#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৫
#মেহরিন_রিম
কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। ইশা বেশ আনন্দে দিন কাটালেও আদৃত এর দিন কাটছে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। সিলেট থেকে ফেরার পর অনেকগুলো কনসার্ট তার সঙ্গে অফিস এর কাজে বিশ্রামের সময়টুকুও বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও সময় করে ইশাকে ঠিকই দেখয়ে যাচ্ছে। কদিন বেশ ঝামেলা হলেও ইশা ইন্টার এর জন্য নতুন কোচিং এ ভর্তি হওয়ায় রোজ ই তার দেখা পাচ্ছে আদৃত। আরো একটা সুবিধা রয়েছে, সায়ান ও এক দুদিন পরপর মোহনার সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে কোচিং এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আদৃত ও কোনো বাহানায় তার সঙ্গে চলে আসে, মাঝেমধ্যে ইশাকে তার দেখা দেয় আবার মাঝেমধ্যে দেখা দেয়না।
সায়ান আর মোহনার সম্পর্ক এখনো কোনো নাম পায়নি। সায়ান বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও নিজের মনের কথা জানাতে পারেনি মোহনাকে, আর মোহনাও তার অপেক্ষায় রয়েছে।
পূর্ণ সিলেট থেকে ফেরার দুদিন পরেই নতুন একটা কেস এর ইনভেস্টিগেশন এর জন্য কুমিল্লা চলে যায়,সেখান থেকে আরো বেশ কিছু যায়গায় ঘুড়তে হচ্ছে তাকে। তাই ফাইজার সামনে আসা টা আর হয়ে ওঠেনি,এতে পূর্ণর কোনো আফসোস ও নেই। তবে ফাইজার হঠাৎ করে অন্যরকম কথা বলার ব্যাপারটা সে এখনো বুঝতে পারেনি।
রাত বাজে একটা। তবে ইশা,মোহনা কারোর চোখে আজ ঘুম নেই। মোহনা তো খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে, সেই সন্ধ্যা থেকে জায়নামাজ এই বসে আছে। তার মা এসে রাতের খাবার এর জন্য বেশ কয়েকবার ডাকলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে তিনিও হাল।ছেড়ে দিয়েছেন।
মোহনা এখনো জায়নামাজ এ বসে দোয়া করে চলেছে। ফোনের আওয়াজ পেয়ে হাত থেকে তসবিহ টা রেখে উঠে দাঁড়ায় সে। বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সায়ান ফোন করেছে। মোহনা ফোনটা রিসিভ করেই বলে,
_অনুগ্রহ করে আজকে আমাকে ডিসটার্ব করবেন না। এমনিতেই বহুত টেনশন এ আছি।
সায়ান অপর প্রান্ত থেকে শব্দ করেই হেসে দিলো, তার হাসির শব্দ মোহনার কানে পৌঁছোতেই সে মুখ ফুলিয়ে বললো,
_আপনি হাসছেন?
_হাসবো না তো কি করবো? তুমি যেমন টেনশন করছো তাতে তো মনে হচ্ছে রেজাল্ট দেওয়ার আগেই আইসিইউ তে চলে যাবে।
_হ্যা হ্যা আপনি ওভাবেই হাসুন। আমি আছি আমার চিন্তায়, আম্মু তো বলেই দিয়েছে পাশ না করলে আমাকে মাছ বিক্রেতার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
_কেন কেন? রিক্সাওয়ালা মামারা কি দোষ করলো?
_মজা নিচ্ছেন আপনি তাইনা? যদি সত্যি সত্যি ই আমার বিয়ে দিয়ে দেয় তখন?
_দিলে দিবে,তাতে আমার কি?
সায়ান এর কথায় খানিকটা কষ্ট পেলো মোহনা। করুন সুরে বললো,
_আপনার কিচ্ছু যায় আসেনা?
_একদমই না।
মোহনা ঠোঁট উল্টে কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,
_হ্যা তাইতো,আপনার কি ই বা হবে। আমাকে আর ফোন দিবেন না আপনি।
_আরে আরে কথাটা তো শোনো…
কথাটা মোহনার কান অবধি গেলো না। তার আগেই সে ফোনটা কেটে বিছানার উপর আছাড় মাড়লো। পরক্ষণেই বললো,
_না না এখন এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না। আল্লাহ,আর আমি কিচ্ছু চাইবো না,এবারের মতো পাশ করায় দাও।
আবারো জায়নামাজে বসে পড়লো মোহনা,রেজাল্টের আগে পর্যন্ত এভাবেই থাকবে সে।
সায়ান আরো পাঁচবার কল দিলো মোহনার নম্বরে, তবে একবারো সে রিসিভ করলো না কলটা। শেষ পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সায়ান।
____
_অন্যান্য মেয়েদের চিন্তাহ খাওয়া দাওয়া বন্ধ হওয়ার পালা। আর আমার অতি গুণধর মেয়ে,সে কিনা এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠে শান্তিতে টিভি দেখছে। আরে তোর কি মনে একটুও ভয়ডর নেই?
ঘর গোছাতে গোছাতে ইশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো রুকসানা। ইশা তার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো চিপস খেতে খেতে টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো।
_এই ব্যাপারে কিন্তু আমি ছোট আম্মুর সাথে একমত ইশা। তোর কি একটুও টেনশন হচ্ছেনা, লাইক একটুও না?
সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে কথাটা বললো ফাইজা। ইশা তার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো,
_কি শুরু করেছো বলতো তোমরা? এখন তো দেখছি আমার রেজাল্ট এর চিন্তায় তোমাদের ই ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে!
রুকসানা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন,
_হ্যা হ্যা তুমি থাকো খুশিমনে। রেজাল্ট খারাপ করলেনা তোর বাবাকে বলে রিক্সাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিবো।
_জানতো ঐ একটাই ডায়লগ,কিছু হলেই বিয়ে দিয়ে দিবো। বাবাই কখনো আমায় এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবেনা হুম।
_ফাইজা এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো বলতো?
ফাইজাও সামান্য হেসে ইশার পাশে বসে বললো,
_কিছুই করতে হবেনা ছোট আম্মু। ইশা অনেক ভালো রেজাল্ট করবে,তুমি মিলিয়ে নিও। আর ও তো ঠিকই বলেছে, যা হওয়ার হবে। এখন তা নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ আছে নাকি! কিন্তু ইশা,সময়তো হয়ে গেলো। দেখনা রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে কিনা।
_চেক করছি তো আপু,আসছে না এখনো।
___
স্কুলে এসেও এক ঘন্টা যাবৎ কেঁদেই চলেছে মোহনা। ইশা তাকে কয়েকবার ধমক দেওয়ার পড়ও তার কান্না থামার কোনো নাম নেই। রেজাল্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাড়া স্কুল এ এসে উপস্থিত হয়েছে। ইশা,মোহনা দুজনেই গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। আর সেই খুশিতেই মোহনার কান্না থামছেনা। সবাই স্কুলে এসে আনন্দ উৎযাপন করছে আর মোহনা তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।
ইশা বরাবরেই রেজাল্ট নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করেনা,আর মনেমনে চিন্তা হলেও তা কারো সামনে প্রকাশ করেনা। আজকেও তার চিন্তা হচ্ছিল কিছুটা তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয়নি। আর রেজাল্ট পাওয়ার পর থেকে তো খুশি ধরেই রাখতে পারছেনা। এতকিছুর মাঝে যে একজোড়া চোখ তার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ইশা খেয়াল ও করেনি।
নিজেদের আনন্দের মাঝে ইশার চোখ গেলো গাছের পাশে বসে থাকা নিরবের দিকে। নিরবকে সে অনেকদিন পর দেখছে,স্কুলেই অনেকদিন পড়ে এসেছে। নিরবকে দেখতে পেয়েও একবার অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো ইশা। তারপর আবারো তার অবাধ্য চোখ যায় নিরবের দিকে,খানিকটা মনমরা হয়েই বসে আছে। কারোর সঙ্গে কথাও বলছে না, ফোন স্ক্রোল ও করছে না। নিরবের কাছে গিয়ে একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো ইশার, এত পরিপাটি একটা ছেলে এমন চুপচাপ। বিষয়টা ঠিক মানতে পারছে না ইশা। নিজে একবার তার কাছে যেতে গিয়েও গেলোনা, তার বদলে মোহনার কাছে গিয়ে তাকে মৃদু স্বরে বললো,
_এই মেহু,নিরব ভাইয়ার কি হয়েছে বলতো?
মোহনার চোখ মুছতে মুছতেই বললো,
_কেন? ওর আবার কি হবে?
_দেখছিস না কেমন একাএকা চুপচাপ বসে আছে,কিছুটা একটা হয়েছে।
_তুই যেখানে আমিও সেখানে।
পাশ থেকে একটা মেয়ে ইশার কথা শুনে ওর সামনে এসে বললো,
_ঠিকই ধরেছিস ইশা। ঐযে নিরব ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে রিলেশন এ গিয়েছিলো না? তার বাবা নাকি এসব জানতে পেরে গিয়েছিল,পরে সেই মেয়ের বিয়েও ঠিক করেছে। এতদিনে বোধহয় বিয়ে হয়েও গেছে। তার পর থেকেই তো নিরব ভাইয়া এমন আপসেট হয়ে বসে থাকে।
ইশা দৃষ্টি সরিয়ে আবারো নিরবের দিকে তাকাতেই মোহনা তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
_ভালোই তো হলো বল, এবার কিন্তু তোর রাস্তা ক্লিয়ার ইশা।
ইশা স্থির দৃষ্টিতে একবার মোহনার দিকে তাকিয়ে আবারো নিরব এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদৃত কিছুটা দূড়ে দাঁড়িয়ে ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তবে ইশাকে এতবার নিরব এর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় সে। এক অজানা ভয় ধীরেধীরে গ্রাস করতে থাকে তাকে। কিছু হারিয়ে ফেলার চিন্তা মাথায় আসতেই অন্যদিকে ঘুড়ে যায় আদৃত। কেন যেন এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার।
#চলবে
[এইটুকুই কষ্ট করে লিখেছি। রিচেক করা হয়নি,ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।]