নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৩৫

0
386

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৫

“কাছে আয় আরু, কীসের এত অভিমান তোর? তুই একরাত দূরে কেন, তুই যদি এক যুগ দূরে থাকতি তাহলে এই অপূর্ব তোকে কেবল দেখায় আপন করে নিত। কোনো অভিযোগ ছাড়াই। কাছে আয় আরুপাখি।” অপূর্ব হাত বাড়িয়ে আরুকে ডাকল হৃদমাঝারে। অপূর্বর ডাক উপেক্ষা করতে না পেরে ব্যর্থ আরু এলো অপূর্বর কাছে। তবে দুইয়ের মাঝে দূরত্ব রাখল অনেকটা। অপূর্ব দূরত্ব সহ্য করতে না পেরে বলে, “বিয়ে করবি না আমাকে?”

“না, আমি কাউকে বিয়ে করব না। আপনাকেও না।” বুকে হাত গুজে লুকিয়ে ফেলে দৃষ্টি। অপূর্ব পরমুহূর্তে আরুর লুকিয়ে ফেলা হাতটা টেনে ফেলল বুক পিঞ্জিরায়। খোঁপা করা চুলের গোছা খুলে ছড়িয়ে গেল অপূর্বর দেহ জুড়ে। যত্নসহকারে চুলগুলো সরিয়ে আরুর মুখ প্রকট করতে করতে বলে, “তবে আমাকে আমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দে আরু। এমনি এমনি কেউ কারো পেছনে ঘুরে না। (বিরতি দিয়ে) আমি প্রথমবার তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে শ্বাস দিয়েছিলাম। আমার কামনা ফিরিয়ে দে।”

চকিতে আরুর হাত ঠেকল ওষ্ঠের উপর। চোখেমুখে তার বিস্মিত ভাব। তখনই অনিতার গলার স্বর প্রকট হওয়ার পাশাপাশি শক্ত মাটির শব্দটা স্পষ্ট হলো। আরুর মাথা চেপে বুকের সাথে ঠেকিয়ে অপূর্ব ভাঁজ বিহীন কাঁথা দ্বারা ঢেকে নিল দুইজনকে। বিলম্বে অনিতা প্রবেশ করে অপূর্ব কক্ষে নজরবন্দি করে শুধায়, “আরুকে দেখেছিস অপু? মেয়েটাকে কোথাও দেখছি না।”

“আমি খাওয়ার সময় দেখেছিলাম। এখন কোথায় গেছে জানি না।”

“সবাই বলেছে, চুনহলুদ নিয়ে এই ঘরে এসেছিল। তাই এলাম। তুই রেস্ট কর। আমি দেখি আরুকে কোথায় পাই।” বাক্য শেষ করার পূর্বেই অনিতা অগ্রসর হলেন। দরজার বাইরে একপা ফেল খুঁটি ধরে ঝুলে বলে, “অপু, তোর পায়ের নূপুরটা অনেক সুন্দর। আজকাল নূপুর পরা শুরু করে দিয়েছিস? আবার পায়ের রঙটা বেশ উজ্জ্বল ও লোম নেই। এই পা নিয়ে বাইরে নামিস না।”

অনিতার প্রস্থানের পরপর আরু বের হলো কাঁথার ভেতর থেকে। অপূর্ব মাথা চুলকে জানালার দিকে ফিরে ফোঁস করে ফেলল নিঃশ্বাস। অধর কা/ম/ড়ে চেয়ে দেখল আরু পগারপার।
_
তারপর পেরিয়ে গেল বহু মুহূর্তে। সম্পর্কের সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে তখন।
নিত্যদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠা আরুর যেন এক অভ্যাস। গ্ৰামের মানুষের কত কাজ, তারা তো সকালেই উঠবে। নিমগাছের ডাল ভেঙে দাঁত ঘষতে ঘষতে দিঘির দিকে গেল আরু। শানে পা রেখে মুখ ধোঁয়ার উদ্দেশ্য হাত বাড়াতেই হাওয়াতে একটা স্রোত ভেসে এলো। তাতে একটা সিলভার কার্প মাছ। আরু দৃষ্টি উঁচু করতেই নজরে এলো দিঘি ভর্তি মাছ ভেসে আছে। মাছ সচরাচর যেভাবে সাঁতার কাটে, সেভাবে নয়। নিমের ডালটা হাত থেকে খসে পড়ল পুকুরে। মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার দিল আরু, “মাআআ।”

আরুর চিৎকার শুনে নিবৃত্ত নেই কেউ। হাজির হয় দিঘির পাড়ে। পারুল অস্থির হয়ে বলে, “কী হয়েছে আরু, চিৎকার দিলি কেন?”

আরু ক্রন্দনরত অবস্থায় আঙুল তুলে দিঘির দিকে ইঙ্গিত করে বলে, “মা-মাছ। দেখো মাছগুলো মরে গেছে।”

স্তম্ভিত সবাই। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে ইমদাদ হোসেন মৃধা। তার দিঘিতে এত মাছ আছে, তা জানা হয়ে গেছে। কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না। আরু ঝাঁপ দিল পানিতে। দিঘির মধ্যিখানে একটা গ্লাস কার্প মাছ ভাসছে। দুহাতে আগলে সেই মাছটি আগলে কেঁদে উঠল আরু। এই দিঘির সবচেয়ে বড়ো মাছ এটি। পুকুরে জাল ফেললে অন্যমাছের সাথে এই মাছটি উঠলে আদর করে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাছের দীর্ঘতা অয়নের মতো। একসাথে দাঁড় করিয়ে দীর্ঘতা মাপা হয়েছে। অয়ন ঘাটে নামতেই আরু সাঁতার কেটে মাছটি নিয়ে এলো। অয়ন মাছটিকে ছুঁয়ে কেঁদে দিল, “মা, কে আমাদের দিঘিতে ওষুধ দিয়েছে?”
গ্ৰামের মানুষ একটু সাদাসিধে দেখতে হলেও তারা অন্যের উন্নতি সহ্য করতে পারেনা। কারো পুকুরে মাছ বড় হলে/হাঁসমুরগিতে খোঁপর ভর্তি হলে ওষুধ দিয়ে মে/রে ফেলে। কখনোবা দেখা যায়, সদ্য ঘরে তোলা ধানের গোলা মধ্যরাতে আ/গু/নে দাউ দাউ করে জ্বলছে।

আরু ও অয়নের হাউমাউ করে কান্না সহ্য করতে না পারলেও ইমদাদ হোসেন ও পারুল সহ্য করতে বাধ্য। যত দ্রুত সম্ভব মরা মাছগুলো তুলে ওষুধের পানিগুলো ফেলে আবার নতুন পানি দিয়ে মাছের চাষ শুরু করবে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে ইমদাদ রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখল বাড়ির দরজা দিয়ে পরিচিত কতগুলো মুখ ভেতরে ঢুকছে। ইমদাদ হোসেন অসন্তুষ্ট হয়ে এগিয়ে যেতেই মিহি ও মিহির ‘মামা’ বলে জড়িয়ে ধরে তাকে। অতঃপর তারা সরে যেতেই ইমদাদের একমাত্র বোন ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হৃদমাঝারে। ভেঙে পরে কান্নায়। ক্রন্দন ধ্বনির সাথে নির্গত করে, “ভাইজান, কেমন আছেন? কতদিন পর আপনাকে দেখলাম।”

“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি শিরীন। তুই কেমন আছিস?” বোনের পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে শুধালেন। প্রত্যুত্তরে খানিক অভিমান দিয়ে বলে, “বোন ভালো না থাকলে আপনার কী? ঢাকাতে থাকেন, একবার বোনকে দেখে আসলে কী হয়? আমিও তো প্রিয়জনদের আশায় থাকি।”

“তোর বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনলে মা কাঁদবে, তাই যাই না।”

“এবার আমি এমন অবস্থা করব যে, আপনারা মাসের আগামাথায় আমার বাড়িতে থাকবেন।” বলেই পারুলের সাথে কুশল বিনিময় করে শিরীন। তারপরে নিজেই আগ বাড়িয়ে ভাইয়ের কাছে আবদার করে, “আমার একটা আবদার আছে, আমার আবদার পূরণ করতেই হবে কিন্তু।”

শিরীনের কথায় কোনোরূপ সায় দেওয়ার পূর্বেই আরুর দাদিজান লাঠিতে ভর দিয়ে হাজির হলো পুকুর পাড়ে। মেয়ের প্রতি চাপা অভিমান নিয়ে বলে, “মা তোর এত পর হয়ে গেছে, সবার প্রথমে তুই মায়ের সাথে দেখা করলি না।”

“কীযে বলো তুমি! ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে, তাকে সরিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে যাবো?” কথাটা বলে ব্যাগপত্র নিয়ে চলে গেল আরুর বড় চাচার ঘরে। মিহির আরুর অশ্রুভেজা চোখের পানে চেয়ে আছে। মাছের তাড়নায় তার চোখে সৃষ্টি হয়েছে জলপ্রপাত। মন প্রফুল্ল থাকলে পূর্বের মতো ছুটে এসে চকলেট চাইতো। মিহির ব্যাগ নিয়ে আরুর সামনে দাঁড়িয়ে আগ বাড়িয়ে খোঁজ নেয়, “কেমন আছিস আরু?”

“ভালো, তুমি কেমন আছো?”

“ভালোই। এভাবে বেশিক্ষণ বসে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবো তোর। পোশাক পালটে একবার বড়ো মামার ঘরে আসিস, তোর জন্য অনেক চকলেট এনেছি।” বলে ট্রাভেলিং ব্যাগ টেনে চলে গেল ঘরের দিকে। নয়না দাঁড়িয়ে ছিল তাদের অপেক্ষায়।
__
সূর্য ডূবে আকাশে লেগে আগে তার ফেলে যাওয়া রক্তিম আভা। গাছে গাছে ফুটে আছে কদমফুল। বৃষ্টিতে মাটিতে পানি জমে আছে। রাস্তার অবস্থা তখন বেসামাল। অপূর্ব ছাতা মাথায় নিয়ে হাঁটু সমান কাঁদা নিয়ে বাড়ির দরজায় পা ফেলে। কান উঁচু করেও শ্রবণ হলোনা আরুর খিলখিল করা মনোমুগ্ধকর হাসির রোল। বেসামাল অপূর্ব দিঘিতে গিয়ে পা ধুয়ে জোতা মাথায় ঘরের ভেতরে ঢুখে। ছাতাটা বন্ধ করে বাইরে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে তুরকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আরু আজকে পড়তে আসেনি?”

“না। আরুদের দিঘিতে ওষুধ দিয়েছে বলে ওদের দিঘির সব মাছ মরে গেছে। তাই আরু আজ স্কুলেও যায়নি, আমাদের বাড়িতেও আসেনি।” বিটিভিতে সন্ধ্যার অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে কথাটা বলে তুর। অপূর্বর বুক ছ্যাত করে উঠল। ফোন বের করে ইমদাদ হোসেনকে কল করতে যাবে তখন সুমি চা এনে টেবিলে রেখে বলে, “আজ আরুকে পাবেন কি-না সন্দেহ। শুনেছি আরুর ফুফুরা এসেছে।”

“তারমানে তো মিহিরও এসেছে?” অপূর্ব প্রশ্নটা করে নিজেও লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। প্রত্যাশিত কিছু চাইতে অনিতার কোলে মাথা রাখল অপূর্ব। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে আঁচল থেকে চাবিটা খুলে সুমির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “বউমা, বিকালে তোমার চাচা শ্বশুর যে বক্সটা আমাকে দিয়েছিল। সেটা আমি আলমারিতে রেখেছি। তুমি ওটা নিয়ে এসো।”

সুমি অনিতাদের ঘরের দিকে পা ফেললে তিয়াসকে আদেশ দেয় অনিতা, “চার ভাইকে জরুরিভিত্তিতে বাড়িতে আসতে বলো। আমি চেয়েছিলাম, আগামীকাল ঐবাড়িতে যাবো। কিন্তু এখন আর থাকা সম্ভব নয়।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

মাছের ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়ি ভাববেন না, এক্ষেত্রে আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমাদের পুকুরে একটা মাছ ছিল, গ্লাস কার্প। কখনো জালে উঠলে, আদর করে আবার ছেড়ে দিতাম। পুকুরে মাছ ধরলে দেখার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম। গ্ৰামের এই অ/সৎ মানুষদের জন্য মাছটা.. 😴

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here