চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৪৫

0
381

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৫
১৩১.
জীবনে কি পাব না
ভুলেছি সে ভাবনা
সামনে যা দেখি,জানি না সেকি
আসল কি নকল সোনা?

মিলন আস্তে চল।সামনে লাল গরু দাঁড়িয়ে আছে।মনে হয় তোর গান পছন্দ হয়েছে। দেখ কেমন করে তাকিয়ে আছে?

কি বলিস সত্যি না-কি?মিলন গান বন্ধ করে লাল গরুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো।

এই যে লাল টু মিয়া আড়ে আড়ে চাও কেন?আমি তোমার গালফ্রেন্ড নই বুঝলে।মিলনের কথায় গরু কিছু বুঝুক বা না বুঝুক।

হাম্বা ব’লে লেজ নাড়াতে লাগলো।

হুহ,ছি কি গন্ধ?ওই দূর্গন্ধ আসে কোথা থেকে?

সামনে দিকে তাকা।তোর লাল টু মিয়া কাম সাড়তাছে।মিলন তাকাতে দেখে গরু মলমূত্ত ত্যাগ করছে।

ওরে শালা।এই খাট্রাস গরু।তোর শরম করে না।আমার সামনে পটি করিস।ছি গিলুহীন গরু।মাথাটা মোটা কোথাকার?মাথায় নাই বুদ্ধি।দেখ আমার সামনে কি করলো?ওরে তোর শরম নাই আমার তোও শরম আছে।তোরে আদর করে ডাকলাম লাল টু মিয়া।আর তুই আমারে বেইজ্জতি করে ছাড়লি।যা সর।তোর মুখ আমি দেখবো না।সাজু চল চলে যাই।সাজুকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে চলে যাচ্ছে।এমন সময় গরু হাম্বা,হাম্বা করতে করতে মিলনের পিছনে রশি ছুটিয়ে দৌড়ে আসতে থাকে।সাজু চিতকার করে বলল।

মিলন,পালা।গরু গুতা দিতে আসছে।সাজুর কথায় দেখার সময় কই?সে লুঙ্গি কাছা মেরে দৌড় দিতে লাগল।পিঁয়াজ ক্ষেত,মরিচ ক্ষেত তালগাছের মাঠ ছেড়ে নদীতে লাফিয়ে পড়ে।

পানির নিচে চল্লিশ সেকেন্ড থেকেই পানির ওপর ভেসে ওঠে।গরুর দেখা না পেয়ে স্ততির নিশ্বাস ফেলে উপরে উঠতেই মাথায় হাত।তার লুঙ্গি কই গেলো?এমন অলিম্পিক দৌড়ে আসছে।বেচারার লুঙ্গি কখন খুলে পড়ছে বুঝতে পারে নাই।এখন উপায়।সে বাসায় ফিরবে কি করে?

এইদিকে সাজু,মিলনকে খুঁজে ফিরছে।কোথায় যে গেলো?খবর নেই।

তোমার নিয়ত যদি ঠিক থাকে একদিন তোমার লক্ষ্য অবধি পৌছাতে তুমি পারবে।
সে যতই বাঁধা বিপদ আসুক না কেনো?

পুতুল মনযোগ দিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ছে।সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে।ততোই তার স্বপ্ন,আশার হাতছানি পাচ্ছে।পুতুলের নিরাপত্তা পুতুলের সব দায়িত্ব এখন তার স্বামী অর্পণ তালুকদারের।বউ খোজঁ খবরের পাশাপাশি সে নিজের রাজনীতি নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে।পুতুলকে তেমন সময় দিতে পারে না।তারা নিজেদের ক্যারিয়ারে ফোকাস করছে।বাকি দুনিয়া যত যাই হোক সেসব দেখার সময় তাদের নেই।এইদিকে অর্পণ রাজনীতিতে এতটা ব্যাস্ত হয়েছে।যে অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরে।তার ইচ্ছে করে বউয়ের সাথে দুটো মিষ্টি কথা বলতে।কিন্তু সময় তাদের অনুকূলের বাহিরে চলছে।এত রাতে পুতুলকে বিরক্ত করার চেষ্টা অর্পণ করে না।কারণ সে জানে তার বিবি অনেক রাত অবধি পড়ে।তাই নিজের মতো খাবার নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ে।কিন্তু দুইজন একই ছাদের নিচে থেকেও আলাদা রুমে থাকছে।তাদের কাগজ কলমে এবং ইসলামিক মতে বিয়ে হলেও এখন তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে মাতামাতি নেই।সংসার করার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে।তার বিবি স্বপ্ন পূরণ হলেই তাদের সংসার,একটা ভালোবাসার ঘর হবে।যে ঘরের মধ্যে একটা সুন্দর পরিবার থাকবে।মা,বাবা,স্ত্রী,ভাই,বোন,এবং বাকিদের নিয়ে তার দুনিয়ায় হবে।তার ঘরটা হবে খুশির মহল।তার রাজপ্রাসাদ।যেখানে অর্পণ তালুকদার রাজা এবং তার রানী তার বিবি।তার পুতুলজান।আর তাদের ভালোবাসা বন্ধন বা সেতু হবে তাদের সন্তান পারিসা তালুকদার।অর্পণ তালুকদার খুব করে চায়।তার প্রথম সন্তান কন্যা সন্তান হোক।তার নাম ভেবে রেখেছে।সে যেনো তার মায়ের মতো সাহসী,বুদ্ধিমতি মেয়ে হয়।যার মা এমন বাস্তববাধি।তার মেয়েরও সে রকম হওয়া উচিত।

ফজরের আজানের সময় মুয়াজ্জিন ডাকছেন।“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম” (ঘুম থেকে সালাত উত্তম)।
আজানের প্রথম ডাকেই পুতুলের ঘুম ভেঙে গেছে।পড়ার টেবিল থেকে মাথা তুলতেই মনে পড়ে।কাল রাতে পড়তে পড়তে সে এখানেই ঘুমিয়ে যায়।বিছানায় সে ঘুমাইনি।জানালা খুলতেই দেখতে পায় বাহিরে আলো ফুটছে। আঁধার কালো সরে আলোটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে লাগল।আম গাছ,জাম গাছের ধারে কাকপক্ষী ডাকছিল।ওইদিকটায় ওড়াউড়ি করছে শালিক,দোয়েল,মাছরাঙা পাখি।আস্তে ধীরে জেগে উঠছে দুনিয়াদারি।মানুষ তার জীবিকার তাগিদেই শহরে অলিগলিতে কাজের জন্য বেরিয়ে পড়বে একটুও পড়েই।

পুতুল ওযু করতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে ছিল।এমন সময় অর্পণের কথা মনে পড়তেই তার রুমের দিকে অগ্রসর হয়।কয়েক পা ফেলতেই অর্পণের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।কয়েক পলক তাকিয়ে দরজায় ঠকঠক শব্দ করে।রাতে দেড়ি করে ঘুমানোর জন্য অর্পণের কান সজাগ হলেও চোখ মেলে তাকিয়ে দেখা’র অবস্থায় নেই।চুপচাপ বিছানায় পড়ে রইল।এইদিকে অর্পণের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুতুল দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।ভীরু পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই অর্পণের ঘুমন্ত মুখটা ভেসে ওঠে।কি সুন্দর শান্ত সৃষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে আছে?মনে হয় হচ্ছে ভদ্রলোক বহুদিন পর আরামে ঘুমিয়েছে।কিন্তু তার এই ঘুম আজ পুতুল ভাঙ্গতে বাধ্য।মামা,মামী তাকে ফোনে অনেক কিছু বুঝিয়েছে।বিয়ে হয়েছে।অর্পণ তালুকদার তার স্বামী।এই বিয়ে নামক সম্পর্কে আগানোর জন্য কাউকে না কাউকে আগাতেই হবে।সে যদি দুই পা আগাতে পারে।তার ভালোর জন্য সব করতে পারে।তাহলে পুতুল কেন পারবেনা?তার অন্তত এক পা আগানো উচিত।আর এগিয়ে চলার পথে একদিন সবই বদলাবে।এখন এই সংসারটা তার খেলাঘর হলেও পরবর্তী ভালোবাসার ঘর হয়ে উঠবে।এটা তার বিশ্বাস।পুতুল একটা নিশ্বাস ফেলে অর্পণকে ডাকতে লাগল।তার গায়ে হাত বুলিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে।অথচ এই কুমুরোকদু লোকটা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।তার তোও কোনো হেলদোল নেই।পুতুল কি করবে ভাবচ্ছে?ট্রি টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে অর্পণের মুখে ছুড়ে মারে।হঠাৎ চোখে,মুখে পানি পড়ায় অর্পণের মুখটা কুঁচকে গেলো।বিরবির করে কি যেনো বলতে লাগল?পুতুল নিচু হয়ে কান পাততেই অর্পণ তালুকদার তাঁকে পেচিয়ে ধরে কম্বলের নিচে টেনে নিলো।পুতুল হতভম্ব।নিজের হুশ হতেই অর্পণের থেকে পালাতে চাইলো।কিন্তু অর্পণ তালুকদার আজ তাকে ছাড়ছে না।
পুতুলের শরীর তরতরিয়ে কাঁপছে।এ কেমন নতুন অদ্ভুত অনুভূতি।পুতুল ঢোক গিলো।নিজেকে ছাড়াতে অর্পণের পেটে জোরে চিমটি কাটে।এত জোরে কাটছে।অর্পণ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে।পেট ধরে তার বিবির দিকে তাকিয়ে রয়।

এইদিকে অর্পণের কৃতি কল্পাপে পুতুল হেঁসে উঠে।পুতুলকে হাসতে দেখে অর্পণ হা করে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ হয়ে নিজের প্রিয়তমাকে দেখছে।এই দেখায় আলাদা সুখ হচ্ছে।এক অন্য রকম শান্তি পাচ্ছে।বুকের ভেতর ছোট্ট হার্টটা ধুকপুক করছে।পুতুলকে অবাক করে দিয়ে অর্পণ পুতুলের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।সময় নষ্ট করে দৌড়ে ওয়াশরুমে ছুটে গেলো।আর পুতুল হা হয়ে স্বামীর পালিয়ে যাওয়া দেখলো।

১৩২.
ফজরের নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছে।অর্পণ আগে পুতুল পিছনে।ফজরের চার রাকাআত সালাত আদায় করে নিচ্ছে।প্রথমে দুই রাকআত সুন্নত এবং দুই রাকাআত ফরজ।
পাখি ডাকা ভোরে কিছুটা আঁধার থাকতেই এই নামাজ পড়া উওম।অথ্যাৎ সকালের আভা ছড়িয়ে পড়ার আগেই এই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো।আজ দেড়ি হওয়া মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারিনি।অবশ্য এই বিয়ের একমাস হওয়া পর তার এইদিকটা পরিবর্তন হয়েছে।আগে নামাজের প্রতি টান ছিলো কম।এখন বউয়ের ছোঁয়া তার ঘর,এবং দুটোই কন্টোলে আসছে।আজ বাড়িতেই তার প্রিয়তমাকে সাথে নিয়ে নামাজ আদায় করলো।পুতুলের মাথায় সাদা ওড়না তিন পেচঁ দিয়ে রাখা।সকালের সূর্যের আলোয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।এমন সময় অর্পণ গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ নিয়ে আসে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে বলল,এত সকালে সে চা খাবে না।কিন্তু অর্পণ জোর করে দেওয়ায়।বাধ্য হয়ে নিলো।এক চুমুক মুখে দিতেই মনটা সতেজে ভরে গেলো।স্বামীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।যার মানে চা টা দারুণ হয়েছে।প্রিয়তমার হাসিতেই অর্পণ খুশি।

সকালের দৃশ্য দেখতে দেখতে বেলকনিতে বসেই চা টা শেষ করে নিলো।সময় গড়াতেই পুতুলকে গাড়িতে করে মেডিকেল কলেজে দিয়ে আসে।পুতুল কে পৌছে দিয়ে নিজের অফিসে ছুটে।

জার্মান….

তন্নী পায়ের ওপর পা তুলে বসে থেকে আপেল খাচ্ছে।আর এইদিকে অন্তর সাহেব বউয়ের কথা মতো থালাবাসন ধুয়ে ট্রে তে রাখছে।ছেলের এই করুণ পরিনতি জেফিন রওয়্যার্ড দেখে রাগে কটমট করছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here