#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৬
#মেহরিন_রিম
কয়েক মিনিট একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিল আদৃত, এর মাঝেই কখন ইশা তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছি এটা সে বুঝতেও পারেনি। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে পিছন ঘুড়তেই দেখে ইশা বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে ইশাকে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আদৃত, তবে সেটা ইশাকে বুঝতে দেয়না। বেশিক্ষণ নজর লুকোতে হয়নি,তার আগেই ইশা জিজ্ঞেস করে,
_আপনি এখানে কি করছেন?
আদৃত কিছুটা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলে,
_জায়গাটা নিশ্চই তোমার কেনা নয়। তাই তোমায় কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি।
_সবসময় এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলেন কেন? জন্মের সময় কেউ মুখে মধু দেয়নি নাকি?
_সময়ের অনেক দাম আছে আমার।
কথাটা বলে হাঁটা ধরলেই ইশা দ্রুত আদৃত এর সামনে গিয়ে বলে,
_এই এই কোথায় যাচ্ছেন? দাঁড়ান দাঁড়ান।
_প্রতিটা কথা দু তিনবার রিপিট করতেই হবে?
_সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো গিয়ে আপনার সঙ্গে আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।
আদৃত কপাল কুঁচকে বলে,
_আমার সঙ্গে ইম্পর্টেন্ট কথা? কি কথা,জলদি বলো।
_আপনি সেদিন ফাইজা আপুকে কি বলছিলেন?
অবাক হয়ে যায় আদৃত,তার মানে ইশা সেদিন ওদের কথা বলতে দেখে নিয়েছিল? কিছু শুনে ফেলেনি তো? আর শুনলেই বা কি!
_কি হলো বলুন? কি বলেছিলেন আপুকে?
_কবে? আর আমি কি বলবো ওকে?
_দেখুন মিথ্যে কথা বলবেন না। আমি নিজের চোখে দেখেছি আপনি আপুকে কিছু বলছিলেন। নেহাত আমার লুকিয়ে লুকিয়ে মানুষের কথা শোনার অভ্যাস নেই তাই কিছু শুনিনি।
আদৃত ইশা দিকে এক কদম এগিয়ে বলে,
_ছোটদের এত কথা জানতে নেই।
ইশা কিছুটা তেতে উঠে বলে,
_আমি ছোট হতে পারি,কিন্তু এতটা ছোট নই যে কিছুই বুঝতে পারবো না। আমি বেশ ভালো করেই খেয়াল করেছি,সেদিনের পর থেকেই আপু কেমন মনমরা হয়ে আছে। আমি আপুকেও জিজ্ঞেস করেছি অনেকবার,কিন্তু কিছুই বলেনি। তাইতো বাধ্য হয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি। আচ্ছা আপনি কি আপুকে আগে থেকে চেনেন?
_হয়তো..
_হয়তো মানে? সোজাসুজি কথা বলতে পারেননা?
_না পারিনা, এবার যেতে দাও আমাকে।
_আপনি বলবেন না তাইতো?
আদৃত কোনো উত্তর দিলোনা। ইশার পাশ থেকে গেইটের বাহিরে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। ইশা রাগে গটগট করতে করতে মনে মনে কয়েকশো গা*লি দিয়ে লাগলো আদৃতকে। তখনি মোহনা ওর পাশে এসে বলে,
_এখানে কি করছিস তুই? আর আমি তোকে কি বললাম বুঝতে পারিসনি? নিরব ভাইয়া তো এখন…
_ওহ প্লিজ মেহু, আমি এতটাও সস্তা না যে নাচতে নাচতে নিরব ভাইয়ার কাছে চলে যাবো।
_কিন্তু তুই না ওকে ভালোবাসিস?
_ভালোবাসলেই তাকে পেতে হবে? আর যে কখনো আমার ভালোবাসা বোঝার চেষ্টাই করেনি তার কাছে তো আমি কখনই যাবোনা।
মোহনা হেসে ইশার গাল টেনে দিয়ে বললো,
_এতদিনে একদম ঠিক বুঝেছিস তুই। আর তোর পাশে না নিরব ভাইয়াকে মানায় ও না, তোর পাশে তো ওর চেয়ে আরো হ্যান্ডসাম ছেলেকে মানায়। লাইক আদৃত ভা..
_কানের নিচে এক থাপ্পড় দিলেনা তোর আলতু ফালতু কল্পনা সব ঠিক হয়ে যাবে। বলার মতো আর কাউকে পেলিনা তুই?
_আমিতো শুধু কথার কথা..
_এমন কথার কথাও আর জীবনে বলবিনা নাহলে..
_আচ্ছা বাবা বলবোনা। বাসায় যাবি তো নাকি?
_হ্যা চল।
_____
_দেখেছিস কতোটা দেড়ি হয়ে গেলো। নয়টার বেশি বাজে, কতক্ষন ধরে বলছি বেরোনোর কথা কিন্তু তোদের তো টাইম এর দিকে খেয়াল ই নেই।
ফ্রেন্ড এর বাসা থেকে বেরোতে বেরোতে কথাগুলো বললো ফাইজা। দিশা ফাইজা কে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে বললো,
_বার্থডে তে এসেছি,একটু মজা করবো না? তুই শুধু শুধুই টেনশন করছিস। আর তোর কাকি ও তো কিছু বলবে না দেড়ি করে ফিরলে।
_বলবে না কিন্তু…
_আর কথা বাড়াস না তো। এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে, তোকে কিছু না বললেও বাসায় গিয়ে আম্মুর থেকে ঝাড়ি খেতে হবে। গেলাম আমি টাটা।
কথাটা বলে দিশা ওর বাসার দিকে চলে গেলো,এখান থেকে ওর বাসায় যেতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। ফাইজার সঙ্গে আরো দুজন মেয়ে ছিলো, তারা দুজন ও তাদের হোস্টেল এর দিকে চলে গেলো, ফাইজা কে এখন একা একাই যেতে হবে।
অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনো রিক্সা বা সিয়েনজি পেলোনা ফাইজা,তাই বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করলো। মেইনরোড এ না গিয়ে রিক্সা পাওয়ার কোনো চান্স নেই।
রাস্তাঘাটে একা চলাফেরায় খুব বেশি ভয় নেই ফাইজার। তবে এই রাস্তাটা বেশ অন্ধকার হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে তার,ফোনের ফ্লাশ লাইটটা জ্বালিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেইনরোড এর দিকে।
মেইনরোড এর কাছাকাছি চলেও এসেছে ফাইজা। ঠিক সেই মুহূর্তেই দুজন ছেলে ওর পাশ থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলো,ফাইজা একবার ওদের ছোটার দিকে তাকালেও খুব বেশি মাথা ঘামালো না। আরো কয়েক কদম হাঁটার পর পাশে একটা চিকন গলির দিকে নজর যায় তার। অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা সেদিকে ধরতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় তার।
গলির সামনের দিকেই একটা পুড়নো বিল্ডিং এর সাথে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চেপে ধরে আছে পূর্ন। ফাইজা ছুটে পূর্ণর সামনে যায়। পূর্ণ হাতে র*ক্ত দেখতেই তার হাত কাঁপতে শুরু করে। আতঙ্ক নিয়ে কাপাকাপা গলায় বলে,
_ক কী হয়েছে ত তোমার?
হঠাৎ মুখের উপর ফ্লাশ লাইটের আলো পড়ায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছিল পূর্ণ। ফাইজার গলার আওয়ার শুনে দ্রুত চোখ খুলে তাকায় সে,সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কপাল থেকে হাত নামিয়ে নেয়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
_তুমি এখানে কি করছো?
_আমি কি করছি সেটা বড় কথা নয়। তোমার কপালে কি হয়েছে?
একেতো ফাইজার থেকে তুমি ডাক শুনে অবাক হয়েছে পূর্ণ। তার উপর এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
_কিছু হয়নি,ঐ অন্ধকারে হাটতে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়েছিলাম।
_বোকা পেয়েছো আমাকে? দেওয়ালে ধাক্কা খেলে এভাবে কপাল কাটে?
_ছাড়ো তো,তুমি কোথায় যাচ্ছিলে যাও।
ফাইজা পূর্ণর কপালের দিকে একবার হাত বাড়িয়েও তা সরিয়ে নেয়। ব্যথিত কণ্ঠে বলে,
_কতটা কেটে গেছে দেখেছো? ব্লি*ডিং হচ্ছে কপাল থেকে।
পূর্ণ ফাইজার দিকে তাকায়, ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে তার টলমলে চোখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পূর্ণ অন্যদিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
_এইটুকুতে কিছু হবেনা, তুমি..
ফাইজা কিছুটা শক্ত গলায় বললো,
_আমি কখন যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাপার। র*ক্ত পড়া তো বন্ধই হচ্ছে না। পাশেই ফার্মেসী আছে, এক্ষুনি ফার্মেসি তে চলো আমার সঙ্গে।
_বললাম তো তার কোনো দরকার নেই।
_সারাজীবন তো নিজে যা ভালো বুঝলে তাই করলে। এখন অন্তত আমি যা বলছি সেটা করো,চলো আমার সঙ্গে।
পূর্ণ বুঝতে পারে এখন ফাইজার সঙ্গে না গিয়ে কোনো উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে ফার্মেসি তে যেতেই হয় তাকে। বেশ অনেকটাই কেটে গিয়েছিল,তাই ড্রেসিং করে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়। পুড়োটা সময় ফাইজার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল পূর্ণ, ফাইজাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অতি কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছে। তবে পূর্ণ ভাবছে অন্য কথা, ফাইজা তাকে তুমি করে বলছে তার উপর এভাবে জোড় করে নিয়ে এলো। বিষয় গুলো কেমন অদ্ভুত লাগছে পূর্ণর কাছে। এমন কি হলো যার কারণে ফাইজা এতটা পরিবর্তন হয়ে গেলো…
#চলবে
[গল্প সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাবেন, কোনো অভিযোগ থাকলে তাও বলতে পারেন।
ছোট পর্ব দেওয়ার জন্য দুঃখিত,একটু সুস্থ হয়ে বোনাস পার্ট দিবানি।
হ্যাপি রিডিং।]