু পাস্তা বানিয়ে দাও তো।”

লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”এখন পাস্তা বানাতে গেলে তো দেরি হয়ে যাবে।জাহারাকে স্কুলে দিয়ে আপনার অফিসে যেতেও তো দেরি হবে।”

জারিফ সাথে সাথে দৃঢ় কন্ঠে বলে,,” সমস্যা নেই আমি ওয়েট করছি।”

জারিফের বাবাও জারিফের সাথে সহমত পোষণ করে বলে,,”জাহারা যখন বলছে পাস্তা খাবে।তাই বানিয়ে দাও বৌমা।”

লিয়া কিচেনে যেতে থাকে।সেই সময় জাহানারা বেগম বলেন,,”লিয়া তুমি দাদুভাইকে ততক্ষনে খাওয়ে দাও।আমি পাস্তা বানাচ্ছি।”

এরমধ্যে জারা এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ে।জারা পরেটা আর ডিম ভাজি মুখে পুরে চিবুতে চিবুতেই বলে,,”কিউটিপাই তোমরা রেডি। স্কুলে যাবে?”

জাহারা ভ্রু কুঁচকে বলে,,”হুম। স্কুল ড্রেস পড়ে তো স্কুলেই যায় ঠিক না, ফুপ্পি?”

জারা জাহারার গাল টেনে দিয়ে বলে,,”ইয়েস কিউটি।”

জারা থার্ড সেমিস্টারে পড়ে। মার্কেটিং এ অনার্স করছে।জেরিনের তিন বছরের মেয়ে বাচ্চা আছে একটা।ওরা মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। বাচ্চাদের ব্রেকফাস্ট শেষে লিয়া গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।জারিফ গাড়ির ডোর খুলে দিতেই।জয় জাহারা একলাফে গাড়িতে উঠে পড়ে।লিয়াকে উদ্দেশ্য করে জারিফ বলে,,”বায়।টেক কেয়ার।”

বাচ্চারা একহাত উঁচু করে লিয়াকে টাটা দিয়ে বলে,,”বায় মাম্মাম।”

লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”একদম দুষ্টামি করবে না।কারো সাথে বেয়াদবি করবে না।ঠিক আছে।”

জয় জাহারা দু’জনে একসাথেই বলে উঠে,,”ওকে মাম্মাম।”

জারিফ ছেলেমেয়েকে স্কুলে দিয়ে নিজে অফিসে চলে যায়।ছুটির সময় ড্রাইভার গিয়ে বাচ্চাদেরকে বাসায় পৌঁছে দেয়।

আসফির স্কুলে প্রোগ্রাম থাকায়।তাসনিম আসফির সাথেই আসফির স্কুলে যায়।আলিফেরও আসার কথা আছে।আলিফ হসটপিটাল থেকে রাউন্ড শেষ করেই যত দ্রুত সম্ভব আসবে।আসফি ক্লাস ওয়ানে পড়ে। প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে আধা ঘন্টা হবে।কখন থেকে আসফি উসখুখ করেই চলছে।আর বাবার আসার পথ চেয়ে আছে।আসফি দৃষ্টি সরু করে করুণ গলায় বলে,,”মাম্মাম,পাপা কখন আসবে? প্রোগ্রাম তো অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে।অথচ এখনো পাপা আসলো না।”

এই একই কথা আসফি আধা ঘন্টা যাবৎই একটু পরপর বলে চলছে।সেইজন্য তাসনিম যথেষ্ট বিরক্ত আসফির উপর। তাসনিম একটু নড়েচড়ে বসে।একহাতে শাড়ির কুচিটা ঠিক করে নেয়।গায়ে ঘি কালারের শাল। তাসনিম বিরক্তিকর গলায় বলে,,”জানিনা আমি।তোমার পাপা কখন আসবে সেটা তোমার পাপাই জানে।আই হেভ নো আইডিয়া। আদৌতেও তিনি আসবে কি আসবে না?”

তাসনিম এর কথা শুনে আসফির ফর্সা মুখটায় আঁধার নামে।মন খা’রাপেরা ঘিরে ধরে।সবার প্যারেন্টসই চলে আসছে।সবার সাথেই বাবা-মা বসে আছে।তার বাবাই এখনো আসেনি।তাই মনটা ভীষণ খা’রাপ লাগছে। তাসনিম নিজেও আলিফের উপর মনেমনে ক্রুদ্ধ হয়েছে। তাসনিম অস্ফুট স্বরে বলে,ওনার কাছে সব সময় কাজই আগে।ওদিকে জনগনের সেবা করে চলছে।আর এদিকে বৌ বাচ্চাকে সময় দিতে কুণ্ঠাবোধ করে।আজকে কতবার করে বলেছি হসপিটালে গেলেও যেনো দ্রুত চলে আসে।অথচ এখনো আসলোই না। তাসনিমের ভাবনার মাঝেই ওর পাশের ফাঁকা চেয়ারে কেউ বসে পড়ে। তাসনিম ঘাড় ঘুরিয়ে আলিফকে দেখতে পায়।পরনে সাদা কালারের শার্ট আকাশি কালারের প্যান্ট। শার্টের উপরে আকাশি কালারের ব্লেজার। আলিফের মুখে অমায়িক হাসি লেগে আছে।আলিফকে দেখে তাসনিম নির্বিকার রয়।আলিফ বুঝতে পারে দেরি করে আসায় তাসনিম বেশ রেগে আছে।

আলিফ হালকা কেশে বলে,,”আসফি বাবা এইতো পাপা চলে এসেছে।এবার হ্যাপি তো।”

আসফি আলিফকে দেখে একগাল হাসে। হাস্যজ্বল মুখে বলে,,”ইয়াহ। থেংকিউ পাপা।”

আলিফ একহাতে আসফির কপালের চুলগুলো পেছনে সরিয়ে দেয়।আসফি সোজা হয়ে বসে পারফরম্যান্স দেখতে থাকে।আলিফ তাসনিমের দিকে ঝুঁকে বলে,,
“ওহ্ মাই সুইটহার্ট।আর রা’গ করে থেকো না প্লিজ।সরি।সরি বলছি তো লেইট করার জন্য।এখন এত লোকজনের মধ্যে কান ধরে উঠবস করতে বলো না, প্লিজ।তোমারই তো বর।সো মাফ তো করাই যায়।”

কথাটা শেষ করে আলিফ তাসনিমের হাতের উপর একহাত রাখে। তাসনিমের আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল গুঁজে দেয়। তাসনিম মিষ্টি হেসে অন্যহাতটা আলিফের হাতে রাখে আড়ালে।আলিফ বড় করে শ্বাস টেনে নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”উফ্! বাঁচা গেলো।বউয়ের গ্রহন লাগা মুখ দেখলে। হার্টবিট যেনো মিস হয় আমার।বরের যাতে হার্টফেল না হয়,সেইজন্য হলেও সব সময় হাসি খুশি থাকবে।লাভ ইউ সো মাচ সুইটহার্ট।”

তাসনিম একদম মৃদুস্বরে বলে,,”লাভ ইউ সো মাচ টু।”

দুপুরে ডায়নিং টেবিলে বসে আছে জয় জাহারা।জাহারা দুইহাত টেবিলের উপর ভাঁজ করে মুখটা মলিন করে আছে।জয় ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”মাম্মাম বাবা কখন আসবে?বাবা আসলে তারপর আমি লাঞ্চ করবো।আমি এখন লাঞ্চ করবো না।”

লিয়া উত্তরে বলে,,”তোমার বাবার আসতে দেরি হবে। তোমরা লাঞ্চ করে নাও।”

জাহারা ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে উঠলো,,”বাবাকে ফোন করো।ফোন করলেই বাবা ফাস্ট চলে আসবে।”

লিয়া চেয়ার টেনে দু’জনের মাঝে বসে। মৃদুস্বরে বলে,,”তোমাদের বাবার মিটিং আছে লাঞ্চের পরে।কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বলেছে, মিটিং শেষ করে আসতে আসতে চারটা বেজে যাবে।আজকে আর লাঞ্চ করতে বাসায় আসবে না।একেবারে বিকেলে আসবে।”

লিয়া দু’জনকে খাইয়ে দিতে থাকে।কাজের মেয়েটা দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সবটা শুনছিলো।চারু ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,আপামনির দেখছি বেশ ধৈর্য্য।এরা দুজনে এত্ত কথা বলে। আর এতো দুষ্টামি করে সবটা কত সুন্দর করে সামলে নেয়।”

চারুর কথা শুনে লিয়া মৃদু হাসে। ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,,”মা হলে সব সম্ভব হয়।মায়েরা সব পারে।এইযে,এদের দুষ্টামিতে মাঝে মাঝে বি’রক্ত হই। তারপরও ইনজয় করি এদের করা ছোট ছোট দুষ্টুমি। উপভোগ করি বাচ্চাদের প্রতিটা আবদার। উপভোগ করি তাদের খুনশুটি ঝগড়াগুলো।আর সবথেকে মন ভুলানো এদের ডাক।যা শুনলেই প্রশান্তি বয়ে যায় মনে।”

কয়েকদিন পর,,
রাত এগারোটা টা বাজে।জয় জাহারা ঘুমিয়ে পড়েছে।জারিফ বাইরে থেকে এসে দেখে বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাচ্চাদের জন্য আনা চকলেটস বক্স বালিশের পাশেই রেখে দেয়।জয় জাহারার কপালে আলতো করে চুমু খায়।লিয়া বিছানার পাশে পা ঝুলিয়ে বসে বলে,,”এতো দেরি হলো আপনার।অনেক বুঝিয়ে বলার পর ওরা ঘুমিয়েছে।জয় জাহারা তো বারবার বলছিলো,বাবা আসার পরেই ঘুমাবো।”

জারিফ ব্লেজারটা গা থেকে খুলে লিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে জবাবে বলে,,”প্রোগ্রাম শেষ হতে লেইট হয়ে যায়।আর তোমাকে তো ফোন করে বলেছিলাম।আসতে দেরি হবে। ওখানে ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিলো।সো ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করতে। আমি খেয়ে এসেছি।তুমি ডিনার করেছো। আব্বু আম্মু খাবার খেয়েছে?সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি?”

লিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক বলে।জারিফ মৃদুস্বরে বলে ,,”প্লিজ ব্রিং এ কাপ অফ কফি ফর মাই ফ্রেশনেস।”

লিয়া”ঠিক আছে”বলে কিচেনে যায়।জারিফ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। নেভিব্লু কালারের হুডি সোয়েটার আর ব্লাক টাউজার।টাওয়েল দিয়ে মুখটা মুছে নেয়।একহাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে ঠেলে ঠিক করে নেয়।ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে বসে স্ক্রল করতে থাকে।লিয়া দুই মগ কফি হাতে রুমে আসে।রুমে জারিফকে দেখতে না পেয়ে ব্যালকনিতে আসে।জারিফের পাশে বসে।একটা মগ জারিফের দিকে বাড়িয়ে দেয়।জারিফ মগটা নিয়ে আলতোকরে কফিতে চুমুক দেয়।লিয়াও কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।রুম থেকে হালকা আলো ব্যালকনিতে আসছে।আকাশে চাঁদ উঠেছে।তবে কুয়াশার জাল ভেদ করে ধরনীকে রুপালি আলোতে মৃদু আলোকিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে চাদ মামা।শাড়ির উপর শাল জড়িয়ে রেখেছে লিয়া।কফি খাওয়া শেষে মগ রেখে লিয়া জারিফের কাঁধে মাথা রেখে বড় করে হামি দিয়ে বলে,,”ঘুমাবেন না?নাকি সারারাত এখানে এভাবে বসেই কাটিয়ে দেওয়ার প্লান করেছেন?”

লিয়ার কথাশুনে জারিফ কিঞ্চিত হাসলো।শীতল চাহনিতে চেয়ে বলে উঠলো,,”এভাবে থাকতে বেশ ভালো লাগছে।আর এভাবে সারাটা রাত কাটাতে মন্দ লাগবেনা।তুমি পাশে থাকলে প্রতিটি মূহুর্তই আমার কাছে স্পেশাল লাগে। সেখানে ইনভায়রনমেন্ট হাইলি হওয়া নো নীড।আমার ভালো থাকা,ভালো লাগা সব কিছুতেই শুধু তোমাকেই চাই।জীবনে কি পেয়েছি কি পায়নি।ওটা নিয়ে আমি ভাবিনা।তোমায় নিজের করে পেয়েছি।এটাই অনেক।কোনো কিছুর বিনিময়ে তোমাকে হারাতে চাইনা।জীবনে সবথেকে দামী জিনিস পেয়েছি আমি।সেটা হলো তুমি।আই লাভ ইউ জান।আর তোমার দেওয়া সেরা গিফট আমাদের ছেলে-মেয়ে।”

লিয়া কিছু ভেবে নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়,,”আমার কাছে সবচেয়ে স্পেশাল মূহুর্ত কোনটা ছিলো জানেন?যেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন।স্মৃতির খামে আমার মনে গেঁথে আছে সেইক্ষণটা,সেইদিনটা।”

জারিফ সরাসরি প্রশ্ন করে,,”কোন দিনটা? টেল মি লিয়া?”

“আমি ক্যাডেটে থাকাকালীন যেদিন আপনি নিজ থেকে ফোন করে আমার খোঁজ নিয়েছিলেন সেইদিন।”

জারিফ একহাতে আলতোভাবে লিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,,”ওহ্।জানো লিয়া মাঝে মাঝে মনে হয়।তোমার সাথে আমার মনটা পাল্টাপাল্টি করি।যাতে তুমি বুঝতে পারো তোমায় আমি কতটা ভালোবাসি।”

লিয়া স্মিত হাসে।আবেগময় কন্ঠে বলে,,”লাইফে খুশি থাকার জন্য। খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন না।প্রয়োজন শুধু এমন একটা মানুষ।যত কষ্টই আসুক না কেনো।সবসময় পাশে থেকে বলবে। চিন্তা করো না আমি তো আছি ।আর আমি বিশ্বাস করি,আপনি এমনই একজন মানুষ।আমিও আপনাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি।”

জারিফ সফট ভয়েজে বলে,,”হুম।আই নো। কেমিস্ট্রির ভাষায় লিয়া তুমি আমার অক্সিজেন। বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন যেমন প্রয়োজন।তেমনি ভালো থাকার জন্য ,সুখ দুঃখ,ভালোমন্দ প্রতিটা সময় আমার #শুধু_তোমাকেই_চাই।”

লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”আর ইংরেজীর ভাষায় আপনি আমার এভরিথিং।শুরু থেকেই আমার একটা বাক্যই ছিলো । কিছু পাই বা না পাই আই ওয়ান্ট অনলি ইউ।তবে আপনাকে পাওয়ার সাথে সাথে অনেক কিছুই পেয়েছি,নতুন বাবা মা,বোনের মতো ননদ। সুন্দর একটা পরিবার।আর সবথেকে বেস্ট গিফট তো আমাদের সন্তান।আমাদের ভালোবাসার অংশ।”

প্রতিটা ভালোবাসাই এভাবে পূর্ণতা পাক। পূর্ণতা পাক প্রতিটা সম্পর্ক। প্রতিটা সম্পর্কই যেনো জীবনের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।ভালোবাসা, বিশ্বাস, সমীহ, শ্রদ্ধাবোধে যেনো অটুট থাকে প্রতিটা সম্পর্ক।

সমাপ্ত 💞

[আসসালামুয়ালাইকুম।এতোদিন যারা গল্পটার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট করে আসছেন, এবং সাথে থাকা সাইলেন্ট রিডার সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালোমন্দ একলাইন অনুভূতি প্রকাশ করবেন, প্লিজ।ভুলত্রুটি মার্জনীয়।সবাই ভালো থাকবেন।আবারো ধন্যবাদ সবাইকে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here