তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_২৭ #মেহরিন_রিম

0
368

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৭
#মেহরিন_রিম
এসএসসির রেজাল্ট দেওয়ার অনেকগুলো দিন পেড়িয়ে গেছে। ইশা,মোহনা তাদের কলেজেই ভর্তি হয়েছে। ইশার অন্য কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মোহনার জন্য এখানেই থেকে গেছে। আজ তাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান। আদৃতকে এখন প্রায়ই কলেজে দেখা যায়, ইশা সেটা খেয়াল করলেও কিছু বলেনা। সেলফি তোলার আশা সে এমনিতেও ছেড়ে দিয়েছে, লাগবেনা তার অনেক অনেক লাইক। তবুও এই লোকের কাছে গিয়ে সে সেলফি তোলার রিকুয়েস্ট করবেনা। নিরব কে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে ইশা, যতটা না বললেই ঠিক ততটাই কথা বলে। নিরবের ও পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। এখন অ্যাডমিশন এর প্রিপারেশন নিচ্ছে, তবুও কলেজে আসাই হয়।

ইশা যে স্বেচ্ছায় নিরবের থেকে দূড়ে থাকছে এটা বুঝতে পেরে আদৃত মনে মনে শান্তি পেয়েছে। নিজের অনুভূতি নিয়ে সে এখনো দ্বিধার মধ্যে আছে। তাই সময় কে নিজের মতোই চলতে দিচ্ছে, এর মাঝে যে তার অনুভূতিরা আরো প্রখর হয়ে উঠছে তার খুব একটা খেয়াল নেই আদৃতের।

সায়ান আর মোহনার সম্পর্ক ঠিক আগের মতোই রয়েছে। টুকটাক ঝগড়ার মধ্যেই দিন কেটে যাচ্ছে, বিশেষ করে ঝগড়ার সূত্রপাত টা মোহনাই করছে। সায়ান এখনো তাকে ডিরেক্টলি কিছু বলছেনা,এই কারণেই মোহনা ছোটখাটো বিষয়ে রেগে যাচ্ছে। তবে সেই রাগ খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনা,সায়ান ঠিক কিছু না কিছু করে তার রাগ ভাঙিয়ে দেয়। মোহনা নিজেও বুঝতে পারছে, ধীরে ধীরে সায়ান তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

ফাইজার বিষয়টা নিয়ে পূর্ণ সেদিন অনেক্ষন চিন্তা করেছে, তবে কোনো উত্তর পায়নি। ফাইজা তাকে তুমি করে বলছে, তাকে দেখে অস্বস্তিতে পরছে না বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে পূর্ণ কে। কপালের ক্ষত অনেকটাই কমে গেছে, ব্যান্ডেজ খুলে এখন সাধারণ ব্যান্ড এইড দেওয়া আছে ক্ষতস্থানে। সেদিন দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে নয় বরং পাথর এর আঘাতেই কপাল কেটে গিয়েছিল পূর্ণর। খুব কাছে গিয়েও ছেলেদুটো সেদিন হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল,যদিও খুব বেশিদিন পালাতে পারেনি। কদিন পড়েই তাড়া ধরা পরে গিয়েছিল। পূর্ণ আরো অবাক হয়েছে এই বিষয়ে ফাইজা কোনো প্রশ্ন না করায়। একবার জিজ্ঞেস করার পর আর জিজ্ঞেস করেনি এই ক্ষত নিয়ে, কেন হয়েছে কিভাবে হয়েছে কিছুই বলেনি। সে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে কিনা জানা নেই পূর্ণর। তবে তার ধারণা অনুযায়ী ফাইজার কিছু জানার কথা নয়।

আদৃতের সাথে কলেজের পুড়নো শিক্ষক দের বেশ সখ্যতা তৈরি হয়েছে,সবাই যেনো তাকে চোখে হারাচ্ছে। সব স্টুডেন্ট দের কাছে তার প্রশংসা করে বেরাচ্ছে। বিজনেস সামলাচ্ছে তার উপর এত ভালো গান করে। একটু এদিক সেদিক হলেই টিচার রা আদৃত এর উদাহরণ দেখায়, এতে প্রচুর বিরক্ত ইশা। কলেজের যেকোনো প্রোগ্রাম এ প্রিন্সিপাল স্যার নিজে আদৃতকে আমন্ত্রন জানাবেন,তেমন আজকেও জানিয়েছে। আদৃত ও হাসিমুখে রাজি হয়ে গেছে। আদৃত এর কিছুকিছু বিষয়ে এই পরিবর্তনগুলো বেশ ভাবাচ্ছে সায়ানকে, পূর্ণ খুব একটা মাথা না ঘামালেও সায়ান এ নিয়ে অনেক চিন্তা করেছে। তবে আদৃতের কাছে জিজ্ঞেস করলে সে কোনো উত্তর দিবেনা।

সায়ান আদৃত এর সঙ্গেই এসেছে,তাদের আসতে কিছুটা দেড়িই হয়ে গেছে। ইশা নাচের জন্য রেডি হচ্ছে, আজ সে গান করবেনা, ইচ্ছে নেই তাই। শুধু নাচবে তাও চারজন মিলে আর সেখানে গান গাইবে আদৃত, এটা শোনার পরে সে থাকতেই চাইছিল না। তবে দলের বাকি সবাই ভীষণ খুশি,আর ইশা নেতৃত্ব দেওয়ায় সে বেরিয়েও যেতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে নাচতেই হবে।

ফাইজা মাঠের অন্যদিকে দাঁড়িয়ে ছিলো, সায়ান আর আদৃতকে আসতে দেখে কিছুটা আন্দাজ করেছে যে এখানে পূর্ণ ও আসবে। সেদিনের পর আর পূর্ণর খোজ নেওয়া হয়ে ওঠেনি, ফোন নম্বরটা আছে ফাইজার কাছে। যদিও সেই নম্বর এখনো ইউজ করে কিনা সেটা জানা নেই। আর ইউজ করলেও, পূর্ণকে কল দিয়ে খোজ নিতে মনটা খচখচ করছিলো তাই আর খবর নিতে পারেনি।

ফাইজার ধারণা ঠিক ই ছিলো। আদৃতেরা ভিতরে যাওয়ার পাঁচমিনিট পরেই পূর্ণ ঘড়ির দিকে নজর রেখে প্রবেশ করে কলেজে। ফাইজা তার কিছুটা সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। পূর্ণ কে আসতে দেখেই তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ফাইজা। পূর্ণ হাতের ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই ফাইজাকে দেখতে পায়।

_কেমন আছো এখন? কপালের ক্ষতটা কমেছে?

আবারো অবাক হয় পূর্ণ। ফাইজার কণ্ঠে কোনো জড়তা নেই, সে পূর্ণকে দেখার পরও একদম স্বাভাবিক রয়েছে। ফাইজা যে এখানে আসবে সেটা অবশ্য আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল পূর্ণ।

_কী হলো বলো! ব্যাথা কমেছে?

পূর্ণকে চুপ থাকতে দেখে আবারো কথাটা বললো ফাইজা। পূর্ণ এবার চোখের পলক ফেলে কিছুটা শান্ত কণ্ঠে বললো,
_ঠিক আছি আমি। আর সেদিনের জন্য থ্যাংকস।

_থ্যাংকস বলার মতো কিছুই নেই। আর যাই হোক, আমার মধ্যে একটু হলেও মনুষ্যত্ব আছে।

পূর্ণ কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই ফাইজা নিজের জায়গায় স্থির থেকে স্মিত হেসে বলে,
_আমায় এতটা ইগনোর না করলেই পারো।

এক ঝটকায় পিছনে ফিরে তাকায় পূর্ণ। ফাইজাও ঘাড় ঘুরিয়ে তার চোখে চোখ রাখে। চোখ নামিয়ে আবারো সামান্য হাসলো ফাইজা। অত:পর আরো একবার পূর্ণ দিকে তাকিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আর পূর্ণ কেবলই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে।

_____
আদৃর ভেবেছিল তাদের অনেকটাই দেড়ি হয়ে গেছে। যদিও সেটা সত্যি নয়, সবে মাত্র অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। নাচগান শুরু হবে আর কিছুক্ষন পড়ে। আজ গিটার নিয়ে নয়,হারমোনিয়াম বাজিয়েই গান গাইবে। হারমোনিয়াম বাজানোটা খুব ছোট বেলায় মায়ের কাছে শিখেছে আদৃত। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মাঠের দিকে চোখ যায় আদৃত এর। সেখানে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় তার। চোখদুটো ধীরেধীরে লাল বর্ণ ধারণ করতে থাকে,চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। পূর্ণ আর সায়ান তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আদৃতকে হঠাৎ অন্যরকম হয়ে যেতে দেখে সায়ান একবার পূর্ণর দিকে তাকিয়ে আদৃতের হাতে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলে,

_আদি? কি দেখছিস ওদিকে?

ধ্যান ভাঙে আদৃত এর। চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারো তাকায়, না সে ঠিকই দেখছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিচের দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে,

_ঐ মহিলা এখানে কি করছে?

আদৃত এর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালে পূর্ণ আর সায়ান দুজনেই অবাক হয়ে যায়। আদৃতের হঠাৎ এমন আচরণ এর কারণ স্পষ্ট হয়ে যায়। সায়ান আতঙ্কিত চোখে পূর্ণর দিকে তাকায়। পূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আদৃত কে কিছুটা পাশে নিয়ে গিয়ে বলে,

_কাম ডাউন আদি। হয়তো ওনার মেয়ে এই কলেজে পড়ে তাই এসেছেন। তুই ওনার দিকে খেয়াল না করলেই তো হয়..

আদৃত কিছুটা উচ্চস্বরে বলে ওঠে,
_নো ওয়ে পূর্ণ। উনি এখানে থাকবেন আর আমি স্টেজ এ উঠে গান গাইবো? ইম্পসিবল…

কথাটা বলেই আদৃত দ্রুত পায়ে অন্যদিকে চলে যায়। সায়ান পূর্ণর পাশে এসে বলে,
_আরে ওকে যেতে দিলি কেন? আটকাতে পারলি না?

পূর্ণ বিরক্তিসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
_তোর মনে হয় ওকে এখন কেউ আটকাতে পারবে?

ইশা শাড়ি পরে সাজগোজ শেষ করে এদিকেই দাঁড়িয়ে ছিল। আদৃতকে হঠাৎ এমন অদ্ভুতভাবে চলে যেতে দেখে কিছুটা খটকা লাগে তার। যতটুকু শুনতে পেলো তাতে বুঝতে পারলো আদৃত হয়তো কোনো ব্যাক্তির জন্য রেগে আছে। তাহলে কি আদৃত গান গাইবে না? একমুহূর্তের জন্য খুশি হয়েও ঠিক খুশি হতে পারলোনা ইশা। মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগলো। স্টেজ এ তাকিয়ে দেখলো টিচাররা তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন। এখন নাচগান শুরু করতে দশমিনিট তো লাগবেই। আর কিছু না ভেবেই আদৃত যেদিকে গিয়েছে সেই দিকে এগোলো ইশা। কলেজ গেইট এইদিকে না তার মানে আদৃত বেরিয়ে যায়নি। ক্যাম্পাসের পাশে পুকুরের দিকেই গিয়েছে সে। যেতে গিয়ে দু বার থামলো ইশা। পরিশেষে শুকনো ঢোক গিলে পা বাড়ালো।

ঠিক ই ধরেছিল ইশা। আদৃত পুকুরের পাশের বেঞ্চে দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। ইশা ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাড়ালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললো,
_এহেম এহেম…

#চলবে

[দেড়ি হলো বলে দুঃখিত। রিচেইক করা হয়নি,বানানে ভুল থাকতে পারে।
গল্প সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানিয়ে যাবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here