মেঘকন্যা☁️ #Part_08 #Writer_NOVA

0
291

#মেঘকন্যা☁️
#Part_08
#Writer_NOVA

অঙ্গরাজ্য…….

রাজ পালঙ্কে বসে আছে ইশাল।মুখটা তার রাগে লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে।তার ডান হাতের মধ্যে গাছ-গাছালির তৈরি ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে রাজবৈদ্য।হাতের আঙুল থেকে শুরু করে কনুই পর্যন্ত পুরে কালচে হয়ে আছে। বড় বড় ফোস্কা পরে গেছে। প্রচন্ড জ্বালা করছে তার।করবেই তো মেঘকন্যার শক্তি বলে কথা।কক্ষে দ্রুত প্রবেশ করলো রাজা ও মন্ত্রী।

মন্ত্রীঃ পুত্র হাতের এই অবস্থা কি করে হলো?

রাজাঃ পৃথিবী থেকে কাজের কাজ তো একটাও করতে পারে না।বরং অপদস্ত হয়ে ফিরে আসে।অকর্মা কোথাকার?আমার এখন লজ্জা করে তোমার মতো একটা পুত্র সন্তানের বাবা হয়ে।আজও নিশ্চয়ই মেঘকন্যা বা পুত্রের হাতে কোন উত্তম-মধ্যম খেয়ে এসেছে। বারবার পরাজিত হয়ে আসতে লজ্জা করে না তোমার। তুমি মেঘকন্যা আর পুত্রকে নিজের হাতের পুতুল মনে করো নাকি।তুমি যা খুশি করবে তা সহ্য করে যাবে।কতবার বলেছি ওদের শক্তিতে নয় বুদ্ধিতে হারাতে হবে।কাপুরুষের মতো পৃথিবী থেকে আসো কি করে?

রাজার কথাগুলো ইশালের কানে মনে হল আগুনে ঘি ঢালার মতো।এতক্ষণ সহ্য করলেও এবার ইশাল রাজবৈদ্যর থেকে নিজের হাতটা ঝাটকা মেরে ছারিয়ে নিয়ে তার পিতার পোশাকের কলার ধরে শূন্যে তুলে ফেললো।রাগে তার মুখে নানা রঙের সিগন্যাল দিচ্ছে। মন্ত্রী ভয়ে কয়েকটা ঢোক গিলে রাজাকে ইশালের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

মন্ত্রীঃ পুত্র করছোটা কি?উনি তোমার পিতা।পিতার সাথে কেউ এরকম ব্যবহার করে।

ইশালঃ আপনি যদি আমার পিতা না হতেন তাহলে এতক্ষণে আমি আপনাকে শুধু আমার চোখের ইশারায় আগুনে ভস্ম করে দিতাম।(রেগে)

কথাগুলো বলে ঠাস করে রাজাকে মেঝেতে ফেলে দিলো।মন্ত্রী তড়িঘড়ি করে রাজাকে নিচ থেকে তুললেন।

মন্ত্রীঃ আগেও বলেছি পুত্র, মাথা গরম করে কিছু করা যাবে না। যা করার শান্ত ভঙ্গিতে করতে হবে। তুমি মেঘকন্যাকে খুঁজে পেয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলে।যার কারণে তুমি আমাদের কথা মনোনি।তুমি কি করে ভুলে গেলে সে তোমার থেকে দ্বিগুণ শক্তিশালী।তাছাড়া সবসময় তাকে মেঘপুত্র আবরার কড়া পাহারায় রাখে।শুধুমাত্র হাতের সামান্য ছোঁয়ায় তোমার এই অবস্থা। যদি তোমার সাথে সে মোকাবেলা করতো তাহলে তোমার অবস্থা কি হতো ভেবে দেখো তো।তুমি ওকে ধরতে কেন গেলে?

ইশালঃ আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি যে আমার সামনে মেঘকন্যা আছে।আমি তার গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম।ধীরে ধীরে তার সামনে গিয়ে দুই হাতে তাকে আটকে ফেললাম।এক হাতে তাকে ধরতে গেলে সে আস্তে করে আমাকে সরিয়ে দেয়।আমি বিজলির মতো একটা ঝাটকা খেয়ে দূরে ছিটকে পরলাম।তখনি বুঝলাম এটা মেঘকন্যা ছাড়া অন্য কেউ হতে পারে না।আমি ফিরতি তার কাছে যেতে চাইলে দেখলাম মেঘপুত্র দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে।তাই লুকিয়ে পরা ছাড়া আমার অন্য কোন উপায় ছিলো না।সামান্য হাতের ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে আমার হাতে ঘায়ের সৃষ্টি করলো।প্রচন্ড জ্বালা করছে।আমি সহ্য করতে পারছি না।

রাজবৈদ্যঃ পুরো হাত বিষে নীল হয়ে যাচ্ছে। এখুনি এই বিষ নামাতে হবে। নয়তো রাজপুত্র ইশাল পাথরে পরিণত হতে পারে।

রাজাঃ আমি শুধু শুধু ওকে এতগুলো কথা শুনালাম।আমার কথার মর্ম না বুঝে,কোন কর্ণপাত না করে, আমার সাথে বেয়াদবি করলো।পুত্র, তুমি ভুলে গেলে কি করে? মেঘকন্যার স্পর্শে তোমার শরীরে বিষ প্রবেশ করে। তুমি সেই বিষ নিয়ে এত সময় বসে আছো।জলদী করে বিষ নামান বৈদ্য মশাই। নয়তো পুত্রের পাথরে পরিণত হতে কয়েক সেকেন্ড লাগবে। মেঘপুত্রের ক্ষতি না করা অব্দি তুমি মেঘকন্যাকে স্পর্শ করতে পারবে না।বিবাহের পর থেকে কন্যা অনেক শক্তির অধিকারী হয়ে গেছে।

মন্ত্রীঃ এমনটা তো কোন কারণ ছাড়া হওয়ার কথা নয়।পুত্র তোমার কাঁধে থাকা রিহিসকে(সাপ) কি ট্যাটুতে পরিণত করেছো?

ইশালঃ হ্যাঁ,মন্ত্রী মশাই। তাছাড়া কি করতাম?

মন্ত্রীঃ তুমি কি শার্টের বোতাম খুলে রেখেছিলে?যাতে করে তোমার ট্যাটুটা দেখা গিয়েছিল?

ইশালঃ হ্যাঁ,আপনি হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছেন?বৈদ্য মশাই জলদী কিছু করুন।আমার হাতের জ্বালাটা বেড়েই যাচ্ছে।

মন্ত্রীঃ তুমি নিজের ক্ষতি নিজে করেছো পুত্র। তোমার ঐ বিষাক্ত সাপের ট্যাটু-টা মেঘকন্যা দেখে নিয়েছে।যাতে করে সাপটা তখন জীবন্ত হয়ে গিয়েছিলো।চোখ দুটো জ্বলে উঠেছিলো তার।শত্রুকে দেখে বিষাক্ত নিশ্বাস ছেড়েছিলো তোমার রিহিস।কিন্তু সে নিশ্বাস মেঘকন্যার গায়ে লাগে নি।বরং দ্বীগুণ বিষক্ত হয়ে ফেরত এসে তোমার শরীরে আছরে পরেছে।যার কারণে তোমার শরীর নীল বর্ণ ধারণ করছে।

ইশালঃ কিন্তু আব্বাজান যে বললো মেঘকন্যাকে স্পর্শ করার কারণে আমার শরীরে বিষ প্রবেশ করেছে।তাহলে কি আব্বাজানের কথা ভুল।

মন্ত্রীঃ নাহ্ কথাটা পুরোপুরি ভুল নয়।রিহিসের বিষের কারণে তোমার শরীরে বিষ প্রবেশ করলেও মেঘকন্যার ছোঁয়ায় বিষের মাত্রাটা আরো তীব্র হয়ে গেছে।

রাজাঃ রাজবৈদ্য জলদী কিছু করুন।যদি আমার পুত্রের কিছু হয় তাহলে আপনাকে শূলে চড়াবো।

রাজবৈদ্যঃ আমি আমার পুরোটা দিয়ে চেষ্টা করছি মহারাজ। কিন্তু আমার ঔষধে কোন কাজ হবে না।

ইশাল জোরে হুংকার দিয়ে রেগে রাজবৈদ্যকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো।রাজা ও মন্ত্রী দুজনেই চিন্তিত হয়ে পরেছে।

🌨️🌨️🌨️

ইশালঃ মজা করছিস আমার সাথে। যেভাবে হোক কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার শরীর থেকে বিষ নামাবি।সাথে হাত ঠিক করে দিবি।

রাজবৈদ্য ব্যাথা ও ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো।ভয়ে ভয়ে বললো।

রাজবৈদ্যঃ আমার পুরো কথাটা শুনুন রাজপুত্র। আমি বলতে চেয়েছিলাম আমার ঔষধে কাজ হবে না ঠিক আছে।তবে আরেকটি উপায় আছে আপনার শরীর থেকে বিষ বের করার।(ভয়ে ভয়ে)

রাজাঃ কি উপায় জলদী বলুন রাজবৈদ্য?

ইশালঃ সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।যা করার জলদী কর রাজবৈদ্য।

রাজবৈদ্যঃ রাজপুত্রের সাপ যেহেতু তার শরীরে বিষ প্রবেশ করিয়েছে সেহেতু ঐ সাপ দ্বারা বিষ তুলতে হবে।তবেই রাজপুত্র সুস্থ হয়ে যাবে।

ইশাল হৃৎপিণ্ডে নিজের হাতটা রাখলো।কারণ সেখানেই রিহিসের ট্যাটুটা।চোখ বন্ধ করে কিছু একটা বিরবির করে পরলো সে।সাথে সাথে ট্যাটু থেকে সাপে পরিণত হয়ে গেল রিহিস।রাজবৈদ্য সামনে আসতেই রিহিস ফণা তুলে ছোবল মারতে নিলে মন্ত্রী রিহিসের গলা চেপে ধরলো।তারপর ইশালের হাতের মধ্যে রিহিসের বিষ দাঁত চেপে ধরলো। প্রথমে ইশাল ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলেও কিছু সময় পর শান্ত হয়ে গেলো।ধীরে ধীরে ইশালের গায়ের রংটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলো। ইশাল পুরো ঠিক হয়ে গেলো।

ইশালঃ মন্ত্রী মশাই রাজবৈদ্যকে অন্ধকার কারাগারে পুরে রাখেন।খুব শীঘ্র তাকে শূলে চড়ানোর ব্যবস্থাও করেন।(বাঁকা হেসে)

রাজবৈদ্যঃ রাজপুত্র আমার অপরাধ কি?আমিতো আপনাকে সুস্থ হতে সাহায্য করলাম।

ইশালঃ প্রথমত তুই আমার সাথে বেয়াদবি করেছিস।দ্বিতীয়ত তুই আমাদের সব কথা শুনে নিয়েছিস।আমি কিভাবে সুস্থ হলাম তার কৌশল তুই শিখে নিয়েছিস।তাই তোকে খুশি হয়ে আমি মৃত্যুদন্ড উপহার দিচ্ছি।পরবর্তীতে যে তুই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমার ক্ষতি করবি না তার নিশ্চয়তা কি? মন্ত্রী মশাই প্রহরী ডেকে উনাকে নিয়ে যেতে বলুন।এবং নতুন রাজবৈদ্যের ব্যবস্থা করুন।

রাজবৈদ্যকে প্রহরীরা টানতে টানতে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করলো।ইশাল পৃথিবীতে যাওয়ার জন্য আবার নতুন পরিকল্পনা শুরু করলো।

ইশালঃ এবার আমি আরো সতর্ক হয়ে পৃথিবীতে গমণ করবো।অসতর্ক হলে চলবে না। আমার উদ্দেশ্য আমি কিছুতেই বিফলে যেতে দিবো না।

🌨️🌨️🌨️

মাথাটা পুরো লাটিমের মতো ঘুরাচ্ছে।চোখের পাতা বেশ ভারী মনে হচ্ছে। মাথা চেপে ধরে পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম।আম্মি রুম ঝাড়ু দিচ্ছে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে হালকা একটু উঠে বসলাম।তখনি মনে হলো আমি এখানে কেন?আমিতো কলেজের পেছনে ছিলাম।

আম্মিঃ তোর আজকাল কি হয়েছে বল তো মেঘা?তুই ইদানীং ঘন ঘন অজ্ঞান কেন হচ্ছিস?সবসময় কি তোকে সামলানোর জন্য আয়িশ থাকবে।আজও ছেলেটা ছিলো বলে সুস্থ, সবল হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে পারছিস।

আমিঃ আমি ঘন ঘন অজ্ঞান হলাম কখন?সেদিন আয়িশের বাইকে উঠে প্রচুর ঘুম পেয়েছিলো বলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।আজ হঠাৎ কি জানি হয়েছিল আমি হুট করে অজ্ঞান হয়ে যাই।

আম্মিঃ হবিই তো।সারাক্ষণ জ্বীন নিয়ে পরে থাকিস।তোর সাথে নাকি সবসময় কেউ থাকে।এরকম আজগুবি চিন্তা করবি আর খাবার ঠিকমতো খাবি না।দেখবি তুই ঠিক সুস্থ আছিস।তোর আব্বি আসুক আজ।আমি সব নালিশ দিবো।ঠিকমতো খাবার খাওয়ার নাম নেই। সবসময় আজগুবি চিন্তা নিয়ে মাথায় প্রেসার দেয়।আর সে কিনা অজ্ঞান হবে না।

আমিঃ আম্মি মাথাটা প্রচন্ড ঘুরাচ্ছে।দয়া করে তোমার এই ঘ্যানঘ্যানানি থামাও।যদি পারো আমার জন্য এক মগ ভর্তি কফি দিয়ে যেও।

আম্মি বিরবির করতে করতে আমার জন্য কফি করতে চলে গেলো।আমি কয়োক ঘন্টার আগের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম

অতীত………..

কলেজের পেছনে বসে যখন আমি এক নাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছি।হঠাৎ কেউ আমাকে টিস্যু এগিয়ে দিলো।টিস্যুটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নাক টানতে টানতে বললাম।

আমিঃ শুকরিয়া।

কিন্তু অপর পাশ থেকে কোন উত্তর পেলাম না।আমি নিচের থেকে আস্তে আস্তে উপরের দিকে চোখ উঠালাম।সামনের থাকা মানুষটাকে দেখে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।হাঁটু পর্যন্ত কালো ব্লেজার, কালো প্যান্ট ও কালো শার্ট পরিহিত তামাটে গায়ের রং-য়ের এক ছেলে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। চুলগুলো লাল ও চোখ দুটো হালকা হলুদ বর্ণের। তাকে দেখে আমার বেশ ভয় করছে।কেন জানি তাকে পৃথিবীর মানুষ বলে মনে হচ্ছে না।কোন ভিনগ্রহ থেকে পালিয়ে পৃথিবীতে চলে এসেছে কে জানে? নাক টেনে টেনে কিছুর গন্ধ শুঁকছে। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে সে।

আমিঃ কে কে কে আপপপনি?আমার দিকে এরকম এগুচ্ছেন কেন?

ইশালঃ আমি ইশাল। তোমাকে আমার এতো চেনা চেনা মনে হচ্ছে কেন বলোতো?

আমিঃ আপনি আমার দিকে আসবেন না।দূরে সরুন।আমি কিন্তু চিৎকার করবো।

আমি দাঁড়িয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেলাম।তখনি আমার চোখ তার উন্মুক্ত বুকে পরলো।যেখানে শার্টের প্রথম তিনটা বোতাম খোলা ছিলো।বুকের মধ্যে থাকা সাপের ট্যাটু-টা আমার কাছে জীবন্ত সাপ মনে হলো।কারণ সাপের চোখ দুটো ও গায়ের রংটা জ্বলজ্বল করছে। সে আমার সামনে এসে দুই হাত দেয়ালে রেখে মাঝে আমায় আটকে ফেললো।হঠাৎ মনে হলো সাপের মুখের দিক থেকে নীল কোন আভা আমার দিকে আসছে।আমি চোখ দুটো হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঢেকে দিলাম।যখন চোখ খুললাম দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে অনেকটা ঝুঁকে আছে।

ইশালঃ কে তুমি বলোতো?এখানে কি করছো?

আমিঃ আমি কে সেটা আপনার না জানলেও চলবে। আপনি আমার সামনে থেকে সরুন।আমার অস্বস্তি লাগছে। একটা মেয়েকে একা পেয়ে তার সাথে অসভ্যতামী করছেন আপনি।আমার দুই পাশ থেকে হাত সরান।(রেগে)

🌨️🌨️🌨️

এতক্ষণ ভয় করলেও এখন রাগ উঠছে।ছেলেটা বাঁকা হেসে আমার মুখের দিকে তার হাত বাড়িয়ে দিতে নিলে আমি হালকা করে ঠেলা দিয়ে তার হাত সরিয়ে দেই।আমার হাতটা খুব আস্তে করেই তার হাতে লেগেছে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ছেলেটা ছিটকে বহুদূরে চলে গেল। আমি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে দুই হাতে মুখ ঢেকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি।উল্টো দিক থেকে দৌড়ে আয়িশ আমার কাছে ছুটে এলো।

আয়িশঃ কি হয়েছে মাল্টি কালার? তুই এখানে কেন?আমি তোকে সারা কলেজ পাগলের মতো খুঁজছি।তখন এভাবে দৌড়ে চলে এলি কেন?

আমিঃ এখানে একটা ছেলে ছিলো?(ভয় পেয়ে)

আয়িশঃ এখানে কেউ নেই। তুই তাকিয়ে দেখ।

আমিঃ আয়িশ বিশ্বাস কর।এখানে অদ্ভুত দেখতে একটা ছেলে ছিলো।সে আমার সাথে অসভ্যতামী করতে চেয়েছিলো।সে আমার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আমি তার হাতে সামান্য একটা ঝাড়া মারতেই সে ছিটকে বহুদূরে পরে গেল।

আয়িশঃ তুই ভুল দেখেছিস।এখানে কেউ ছিলো না।তাছাড়া ঐ দিকটায় বিশাল বড় পুকুর। সে দিকে তো কোন রাস্তা নেই। তাহলে মানুষ আসবে কি করে তুই বল।তুই হয়তো কল্পনা করেছিস।

আয়িশের কথা শুনে আমার যখনি মনে হলো কলেজের এই দিকটায় বিশাল পুকুর। আসা-যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। তখনি আমার ভয়টা আরো জেঁকে বসলো।ধীরে ধীরে আমি চোখে অন্ধকার দেখতে পেলাম। চারিদিকে সব ঘুরতে লাগলো।চোখ বন্ধ করে ঢলে নিচে পরে যাওয়ার আগে টের পেলাম আয়িশ আমাকে ধরে ফেলেছে। তারপর কি হয়েছে আমি জানি না। এখন চোখ খুলে দেখি নিজের রুমে।

বর্তমানে……

বিকাল গড়িয়ে এসেছে। চারিদিকে স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে আছে। কলেজের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কফি হাতে বারান্দায় চলে এসেছি। দূর আকাশে এক ঝাঁক পাখিকে তাদের নীড়ে ফিরতে দেখা যাচ্ছে। কফির মগটা পাশে রেখে দুই হাত গুঁজে বাইরের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত আমি।কফিটা বোধহয় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে মগটা হাতে নিয়ে আমি অবাক।

আমিঃ একি!!! আমার মগ পুরো ফাঁকা কেন? আমার স্পষ্ট মনে আছে এক চুমুক খেয়ে আমি ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিয়ে ছিলাম।তাহলে কফি গেলো কোথায়? নিশ্চয়ই এটা আমার রুমে থাকা ঐ বজ্জাত জ্বিনের কাজ। নাহ্ আর তো সহ্য হচ্ছে না। এবার একটা হেস্তনেস্ত করারি দরকার।এই ব্যাটার জন্য সবাই আমকে পাগল ও ভিতু খেতাব দিচ্ছে। এবার আমিও এর শোধ তুলবো।অনেক সহ্য করেছি আর নয়।আমার সাথে যেই থাকুক তাকে এবার আমার সামনে আসতেই হবে। আমিও দেখবো কতদিন তুমি লুকোচুরি খেলতে পারো।যতখুশি লুকোচুরি খেলো।আমার কাছে ধরা তোমার পরতেই হবে।

কফির মগটা নিয়ে রুমে ঢুকে পরলো মেঘা।বারান্দার রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আবরার।বউয়ের মনের কথা শুনে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।অবশ্য কফিটা তার পেটেই গিয়েছে। যাতে করে সারাদিনের ক্লান্তিটা অনেকটা দূর হয়েছে। এবার দেখা যাক তার বউ তাকে সামনে আনার জন্য কি করে?এসব ভেবে আবারো আরেক দফা মুচকি হেসে রুমে ঢুকে পরলো আবরার।মেঘাকে না জ্বালালে আজকাল তার কিছুই ভালো লাগে না। প্রবাদ বাক্যে কথাটা বলতে গেলে পেটের ভাত হজম হয় না।এখন তো পেটে কফি গিয়েছে সেই কফি হজম করতে আবরারের এখন আবার মেঘাকে জ্বালাতে হবে।

#চলবে

আয়িশ ও আবরার এক নাকি আলাদা? তা খুব শীঘ্রই জানতে পারবেন। শুধু একটু ধৈর্য সহকারে পড়তে থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here