#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৬
১৩৩.
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব,আবার মানুষ সৃষ্টির নিকৃষ্ট মানব।
আপনি এবং আপনার ছেলেকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয়।তা আমি তন্নী তালুকদার খুব ভালো করেই জানি।আপনি আর আপনার আদরের ছেলে কি ভেবেছিলেন?আমাকে ধোঁকা দিবেন আর আমি চুপচাপ মেনে নেবো।হুহু,।আপনি ভুল জায়গায় হাত দিয়েছেন।আমার পরিবার কিংবা আমি অন্যায়ের সাথে আপসোস বিন্দু মাত্র করব না।প্রথমে এই প্রেম প্রেম পাগলামি দেড় বছর ধরে করবে।আমাকে বশে আনবে।তারপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইবে।এতটা বোকা নই আমি।সবটা জানতাম এবং খোঁজ নিয়ে এতটুকু বুঝতে পেরেছি।আপনি আর আপনার ছেলে কতটুকু ভালো।আমি তাকে ভালোবাসি।তাই ব’লে সব অন্যায়ের ক্ষমা হবে না।এক এক করে শাস্তি হিসেব বুঝে নিবো।আমি আমারটা বুঝতে জানি।ভাইয়ের আদরের বোন ব’লে কথা।প্রথমে গোপনে বিয়ে তারপর বাচ্চা।এবং ফাইনালি পরিবারের সকলের মতেই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছি।ভবিষ্যতে আমার সাথে কিছু করার আগে মাথায় রাখবেন।আমাকে নিয়ে গেইম খেলার চেষ্টা করলে ফল খারাপ হবে।আমি পুতুল নই।আমি তন্নি,তন্নি তালুকদার।ওই মেয়েটি গ্রামের সহজ সরল ছিল তাকে নিয়ে সহজেই খেলতে পেরেছেন।আর সে চুপচাপ মেনে নিয়েছে।কিন্তু আমি মেনে নিবো না।কথাটা মাথায় রাখবেন।মাইন্ড ইট।
তন্নী অর্ধেক খাওয়া আপেলটা দেয়ালে ছুড়ে মেরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।এইদিকে জেফিন রওয়্যাড রাগে ফুঁসতে থাকেন।এই মেয়েকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না।যা কিছু করার প্লান করেন।সব উল্টো হচ্ছে।একটু আগে জেভিন সিঁড়িতে তেল ফেলেন।পেটের বাচ্চা নষ্ট হবে ব’লে।কিন্তু হলো উল্টো সেই ফাঁদে তাকে ফেলে দিল।পায়ে হল চোট।এখন হাটতে তার কষ্ট হচ্ছে।
এইদিকে তন্নী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পেটে হাত রেখে বলল,
তোমার মাম্মা তোমার কিছু হতে দিবে না।আই প্রমিজ ইউ।চোখ বুঝতেই দুই চোখের পানি ঝড়ে পড়ে।
হঠ্যাৎ ফোন বেজে ওঠে।তন্নী ফোনটা ধরতেই লিখাটা ভেসে উঠে।অর্পণ তালুকদার ইজ কলিং।
হ্যালো।
কি রে শয়তানের নানী আম্মা ভালো আছিস?বিয়ে করে বিদেশে গেলি আর তোও খবর নেই।
ভাই।তুমি এখনও নিজের অভ্যাস বদলালে না।আমি এখন বড় হয়েছি।দুই দিন পর মা ওহ হব।প্লিজ ভাই।
আরে দূর।তুই আমার কাছে সেই ছোট্ট তন্নি আছিস।তোকে মারব,বকবো।আর ভালোবাসব।তোর গলাটা এত ভারী লাগছে কেন?তুই কি কাঁদছিস?কিছু হয়েছে।
কই নাতো।
আমার থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিস? কি হয়েছে আমায় বল?
কিছুই হয়নি ভাই।আমি ঠিক আছি।আমি রাখছি পরে কথা হবে।
আরে তোকে আসল খবরটা দেওয়া হলো না।হ্যালো,হ্যালো।যা ফোনটা কেটে দিলো।অর্পণ কিছু চিন্তা করে কাউকে ফোন লাগায়।অপরপাশে কেউ ফোন তুলতেই,
তোমাকে যে কাজে রাখা হয়েছে।তার খবর কি?
ওইপাশ থেকে কিছু বলতেই অর্পণের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়।
ওর দিকে খেয়াল রেখো।ওর গায়ে যদি একটা আচর লাগে আমি তোমার খবর করে ছাড়ব।বোন হয় আমার।তার সাথে কিছু করার চেষ্টা ওই পরিবারের কেউ যেনো ভাবতে না পারে।খেয়াল রেখো।রাখছি।অর্পণ ফোন কেটে দিল।
ভাই তুমি শুধুই চিন্তা করছো।আমাদের তন্নী ঠিক থাকবে।ওর সাথে ভুল কিছু হবে না।যার পাশে তোমার মতো ভাই আছে।তার কিসের ভয়?
হুম।আমি জানি আমার কাছের মানুষগুলো তাদের প্রাপ্ত হোক গুলো আদায় করতে জানে।কিন্তু আমার আদূরনী একটু নরম।তাকে আরো শক্ত হতে হবে।সেও নিজের হকের জন্য লড়তে পারবে।
যারা বড় বাড়ি,আর।লাক্সারী গাড়িতে করে চড়ে বেড়ায়।দামী হোটেলে খায়।নরম বিছানায় সুয়ে কোটি টাকা ব্যাংকে রাখার চিন্তা ভাবনা করে।তারা জনগনের কি সেবা করবে?এরা উল্টো জনগনের টাকা খেয়ে বসে আছেন।জনগনের কষ্ট বুঝতে হলে তাদের সাথে মিশতে হয়।জানতে হয়।এবং তাদের সকল সুযোগ সুবিধা ব্যাবস্থা দেখভাল করতে হয়।কিন্তু আমরা উল্টো করি।নাকে সরিষা তেল লাগিয়ে নরম গদিতে ঘুম।আরাম,হারামে পরিনত।মোটা ভুরি করছেন হারাম খেয়ে।আপনাদের কারণেই জনগন আমাদের ওপর থেকে বিশ্বাস,আস্থা হারিয়ে ফেলছে।আমি জনাব অর্পণ তালুকদার আজ এখানে দাঁড়িয়ে লিখিত বয়ানসহ বলছি।আমার সম্পত্তি ছিল।তিন কোটি আটান্ন লাখ পনেরো হাজার তিনশো টাকা।
অর্পণ তালুকদারের কথাটা মিটিং থাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলে।নিজের আয় এবং ব্যায়ে হিসাব দেন।
জীবন অনেক কঠিন।রাজনীতি আসলেই নিজের একার কথা ভাবলে চলে না।দশের কথাটা ভাবতে হয়।একটা বার সৎ পথে নামুন।আরাম,হারামের হাত টা ছেড়ে নিজের টাকায় চলার চেষ্টা করুন।তখন বুঝবেন জনগনের আসলে কষ্ট কি?
অর্পণ চেয়ার ছাড়া আগে কাগজে লিখিত সই দিয়ে কনফারেন্স রুম ছেড়ে চলে যায়।
এইদিকে হোম মিনিস্টার সামনেই দাঁড়িয়ে অর্পণের করা বয়ান শুনায় তার পি এ খলিল।
নাতির এমন কাজে কি প্রকিয়া দিবেন বুঝতে পারছে না।তার নাতি তার বাপের সম্পত্তি যেটা তার নামে রয়েছে সেটার হিসাব লিখিতভাবে দিয়েছে।কিন্তু তার মায়ের বাড়ির পাওয়া সম্পত্তির হিসাব দেয়নি।সেই সম্পত্তি সে গ্রহণ করেনি।যদি সেটা দিতো তাহলে খুশি হতেন।নাতির এত জিদ একদম তার বাবা অসীম তালুকদারের মতো হয়েছে।নিজেদের সাথে হারাম জড়াবে না।এই পলিটিক্স কেউ সৎ থাকতে পারে না।না চাইতেও জড়াতে হয়।নাতির জন্য চিন্তা হয়।বড় আদরের নাতি ছিল।এক সময় নানাবাড়িতে যার যাতায়াত সব সময় লেগে থাকতো।একদিন এক দূর্ঘটনা পর থেকে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেলো।
যতদিন আমি আছি।ততদিন তোমার ক্ষতি হতে দিব না।খলিল ওর দিকে নজর রেখো।যত টাকা যায় যাক।ওর গায়ে যেন আচর না লাগে।
জি,স্যার।
অপর পার্টি গোপন বৈঠকে বসেছে।তাদের মূল উদ্দেশ্য অর্পণ তালুকদার।এই ছেলে জবে থেকে এসেছে তবে থেকেই বাড়াবাড়ি করছে।এর একটা ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার।
রোহিতপুর গ্রামে তার মামা,মামী,তার ভাইয়েরা পুতুলকে খুব মিস করছে।কখনো তাকে ছাড়া থাকে নিই।এই প্রথমবার তাঁকে ছাড়া থাকছে।কষ্ট পাচ্ছে।তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো পুতুলকে দেখতে যাবে।স্বাধীনের কথায় সবাই খুশি হলো।ঠিক হলো পরশু দিন রওনা দিবে শহরে।
অর্পণ তালুকদার রাগ নিয়ে দুমদাম করে রুমে প্রবেশ করে।ওয়াশরুমে ঢুকেই গোসল করতে থাকে।তার হঠাৎ এরকম বিভেবিয়ারের কারণে পুতুল হা হয়ে গেছে।রাতের জন্য ময়দা গুলিয়েছে।রুটি আর আলুর দম করবে।কিন্তু আজ এই মশাইয়ের কি হলো?একে তো আজ তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসেছে।তার ওপর কোনো কথাবার্তা ছাড়াই তাকে ইগনোর করে চলে গেলো রুমে।পুতুলের রাগ হলো।গাল ফুলিয়ে কিচেনে গিয়ে রুটি বেলতে লাগল।এইদিকে অর্পণ দেয়ালে হাত দিয়ে আঘাত করছে।চোখের সামনে তার ছোট্ট মামার কুৎসিত বিকৃত কথাগুলো মাথায় আসতেই রাগে শরীর কাঁপছে।অনেক হয়েছে।এবার সত্যিটা পুতুলকে জানাতে হবে।আমি এই দু-টানা আর নিতে পারছি না।ওহ নিশ্চয় আমাকে বুঝতে পারবে।আমি আজই বলব,
অর্পণ গোসল শেষ করে রুমে প্রবেশ করে।নিজের পোশাক কোনো রকম চেঞ্জ করে বাহিরে বের হয়।কিচেন রুমে পুতুল কে কাজ করতে দেখে এগিয়ে যায়।
নিজের পিছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পুতুল ঘুরে তাকায়।অগোছালো কাপড় পরে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মাথার চুল থেকে এখনো পানি পড়ছে।পুতুল ইশারার বলল,
এসব কি?এমন এলেমেলো কেন?
পুতুলের কথার উওর দিলো না।বরং নিজের মাথার চুল মুছতে পুতুলের ওড়না কোনা টেনে ধরে নিয়েছে।পুতুল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।এই লোকের কি হয়েছে আজ এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে চমকে দিচ্ছে কেন?
পুতুলের কাজ শেষ হতেই তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো।
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল,
তুমি আজ যেমন করে আমার পাশে আছো।কাল আমার পাশে থাকবে তো।বিশ্বাস করবে আমায়।আমি কাউকে নিয়ে এত টেনশনে থাকি না।যতটা তোমায় নিয়ে থাকি।আমার খুব ভয়।তোমাকে হারানোর ভয়।নিজের রাজনীতির মাঠে শত্রুর অভাব নেই।তার ওপর আমার আপনজনদের মধ্যেই আমার শত্রু লুকিয়ে আছে।আমি বারবার তোমাকে কথাগুলো বলতে গিয়ে আটকে যাই।তোমাকে কিছু বলতে চাই।তুমি সবটা শুনবে তোও।অর্পণের কথায় কোনো আগামাথা বুঝতে পারছে না।তবুও মাথায় নাড়িয়ে সায় দিলো শুনবে।অর্পন কে সোফায় টেনে এনে বসিয়ে দিলো।তার এলেমেলো চুলগুলো চিরুনি বুলিয়ে ঠিক করে দিলো।
পুতুলের ডান হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
পুতুল আমি জানি তুমি তোমার মা’কে খুব ভালোবাসো।তার জায়গাটা তোমার কতটা জুড়ে তা আমরা সকলেই জানি।পুতুল আমি আজ তোমার মায়ের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই।আমি এই কথাগুলো বলবার পড়ে তুমি হয়তো আমাকে ঘৃনা করবে।তবু্ও আমি এটা আর নিতে পারছি না।আমি আজ বলব?আর তুমি শুনবে।সবটা ভেবেই তুমি তোমার রায় দিও।
অর্পণের কথার মধ্যে কিছু তোও আছে।বারবার থেমে যাওয়া ঢোক গিলে ফেলা’র মধ্যে কিছু রহস্যের বার্তা আসছে।তিনি কি বলতে চান?বুকের ভিতরটা কেমন ধরফর করছে।কি শুনাতে তার এতটা ব্যাকুলতা।
চলবে….
এখানে রাজনীতি বিষয়টি কাউকে আঘাত কিংবা কটুবাক্য নিয়ে বলা হয়নি।গল্পের সাধ্যে যতটুকু দরকার ততটুকু দেওয়া হয়েছে।এটাকে গল্প হিসেবে নেওয়া অনুরোধ রইল।