চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৪৩

0
366

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৩
১২৭.
অর্পণ হঠাৎ এভাবে রাস্তার মধ্যে প্রপোজ করে বসবে পুতুল ভাবতেই পারে নিই।যে মানুষটাকে নিয়ে তার ভাবার কিংবা সময় দেওয়ার ইচ্ছে নেই।সে না চাইতেও তার সাথে কেন জুড়ে যাচ্ছে?সে এসব চায়না।সে তার স্বপ্ন নিয়ে খুশি ছিল।আজ কেন এরকম হলো?এসব হওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল?
পুতুল নিজের চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করে।কিন্তু আড়াল করতে পারে না।অর্পণের চোখ দুটো তার চোখের মায়া আটকে যায়।অর্পণের থেকে দূরে যেতে চাইলে আজ দূরে যাওয়ার সাহস কেনোও হয়না?মনে মধ্যে কষ্টের ঢেউ।মা,বাবার বিচ্ছেদ।এবং নিজের বিয়ে ভাঙ্গা এসব তাকে আরো কঠিন হতে বাধ্য করে।বারবার মনে হয়!আমিও আমার মায়ের পথে চলছি।যা আমার জন্য সুখকর নয়।তা বরই দুঃখের।

পুতুল,অর্পণের হাত থেকে পালাতে চায়।বেঞ্চ থেকে ব্যাগটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে চেষ্টা করে।কিন্তু অর্পন তার পিছুপিছু আসছে।পুতুলের পিছ আজ সে ছাড়বে না।তার ভালোবাসা,আজকে তাকে এমপি সাহেব থেকে রাস্তার প্রেম ভিখারি করে ছাড়লো।প্রেয়সীকে পাওয়ার জন্য তার হ্রদয়খানা আজ বড্ড ব্যাকুল।যার একটু ছোঁয়া অর্পণ তালুকদারের মন ঠান্ডা হবে।ফুটবে মুখে হাসি।কিন্তু সামনের নারীটি একটু বেশি অভিমানী একটু জিদ্দি।তবুও আজ সে হার মানবে না।তার ভালোবাসার জন্য আজ প্রেয়সীকে চায়।তার কঠিন আবরণ তৈরি এই শক্ত রুপটাও ভেঙে ফেলতে চায়,তার ভালোবাসা দিয়ে।

বৃষ্টি ইতিমধ্যে থেমে গেছে।একজন হাঁটছে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে।আরেকজন,অপরজনকে মানাতে ছুটছে পিছুপিছু।পুতুল কয়েকবার আঙুল তুলে ব’লেছে এখান থেকে চলে যেতে।কিন্তু অর্পণ মানছে না।একসময় পুতুল হাঁটা বন্ধ করে অর্পণকে চোখ রাঙিয়ে ইশারায় বলল,আপনি যাবেন।না-কি আমি পুলিশকে খবর দিব।

পুতুলের কথা মতো নিজের ভিজে যাওয়া ফোনটা পুতুলের হাতে দিয়ে বলল,

-;এই নেও কল কর!পুতুল আশ্চর্য হচ্ছে।পরবর্তী মনে হলো।এই বেডা নিজেই এমপি।তাকে পুলিশের কি ভয় দেখাচ্ছে?

পুতুল ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে কয়েক পা এগোতেই স্বাধীনের সামনে পরে গেলো।মামার মুখটা গম্ভীর করে তাকিয়ে আছে।

একবার পিছনে তাকায়।একবার সামনে তাকায়।পিছনে অর্পণ দাঁড়িয়ে।সামনে মামা দাঁড়িয়ে।পুতুল কি করবে বুঝতে পারছে না?এমন সময় হাঁচি আর কাশি একসাথে দিতেই দুইজন দুইদিক থেকে এগিয়ে এসে রুমাল আর গামছা ধরে।পুতুল অসহায় চোখে তাকিয়ে রয়।মনে মনে একটা ঢোকঁ গিলতে থাকে।চোখের পাতা ঝাপ্টিয়ে বলল,

-;লাগবে না।মামা গামছা নামিয়ে নিলেও অর্পণ পুতুলের হাতে রুমাল দিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে পরে।এইদিকে পুতুলের মুখটা চুপসে গেলো।মামা চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

এই ছেলে।তুমি আমার মেয়ের পাশে কি করছো?তুমি না গ্রামে তোমার বোনের বিয়েতে ছিলে।তাহলে এখানে কি?

বোনের বিয়ে কালকে খাওয়া শেষ।তাই বাসায় একটু বিশ্রাম নিতে চাইছিলাম।কিন্তু আপনার মেয়ে জন্য পারলাম কই?তালেপুর থেকে সেই ঢাকায় টেনে এনেই ছাড়লো।

-;মানে।আমার মেয়ে তোমাকে কি করলো?যার জন্য তুমি গ্রাম ছেড়ে ঢাকায়।

-;কি আর করবে?আমার হ্রদয় চুরি করেছে।আর সেই হ্রদয় চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছে ।

অর্পণের এমন কথায় স্বাধীনের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।একবার অর্পণের দিকে তাকায়।আবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

এসব কি ব’লে?পুতুল দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে বলল,সে জানে না।মাথার একসাইডে হাতে রেখে ইশারায় বলল,মনে হয়,পাগল হয়ে গেছে।

পুতুলের ভাবভঙ্গি দেখে অর্পণ বিরক্ত হলো।

-;ওহ কি বলবে?বছরের পর বছর চরকি মতো আমায় দোল দোল দুলুনি,দুলিয়ে বলছে।আমি পাগল।মানে আমি পাগল হয়ে গেছি।এমপি সাহেব একটা পাগল।এই এমপি দ্বারা রাজ্য এতদিন চললো কি করে?জনগণ শেষ পর্যন্ত পাগল এমপিকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করালো।

পুতুল তুমি নিষ্ঠুরতমা প্রিয়া সেটা জানতাম।কিন্তু তুমি নিষ্ঠুরতমা পাষাণী সেটা জানতে পারলাম আজ।ইয়া আল্লাহ এ আমি কার প্রেমে পড়লাম?কারে আমি আমার মন,প্রাণ দিলাম।সে এমন ভাব করছে।মনে হচ্ছে আমি ক্রিমিনাল।আর এরা বাপ,বেটি সিআইডি অফিসার।আর আপনি মামু এত গোয়েন্দাগিরি করেন কেন?কোথায় মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে বলবেন।বাবা,দীর্ঘঞ্জীবী হও,সুখী হও।

অর্পণের কথা শেষ হতে দেড়ি,পুতুল হাতদুটো দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে।এই লোকটা কি উল্টোপাল্টা বকবক করে চলছে।এইদিকে স্বাধীন হতভম্ব হয়ে গেছে।অর্পণ বুকের কাছে দুই হাত ভাজ করে বলল,

শুনন মামা মশাই।আমি জনাব অর্পণ তালুকদার।আপনার কন্যা স্বরূপ ভাগ্নীকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত।ছেলে হিসেবে মন্দ নই।লাখে আমি এক পিস।মেয়ে আপনার সুখেই থাকিবে।তাহার কোনো কষ্ট করিতে হইবে না।আমি তাহাকে রাজরানি করে রাখিব।

অর্পণের কথার কোনো জবাব না দিয়ে স্বাধীন,পুতুলের হাত টেনে নিতে নিতে বলল,

বাসায় চল।আর তুমি বাসায় যাও।এসব বিষয়ে পরে কথা হবে।

পরে কেন হবে?সবকিছু আজই হবে।আপনার মেয়ে একটা চোর।আমার মনটা চুরি করে সব সময় পালিয়ে যাওয়ার ধান্ধায় থাকে।তা কি আমি বুঝি না ভেবেছেন?

স্বাধীন,পুতুল,ট্রেনে চড়তেই।অর্পণ ভিজা শরীরে বাইকে করে গ্রামে ছুটে।

১২৮.
স্বাধীনের বাড়িতে তালুকদার বাড়ির সবাই হাজির।অসীম তালুকদার ছেলের কাজে বিরক্ত হয়ে বসে আছেন।কিন্তু রাবেয়া খুশিতে বাক-বাকুম।ছেলে বিয়ের জন্য আর অপেক্ষা করতে চায় না।তাইতো ফল,মিষ্ট,দই এবং কাজীকে সাথে করে নিয়ে আসছে।এইদিকে পুতুল গোসল করে মাথা গামছা দিয়ে ভিজা চুলগুলো মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে।বাহিরে অনেকের গলা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
নাকে মুরগী মাংস এবং পোলাও সুগন্ধ আসছে।মিলন,সাজু আজ বেশ আনন্দে রয়েছে।পুতুলের ভাবনার মাঝেই দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে মাথায় ওড়না দেয়।স্বাধীন রুমে প্রবেশ করে।স্বাধীনের হাতে লাল বেনারসি।যেটা রাজিয়ার বিয়ের জন্য কি না হলেও দেওয়া হয়নি।আজ মেয়ের জন্য সেটা বের করেছেন।পুতুল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মামার মুখটা কেমন যেনো।না হাসি,আর না গম্ভীর মুখ।

আম্মা আপনি বড় কেন হলেন?ছয় বছরের সেই ছোট্ট পুতুল কেনো রইলেন না।আপনি আমার এই কাচা মাটির ঘরে ছোট ছোট পা’য়ে যখন হেঁটে হেসে খেলে বেড়াতেন।আমার খুব আনন্দ হতো।মনে হতো আমার আম্মা আপনার মাঝে ফিরে এসেছে।সেই মায়ের প্রতিবিম্ব আপনার মাঝে দেখে কতটা শান্তি পেতাম।কতটা রাত আমি আরামে ঘুমিয়ে কাটিয়েছি তার হিসেব নেই।কিন্তু আজ আপনাকে এই দুই হাত দিয়ে বিদায় জানাতে কষ্ট হচ্ছে।আমি বোধয় মেয়ের বাপ ব’লেই এই কষ্টটা পাচ্ছি।আমার আম্মার জন্য দোয়া রইলো।সে যেনো সুখী হয়।তার সুখেই আমার সুখ।স্বাধীন চোখের পানি মুছে বলল,

তৈরি হয়ে নিন।আজ আপনার বিয়ে।বরপক্ষ চলে আসছে।ওরা আপনাকে নিতে এসেছে।আর আমি আজ সবটা জেনেই তাদের হাতে সহ ইচ্ছায় আপনাকে তুলে দিচ্ছি।আপনার ব্যাপারে কোনো কিছু লুকানো হয়নি।তারা সবটা জেনেই গ্রহণ করতে প্রস্তুত।স্বাধীন চলে যেতেই পুতুল ঠাসস করে বিছানা বসে পড়ে।কি হচ্ছে এসব?সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
রেনু পুতুলকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে আঁচল একটু বড় করে টেনে দিলো।মাথায় কালো হিজাব পরিধান করিয়েছে।একেবারে কনে সাজিয়ে রুপান্ত করার চেষ্টা।এই কনের হাতে মেহেদী নেই।চুলগুলো হাত খোপা করে রাখা।চেহারায় সাজ গোছের কোনো প্রশাদর্নী নেই।তার দুই হাতে ছেলে পক্ষ থেকে দুই জোড়া চিকন দামী চুরি।গলায় কোনো অল্ঙ্কার নেই।নাকে ছোট্র নাকফুল।একদম ঘরোয়াভাবেই এবং ময়মুরুব্বি সামনেই খুরমা খেজুর দিয়ে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছে।

পুতুল এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।মামা তার সাথে এটা কেন করলো জানা নেই? তবে এর পিছনে বড় কারণ অবশ্যই রয়েছে।তা না হলে যে ছেলেকে দুইদিন আগেও সয্য করতে পারতোনা।আজ তার সাথে বিয়ে দিলো।আজ একটু আগেই সে অন্য কারো বউ হয়েছে।সে অর্পণ তালুকদারের বউ।বিশ্বাস করতে পারছে না।পুতুল নিজের ঘরে ছিল।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে চোখ তুলতেই দেখে অর্পণ তালুকদারকে।পুতুলকে অবাক শেষ চূড়ায় উঠিয়ে পুতুলকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে নাচতে লাগলো।পুতুলের কপালে প্রথম চুমু বসিয়ে দিলো।

একটু আগে যখন আমি কবুল বলছিলাম।বিশ্বাস করো মনে হচ্ছিল আমি কল্পনা দেখছি।তুমি আমার বউ।এটা ভাবতেই কি যে আনন্দ লাগছে বউ।আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাব।আজ অবশেষে তোমায় পেলাম।আমার ভালোবাসা।আমার প্রেয়সী আমার ঘরের ঘরণী হয়ে এলো।এতদিন তোমাকে দূর থেকে দেখেই আমার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়েছি।আজ সামনে থেকে দেখতে পারব।অর্পণ বকবকানি করছে।এইদিকে পুতুল নিজের সদ্য হওয়া স্বামীর রিয়াকশন দেখে মাথা ঘুরছে।প্রথমে চরকি মতো ঘুরানো এবং তারপর চুমু তার কপালে দিতেই পুতুল বেহুশ হয়ে তার বক্ষে জুড়ে পড়ে আছে।অর্পণ যখন বুঝতে পারলো।তার আনন্দ হাওয়া ফুস।বউকে খাটে শুইয়ে হাত পাকা দিয়ে বাতাস করতে লাগল।

হায় আল্লাহ,আমার চুমুতে এত পাওয়ার,যে বিয়ের প্রথমদিনই বউ বেহুশ।আর আমি তার সেবায় এখন নিয়োজিত।

চলবে…..

এই যে পাঠক/পাঠিকা নেন দিয়ে দিলাম বিয়ে।এবার ওদের জন্য দোয়া আর ভালোবাসা দিয়ে যান।এসব নিয়ে কোনো কিপ্টামি না।

গল্পের নাম নিয়ে আর কত কথা শুনবো।এবার থামুন।আমি আগেও ব’লেছি।আবারও বলছি। #চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
হুমায়ুন আহমেদ বইয়ের নামের সাথে মিল রেখেই নামকরণ করা হয়েছে।অন্য কারো সাথে নয়।তবুও কপি বাজ কেনো বলছেন?নাম এক হলেও গল্পের প্লট সম্পূর্ণ আলাদা।এতে কোনো মিল নেই।ভিন্নতা রয়েছে।যদি প্রমাণ করতে পারেন।গল্পের প্লট এক।আমি কথা দিচ্ছি।প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথে গল্পটা আমি ডিলিট করে দিব।কোথাও আর রাখবো না।এমনকি নিজের কাছে ওহ না।কালকে এই সমস্যার জন্য একটা শব্দ লিখতে পারি নিই।আজ দিলাম।কালকে গল্প আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here