নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ২৫

0
427

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৫

আহসান বাড়ির চার ভাই একত্রে বসে আছে। তাদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ানো তিয়াস ও সুমি। বাড়ির মেজো ছেলে অর্থাৎ তিয়াসের বাবা উঁচু গলায় বললেন, “তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো। আমাদের বললেই আমরা মেনে নিতাম। সেই মেয়েকে নিয়ে চলে এলে। আজ আহসান বাড়ির মান সম্মান ধুলোয় মিশে যাবে তোমার জন্য।”

“আমি যেটা করেছি, সেটা ভুল। কিন্তু এছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না।” কথাটা বলে তিয়াস সুমির দিকে ইশারা করে। অবিলম্বে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুমি। দাদিজানের পা ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলে, “আমার মা নেই, ছোটবেলায় মা মারা গেছে। বাবা আবার‌ বিয়ে করছে। আমাকে বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। চকিদারের মাতাল ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করছে। আমারে বাঁচান।”

চার ছেলের সাথে আলোচনা করলেন পিতা। কিছুক্ষণ আগে তিস্তাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। ‘এরমধ্যে তিয়াস সুমিকে বাড়িতে নিয়ে আসবে’- এটা কারো প্রত্যাশায় ছিল না। হট্টগোল না করে তাই নিজেদের ভেতরে আলোচনা করছে আহসান পরিবার। পরিস্থিতি তখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। মোতাহার আহসান বলেন, “আমাদের একটা মানসম্মান আছে। চাইলে আমরা সব করতে পারিনা। তোমার বাবাকে খবর দেয়। কাল সকালে আসতে বলি। কথা বলে সব মিটমাট করে বলব।”

এত সময় পর সমস্যা সমাধান হতে দেখে অন্তঃকরণ ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হলো শেফালীর। সবাই প্রায় সুমিকে বাড়ির বউ হিসাবে মেনে নিয়েছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটি চিরতরে অন্যের হওয়া মেনে নেওয়া কতটা কষ্টের সেই জানে। শেফালী বাজখাঁই গলায় বলে, “না চাচা, না বাবা, না দাদা। এমন একটা চরিত্রহীন মেয়ে তিয়াস ভাইয়ের সাথে মানায় না। যে মেয়ে বংশের মুখে চুনকালি লেপে অন্য ছেলের সাথে আসতে পারে, তার চরিত্র কখনোই ভালো হতে পারে না। আপনারা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিন।”

ভালোবাসার মানুষটির নিন্দা কি কোনো প্রেমিক সহ্য করতে পারে? তিয়াসও পারে না। শেফালীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠাটিয়ে লাগল এক চ/ড়। রাগে শরীর ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তিয়াসের রাগান্বিত মুখমণ্ডল দেখে অপূর্ব তাকে সরিয়ে নিল। তবুও তিয়াস বলে, “আর একটা কথা বললে তোর মুখ আমি ভেঙে দিবো শেফু। আমাকে শাসন করার জন্য আমার বাবা চাচারা আছে। তুই মাতব্বরি করতে আসলে ভালো হবে, বলে দিলাম।”

“এবারে কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলবে না। যাতে তার চরিত্রের দিকে আঙুল উঠে।” শাহিনুজ্জামান তার মেয়েকে বলে। শেফালীর চোখমুখে রাগের আভাসে দেখা গেল। সুমির জন্য সবাই একাধারে শেফালীকে বকে চলেছে ‌। বেশিক্ষণ নিজেকে সংযত করতে পারে না শেফালী। ধুম করে ঘরে গিয়ে খিল তুলে দিল‌। তুর ও আরু এর ফলাফল জেনে ছুটে গেল ঘরের দিকে। শেফালী ততক্ষণে ভাঙচুর শুরু করে দিয়েছে। চুলগুলো টেনে ধরে ছিঁড়ে ফেলার জন্য টানতে। আরু দরজা ধাক্কা দিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, “মিষ্টি কুমড়ার ফালি, দ্রুত দরজা খোল।”

“শেফু, দরজা খুলতে বলেছি তোকে। নাহলে কিন্তু বাবাকে গিয়ে বিচার দিবো।” তুর শাসায়। শেফালী দরজা খুলে আবার বিছানায় গিয়ে বসে। আরু ও তুর ভেতরে প্রবেশ করে খিল তুলে দিল দরজার। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আরু বলে, “মনের উপর কারো জোর চলে না শেফালী। তিয়াস ভাই সুমিকে ভালোবাসে।”

“তো! তাই বলে সবার সামনে আমাকে মারবে? আমার ভেতরটা কেউ বুঝতে পারছে না। তিয়াস ভাইকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তার পাশে ঐ শাতচুন্নিটাকে কীভাবে সহ্য করব, বল তোরা?”

শেফালী নিজের চুল ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। বিপরীত সুরে তুর বলে, “এখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পারছি না আমি। ভালোবাসার মানুষের নামে কিছু বললে, কেউ সহ্য করতে পারে না।”

“তোরা এখন‌ সুমির দলে চলে গেছিস? বাহ্! গুড। যা বোঝার‌ আমি বুঝে গেছি। এবার তোরা আসতে পারিস।” শেফালী নিজের ক্ষোভ ধরে বসে থাকে। তুর ও আরু অধৈর্য হয়ে উঠে। তখনই দরজায় করাঘাত পড়ে। আরু দরজা খুলে দেখতে পেল জাহানারা এসেছে সুমিকে নিয়ে। মুচকি হেসে বলে, “তিস্তা তো চলে গেছে, এখন তোদের ঘরে সুমিকে রেখে দে। সুমি আলাদা থাকলে অস্বস্তি হতে পারে।”

“আচ্ছা।” তুর বলে সুমিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে। ঘরের ভাঙাচোরা অবস্থা দেখে সংশয় প্রকাশ করে জাহানারা। শেফালীর মুখের দিকে তাকিয়ে আভাস পায় অন্য কিছুর। এগিয়ে গিয়ে শেফালীর মাথায় হাত দিয়ে বলে, “রাগ করিস না মা, তিয়াস হঠাৎ করে এমন করে ফেলবে কে বুঝতে পেরেছে। আমি তিয়াসকে বলব তোর কথা ক্ষমা চাইতে।”

শেফালী হাতটা সরিয়ে ফেলে বিলম্বে। জাহানারা আশ্চর্যান্বিত হলো শেফালীর ব্যবহারে। চকিতে নিজের বালিশ আর কাঁথা নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে, “আমি বাইরের কারো সাথে আমার ঘর শেয়ার করতে পারব না। যতদিন সে এই ঘরে থাকব, আমি ততদিন অন্য ঘরে থাকব‌।”

“এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে শেফু?”

“আমার বাবা মা আমার গায়ে হাত দেয় না, আর তিয়াস ভাই আমার গালে চড় মেরেছে এই মেয়েটার জন্য। তারপরেও আমি ওর সাথে বিছানা শেয়ার করব? কখনোই না।” বলেই শেফালী বেরিয়ে গেল। সবাই শেফালীকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
অপূর্ব ক্লান্তি কাটিয়ে লম্বা একটা গোসল নিয়ে ঘরের ভেতরে যাচ্ছিল। পাশের ঘর থেকে অতিরিক্ত কথোপকথন শুনে থেমে গেল সে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরুকে আদেশ করে, “আরুপাখি, শুনে যা বাবু।”

“কী হয়েছে?” আরু ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বলে।

“শেফালীর সম্পর্কে কেমন একটা কথা‌ শুনলাম। একটু খুলে বল।”

“আমি কিছু জানি না।” বলে আরু উলটা পথে পা রাখে। ঘরে প্রবেশের আগেই অপূর্ব তার বলিষ্ঠ হাতে বাধা দিল তাকে। মুঠো করে ধরে নিয়ে এলো বাইরে। দরজার বাইরে সিমেন্টে বাঁধানো চেয়ারে বসে বলে, “বাড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে। আমি চাইনা, এতরাতে তোকে আর আমাকে‌ একসাথে দেখে আবার কিছু ঘটুক। তার আগে বলে বিদায় হ।”

আরুর কী হলো জানে না। অপূর্বর বুকে মুখ গুজে দিল। আবদ্ধ করে নিল কোনো বন্ধনে। আগ বাড়িতে এভাবে সে কখনো অপূর্বকে ছোঁয় না। অপূর্ব আরুর পিঠে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে, “কী হয়েছে আমার পদ্মাবতীর? মন খারাপ?”

চকিতে শুনতে পেল আরুর কান্নায় মাখা গলা। কাঁদতে কাঁদতে অপূর্বর শার্ট ভিজে গেছে। আরু ভাঙা গলায় বলে, “তিয়াস ভাইয়াকে শেফালী অনেক ভালোবাসে। শেফালী অনেকবার তাকে বুঝিয়েছে। কিন্তু তিয়াস ভাই সুমি ভাবীকে ভালোবাসে। আজ এমন ঘটনায় শেফালী অনেক ভেঙে পড়েছে।”

অপূর্ব হতভম্ব হলো। নিজেকে সামলানোর আগে আরুকে সামলানো দরকার। শেফালীর কষ্টতে ভেঙে পড়েছে আরু। পদ্মবতী যে অপূর্বকে ভালোবাস, তা জেনে অপূর্বর ঠোঁট প্রসারিত হয়। আরুর পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়, “ওদের ভালোবাসা ছিল এক তরফা। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা দুজনের দিক থেকে। তোকে ঠেকানোর কোনো চান্স নেই। ঘরে গিয়ে একটা ঘুম দিবি। এইসব নিয়ে আর ভাববি না।”

আরু উঠে ঘরের ভেতরে চলে গেল। অপূর্ব বস রইল সেখানে। শেফালীর জন্য অদৃশ্য সহানুভূতি কাজ করে অপূর্ব-র। ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে অন্যকারো হতে দেখা, কতটা পিড়াদায়ক। অপূর্ব তা অনুভব করে।

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

রেসপন্স করার অনুরোধ রইল
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here