#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৯
#মেহরিন_রিম
_ফাইজা? তুই আসবি আমায় বলিসনি তো।
ক্যাম্পাসের অন্যপাশ থেকে ফাইজার বান্ধবী সোহা এসে বললো কথাটা। ফাইজা সামান্য হেসে বলল,
_ঐতো একটু বোনেদের নিয়ে এলাম,তাই আর জানানো হয়নি।
সোহা ইশার দিকে দেখিয়ে বললো,
_ইশা রাইট? ফাইজা আমাদেরকে তোমার কথা অনেক বলেছে।
ইশা মুচকি হাসলো। সোহা আগেই দেখেছে পূর্ন এখানে এসেছে। সোহা ফাইজা কে একটু পাশে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
_পূর্ণ ভাইয়া কবে দেশে ফিরলো রে? তুই জানিস কিছু।
ফাইজা কপাল কুঁচকে বলল,
_আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন? আমি কি করে জানবো?
_ঐদিকে দেখ।
পূর্নর দিকে নজর রেখে কথাটা বলল সোহা। ফাইজা সোহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই পুর্ন, আদৃতসহ আরো অনেককে দেখতে পেল। ফাইজা বেশ বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে ঘুরে বললো,
_যার ইচ্ছে আসতেই পারে,এখানে আমাকে দেখানোর কি আছে সোহা?
সোহা কিছুটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
_না এমনিই বললাম আরকি।
ইশা ওদের সামনে এসে বিরক্ত হয়ে বললো,
_কি হলো আপু? আমরা কি এখানে দাঁড়িয়েই থাকবো নাকি অন্যদিকেও যাবো? চলো ঐদিকটায় যাই…
কথাটা বলেই ইশা ফাইজার হাত ধরে পূর্নরা যেদিকে বসে আছে সেদিকে যেতে নিলেই ফাইজা তাকে থামিয়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
_ওখানে তেমন কিছু নেই রে ইশা, আমরা বরং ঐদিকটায় যাই? মোহনাও তো বোধহয় ওদিকেই গেছে।
_মোহনাকে ছাড়ো তো ওর মতো। আর ওদিকে মেবি নাচগান ও হচ্ছে,চলো না যাই।
ফাইজা আর কিভাবে বোঝাবে যে সে পূর্নর সামনে পড়তে চায়না। বাধ্য হয়ে ইশার সঙ্গে সেদিকেই যেতে হলো।
ইশার এখনো আদৃতের দিকে চোখ পড়েনি তাই হয়তো সে ওদিকটায় যেতে চাইছে,নাহলে সে নিজেও যেতোনা।
আদৃতের ফোনে একটা কল আসায় সে একটু সাইডে গিয়ে ফোনে কথা বলছিল আর ইশার দিকে নজর রাখছিল।
ইশা ফাইজা কে নিয়ে একদম আদৃতের পাশ থেকে হেটে দু কদম গিয়েই হাটা থামিয়ে দেয়। ফাইজা ভ্রু কুঁচকে বলে,
_কি হলো থামলি কেন?
ইশার যেন মনে হলো ও আদৃত কে দেখেছে। তাই ধীরেধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু পিছনে তাকালো। আদৃত ও তখন ফোন কানে ধরে ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ইশা চট করে চোখটা সরিয়ে নিয়ে বিরক্তির সুরে ফিসফিস করে বলল,
_এই লোকটা অল টাইম আমার সামনে চলে আসে কেন!
_কি হলো,কিছু বললি?
_হ্যা,না না কিছুনা চলো।
পূর্নদের কিছুটা পাশ থেকেই চলে গেলো ইশা আর ফাইজা। পূর্ণ চোখ তুলে ফাইজার দিকে তাকালেও ফাইজা একবারের জন্যও তাকায়নি তার দিকে।
___
সায়ান মোহনার সঙ্গে হেটে হেটে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। মোহনাও তার সঙ্গে হাটছে আর এটা ওটা খাচ্ছে। মোহনা এবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আপনি যে এত ভীতু জানতাম না তো।
_হুয়াট! আমি ভীতু? কেন কেন?
_ইশার কথায় যেভাবে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিলেন,তাতেই তো বোঝা যায় আপনি কত্ত ভীতু। এত ভীতু হলে মোটা,চিকন কোনো মেয়েই আপনাকে বিয়ে করবেনা হুম..
সায়ান মোহনার কানের কাছে গিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
_বউতো বোধ হয় আমি পেয়েই গেছি।
সায়ান এর কথায় বেশ লজ্জা পায় মোহনা। আমতা আমতা করে বলে,
_ই ইশা আমাকে খুজছে মনে হয়,আমি গেলাম।
কথাটা বলেই সেখান থেকে ছুটে চলে যায় মোহনা। আর সায়ান সেই একই যায়গায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন হেসে আবারো বন্ধুমহলে ফিরে যায়।
সায়ান হাসিমুখে ফিরে আসতেই পূর্ণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তোর হাবভাব কিন্তু ভালো ঠেকছে না সায়ান। কি করতে গিয়েছিলি তুই?
সায়ান বেশ ভাব নিয়ে বললো,
_তোদের জন্য ভাবি নিয়ে আসার প্ল্যান করছি বুঝলি।
সায়ান এর কথা শুনে সেখানে বসে থাকা সবাই হাসলো, পূর্ন আবারো বলল,
_তাই জন্য বাচ্চা একটা মেয়ে?
_আরে মেরা ভাই, পেয়ার উমার নেহি দেখতা হে রে..
___
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে, তবে ক্যাম্পাসে মানুষের সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে। পূর্ণ,সায়ান সহ বাকি সবাই চলে গেলেও আদৃত এখনো ক্যাম্পাসেই রয়েছে। ঘুড়েঘুড়ে ইশাকে খুজতে তার কিছুটা অস্বস্তি লাগছে, তাই ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে একই জায়গায় থেকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ইশাকে।
মোহনা,ফাইজা,ইশা পুড়ো ক্যাম্পাস ঘুরে বেশ ভালোই মজা করেছে। ফাইজা প্রথম থেকে একটু আনইজি থাকলেও পূর্নকে বেড়িয়ে যেতে দেখার পর সেও কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। তিনজনই বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হবে তখন ই ইশার কানে একটা বিড়ালের ডাক ভেসে আসে। ইশা পাশে তাকাতেই দেখতে পায় একটা পার্সিয়ান বিড়াল মানুষের মাঝে গুটিসুটি মেড়ে বসে জোড়ে জোড়ে ডাকছে,তার গলায় একটা বেল্ট বাধা। ইশা দৌড়ে গিয়ে বিড়াল টাকে কোলে নিয়ে আদর করে,ইশার পিছন পিছন মোহনা আর ফাইজাও চলে আসে সেখানে।
ইশার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে বিড়াল টা হয়তো তার মালিক এর থেকে হারিয়ে গেছে। ইশার ভীষণ মায়া হলো বিড়াল টার জন্য। ইশা ফাইজা আর মোহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমরা একটু পানি নিয়ে আসোনা ওর জন্য, কি জানি বেচারা কতক্ষন ধরে কাঁদছে।
_আচ্ছা তুই দাঁড়া এখানে, আমরা পানি নিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই মোহনা আর ফাইজা পানি আনতে চলে গেলো। ইশা বিড়াল টাকে নিচে নামিয়ে নিজেও ওর সামনে বসে আফসোস এর সূরে বললো,
_ইশ কি কিউট বিড়াল টা। কার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে কে জানে! এখন ওর মালিককে খুঁজবো কি করে? আর ওকে তো এভাবে রেখেও যেতে পারবো না।
আদৃত দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছিলো। একটা বিড়ালের জন্য কিনা মেয়েটা কত টেনশন করছে, আসলেই সেদিনের আন্টি ঠিক ই বলেছিল। মেয়েটা ভীষণ সহজ সরল। মনে মনে এসব ভেবে আদৃত শান্ত পায়ে হেটে ইশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইশা বিড়ালটার দিকে তাকিয়েই তার কথা ভাবছিল। হঠাৎ সামনে একজনকে দাঁড়াতে দেখে সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে উপরে তাকায় সে। দেখতে পায় আদৃত বুকে হাত গুজে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, চট করে উঠে দাঁড়ায় ইশা। তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পরও আদৃত কে সেখানে থেকে যেতে না দেখে ইশা এবার বলে ওঠে,
_এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
আদৃত কিছু বলে না, ইশা আবার ও বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
_কি হলো চুপ করে আছেন কেন? আর আপনি সবসময় আমার সামনে চলে আসেন কেন বলুন তো?
আদৃত কিছুটা ঝুকে বিড়াল টা কে কোলে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
_একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি।
ইশা আঙুল উঁচিয়ে বলতে যায়,
_আপনি আবারো…
ইশার কথা সম্পূর্ন হতে দেয়না আদৃত। তার মাঝেই বিড়ালের থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ঝগড়া করে নিশ্চই বিড়ালের মালিককে খুঁজতে পারবে না।
থেমে গেলো ইশা। বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে আবারো মায়া হলো তার। আদৃতের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_তাহলে কি করবো?
আদৃত সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
_ঝগড়া করার ক্ষেত্রে পিএইচডি না করে নিজের ব্রেইন খাটালেই উপায় পাওয়া যায়, আর সেটা তো তুমি করবে না।
ইশা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতের দিকে। আদৃত সেদিকে খেয়াল না করে সামনে এগোতে এগোতে বলল,
_এসো আমার সাথে।
ইশা ঘুড়ে গিয়ে আদৃর এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কেন কেন কেন? আপনার সাথে আমি কেন যাবো শুনি? মতলব কি আপনার?
আদৃত বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আসতে হলে এসো,নাহলে থাকো এখানে।
আদৃত চলে যেতে নিলেই ইশাও তার পাশেপাশে যেতে লাগল। আর অনর্গল বলতে রইলো,
_আরে আরে,এভাবে ওকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? চুপ করে আছেন কেন? কথা বলতে পারেন না? আরে কিছু তো বলুন।
আদৃত মনে মনে হাসলো ইশার কথা শুনে কিন্তু বাহিরে তা প্রকাশ করলো না। আদৃত বিড়াল টাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে স্টেজ এর পাশে এসে কয়েকজন লোকের সঙ্গে কিছু কথা বলল। তারপর সেখান থেকে একজন লোক স্টেজ এ উঠে বিড়াল টার হারিয়ে যাওয়ার কথা বলল এবং তার মালিককে স্টেজ এর সামনে এসে বিড়ালটাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলল।
ইশা এতক্ষনে সবটা বুঝতে পারলো। নিজের মাথায় গাট্টা মেরে ক্ষীণ স্বরে বলল,
_ইশ,এই আইডিয়া টা আমার মাথায় এলোনা কেন?
দু তিন মিনিট এর মধ্যে বিড়ালের আসল মালিক সেখানে এসে আদৃতের কোল থেকে বিড়ালটিকে নিয়ে আদর করতে লাগলেন। আদৃত কে ধন্যবাদ জানাতে গেলে সে বাধা দিয়ে ইশার দিকে দেখিয়ে বলল,
_না না আমাকে থ্যাংকস বলতে হবেনা, আপনার বিড়ালটিকে ও পেয়েছিল আমি না।
মহিলাটি ইশাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে বিড়ালটিকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। ইশা আশাপাশে তাকিয়ে আদৃতের থেকে নিজের নজর লুকোনোর চেষ্টা করতে লাগলো। আদৃত কিছুক্ষন ইশার দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই ইশা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
_শ শুনুন..
আদৃত মুচকি হেসে পিছনে ঘুরে গম্ভীর দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_হুম বলো।
ইশা ঘাড়ে হাত ঘষে আমতা আমতা করে বলল,
_থ্যাংক ইউ।
আদৃত খানিকটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
_হুম? কি বললে?
_ব বললাম থ্যাংক ইউ।
_হঠাৎ থ্যাংক ইউ কিসের জন্য?
_আপনি যে বিড়াল টাকে ওর মালিক এর কাছে পৌঁছে দিতে হেল্প করলেন তাই।
আদৃত নিজের সানগ্লাস টা চোখে দিতে দিতে ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা টেনে বলল,
_যাক তুমি তাহলে থ্যাংক ইউ ও বলতে পারো।
ইশা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
_পারবো না কেন শুনি? আমি মোটেই অকৃতজ্ঞ নই, হেল্প করেছেন তাই থ্যাংক ইউ বলেছি।
আদৃত ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
_ওয়েলকাম..
কথাটা বলেই আদৃত আবারো পিছনে ঘুড়ে হাটতে লাগলো। আজকে আর ইশার রাগ হচ্ছেনা কোনো। আদৃতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
_না ইশা,লোকটাকে যেমন ভেবেছিলি উনি ততটাও খারাপ নয়..
#চলবে
[আপনাদের কথায় কিন্তু আজকে বড় পার্ট দিয়েছি। কমেন্টে আপনাদের মতামত জানাবেন আশা করি।
হ্যাপি রিডিং।]