তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_২৩ #মেহরিন_রিম

0
271

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৩
#মেহরিন_রিম
বার্থডে পার্টিতে এসে ইশার বেশ মজাই লাগছিলো, তবে সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হয়নি। স্টেজ এ আদৃত কে উঠতে দেখেই সব আনন্দ ফুস করে উড়ে চলে গেলো। এখানেও আদৃত! চোখমুখ কুঁচকে ফেলে ইশা,লোকটা তার পিছুই ছাড়ছে না। আদৃত এখনো ইশাকে খেয়াল করেনি। তার কোনো উপায় ও নেই,স্টেজ এর সামনে আসতেই অনেক মানুষ তার সঙ্গে সেলফি তুলতে ভির জমিয়েছে। আদৃত ও বাধ্য হয়ে হাসিমুখে ছবি তুলছে তাদের সঙ্গে।

ইশা কিছুক্ষন সরু চোখে ভিড় এর দিকে তাকিয়ে রইলো। এত লোকের মধ্যে সেও যদি গিয়ে একটা সেলফি তুলে নেহ তাহলে নিশ্চই আদৃত খেয়াল ও করবে না। দু তিন মিনিট দাঁড়িয়ে চিন্তা করলো ইশা। অত:পর ছোট ছোট পায়ে এগোতে যাবে তখন ই ফাইজা বললো,
_এই কোথায় যাচ্ছিস?

_দেখছো না কত লোকজন! এর মধ্যে আমিও গিয়ে একটা সেলফি তুলে আসি,এমন সুযোগ আর পাবো বলো?

ফাইজা বারণ করলো না। ইশা চোরের মতো গিয়ে পাশ থেকে সেলফি তুলতে যাবে তখনি অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে মাথায় ধাক্কা খেলে মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
_সরি সরি..

_ইটস ওকে।

আশেপাশের আওয়াজ এর মাঝেও পরিচিত কণ্ঠ এসে ঠিকই পৌঁছালো শ্রবণদ্বারে। কণ্ঠ অনুসরণ করে পাশে তাকাতেই কালো রঙের ফ্লোর টাচ গাউন পরিহিত ইশাকে দেখতে পায়। প্রথমে বিষয়টা বিশ্বাস হলোনা আদৃতের, অন্যদিকে তাকিয়ে আবারো ইশার দিকে তাকালো সে। না সে সত্যিই দেখছে। পাশ থেকে আরো দু তিনটে মেয়ে বলছে, “ভাইয়া এদিকে তাকান প্লিজ”(ফোনের ক্যামেরার দিকে)।
আদৃত তখনো ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিল, নিজের চোখকেই এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। ইশা এখানে? কিন্তু কি করে?
ইশা মেয়েটাকে ইটস ওকে বলে মাথায় হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে আদৃত এর দিকে তাকাতেই দেখে সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাস, সেলফি তো দূড়ের কথা আবারো আদৃতের সামনে পড়তে হলো এটা ভেবেই ইশার কষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিয়ে সাধারণভাবেই অন্যদিকে চলে যেতে গেলো ইশা,যেন আদৃত কে সে দেখেই নি।
এখনো বিষ্ময় থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেনা আদৃত, ইশাও কি এই রিসোর্ট এই আছে? কবে থেকে? এই কদিনে তো দেখেনি একবারো,আর সকালের কথা শুনেও তো মনে হলো সে নিজের বাড়িতে।

ফাইজা একটু আশেপাশে তাকিয়ে ডেকোরেশন দেখছিল।অনেক মানুষই এসেছে এখানে।

_এক্সকিউজ মি।

পিছন থেকে কারোর গলা শুনে কিছুটা পাশে সরে গিয়ে উক্ত ব্যাক্তির দিকে তাকালো ফাইজা। আবার,আবারো সেই ব্যাক্তিকেই দেখতে পেলো যার থেকে ফাইজা দূড়ে থাকতে চাইছে।
অনেক মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকায় পূর্ণ ভিতরে যাওয়ার যায়গা পাচ্ছিল না, তাই ফাইজার পিছনে এসে তাকে একটু সরে দাঁড়াতে বলে। তবে রংবেরঙের লাইটিং এর কারণে পিছন থেকে দেখে চিনতে পারেনি ফাইজাকে। পূর্ণ ও বেশ অবাক হলো,ফাইজাকে দেখে বুঝতে পারলো সেও পূর্ণকে এখানে আশা করেনি। পূর্ণ কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_তুমি এখানে?

উত্তর দিলোনা ফাইজা। বরং নিজের দৃষ্টি নামিয়ে কিছুটা দূড়ে সরে গিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কথা বাড়ালো না পূর্ণ। স্টেজ এর পাশে তাকাতেই দেখলো সায়ান হাতের ইশারায় ডাকছে তাকে। পূর্ণ আরো একবার তাকালো ফাইজার দিকে, অত:পর পা বাড়িয়ে সামনে দিকে চলে গেলো।

ভাগ্যের উপর ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে ফাইজা, কেন বারংবার পূর্ণ তার সামনে এসে পড়ছে? সিলেট এ এসেও এত মানুষেফ মাঝে তার সেই পূর্ণর সামনেই পড়তে হলো! মনে তো হচ্ছে তারাও এই রিসোর্ট এই উঠেছে। বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে নিলো ফাইজা, যদি তেমনটা হয় তাহলে তো আবারো পূর্ণর সামনে পরতে হতে পারে।
চোখ খুলে একটু পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো পূর্ন আর সায়ান স্টেজ এর একপাশে দাঁড়িয়ে গিটার নিয়ে কিছু একটা ঠিক করছে। আচ্ছা পূর্ণ কি গান গাইবে? পূর্ণকে খুব বেশি গান গাইতে দেখেনি ফাইজা। নিজেদের নবীন বরণে সিনিয়ররা জোড় করে পূর্নকে দিকে গান গাইয়েছিল, আর দু একবার ক্যাম্পাসে পূর্ণর গান শুনেছিল,সেটাও বন্ধুদের জোরাজোরিতে।
ফাইজার মাথায় চিন্তা এসেছিল এখান থেকে চলে যাওয়ার। তবে এখন কেন যেন আর যেতে ইচ্ছে করছেনা, যদি পূর্ণ গান গায়?

ফাইজাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলে,
_আপু,কি দেখছো?

ফাইজার চিন্তাভঙ্গ হতেই নিজেকে স্বাভাবিক বোঝানোর চেষ্টা করে ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_হ্যা আমার আবার কি হবে? তুই বল,সেলফি তুলতে পারলি?

_আর সেলফি, উনি তো আগেই আমাকে দেখে ফেললেন। ওনার সামনে গেলে আবারো দুটো কথা শোনাবেন হয়তো। থাক বাবা,দরকার নেই আমার সেলফি তোলার। আচ্ছা চলোনা রুমে চলে যাই,আর থাকতে হবেনা এখানে।

আদৃত বেশিক্ষণ ইশার দিকে নজর রাখতে পারেনি। আহনাফ এসে তাকে স্টেজ এ যেতে বলায় তাকে পূর্ণ এবং সায়ান এর সাথে স্টেজ এ উঠতে হয়। মূলত সায়ান গিটার বাজাবে,পূর্ণ এবং আদৃত গান গাইবে।

ফাইজা ইশার কথা শুনে স্টেজ এর তাকিয়ে পূর্নকে সেখানে দেখতে পায়,বুঝতে পারে পূর্ণও আদৃতের সঙ্গে গান গাইবে।

_কি দেখছো আপু? যাবে এখান থেকে?

_না মানে এলাম যখন এত তাড়াতাড়ি চলে যাবো? মনে তো হচ্ছে গানবাজনা ও হবে এখানে।

ইশা কিছুটা ভেবেচিন্তে বললো,
_তা অবশ্য ঠিক বলেছো। লোকটা যেমন ই হোক গানটা উনি ভালোই গায়।

_ত তাহলে বরং আমরা গান শুনে তারপর ই যাই?

_ঠিক আচ্ছে,তুমি থাকলে আমিও আছি।

___
ফাইজা থাকবে বললেও খুব বেশি সময় থাকেনি সেখানে। দশমিনিট পড়েই ইশাকে নিয়ে চলে এসেছিল রুম এ। পূর্ণর ভাবনা থেকে বেড় হতে চেয়েছিল,ভেবেছিল এখানে এসে অন্তত পূর্ণকে কিছুটা ভুলে থাকতে পারবে। সেখানে ঠিক বিপরীত বিষয় ঘটছে।

আদৃত গান গাওয়ার সময় ইশাকে খেয়াল করেছিল। তবে কিছুক্ষন পড়েই তাকে বেড়িয়ে যেতে দেখে আদৃত ও গানটা শেষ করে পূর্নকে বাকিটা সামলে নিতে বলে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে। ওদের ফলো করতে করতে দেখতে পায় আদৃতদের ঠিক পাশের রুমটাতেই যাচ্ছে। কিন্তু আদৃতের স্পষ্ট মনে আছে গতকাল এই রুমে সে অন্য লোক দেখেছিল,তার মানে ওরা আজকেই এসেছে।
ইশা,ফাইজা রুমে চলে যেতেই আদৃত কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত কিনা দুটো মেয়েকে ফলো করলো সে!

ইশা আর ফাইজা রুমে এসেছে অনেক্ষন আগে। তবে ইশার এখনো ঘুম আসছে না, ছয় ঘন্টা গাড়িতে বসে ঘুমিয়েছে,এখন আর ঘুম কি করে আসবে। আর ফাইজা, তার ঘুমতো সেই কখনই উড়ে গেছে। ফাইজা গিয়ে ব্যালকনি তে একটা চেয়ারে বসে আছে। ইশা এতক্ষন ফোন ঘাটলেও এখলন আর ভালো লাগছে না,ফাইজাও কেমন চুপচাপ বসে রয়েছে। ইশা তাই ফোনটা রেখে বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনি তে চলে গেলো,ফাইজার পাশেই আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
ফাইজা এবার ইশার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
_কি হয়েছে? ঘুম আসছে না এখনো?

ইশা মাথা নাড়লো অর্থাৎ তার ঘুম আসছে না।
পূর্ণ কিছুক্ষন আগে ব্যালকনিতে এসেছিল ফোন এ কথা বলতে। তখনই তার নজর যায় পাশের ব্যালকনির দিকে। ফাইজা তখন ব্যালকনির গ্রিল এ মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল। পূর্ণ সামনে থেকে না দেখলেও পিছন থেকে দেখে ঠিকই বুঝতে পারলো এটা ফাইজা। ফোনে কথা বলা শেষে ব্যালকনির দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ন দৃষ্টি ফাইজার উপর নিমজ্জিত রাখলো।

ফাইজা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। শান্ত কণ্ঠে ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_ইশা, তোর নিরবের কথা ভেবে মন খারাপ হয় এখনো?

ফাইজার এমন প্রশ্নে ইশা কিছুটা অবাক হলো।
_ওতো আমাকে কখনো ভালোই বাসেনি,তাই আমিও ভেবেছি ওর জন্য মন খারাপ করবো না।

ফাইজা স্মিত হাসলো,দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আপনমনেই বললো,
_সবাই যদি তেমনটা করতে পারতো, কি ভালোই না হতো। তাই না?

_কিছু বললে আপু?

_উম হু..। ছাড় তো, চল তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি।

ইশা ফাইজার কথায় রুমে চলে গেলো। ফাইজাও উঠে দাঁড়িয়ে রুমে আসতে যাবে তখনি তার চোখ পরে পাশে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে থাকা পূর্ণর দিকে। ফাইজাকে আচমকা এভাবে তাকাতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে পূর্ণ। আশেপাশে তাকিয়ে ফোনটা কানে ধরে কারোর সঙ্গে কথা বলছে এমন বোঝায়। ফাইজা কিছুটা অবাক হয়, পুর্ন কি এতক্ষন তার দিকে তাকিয়ে ছিল? ইশার ডাকে ব্যালকনি থেকে রুমে চলে এলো ফাইজা। মনে মনে ভাবলো,
_হয়তো ফোনেই কথা বলছিল,আমি শুধুশুধুই ভাবছি এত।

ফাইজা চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাচলো পূর্ণ। পিছনে ঘুরে রুমে যেতে নেবে তখনই দেখতে পায় আদৃত তার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পুর্ন কিছু না বলেই আদৃত এর পাশ থেকে রুমে চলে এলো।
আদৃত কিছুক্ষন পাশের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,
_নাহ, এবার অন্তত ফাইজাকে সবটা জানানো দরকার।

#চলবে

[ভেবেছিলাম আজকে দুটো পর্ব দিবো,কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনি। কালকে দিবো ইনশাল্লাহ। রিচেক করা হয়নি, ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here