নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ১৯ [বর্ধিতাংশ]

0
450

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৯ [বর্ধিতাংশ]

‘অপূর্ব ভাই নিশ্চয়ই শাপলা ভাজি খায়নি।’
“মা, আরও কি শাপলা আছে? অপূর্ব ভাইয়ের জন্য নিয়ে যেতাম। তোমার হাতে শাপলা খেলে শুধু খেতেই চাইবে।” বলতে বলতে লোকমা তুলে মুখে।

পারুল আগেই বাটিতে সরিয়ে রেখেছেন আলাদা করে। কলা পাতায় ঢাকা দিয়ে আরুকে বলে, “খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে অয়নকে সাথে নিয়ে যাস।”

খাওয়ার ইতি টেনে অপূর্ব-র দেওয়া একটা ফ্রক পরে নিল, মৃদু ভেজা চুলগুলো দুই বেনুনি করে রাখল, কপালে লাগায় মাঝারি সাইজের লাল টিপ, চোখে কাজল ও ঠোঁটে লিপস্টিক, পায়ে ছোঁয়াল আলতা। অতঃপর বাটি নিয়ে নাচতে নাচতে একাই অগ্রসর হলো আহসান বাড়ির দিকে।

আলতা রাঙা পা, আবার নূপুর পরেছে
আরু তোমায় পা/গল করেছে।
.
মাসটা পেরিয়ে গেছে অতিদ্রুত। অপূর্ব এখন নিজের কাজে মগ্ন থাকে। বাবা মায়ের কাছে বিয়ের জন্য ধার চেয়েছে আরও কয়েকমাস। ‘আরুর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই আয়োজন করে ঘরে বধূ রুপে তুলবে সে’ – আহসান বাড়ির সবাই জানলেও পারুল এ বিষয়ে অবগত নয়।
নিজ কক্ষে প্রবেশ করে ঘুমন্ত আরুকে দেখে একটু বিস্মিত হলো অপূর্ব, তবে নিজেকে বেশ সামলে নিল। ইদানীং তার স্বপ্নে আরুর প্রবেশ ঘটছে। আগ বাড়িয়ে স্পর্শ করার প্রয়াস করলে অদৃশ্য হয়ে যায়। অপূর্ব তাই আরুর কাছাকাছি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বলে, “আমার অঙ্গনে তোমার প্রবেশ ঘটুক, কিন্তু তোমার অঙ্গনে আমার প্রবেশ কেন নিষিদ্ধ করে রেখেছ প্রেমবতী?”

অপূর্ব ব্যাগগুলো বিছানায় রেখে তোয়ালেটা কাঁধে নেয়। দেহ থেকে তীব্র ঘামের গন্ধ নিঃসৃত হচ্ছে, প্রেমবতী যদি সেই দুর্গন্ধে পালিয়ে যায় অন্যথ? অনিচ্ছার সত্ত্বেও পা ফেলে কলতলার উদ্দেশ্যে। গোসল সম্পন্ন করে ফিরে এসে আরুকে অন্য ভঙ্গিতে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে। আজ এতক্ষণ আছে ভেবেই অপূর্ব মুগ্ধকর হাসে, “আজকাল আমার কাছে তোমার থাকতে ভালো লাগে পদ্মাবতী, তাই না?”

আরুর ঘুমের রেশ তখন কাটিয়ে উঠে বসেছে। অপূর্বকে দেখে আঁচলটা ঠিক করে অপলক চেয়ে থাকে তার ভাঁজকাটা দেহে। অপূর্ব জড়ানো তোয়ালেটা খোলার প্রয়াস করতেই আরু চঞ্চল গলায় বলে, “কী করছেন? আমি যেয়ে নেই আগে, তারপরে আপনি পোশাক পালটান।”

“সেদিন তো বিছানায় বসে দিব্যি সবকিছু দেখছিল, আজ হঠাৎ লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আগে কথাও বলতি না। বোবার মতো চেয়ে থাকতি। আজ দেখছি বুলিও ফুটেছে।” বলতে বলতে অপূর্ব তোয়ালে-তে হাত রাখতেই আরু দিল চিৎকার। অবিলম্বে ছুটে গেল। অপূর্ব এখনো ধ্যানে রয়েছে, পর্দা এখনও নড়ছে। কানে চিৎকারের শব্দগুলো স্পষ্ট বাজছে। এতদিন আরুর গায়েব হতে দরজা লাগত না, আজ কেন লাগল? অপূর্ব মাথায় হাত রেখে অব্যক্ত স্বরে বলে, “ও শেট। দাঁড়া আরু।”

টিশার্ট আর লুঙ্গিটা পরে শপিং ব্যাগগুলো সমেত বৈঠকখানায় পা রাখল অপূর্ব।‌ আরু ডাগর ডাগর চোখ করে বোবার মতো বসে আছে আর তাকে ঘিরে রয়েছে বাকিরা। গলায় হাতে তাবিজ বাধা আরুর। সন্ধ্যা নেমে আসায় আরুকে বাড়ির দিকে এগোতে দেয়নি পারুল। অপূর্ব-র ঘরেই ঘুমিয়েছে।

অনিতা উদ্বিগ্ন হয়ে আরুকে শান্ত করতে বলে, “কতবার বললাম ও ঘরে যাস না। পেলি তো ভয়।”

“কিচ্ছু হবেনা, শান্ত হ। তোর সাথে তাবিজ আছে। আর ঘরের ভেতরে ভুত থাকে না।” চম্পার কথায় আরু টু শব্দটি না করে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, কীভাবে বলবে অপূর্ব ভাই এমন কাজ করেছিল। অপূর্ব এবার আগ বাড়িয়ে বলে, “ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে। নাও মা দেশে ফিরে প্রথমবার স্যালারী পেয়েছি। তাই সবার সবার জন্য শপিং করে এনেছি, শুধু তিস্তা বাদে। (তিস্তাকে উদ্দেশ্য করে) কাল আমার খোলা আছে। বিকালে তোকে নিয়ে বের হবো। তৈরি হয়ে থাকিস।”

তিস্তার বিয়ে ঠিক হয়েছে সুজনের সাথে। পরিবারের বড় মেয়ের ভালোবাসা সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে সবাই। সুজনদের টিনের শোরুম রয়েছে। অর্ডার করা টিন গাড়ির মাধ্যমে গন্তব্যে পাঠানোই তার কাজ। পড়াশোনা শেষ করে সেখানে যোগদান করেছে। মা, চাচি ও দাদির জন্য অপূর্ব আজ পোশাক নিয়ে এসেছে। আগামীকাল বোনদের নিয়ে যাবে। আহসান বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা, সবকিছুর তুলে নিয়ে আসবে অপূর্ব।

উপস্থিত সবাই অপূর্ব কথা মেনে নিয়ে মৃদু হাসছে। ব্যাগগুলো খুলে একে একে সবাইকে দিতে ব্যস্ত হলো অপূর্ব। অনিতার হাতে দিতেই সে বলে, “আমার জন্য আনার কী দরকার ছিল অপু?”

“তোমার জন্য আনিনি, মায়ের জন্য এনেছি।”
তুর শেফালী তো খুশিতে উৎফুল্ল। ভাইকে জড়িয়ে ধরে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিল। আরুর দিকে না চেয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে, “এটা তোর নীল শাড়ি। সুন্দর করে পরবি তিস্তার বিয়েতে।”

“নিজের জন্য আনেননি?” প্যাকেকটা না ধরেই আরু পালটা প্রশ্ন করে। মেয়েটা তার দিকে নজর রাখে ভেবে অপূর্ব হাসে, “হু এনেছি।”
অপূর্ব নিজের পোশাকটা বের করে এগিয়ে দেয়। আরু লক্ষ্য করে জিন্স বেশ কিছুটা ছেঁড়া। সবার জন্য উত্তম জিনিসটা এনে নিজের জন্য ছেঁড়া জিনিসটা এনেছে ভেবেই আরুর চোখমুখ শুকিয়ে গেল। সুঁই সুতা দিয়ে সেলাই করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরু বলে, “আপনার পোশাকটা আমাকে দিন, আমি যথা স্থানে গুছিয়ে রাখব।”

নিঃসন্দেহে ভরসা করে আরুর হাতে তুলে দিল তার পোশাক। আরু সেই পোশাক নিয়ে তুরের ঘরের দিকে অগ্রসর হলো। অপূর্ব সুন্দর নকশিকাঁথা সেলাই করতে পারে আরু। সুঁই দিয়ে ছেঁড়া অংশটুকু স্বযত্নে সেলাই করে ডিজাইন তৈরি করল‌। অতঃপর শুভ্র হৃদয়ে মনমতো সাজায় শব্দ গুচ্ছ।

অপূর্ব-র আলমারিতে পোশাক রাখতে গিয়ে একটা জিন্সে নজরবন্দি হলো আরুর। সেই জিন্স ও নতুন কিনে আনা জিন্সের একই স্থানে ছেঁড়া। মাথা হাত রেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আরু অব্যক্ত স্বরে বলে, “ছেঁড়া জিন্স পরে না, অথচ সবাইকে শান্তনা দিতে সেই ছেঁড়া জিন্স কিনে এনেছে। পুরনো জিন্সটা বের করে আলমারির ছিটকিনি তুলে দেয়। পানিতে ভিজিয়ে অপূর্ব-র আসবাবপত্র মুজতে ব্যস্ত হলো।
আরু কি জানে, এটাই যে বিদেশি ফ্যাশন?

অপূর্ব ঘরটা নিজের মতো সাজিয়ে অপূর্ব-র অপেক্ষায় রইল আরু। খাওয়া শেষে অপূর্ব ঘরে প্রবেশ করে ক্ষান্ত রইল। আগ বাড়িয়ে দু চারটে কথা উচ্চারণ সে করল না বরং এগিয়ে যেয়ে তর্জনী দিয়ে আরুর বাহুতে দিল মৃদু চাপ। আরু মৃদু ঘসতে ঘসতে বলে, “উফ অপূর্ব ভাই, ব্যথা দিলেন কেন?”

অপূর্ব-র ঠোঁট প্রসারিত হলো আরু অদৃশ্য না হওয়াতে। আয়েশ করে বসে বলে, “বিছানায় যেভাবে বসে ছিলি ভেবেছি বোবা ভূতে ধরেছে তোকে। অন্যের স্পর্শ ব্যতিত বোবা ভূত যায় না, তাই ছুঁয়ে দিলাম। মাত্র এক আঙুল দিয়ে ছুঁয়েছি কিন্তু। ব্যথা লেগেছে?”

“না।” ইতস্তত করে আরু। মূল কথাটা না বলেই উঠে ধীর পা ফেলে। অপূর্ব ডাকে পেছন থেকে, “তুই কি খুব বেশি ব্যস্ত আরু?”

“না।” পিছু ফিরে আরু।

“গরমে থাকতে থাকতে পিঠটা ঘামাচিতে ভরে গেছে। চিরুনি দিয়ে পিঠটা আঁচড়ে একটু পাউডার দিয়ে দিতে তোর কোনো সমস্যা আছে আরু?”

আরু প্রফুল্ল হলো। ইতস্তত কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময় তার লাগবে, লজ্জাদায়ক কাজটা হুটহাট করা কি সম্ভব? অপূর্ব-র সান্নিধ্য পেতে হবে যে। অপূর্ব চিরুনি ও মিল্লাদ ঘামাচি পাউডার দিয়ে বসল।

অপূর্ব শার্ট খুলে নগ্ন পিঠে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। আরু স্তম্ভিত হয়ে বলে, “পিঠ তো যা ইচ্ছে তাই হয়ে গেছে। কাউকে বললে আঁচড়ে ঠিক পাউডার লাগিয়ে দিত। তাহলে এতটা হতো না।”

আরুর তার হাতটা অপূর্ব-র পিঠে রেখেছে। হাতের রুপার বালার সেই শব্দে মন জুড়িয়ে গেল অপূর্ব-র। আবেশে পল্লব ঢেকে ফেলে। আরু বলে, “ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি যখন পড়বে-না? তখন আপনি খালি গায়ে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এতে ঘামাচি চলে যায়।”
“বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে আরু, তবে পদ্মাবতীর ব্যক্তিগত বৃষ্টিতে ভিজলে অপূর্ব-র জ্বর আসবে না, ব্যধি আসবে। যার নাম প্রেম ব্যধি।” অপূর্ব চোখ মেলে তাকাল। আরু এক দৃষ্টিতে অপূর্ব-র দিকে চেয়ে আছে। চোখ মা/রতেই আরু লজ্জানত হলো।

“পড়াশোনা কেমন চলছে তোর?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। একটা কথা বলব, শুনবেন?”

“বল।” অপূর্ব-র অনুমতি পেয়েও আরু বাক্য তোলে না। নিজের কাজ শেষ করতে ঝুঁকে গেল। দু-কাঁধে হাত রেখে দুগালে পাঁচবার ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করে সরে এলো। অপূর্ব উদাসীন হয়ে ফিরল পিছু। আরুর মুখমণ্ডল জুড়ে তখন রাজ্যের ব্রীড়া। অপূর্ব উঠে দ্রুতি কণ্ঠে বলে, “কী হলো এটা?”

“আমি অগ্রিম পাঁচটার বেশি দিতে পারব না। কাজ শেষ হলে বাকিগুলো দিবো?”

“অগ্রিম? কীসের পাঁচটা?” সংকোচ নিয়ে প্রশ্ন অপূর্ব-র। ততক্ষণে বিস্মৃতি হয়েছে বুলি, ভুলেছে তার দেওয়া শর্ত। আরু বাক্য তোলে, “সেদিন আপনি বলেছিলেন-না, একশো একটা চুমু আপনাকে জড়িয়ে ধরে‌ খেলে আপনি কালাচাঁনকে পি/টু/নি দিবেন। তারজন্য।”

“কিছু করেছে কালাচাঁন?”

“আমি যদি ওকে ভালোবাসার কথা না বলি, তাহলে ও আমাকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিবে। জানেন আমাকে সে ব্যথা দিয়েছে।” বলতে বলতে‌ আরু তার চিবুক উঁচু করল ঈষৎ। গোসলের ফলে দেখা গেল না স্পষ্ট। দীর্ঘক্ষণ চেয়ে গর্ত খুঁজে পেল অপূর্ব। আলতো স্পর্শ করে বলে, “খুলে বল সবটা।”

অতঃপর আরু খুলে বলে সবটা। অপূর্ব উঠে আলমারি থেকে মলম বের করে আঙুলের ডগায় নেয়। অতঃপর তা আরুর চিবুকে লম্বা একটা টান দিয়ে বলে, “আগামীকালের পর সে আর কখনো তোর সামনে আসবে না। এলেও তোর দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। নত দৃষ্টিতে এড়িয়ে যাবে। তবে কাজ শেষ হওয়ার পর আমার পাওয়া যাতে আমি বুঝে পাই।”

“একদম অপু সোনা।” বলেই অপূর্ব-র গাল টেনে ছুটে যাওয়ার প্রয়াস করতেই অপূর্ব বলে, “শাপলা ভাজিটা খুব স্বাদের লেগেছে। প্রথমবার খেলাম। এতটা পথ পেরিয়ে আমার জন্য শাপলা নিয়ে আসার জন্য তোকে নীলপদ্মটা জীবনের তরে দিয়ে দিবো ভাবছি।।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚
লেখিকার মন ভালো নেই।

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here