নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৩৯

0
418

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৯

“ভাইয়ের বাসরে থাকার ইচ্ছে থাকলে থাকতে পারিস।” চোখ টিপে খানিক রঙ্গ করে ভাইবোনদের উদ্দেশ্যে কথাটা বলে অপূর্ব। আরু আড়ষ্ট হয়ে আঁচলটা খামচে ধরতেই সুজন উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। তিস্তা ললাটে ঈষৎ রাগ ঝুলিয়ে বলে, “এটা আপনি ঠিক করলেন না ভাই। আমরা এত কষ্টে আপনার বাসর সাজালাম, বউ সাজালাম‌। আপনি আমাদের সাথে অন্যায় করলেন।”

ভাইবোনদের দল অভিমানে ঘর ত্যাগ করার প্রয়াস করতেই অপূর্ব দূরত্ব রাখল আরুর থেকে। টেবিলের ছোটো ড্রয়ার থেকে শ্বেত খাম বের করে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “তোরা সবাই আমার ছোটো ভাই-বোন। তোরা যদি আমার বাসর নাও সাজাতিস, তবুও এটা পেতিস।”

ভাইবোন মহলে আনন্দের আমেজ তৈরি হলো। দ্রুত খাম ছিঁড়ে টাকাগুলো বের করে গুনলে হদিস পেল, বারো হাজার টাকার। অবিলম্বে সবার মুখে হাসি ফুটল। অপূর্ব বুকে হাত গুজে খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে বলে, “খুশি হলেই চলবে না, আগামীকাল আরেকদফা লোকজন আসবে আরুকে দেখতে। তখন ওদের হাত থেকে আরুকে বাঁচাতে হবে।”

“আগ্গে মহারাজ।” বলেই সবাই হৈচৈ করতে করতে বিদায় নিল সেখান থেকে। অপূর্ব দরজার ছিটকিনি তুলে ঘোমটা টানা আরুর পানে দৃষ্টি মেলাতেই আরু নামল বিছানা থেকে। অপূর্বর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে ঝুঁকল পায়ের কাছে‌। পা ছুঁয়ে সালাম করতেই অপূর্ব আরুর মাথায় হাত রেখে বলে, “স্বামী সোহাগী হও বধূ। আদরে আদরে ভরে উঠুক তোমার আমার সংসার।”

মৃদু ঝুঁলে আরুকে পাঁজাকোলা করে নিল অপূর্ব। অমনি ঘোমটা খুলে পড়ল মাথা থেকে, ছড়িয়ে পড়ল রজনীগন্ধার সুবাস। স্বচ্ছ আকশে হুট করে বাজ পড়ল অদূরে। অপ্রত্যশিত সময়ে আরুর ত্রাস হুরহুর করে বেড়ে আবদ্ধ করে নিল অপূর্বকে। অপূর্ব এক নাগাড়ে আরুর মুখপানে চেয়ে আছে। আরুর মাত্রারিক্ত ফর্সা মুখটা আঁধারেও অপূর্ব দেখতে পাচ্ছে। অপূর্ব এগিয়ে গেল খোলা বারান্দায়। এক দমটা হাওয়া লোমকূপ পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলল দুজনের। আকাশ ক্ষণে ক্ষণে গর্জে উঠছে। অপূর্ব হেঁটে টুলের উপর বসে আরুকে নিয়ে, তখনই শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ধারা। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি করতলে লাগাতেই অপূর্ব তার হাত আরুর হাতের নিচ দিয়ে রাখল। আরু মিষ্টি হেসে অপূর্বর বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলে, “আপনাকে আমি প্রথম ঐ দিঘির পাড়ে রোদ পোহানো অবস্থায় দেখেছি। আপনি জানেন, আমি আপনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে রাজহাঁসের বাচ্চাকে আঘাত করেছিলাম। আপনার গায়ের রঙটা কম ফর্সা নয়, এমন সুদর্শন পুরুষ আমি দেখিনি।”

অপূর্ব হিম হাতটা এনে আরুর নগ্ন পেটে রাখলে আরুও ধরল অপূর্বর হাত। সরে আসার প্রচেষ্ট করতেই অপূর্ব ফিসফিস করে বলে, “তুমি সেই নারী, যাতে প্রথম দেখে আমার হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল। মা তোমার ছবি পাঠিয়েছিল, সেই ছবি দেখেই আমি তোমার প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলাম। দেশে এসে তোমাকে দেখে আমি হতাশ হয়েছিল, বয়সটা কম। কিন্তু বয়স কোনো বিষয় নয়। আমার বয়স বেশি হলেও আমৃত্যু পর্যন্ত তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখব।”

আরুর চোখ আঁটকে গেল বারান্দার এক কোণে।‌ বড়ো একটা পাত্রে ফুটে আছে নীলপদ্ম। আরু নীলপদ্ম ছুড়ে বলে, “আমি কখনো নীলপদ্ম দেখেনি অপূর্ব ভাই। আপনি এই পদ্ম কীভাবে পেলেন, তাও আবার বারান্দায়?”

“বিদেশ থেকে বীচ নিয়ে এসেছিলাম। বর্ষার সূচনা হতেই বপন করেছিলাম। এখন বারান্দায় এনে রেখেছি। এটাই আমাদের বিয়ের মোহরানা।”

“কবে বপন করেছেন? এতদিন দেখেনি তো।” আরুর সন্দিহান গলা। অপূর্ব উঠে ঘরে চলে গেল। নীলপদ্মের মালাটা এনে আরুর গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলে, “আমি ছাড়া কেউ দেখেনি এতদিন, আজ তুই দেখলি।”

নীলপদ্মের সাথে অপূর্বর পছন্দ করা বেনারসিতে আরুর রূপ উতলে উঠছে। বৃষ্টির আঁচ ক্রমশ বেড়ে চলেছে, অপূর্ব সময় নষ্ট না করে আরুকে পুনরায় কোলে তুলে ঘরে ফিরে এলো। বিছানায় রেখে বাতির সুইচ বন্ধ করে পরনের টি শার্ট খুলে আলমারির উপরে রেখে দিল। প্রকট হলো আরুর প্রিয় ভাঁজ কাটা দেহ। অপূর্ব এগিয়ে আসলে হাতটা আবেগ নিয়ে বুকে রেখে তাকিয়ে রইল আরু। বিরতিহীন দৃষ্টিকে অবরোধ করতে চুলের ভাঁজে হাত রেখে আরুর অধরে অধর মিলিত করল। সূচনা হলো মধুর মুহূর্তের। মাথাটা হেলে ঝুলন্ত গাঁদাফুলের মালাটা ধরতেই ছিঁড়ে গেল তা। অপূর্বর থেকে ছাড়া পেতেই আরু ফ্যাকাসে মুখে বলে, “আহ্! ছিঁড়ে গেছে।”

“কিছুক্ষণ পর সবগুলোই ছিঁড়ে যাবে।” গভীর দৃষ্টিতে তাকাতেই লজ্জানত আরু বলে, “কেন ছিঁড়ে যাবে?”

“সেদিন তুই যেই ক্যাসেটটা দেখতে চেয়েছিলি, এখন সেটা দেখলে বুঝতে পারবি।” বলতে বলতে অপূর্ব গাঁদা ফুলের পাপড়িগুলো আরুর উপরে ফেলতে থাকল।
__
গতরাতের বৃষ্টির পর আকাশ আজ স্বচ্ছ। বহু প্রতিক্ষার পর অপূর্বর বুকের সাথে লেপটে বিড়াল ছানার ন্যায় ঘুমিয়ে আছে আরু। প্রথম সুখ নিয়ে অপূর্ব চোখ মেলে তাকিয়ে আরুকে থেকে একটু চমকে উঠে। পরক্ষণে গতরাতের দৃশ্য মস্তিস্ক গোচর হতেই অপূর্ব হাসে। আরুকে দৃঢ় করে জড়িয়ে ধরে কপালে এঁকে দেয় ভালোবাসার পরশ। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরুকে সরিয়ে উঠে যায়। ভালোভাবে কাঁথাটা প্যাঁচিয়ে শুভ্র টিশার্ট ও ট্রাইজার নিয়ে বের হলো কলতলার উদ্দেশ্যে। গোসল সেরে আরুকে তেমনই ঘুমাতে দেখে মুচকি হেসে বারান্দায় মেলে দিল পোশাক। সমস্ত ঘরের ফুলগুলো একপাশে জড় করে গুছিয়ে নিল ঘর। আলমারি থেকে জুয়েলারি বক্স বের করে আরুর ব্যবহৃত রূপার অলংকার খুলে স্বর্ণের অলংকার পরিয়ে দিল। রূপারটা রইল বাবার বাড়ির সম্পদ হিসেবে। অপূর্বর স্পর্শে চোখ মেলে তাকায় আরু। অপূর্বকে দেখে তড়িগড়ি করে উঠে বলে, “আপনি?”

পরক্ষণে দমে গিয়ে বলে, “আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।”

“তাড়াতাড়ি ওঠ। গোসল করে নাস্তা করতে হবে।”

“হুঁ।” আড়মোড়া ভেঙে আরু উঠে বসে। হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা নিয়ে চলে গেল কলতলায়। অপূর্ব তৈরি হয়ে ডাইনিংয়ে বসেছে। পুরুষরা খেয়ে উঠতেই অপূর্ব তার বোনদের নিয়ে বসে। আরু ফিরে আসে তখন। গোসলের সময় শাড়ির অনেকটা ভিজিয়ে ফেলেছে। চেয়ার টেনে বসতেই অপূর্ব খাওয়া রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। থমথমে গলায় বলে, “পরে খা, রান্নাঘরে কী লাগবে দেখ। কাজে সাহায্য কর।”

“আজকে কাজ করতে হবে না। আজকে তোর সাথে খাবার খাক।” অনিতা গরুর গোশতের বাটিটা টেবিলে রেখে বলে। অপূর্ব তবুও নাকচ করে, “ও তোমার পুত্রবধূ মা। ওকে গড়ে নেওয়ার দায়িত্ব তোমার। তোমাদের পর ও এই বাড়ির বড় বউ। ওকে প্রথম থেকে তোমার মতো তৈরি করতে হবে।”

অপূর্ব লক্ষ্য করে আরুর মাথার ঘোমটা পড়ে গেছে। অপূর্ব আঁচলটা মাথায় তুলে দিয়ে বলে, “আমার মায়ের একটাই ছেলে। মায়ের কথার অবাধ্য হবি না। কেমন?”

“হুঁ।”মাথা নিচু করে অপূর্বর কথার সায় দিল। আরু বুঝে গেছে এই আঁচল কখনো মাথা থেকে ফেলতে পারবে না। অনিতা আরুকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে বলে, “আজকে আরুর শাশুড়ি আরুকে ছুটি দিল। আরু খেতে বস।”

অনিতা গেল রান্নাঘরে। তখনই হাসতে হাসতে সেখানে এসে উপস্থিত হয় চম্পা। মজার ছলে বলে, “অপূর্ব, তুই কিন্তু বড়ো নাতি। তিয়াসের আগে আমাকে তুই পুঁতি উপহার দিবি।”

মল্লিকা বলে, “আমাদের অপূর্ব সবসময় ফাস্ট হয়। আমাদের বিশ্বাস আছে, ও ফাস্ট হবে। দেখছেন না, প্রথম দিনেই আরুকে স্বর্ণে মুড়িয়ে ফেলেছে। ওর থেকে চোখ ফেরানো যায় না।”

সুমি তাল মেলায়, “তা আর বলতে? অসম্ভব সুন্দর লাগছে কিন্তু আরুকে।”

আরু হাতের ও গলায় তাকিয়ে স্বর্ণের হদিস পায়। তবে কান ও নাক দেখতে পারে না। খাওয়া শেষে ঘরে গিয়ে নতুন আরুকে দেখবে।
অপূর্ব হাসতে হাসতে নাস্তা করে‌। মল্লিকা সেজো বউ, অনেকবার সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেও তার ঘর আলো করে কোনো সন্তান আসেনি। তাই বাকি ছেলেমেয়েদের নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। অপূর্ব খাওয়া শেষ করে রঙ্গ করে বলে, “তোমাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই। মায়ের কাজে শুনেছি তোমরা অনেক চেষ্টা করেছিলে। আমি মনোচিকিৎসক হলেও এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারব। চাচার সাথে কথা বলে পরামর্শ নিতে আমার কাছে দুজনে এসো।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here