তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_২২ #মেহরিন_রিম

0
296

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২২
#মেহরিন_রিম
_ইশা আমরা তিনদিন এর জন্য যাচ্ছি,তিন মাসের জন্য নয়!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ড্রেস গায়ে ধরে দেখছে আর ব্যাগ ভর্তি করছে ইশা। ফাইজা ঘড়ে ঢুকে বিস্ফোরিত চোখে কিছুক্ষন বিছানায় পড়ে থাকা ব্যাগগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো,ইশা তখনো আলমারি থেকে আরো জামা বের করতে ব্যাস্ত।

ফাইজার ডাকে ইশা একবার তার দিকে তাকালো। তারপর বিছানায় ব্যাগগুলোর দিকে তাকালো, দুটো ব্যাগ ভর্তি তার একার ড্রেস। ছোট ছোট চোখে ফাইজার দিকে তাকালো, হাত উঠিয়ে মাথা চুলকে বললো,
_মাত্র দুটো ব্যাগ ই তো আপু,এটুকু তো নেওয়াই যায়।

ফাইজার হাত অটোমেটিকালি মাথায় চলে গেলো। আরো একবার ব্যাগ দুটোর দিকে তাকালো। তারপর তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে জামাগুলো বের করতে করতে বললো,
_ভাগ্য ভালো তোর ছোট আম্মু আসেনি রুমে,নাহলে সেই লেভেল এর বকুনি খেতে হতো তোকে। অর্ধেক জামাকাপড় বের করে রাখবি এখান থেকে এক্ষুনি।

ইশা বেড এ বসে ঠোট উল্টে বললো,
_কিন্তু আমার তো একটাও রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমিতো জানি না তাইনা ওখানে গিয়ে কোনটা পড়তে ইচ্ছে করবে। আবার ইনভাইরনমেন্ট এর সাথে ম্যাচ করে তো ড্রেস পড়তে হবে। ও আপু,আম্মুকে একটু সামলে নাওনা।

_একদম অহেতুক আবদার করবিনা ইশা। এর একটা ব্যাগ নিলেই তোকে ছোট আম্মু বকবে,আমি সেটা সামলে নেবো কিন্তু দুটো কোনোভাবেই সম্ভব না।

অত:পর মন খারাপ করে অর্ধেক জামাকাপড় বের করে রাখলো ইশা। কোথাও ঘুড়তে গেলেই তার এই এক ঝামেলা,কোনটা রেখে কোন ড্রেস নিবে সেটাই ঠিক করতে পারেনা।
তবুও খুব বেশি মন খারাপ করলোনা ইশা, ঘুরতে যে যাচ্ছে এটাই অনেক। ফাইজাও ইশার অবস্থা দেখে মুচকি হাসল। তখন ই খাটের উপরে রাখা ফাইজার ফোনটা বেজে উঠলো। ইশা সেদিকে তাকাতেই দেখলো ফায়াজ ভিডিও কল করেছে। ফায়াজ হলো ফাইজার একমাত্র বড় ভাই।

ফাইজা কলটা রিসিভ করার আগেই ইশা খপ করে ফোনটা নিয়ে কলটা রিসিভ করলো। ঠোঁটে চওড়া হাসি টেনে বলল,
_কেমন আছো ভাইয়া? তুমিতো আমাকে একদম ভুলেই গেছো,কোনো কথাই বলোনা আমার সঙ্গে।

অপর পাশ থেকে ফায়াজ স্মিত হেসে বলল,
_সরি রে,প্রচুর ব্যাস্ত থাকি তো এইজন্য কথাই বলা হয়না।

_তুমি জানো আমরা না আজ সিলেট যাচ্ছি, আমি যে এত্ত এক্সাইটেড বলে বোঝাতে পারবো না।

আরো একঝাক গল্প জুড়ে বসলো ইশা। ফাইজাও পাশে বসে কথা বলছে। ইশা সব ভাইবোনেদের মধ্যে ছোট হওয়ায় সবার কাছেই সে খুব আদরের, ফায়াজের অতি আদরের ছোটবোন সে। তাই তার সাথে ইশার ভাবটাও বেশি, ফায়াজ দু বছর আগে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যায় তারপর একটা জব পেয়ে যাওয়ায় সেখানেই সেটেল হওয়ার প্ল্যান করছে।

বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর ফায়াজ ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_ইশা একটু ফাইজার কাছে দে তো, ওর সাথে কিছু কথা আছে।

ইশা ফাইজার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিতেই ফাইজা ফোনটা হাতে দিয়ে একবার ফায়াজ এর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সে ওকে অন্য ঘরে যেতে বলছে। ফাইজা ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_ইশা তুই তাড়াতাড়ি প্যাকিং শেষ কর,আমিও দেখি ঘড়ে গিয়ে আর কিছু নেওয়া বাকি আছে কিনা।

ইশা মাথা নাড়িয়ে সায় দিতেই ফাইজা নিজের ঘরে এসে দড়জা আটকে দিলো। ফায়াজ সঙ্গে সঙ্গে বললো,
_আম্মা নাকি তোকে বেশ কদিন ধরে বাড়িতে যেতে বলছে, তুই নাকি যাচ্ছিস না। কেন?

ফাইজা গিয়ে খাটে বসে চুপ করে রইলো। ফায়াজ আবারো বললো,
_কি হলো ফাইজা? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তো তোকে।

_তুমি তো সবটাই জানো ভাইয়া,তারপর ও জিজ্ঞেস করছো কেন?

_হ্যা জানি, তারপর ও বলছি আম্মা নেক্সট টাইম বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে আর না করবি না। ঠিক আছে?

ফাইজা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ফায়াজ আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোনে একটা কল আসায় বলে,
_পড়ে কথা বলছি আমি।

ফোনটা কেটে দিলো ফায়াজ। ফাইজা মুখ গোমড়া করে বিছানার উপর রাখলো ফোনটা। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো কিছুক্ষণ। মনে মনে আওড়ালো,
_তুমি সবটা এখনো জানোনা ভাইয়া। আমিও চাইনা জানাতে, সবটা জানতে পারলে যে তুমি আর দেশেই ফিরতে চাইবে না তা আমার ভালো করেই জানা আছে।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফাইজা। নিজের ভিতরে যে কত কথা জমা করে রেখেছে তা কেবল সেই জানে। ইশার সাথে চাইলেও সে সবকথা শেয়ার করতে পারেনা। আর যাকে সব কথা নির্দ্বিধায় বলতে চেয়েছিল সে তো…

বন্ধ চোখজোড়া থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। দড়জায় করাঘাতের আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো ফাইজা। এক ঝটকায় উঠে বসে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে গিয়ে দড়জা খুলতেই ইশা হুরমুরিয়ে ঘরে ঢুকে ফাইজার হাত ধরে বলে,
_আমার পক্ষে সম্ভব না আপু,একটা ড্রেস ও বাদ দিতে পারতেছিনা। তুমি এসে হেল্প করোতো আমায়।

কথাটা বলেই ফাইজার হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলো ইশা। অত:পর ফাইজা তার সঙ্গে গিয়ে ব্যাগ গোছাতে সাহায্য করতে লাগলো।

___
সায়ান এর জোরাজুরিতে রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে সিলেটের বিখ্যাত সাত রঙের চা খেতে এসেছে আদৃত,পূর্ণ এবং সায়ান। এই চা আদৃত আগেও খেয়েছে,তার কাছে তেমন স্পেশাল লাগেনি আবার খুব বেশি খারাপ ও লাগেনি। সায়ানের ভীষণ ভালো লেগেছে কিন্তু পূর্ণর মোটেই ভালো লাগেনি।
আদৃতের এসব দিকে খুব বেশি নজর নেই, সে তো মিটিং শেষ করে এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। হঠাৎ ই যেন ভীষণভাবে দেখতে ইচ্ছে করছে ইশাকে, তার এই অবাধ্য ইচ্ছেগুলো ক্রমশই বেড়ে চলেছে। চেষ্টা করেও তাদের আটকে রাখতে ব্যার্থ আদৃত।
চা পছন্দ না হলেও আজকের আকাশটা দেখে বেশ ভালো লাগছে পূর্ণর। সেদিনের কেনা বইটা সে এখনো সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে,কয়েকবার উল্টেপাল্টে দেখেছিল। তবে পড়াটা আর হয়ে ওঠেনি,ইচ্ছে করেই পড়েনি। ইচ্ছে ছিল বইটা ফাইজাকে দিয়ে দেবে,তবে ফাইজা তা কখনই গ্রহণ করবে না। কোন কারণ ছাড়াই তাই বইটা নিজের সঙ্গে রেখেছে পূর্ন, এইতো গতকাল রাতেই বইটার দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন। মনের মাঝে সুপ্ত বাসনা জাগে বইটা ফাইজাকে পড়ে শোনানোর। নিজের উপর হাসি পায় পূর্ণর,এমন সময় তার জীবনে আর কখনই আসবে না। সেই রাস্তা সে নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে।

কিছুক্ষন পরই আবার রিসোর্ট এ ফিরে এলো আদৃতেরা। রিসোর্ট এ ফিরতেই একজন লোক আদৃতের সামনে এসে স্মিত হেসে তার দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বললো,
_হ্যালো মিস্টার আদৃত। আমি আহনাফ,এই রিসোর্ট টা আমারই। আপনি যে এখানে এসেছেন সেটা আমি আজকেই জানতে পারলাম।

আদৃত ও হালকা হেসে হাত মেলালো তার সাথে। আহনাফ এবার বললো,
_আপনার কাছে একটা রিকুয়েস্ট ছিলো। আসলে আজ আমার ওয়াইফ এর বার্থডে,আর ও আপনার গানের অনেক বড় ফ্যান। রাতে একটা পার্টির আয়োজন করেছি আমি ওর জন্য, আপনি যদি এসে গান গাইতেন তাহলে খুবই খুশি হতাম।

লোকটার মুখের উপর আপত্তি জানাতে পারলোনা আদৃত। বললো যে ও ট্রাই করবে আসার জন্য। পরবর্তীতে আহনাফ আরো জোর করায় আসার জন্য সম্মতি জানায় আদৃত

___
দুপুরে লাঞ্চ শেষ করেই সিলেট এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরেছিল ইশারা। বাড়ির গাড়িতে করেই এসেছে তাই রিসোর্টে এসে পৌঁছোতে রাত নয়টা বেজে গেছে। পুরো রাস্তা ইশা ঘুমিয়ে এসেছে আর ফাইজা বই পড়ে তাই তাদের মধ্যে এতটা জার্নি করার কোনো ক্লান্তি নেই।
আগে থেকে রুম বুক করাই ছিল,তাই রিসোর্ট এ এসে চাবিটা নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো তারা। ইশা আর ফাইজার রুমটা রুকসানা আর জহির সাহেব এর রুমের থেকে কিছুটা দূরে। তাই জহির সাহেব ইশা আর ফাইজাকে রুমে দিয়ে এসে তারপর নিজেদের রুমে গেলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় আজ আর কোথাও বেরোবেনা তারা।

রাত ১০ টা বাজে। বেশ কিছুক্ষন ধরে বেডের উপর আসন দিয়ে বসে দাঁত দিয়ে আঙুল কাটছে ইশা। ফাইজা ফোন স্ক্রোল করার মাঝেই তার দিকে নজর রাখছিল। ইশা হুট করেই ফাইজার পাশে এসে বললো,
_এই আপু তোমার বোর লাগছেনা? ঘুরতে এসে এভাবে বসে থাকলে চলে বলো?

_তো? কি করবো? দেখ এই রাতের বেলা অহেতুক বায়না ধরবিনা ইশা।

_আরে তুমি শোনোনা আমার কথা। আমি না আসার সময় শুনেছিলাম আজকে এই রিসোর্ট এর মালিক এর ওয়াইফ এর বার্থডে পার্টি আছে। আর সেখানে রিসোর্ট এর সবাই ইনভাইটেড। চলোনা আমরাও একটু ঘুরে আসি সেখান থেকে।

_ছোট আব্বুকে না জানিয়ে আমি জেতে পারবোনা বাবা।

_বাবাই তো এতক্ষনে ঘুমিয়েও পড়েছে,তাকে এখন আর জাগানোর কি দরকার বলোতো।

_কিন্তু..

_সোনা আপু,চলোনা প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

ফাইজা কিছুক্ষন ভাবলো,তারও রুমে থাকতে ইচ্ছে করছেনা এখন। ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_এই ড্রেস এই যাবি?

ইশা বুঝতে পারলো ফাইজা রাজি হয়ে গেছে। ফাইজার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,
_ইউ আর দা বেস্ট..

#চলবে

[এইযে,আজকে বড় পার্ট দিয়েছি কিন্তু। পারলে নেক্সট ব্যাতীত অন্য কিছু বলে যাবেন।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here