খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৫৩ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
295

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বিষন্ন হৃদয়টা মেনে নিতে শিখে গিয়েছে। হাসি দিয়ে বুকের মধ্যে জমে থাকা চাপা কষ্ট গুলো কিভাবে আড়াল করতে হয়। সেটা পরিস্থিতি অবুঝ মনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। দুঃখরা অভিমানে দূর দেশে পাড়ি জমিয়েছে। হতাশারা দুঃখ পেয়ে বিলীন হতে শুরু করেছে। সুখ গুলো একটু একটু করে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এসে জমা হচ্ছে। অনুভূতিরা ফিরতে শুরু করেছে আপন নীড়ে। আঘাতপ্রাপ্ত মানুষকে আঘাত করলে যে আর দুঃখ লাগে না। সেটা কি মানুষ জানে না? তারা যদি জানতো তাহলে কখনোই এমন বোকামি করতো না। আঘাত প্রাপ্ত মানুষটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্য নতুন পথ খুঁজত। মেহেভীন মলিন মুখশ্রী করে কক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তখনই কারো হাসির প্রতিধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠল। কিছু সময়ের ব্যবধানে চাপের কাপটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। কিছু ভাঙার শব্দ কর্ণকুহরে আসতেই মেহেভীনের দৃষ্টি সোফার দিকে গেল। রিনি এসেছে। রিনির সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে সুফিয়া চৌধুরী। তার পাশেই বসে আছে তাহিয়া। মেহেভীনকে দেখেই সুফিয়া চৌধুরী মেহেভীনকে ডাকলেন। মেহেভীন ভদ্রতা বজায় রাখতেই নিঃশব্দে এগিয়ে গেল। সুফিয়া চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–তোমার কি কোনো কাজ আছে মেহেভীন?

–না।

–তাহলে তুমি একটা কাজ করো। এই বাড়ির বউ হয়ে আসোনি তো এসেছ রাজরানী হয়ে, সংসারের কোনো কাজে হাত দাও না। তোমার আর কি দোষ দিব বলো। আমাদের মুনতাসিম হয়েছে একটা বউ পাগল। বউয়ের একটা ফুলের টোকা লাগলেই যেন সে রক্তাক্ত হয়ে যায়। একটা রাজার মেয়েও তো এভাবে বসে খায় না। রাজার মেয়েও তো শখ আছে। সে সংসারের কাজ করবে। ভালোমন্দ রান্না করে শশুর বাড়ির লোকজনকে খাওয়াবে। তোমার কি কোনো শখ আহ্লাদ নেই? এমন শুয়ে-বসে খেতে পেলে কে-ই বা কাজ করতে চায় বলো। এই জায়গা টুকু পরিষ্কার করে দাও। সুফিয়া চৌধুরীর কথায় মেহেভীনের সমস্ত কায়া জ্বলে উঠল।তার প্রতিটি বাক্য মেহেভীনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মেহেভীন কাঁচের টুকরো গুলো তুলতে তুলতে বলল,

–আমি একটা সময় চাকরি করতাম ফুপি। সেখানে থেকে কিছু টাকা জমিয়েছি। আমার বাপ ফকিরের সন্তান ছিল না। আমার বাপের যা আছে। তা আপনি আপনার মেয়ে সহ আরো দশটা পরিবার সুন্দর মতো বসে খেতে পারবে। শুধু তাই নয় সারাজীবন বসে খেলেও ফুরাবে না। নিজের প্রশংসা নিজের করতে হয় না। তবে আমি মেয়েটা ভিষণ পরিশ্রমী জানেন। ধরনীর বুকে খুব কাজ কাজই আছে যেগুলো আমি পারি না। তাই খাওয়ার খোঁটা অন্তত আমাকে দিয়েন না। আমি নিজের হাত খরচের টাকা পর্যন্ত মুনতাসিমের থেকে নেই না৷ কিন্তু সে প্রতি মাসে যত্ন সহকারে আমার হাতে তুলে দেয়। সেগুলো আমার কোনো কাজেই আসে না। আমি সেগুলো তুলে রাখি। আপনি যাকে বউ পাগলা বলছেন। ইসলাম তাকে শ্রেষ্ঠ স্বামী বলে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক একজন ব্যথা পেলে তো আরেকজন আঘাত প্রাপ্ত হবেই। এটাই স্বাভাবিক। যে স্ত্রী তার স্বামীর মন মতো চলে না। আল্লাহ তায়ালা সেই স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আমার স্বামী আমাকে কাজ করতে বললে আমি অবশ্যই করব। মেহেভীনের কথায় অপমানে সমস্ত মুখশ্রী চুপসে খেল সুফিয়া চৌধুরীর। মেয়েটাকে রিনির সামনে ছোট করতে গিয়ে নিজেই অপমানিত হবে। সেটা তার চিন্তাধারার বাহিরে ছিল। সুফিয়া চৌধুরী রিনিকে আঁখিযুগল দিয়ে ইশারা করতেই রিনি মেহেভীনের হাতে পা রাখলো। মেহেভীনের মুখশ্রী থেকে বিষণ্ণতাকে গ্রাস করে নিয়েছে একরাশ ক্রোধ। মেহেভীনের জ্বলে ওঠা আঁখিযুগলে দৃষ্টিপাত করেও রিনির ভাবান্তর হলো না। রিনিকে অবাক করে দিয়ে মেহেভীন রিনির পা মুচড়ে ধরল। রিনি ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল। মুনতাসিম বাহিরে থেকে গৃহে প্রবেশ করতেই মেহেভীনকে এমন অবস্থায় দেখে নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গেল। মুনতাসিমকে দেখে রিনির কলিজা শুকিয়ে গেল। রিনিকে কাঁপতে দেখে মেহেভীন পেছনের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিমকে দেখেই হাতটা আলগা করে নিল। মেহেভীনের হাত আলগা হতেই সে দৌড়ে রিয়াদ চৌধুরীর কক্ষে চলে গেল। মুনতাসিম এসে মেহেভীনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেহেভীন মুনতাসিমের হাত ধরে উঠে দাঁড়াল।

–নিচে বসে কি করছিলেন?

–মেহমান চায়ের কাপ ভেঙে ফেলেছে। সেটাই পরিষ্কার করছিলাম।

–আমার বাসায় কি গার্ডের এতই সংকট পড়লো! আমি কি নতুন গার্ড নিয়োগ দিব? চৌধুরী বাড়িতে এত এত মানুষ থাকতে আপনি কেন অন্যের ভেঙে ফেলা জিনিস পরিষ্কার করবেন? মুনতাসিমের হুংকারে কেঁপে উঠল চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল। মুনতাসিমের উত্তপ্ত মেজাজ দেখে সুফিয়া চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আমি মেহেভীনকে পরিষ্কার করতে বলেছি। নিজের সংসারের কাজ করলে কি তোর বউয়ের হাত খসে যাবে?

–তোমার মেয়েও তো তোমার পাশে বসে আছে ফুপি। তোমার মেয়েকে না বলে আমার বউকে কেন বললে? আমি বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছি কোনো চাকরানি না। তোমার সব সময় এটা মস্তকে রাখতে হবে। মেহেভীন এ বাড়ির বউ কাজের লোক না। এই বাড়িতে কাজের মানুষের অভাব নেই। আপনি কাঁচের টুকরো গুলো হাত থেকে এখনই ফেলবেন। এখনই মানে এখনই। আমার কথার অবাধ্য হবার চেষ্টা করলে সবকিছু তচনচ করে দিব। তাহিয়া তুই উঠে আয়৷ এখনই এই জায়গাটা পরিষ্কার করে দিবি। আমার একটা বাক্য যেন দ্বিতীয় বার উচ্চারন করা না লাগে। যদি লেগেছে আজ চৌধুরী বাড়িতে লা’শ পরবে। মুনতাসিমের বলার প্রতিটি বাক্য তাহিয়ার হৃদয় কাঁপিয়ে তুলল। ভয়ে সমস্ত কায়া অবশ হতে শুরু করেছে। সে আড়দৃষ্টিতে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করল। সে মায়ের কথার অপেক্ষা না করেই কাঁচ গুলো তুলতে শুরু করল। নিজের ওড়না দিয়ে খুব দ্রুততার সঙ্গে জায়গাটা আগের ন্যায় পরিষ্কার করে দিল। সুফিয়া চৌধুরী যেন নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গেল। সে রাগান্বিত হয়ে চেচিয়ে বলল,

–একটা খু’নি’র মেয়ের জন্য এত আদিখ্যেতা কিসের? যে মেয়ের জন্য সারা পৃথিবীর সাথে লড়াই করছিস। একদিন সেই মেয়ের স্বার্থে আঘাত লাগলে, মেয়েটা তোর বুকে আঘাত করবে। এটা সব সময় মনে রাখিস। এই খু’নি’র মেয়ের জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারি না৷ পথে বের হলেই লোকজন জনসম্মুখে অপমান করে। এই মেয়ের জন্য তুই আমার মেয়েকে দিয়ে কাজ করালি!

–তোমাকে সমাজে মুখ দেখাতে কে বলেছে ফুপি? তুমি তো এই সমাজে থাকো না। দু’দিনের অতিথি হয়ে এসেছ। আবার দু’দিনের অতিথি হয়ে চলে যাবে। সমাজ কি বলল সেটা দেখার বিষয় তোমার না। সমাজ আমাকে আর আমার বউকে অন্ন-বস্ত্র দিয়ে আমাদের ভরনপোষণ করে না। আমার বউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবে কার এত সাহস? আমিও দেখতে চাই। কার কলিজা এত বড় হয়েছে? তার বড় কলিজা তো আমাকে মেপে দেখতেই হবে। মুনতাসিমের কথায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সুফিয়া চৌধুরী। ততক্ষণে রিয়াদ চৌধুরীকে নিয়ে রিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। রিয়াদ চৌধুরীকে দেখে সুফিয়া চৌধুরী অশ্রুভেজা কণ্ঠে বলল,

–আপনি দেখলেন ভাই। মুনতাসিম সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আমাকে থাকার খোঁটা দিল। আমি আর কখনো আপনাদের বাড়িতে আসব না। আজই তাহিয়ার দাদির বাড়ি চলে যাব। যে মেয়েকে নিয়ে এত অহংকার করছে। সেই মেয়েই একদিন সব অহংকার ভেঙে দিবে। সুফিয়া চৌধুরী রিয়াদ চৌধুরীর থেকে কিছু কড়া বাক্য আশা করেছিলেন৷ কিন্তু সুফিয়া চৌধুরীকে বিস্ময় করে দিয়ে রিয়াদ চৌধুরী নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। বাক্য গুলো আজ রিয়াদ চৌধুরীর মুখশ্রীর আশেপাশে নেই। শব্দরা ক্ষণিকের জন্য ছুটি নিয়েছে। মুনতাসিম রিনির দিকে রক্তিম চোখে দৃষ্টিপাত করে বলল,

–তোকে আমি সাবধান করেছিলাম। তুই আমার কলিজাতে হাত দিয়েছিস। সেদিন তোকে আমি ক্ষমা করেছি। আজ তোর পা আমি ভাঙব-ই। মুনতাসিমের কথায় রিনির সমস্ত মুখশ্রীতে আঁধার ঘনিয়ে এল। মেহেভীনের মলিন মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি যেতে মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আপনার সাথে আমার কথা আছে। দ্রুত কক্ষ আসবেন। আপনাকে আমি বলেছি না। আমি যতক্ষণ বাসায় থাকব। আপনার ততক্ষণ কোনো কাজ নেই। আপনার শুধু একটাই কাজ আমার সামনে বসে থাকা। কতবার বলেছি কক্ষে প্রবেশ করেই যেন আপনার মুখশ্রী আমি দেখতে পাই। বাক্য গুলো শেষ করেই মুনতাসিম গম্ভীর মুখশ্রী করে নিজের কক্ষে চলে গেল। রিয়াদ চৌধুরী ইশারা দিয়ে মেহেভীনকে যেতে বলল। মেহেভীন বিলম্ব করল না দ্রুত স্থান ত্যাগ করল।

চারদিকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। রজনীর মধ্য প্রহর চলছে। সবাই নিদ্রা দেশে তলিয়ে গিয়েছে। আজকাল মেহেভীন প্রতি রজনীতে ভিষণ বাজে স্বপ্ন দেখে। কিছু স্বপ্ন ভেতরটায় সারাক্ষণ যন্ত্রনা দেয়। মাঝেমাঝে মায়ের কথা স্মরন হতেই নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়। অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে মেহেভীন। মস্তিষ্ক এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। মস্তিষ্ক সচল হতেই পানির অভাববোধ করল সে। পাশেই মুনতাসিম গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সুফিয়া চৌধুরী চলে গিয়েছে সাতদিন হয়েছে। রিয়াদ চৌধুরী ফোন করে আসতে বলেছে। তবুও তিনি আসেননি। তার এক কথা মুনতাসিম ক্ষমা না চাইলে আসবে না। মেহেভীন নিঃশব্দে উঠে নিচে আসলো। পানি খেয়ে কক্ষের আসার সময় কারো কালো অবয়ব দেখতে পেল সে। মেহেভীনের সমস্ত মুখশ্রী কুঁচকে এল। সে অস্ফুট স্বরে বলল,

–কে ওখানে? মেহেভীনের বাক্য শেষ হতেই উচ্চ স্বরে কিছু পড়ার শব্দ হলো। রজনীর মধ্য প্রহর চলায় শব্দটা খুব স্পষ্ট ভাবেই কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাল। মেহেভীন ড্রয়িং রুমের আলো জ্বালাতেই শেহনাজকে দেখতে পেল। শেহনাজের মুখশ্রীতে বিরক্তির ছড়াছড়ি। শেহনাজ কোনো বাক্য উচ্চারন না করে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। তা দেখে মেহেভীন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–এত রাত পর্যন্ত তুমি কোথায় ছিলে শেহনাজ? আজকাল দেখছি রাত করে বাড়ি ফিরো। তোমাকে নিষেধ করার পরও কথা শুনো না কেন? তোমার ভাই জানলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে ভেবে দেখেছ কখনো?

–সব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে! দু’দিন ধরে এসেই বাড়ির সবার ওপরে কর্তৃত্ব ফলাতে চাইছ। ভাই জানলে কি হবে আবার কিছুই হবে না। সে আমার সৎ ভাই নিজের ভাই না। সে জানলেই কি আর না জানলেই কি আমার কোনো যায় আসে না। আমাকে ধরার জন্য এভাবে প্রতিদিন চোরের মতো বসে থাকো। মানুষের সংসারে বউ আসে শান্তি নিয়ে আর আমাদের সংসার বউ এসেছে অশান্তি নিয়ে। যেদিন থেকে এসেছ সংসারের সুখ-শান্তি একদম কেঁড়ে নিয়েছ। যাও গিয়ে ভাইয়ের কাছে আমার নামে বি’ষ ঢালো।

–এভাবে কথা বলছ কেন শেহনাজ? তুমি আমার বোনের মতো। তোমার ভালো খারাপ দিক গুলো লক্ষ্য করা আমার দায়িত্ব।

–তুমি পরের মেয়ে পরের মেয়ের মতো থাকবে। একদম আমার জীবন নিয়ে তদারকি করতে আসবে না। তোমার সাহস হয় কি করে? একটা বাহিরের মেয়ে হয়ে আমার থেকে কৈফিয়ত চাওয়ার! শেহনাজের চিৎকারে মুনতাসিম, রিয়াদ চৌধুরী, সাহেলা চৌধুরী উঠে আসে। দু’জনকে তর্ক করতে দেখে সবাই স্থির হয়ে যায়। শেহনাজের শেষ বাক্যটা সহ্য করতে পারল না মুনতািসমের টগবগে মস্তিষ্ক। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–থাপ্পড় দিয়ে তোমাকে ভদ্রতা শিখিয়ে দিব বেয়াদব মেয়ে। সে তোমার বড় ভাবি হয়। তাকে সন্মান দিয়ে কথা বলবে। দীর্ঘ দিন যাবত তোমার অসভ্যতামি দেখছি। আমি তোমাকে বারবার সতর্ক করেছি। তুমি শুধরে যাওয়ার বদলে দিন দিন মাত্রা ছাড়া বিগড়ে যাচ্ছো। আমাকে রাগিও না মেয়ে। আমি রাগলে তোমাকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই যে তুমি প্রায় প্রায় মধ্যরাতে বাড়ি ফিরো। সেটা মেহেভীন দেখেও চুপ থাকে। সে চুপ থাকে কেন জানো? আমি তাকে বলেছিলাম। এই পরিবারের শান্তি রক্ষা করার দায়িত্ব তার। সে পরের মেয়ে হয়ে মেনে নিতে শিখে গেল। আর তুমি এই বাড়ির মেয়ে হয়ে কি করলে?

–আপনি শুধু নিজের বউয়ের হয়ে কথা বলেন ভাই। আপনার বউ সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা বলছে সেটা কেন যাচাই করেন না? আপনার বউ মধ্য রাতে খাবার ঘরে এসে কি করে? আগে নিজের ঘরের বউকে সামলান। তারপর না হয় অন্যের মেয়েকে সামলাতে আসবেন। শেহনাজের বাক্য গুলো শেষ হবার আগেই শেহনাজের লাগে সজোরে থাপ্পড় বসলো মুনতাসিম। মুনতাসিমের রাগান্বিত মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করে প্রতিবাদ করার সাহস পেল না শেহনাজ। সে অসহায় দৃষ্টিতে বাবার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। রিয়াদ চৌধুরীর সহ্য সীমা পার হয়ে গিয়েছে। জীবনে প্রথম ছেলের উপরে চেচিয়ে বললেন,

–আমার মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? আমি তোমাকে বলেছি আমার মেয়েকে শাসন করো। নিজের বউয়ের প্রতি অন্ধ হয়ে গিয়েছ? আজকাল বোনের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করছ না। এই মেয়েটা যেদিন থেকে সংসারে এসেছে। সেদিন থেকে সংসারের সুখ-শান্তি বিলীন হতে শুরু করেছে। আজ যদি আমার কথা মতো রিনিকে বিয়ে করতে। তাহলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না। সেদিন আমার বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাকে বাড়ি ছাড়া করলে। এই মেয়ের জন্য আমাদের খু’ন করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। আজকে এই মেয়ের একটা বিহিত করেই ছাড়ব। হয় এই মেয়েকে ডিভোর্স দিবে নয়তো আমাকে ত্যাগ করবে। রিয়াদ চৌধুরীর কথায় মেহেভীন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। বাবার প্রতিটি বাক্য মুনতাসিমের বুকে ধারালো অস্ত্রের ন্যায় আঘাত করল। সে-ও দ্বিগুন উচ্চ স্বরে চেচিয়ে বলল,

–করলাম না আপনার মেয়েকে শাসন। আপনি কতটুকু জানেন আপনার মেয়ের সম্পর্কে? আপনার মেয়ের সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি শুনলে এতদিন বেঁচে থাকতে পারতেন না। এমন মেয়ের ভাই আমিও হতে চাই না। মুনতাসিম ফুয়াদ চৌধুরীর বোন হাতেও যোগ্যতা লাগে। সেই যোগ্যতা আপনার মেয়ের নেই। আর আমি কাকেই বোন বলছি। সে তো আমার জন্মদাত্রী জননীর সন্তান নয়। সে যদি আমায় খু’ন ও করে ফেলে আপনি আমাকে দেখতে আসবেন না। আপনার মতো বাবা আমারও চাই না৷ আপনি থাকুক আপনার মেয়েকে নিয়ে আমি ম’রে গেলে আমার লা’শে’র পাশেও যেন আপনাকে কেউ আসতে না দেয়। যদি দেয় আমি তাকে অভিশাপ দিয়ে যাব। ক্রোধে মুনতাসিমের সমস্ত কায়া থরথর করে কাঁপছে। সে ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। রিয়াদ চৌধুরী আগের ন্যায় বলল,

–তোমার মতো ছেলেরও আমার দরকার নেই। যে বউ পেয়ে পরিবারের মানুষকে আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। আজকের পর থেকে তুমি আমার সাথে কথা বলবে না। যে মেয়েটা তোমাকে অসম্মান করতে দ্বিধাদ্বন্দে ভূগে না৷ তোমাকে দুঃখ দিয়ো যার মন কাঁপে না। সেই মেয়েটা তোমাকে কতটা ভালোবাসে সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে। এই মেয়েকে আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিল না। তোমার পাগলামির জন্য এ বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছিলাম। কে জানতো যে এই মেয়েটাই ভেতরে কালসাপ বের হবে!

–আমি আপনাকে অনেকটা সন্মান করি আব্বা। আপনি এমন কোনো বাক্য মুখশ্রী দিয়ে উচ্চারন করবেন না। যাতে আপনার প্রতি আমার সন্মান টুকু নষ্ট হয়ে যায়। আপনার সাথে কথা বললাম না। আমার কি হবে। এমনিতেই মা মারা যাবার পর থেকে কোনোদিন মন খুলে আমার সাথে আপনি কথা বলেননি। কথায় থাকেনা দুরত্ব বাড়লে গুরুত্ব কমে যায়। আমার মা যখন ছিল। তখন আমার গুরুত্বের অভাব ছিল না। মা চলে গিয়েছে সাথে নিয়ে গিয়েছে আমার ভালোবাসা, গুরুত্ব, হাসি, ভালো থাকা সবকিছু। যখনই একটু ভালো থাকা কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম৷ তখনই সেটা কেঁড়ে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন! আপনার মেয়ে ম’রে যাক আমার দেখার বিষয় নেই। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম বিলম্ব করল না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। মেহেভীন অপরাধীর ন্যায় সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে গেল। কারো ভালো চাইলে যে এতটা কষ্ট পেতে হয়। সেটা তো তার জানা ছিল না। যদি জানা থাকতো। তাহলে এমন জঘন্যতম অপরাধ কখনোই সে করত না।

চলবে…..

(গল্প লিখা শেষ করেছি রাত দু’টো বেজে পার হয়ে গিয়েছিল। ভাবছি নিরিবিলি লিখব। অনেক দূর পর্যন্ত লিখে যাব। ২১০০+ লিখা হয়ে যায়। হাত ব্যথা হয়ে যায়। কতদূর পর্যন্ত ভেবে রেখেছিলাম এই পর্বটা নিয়ে, কিন্তু ততোদূর পর্যন্ত যেতেই পারিনি। আস্তে আস্তে ধৈর্য ধরে লিখে ফেলব ইনশাআল্লাহ। এতদিন ধৈর্য ধরছেন। আর কয়টা দিন ধরেন। সবাই এই পর্বে রেসপন্স করবে যত তাড়াতাড়ি রেসপন্স হবে। তত তাড়াতাড়ি গল্প আসবে। সবাই রেসপন্স করুন দ্রুত গল্প লিখার আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here