#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২০
#মেহরিন_রিম
_তোকে আমরা পুড়ো ক্যাম্পাস এ খুজে বেড়াচ্ছি,আর তুই স্টেজ এর পিছনে দাঁড়িয়ে কি করছিস? বিড়াল টাই বা কোথায়?
একনাগাড়ে কথাগুলো বলল ফাইজা। ইশা সামনে হাটা শুরু করে বলল,
_ওর মালিক এসে নিয়ে গেছে।
মোহনাও ইশার পাশে হাটতে হাটতে বলল,
_ওর মালিক কে তুই কোথায় পেলি?
_সন্ধ্যা হয়ে গেছে,চল যেতে যেতে বলছি।
ইশা,ফাইজা,মোহনা গাড়িতে উঠে পড়লো রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসেই ইশা সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলো। সবটা শুনে ফাইজা বললো,
_আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, লোকটা খারাপ নয়। তুই শুধুশুধুই ওনার সঙ্গে ঝগড়া করিস।
ইশা চুপ করে রইলো,মোহনা হঠাৎ করে সোজা হয়ে বসে বলল,
_ভাইয়ার সাথে তোর এতবার দেখা হলো,আর তুই কিনা একটা সেলফি ও তুলতে পারলিনা ইশা!
সেলফির কথা মাথায় আসতেই ইশা হা করে তাকালো মোহনার দিকে। তারপর অসহায় চোখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললো,
_ওনার সঙ্গে বোধ হয় সত্যিই এ জীবনে আমার আর সেলফি তোলা হবেনা।
ইশার কথা শুনে ফাইজা,মোহনা দুজনেই হাসতে লাগলো, আর তা দেখে ইশা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
___
_কি ব্যাপার বলতো আদি? হঠাৎ এত খুশি খুশি লাগছে তোকে।
সোফায় বসে খুশিমনে এলোমেলোভাবে গিটারে সুর তুলছিলো আদৃত। পূর্ন বেড এ বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। আদৃতের দিকে চোখ পড়তেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলল পূর্ন। আদৃত গিটার থেকে মনোযোগ সরিয়ে পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলে,
_কোথায়? আমি তো নরমাল ই আছি।
_হ্যা কিন্তু একটু বেশিই নরমাল আছিস,আর এটাই তো অদ্ভুত লাগছে।
আদৃত মুখে কিছুটা বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলল,
_এত বেশি ভাবতে কে বলেছে তোকে?
পূর্ণ আর কথা বাড়ালো না,সে জানে আদৃত এখন তাকে কিছুই বলবেনা। তবে আদৃতের হাবভাব দেখে পূর্ন বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে তার মনে কিছু তো চলছে।
___
রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সারে আটটার মতো বেজে গেলো ইশা আর ফাইজার। অবশ্য তারা বাড়িতে বলেই গিয়েছিল ফিরতে দেড়ি হবে।
এত ঘোরাফেরা করে ইশা বেশ ক্লান্ত,আর এতক্ষন শাড়ি পরে থাকায় তো ফাইজা আরো বেশি বিরক্ত। বাড়ির দরজায় এসে কলিং বেল দিতেই রুকসানা এসে দরজা খুলে দিলেন। তবে ভিতরে এসে যে ইশা এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেনি।
ভিতরে দিকে সোফার দিকে তাকিয়ে তার বাবা জহির আহমেদ কে দেখে ঠোঁটে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে ইশার। দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_হুয়াট আ সারপ্রাইজ বাবাই! কখন এলে তুমি? আই মিস ইউ সো মাচ।
জহির সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললে,
_আই মিস ইউ টু মাই গার্ল।
ফাইজাও তার কাছে এসে বলল,
_কেমন আছো ছোট আব্বু? আর তুমি আসবে বলোনি তো।
জহির সাহেব হেসে বললেন,
_সারপ্রাইজ দেবো বলেই তো বলিনি কিছু।
ইশা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_এবার কিন্তু দু তিনদিন থেকে চলে গেলে হবেনা বাবাই। অন্তত দশদিন থাকতেই হবে।
_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে থাকবো। যা তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
ব্যাবসায়িক কাজে জহির সাহেবকে অধিকাংশ সময় বিভিন্ন শহরে যেতে হয়,তাই বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো টা আর হয়ে ওঠেনা। তবে এবার তিনিও ভাবছেন ব্যাবসায়িক কাজ থেকে একটু দূড়ে সরে আসবেন,অনেক তো কাজ করলো জীবনে। এখন নাহয় পরিবার এর সাথে থাকা যাক।
এমনিতেই আজ ইশার মনটা ভালোই ছিল,তার উপর বাবাকে পেয়ে আরো দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেলো। খুশিমনে নিজের ঘরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
___
আরো দশদিন কেটে গেছে। ইশা এখন নিরব এর বিষয় থেকে অনেকটাই বেড়িয়ে এসেছে, ছুটির সময়টা বেশ আনন্দের মধ্যেই কাটাচ্ছে সে। তার উপর বাবা থাকায় রোজই বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়তে যাওয়া তো আছেই।
তবে ইশার দিন যতটা ভালো কাটছে আদৃত এর দিন এখক্ন ততটাই খারাপ কাটছে। অফিস এর কাজে তাকে চারদিন আগে সিলেট আসতে হয়েছে, সায়ান আর পূর্ণ ও তাকে কম্পানি দিতে চলে এসেছে। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে যেকোনোভাবে ইশাকে এক নজর দেখতে পারতো সে, তবে এখানে এসে চারদিনে ইশাকে না দেখতে পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে তার মন।
রাত দুটো বাজে। আরো এক ঘন্টা আগে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছে আদৃত,তবে কিছুতেই তার চোখে ঘুম নামছে না। অবশেষে মুখে হাজারো বিরক্তির ছাপ নিয়ে উঠে বসলো আদৃত। পাশের দুটো বেডে তাকিয়ে দেখলো পূর্ণ আর সায়ান শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ওদের এই ঘুমও এখন সহ্য হচ্ছেনা আদৃত এর। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে লাগলো আদৃত, অবশেষে তেমন কিছু না পেয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে চার্জার টা নিয়ে ছুড়ে মারলো সায়ান এর গায়ে।
কোমড়ের উপর আঘাত পেতেই হকচকিয়ে উঠে বসে সায়ান। আশেপাশে তাকিয়ে চার্জার টা হাতে নিয়ে কপাল কুচকে তাকায় আদৃতের দিকে। তারপর বিরক্তিকর ভাবে বলে ওঠে,
_এটা কি হল? চার্জার মারলি কেন?
আদৃত আর কিছু না পেয়ে বললো,
_কি তখন থেকে নাক ডেকে চলেছিস,তোর নাক ডাকার শব্দে ঘুমোতে পারছিনা আমি।
_এমন ভাব করতেছিস যেন আমি আজকে নতুন নাক ডাকতেছি! কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতেছিলাম, শালা দিলিতো নষ্ট করে।
ওদের কথাবার্তা শুনে পূর্নরও ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্তিকর চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
_রাত দুটোর সময় কি শুরু করলি তোরা? নিজেরাও ঘুমা আমাকেও ঘুমোতে দে।
সায়ান এক নজর আদৃত এর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারো শুয়ে পড়লো। কিন্তু আদৃত এর চোখে যে ঘুম নেই। বিছানা থেকে উঠে ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো আদৃত। ইশার নম্বরটা সে অনেক আগেই নিয়েছিল, ইশার থেকে নয় তার এক ফ্রেন্ড এর থেকে গোপনে ম্যানেজ করেছিল।
নম্বরটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আদৃত,এত রাতে কল দেওয়া কি ঠিক হবে? আর কল দিয়ে কি ই বা বলবে?
হাজারো চিন্তা ছাপিয়ে অবশেষে কলটা করেই ফেললো আদৃত,যা বলার বলবে কিন্তু এখন ইশার কণ্ঠ না শুনলে তার কিছুতেই ঘুম হবেনা।
আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ায় বেশ গভীর ঘুমে মগ্ন ছিল ইশা, এর মাঝে ফোনটা বেজে ওঠায় চোখমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে তার। ধীরেধীরে চোখ খুলে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে একটা আননোন নম্বর, রাত দুটোর সময় কে ই বা কল করবে ওকে? এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো ইশা।
চোখ বন্ধ করেই ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল,
_হ্যালো..
কোনো প্রতিত্তর করলোনা আদৃত, ইশার কণ্ঠস্বর শুনতে পেরে এখন কিছুটা শান্তি লাগছে তার। কোনো উত্তর না পেয়ে ইশা বিরক্তির সুরে বলল,
_কে রে ভাই? এত রাতে কল দিয়ে এখন চুপ করে আছেন কেন?
আদৃতের মাথায় বুদ্ধি এলো ইশাকে রাগানোর। তাই নিজে বেশ শান্ত গলায় বললো,
_আরে আজব তো? আপনি আমাকে কল করে এখন জিজ্ঞেস করছেন আমি কে! আপনি কে সেটা আগে বলুন।
ইশা কপাল কুঁচকে রাগী গলায় বললো,
_ফালতু কথা বলার জায়গা পাননা তাইনা? এত রাতে কল দিয়ে ইয়ার্কি করছেন আমার সঙ্গে? রাখুন ফোন, যতসব আজাইরা পাবলিক।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো ইশা। ইশাকে এমন রাগিয়ে বেশ মজা পেলো আদৃত,নম্বরটার দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলল,
_কে তুমি মেয়ে? কেন তোমার সান্নিধ্য আমায় প্রশান্তি দেয়? আর কেনই বা তোমার অনুপস্থিতি আমার মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি করে?
#চলবে
[রিচেক করা হয়নি তাই বানানে ভুল থাকতে পারে, তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য পেলে রাতে বোনাস পার্ট দিবো ইনশাল্লাহ।
হ্যাপি রিডিং।]