নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৩৪ [বর্ধিতাংশ]

0
394

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৪ [বর্ধিতাংশ]

আরু‌ চৌকির উপরে পা দুলিয়ে বসে আছে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ। খাবার গ্রহণের জন্য জবরদস্তি করলেও আরু তাতে অসম্মত প্রকাশ করে। জ্বরে আক্রান্ত দেহ নিয়ে মামার কাছে খিচুড়ির সাথে ভাজা ইলিশ মাছ খাবে বলে আবদার করে। একমাত্র ভাগ্নি হওয়ার সুবাদে সাথে সাথে বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে লোক। আরু এখন অপেক্ষারত ইলিশ ফেরার। হঠাৎ করে ওর মস্তিষ্কে হানা দিল প্রত্যাশিত কিছু, হওয়ার হলেও আরুর জন্য ব্যাঘাত ঘটেছে তাতে। চট করে আরু বিছানা ছেড়ে হাঁটা দিল বাড়ির বিপরীত পথে। অনিতা আরুকে লক্ষ করে ডাক দেয়, “আরু, অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস মা?”

“মাত্র পাঁচ মিনিট দাও, আমি আসছি।” আরু পশ্চাৎ না ফিরে বলেই এগিয়ে গেল। কাঙ্ক্ষিত বাড়িতে গিয়ে সে গলা ছেড়ে ডাকে, “বাড়িতে কেউ আছে?”

ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মধ্যবয়স্ক এক নারী। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর ও হাতে শাঁখা পলা। পান‌ চিবুতে চিবুতে আরুর কাছে এসে আশ্চর্যান্বিত হয়ে শুধাল, “তুই আরু না, চেয়ারম্যান বাড়ির ভাগ্নি? গতকাল তোকে পানি থেকে তোলা হলো, আজ আবার বিচার হলো?”

আরুর নাকে আসছে ধুপ ও ধোঁয়ার গন্ধ। আরুর রুগণ দেহ সেই অস্থির করা গন্ধ মেনে নিতে নারাজ। হাসফাঁস করতে করতে বলে, “জি আমি আরু। আমার কয়েকটা কাঁচা হলুদ লাগবে। আজ আহসান বাড়ির দুই জোড়া নবদম্পতির গোসল। আমার চিন্তায় সবার মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল, আপনি তাড়াতাড়ি আমাকে কিছু হলুদ তুলে দিন।”

“আচ্ছা, দাঁড়া।” মহিলা বলেই হাতের অবশিষ্ট চুনগুলো গাছের সাথে মুছে দিল। আরু আশেপাশে দৃষ্টি মিলিয়ে দেখতে পেল সব গাছের সাথেই কমবেশি চুন লাগানো। আরু পান খেতে পছন্দ করলেও এই স্বভাবের প্রতি সে বিরক্ত। কিছুক্ষণের মধ্যে মহিলা আরুকে অনেকগুলো হলুদ দিল। আরু ওড়নায় প্যাঁচিয়ে নিয়ে পানের থালা থেকে পান বানিয়ে হাঁটা দিল। মুখে ঢুকিয়ে ফেরার পথে পাঁচ বাড়িতে গোসলের খবর পৌঁছে দিল। আরু সরাসরি বাড়িতে গেল না, দক্ষিণ পাড়ার মেহেদী গাছ থেকে অনেকগুলো মেহেদী পাতা ছিঁড়ে নিয়ে গেল বাড়িতে। অনিতা আরুর পেছনে এতজন মহিলাকে দেখে বিস্মিত হয়ে বাক্য করে, “আপনার এখন এখানে?”

“মামি আমি তাঁদের নিয়ে এসেছি। আমার জন্য তিয়াস ভাই আর তিস্তা আপুদের গোসল বাদ গেছে। এজন্য আমিই ব্যবস্থা করে দিলাম।”

“কিন্তু আরু, এই পরিস্থিতিতে..

“গোসলের পাট চুকিয়ে আমি বাড়িতে ফিরে যাবো। নিজের প্রতি আমাকে যত্নবান হতে হবে। তুমি যদি গোসল না করাও, তাহলে আজকে থেকে কী করব?” আরুর একরোখা জবাবে অনিতা দ্বিরুক্তি না করে আঁচল পেতে আরুর থেকে মেহেদী ও হলুদগুলো নিয়ে নিল। তিন ঝাঁ-কে ডেকে নিল কাছে। গানের তালে তাঁরা হলুদ ও মেহেদী বাটতে বসে‌।
আরু অগ্রসর হয় বাড়ির দিকে। ঠান্ডায় নাক থেকে পানি ঝরছে। মেহেদী তোলার ঐ একই হাত দিয়ে সে নাক পরিষ্কার করতে গেলে আরুর নাকে ডগা লাল হলো খানিক। যাত্রাপথে অপূর্বর টিশার্ট নাগালে পেলে রুমাল হিসেবে ব্যবহার করতে ভুল করে না আরু। আরু খাবার ঘরে গিয়ে দেখল চম্পা সবাইকে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে। আরু যেতেই আগলে নিল চম্পা। ললাটে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলে, “অন্যের কথা ভাবলে হবে? নিজের কথাও মাঝে মাঝে ভাবতে হবে। নাহলে অসুস্থ হলে অন্যের কথা কিভাবে ভাববি?”

“ক্ষুধা লেগেছে নানি জান। ইলিশ মাছের বড়ো ডিমগুলো আমাকে দাও‌। এখন নিজের কথা ভাবি।”

“পাজি পেয়ে।” চম্পা নিজের হাতে খাবার তুলে দিতেই আরু টেবিলের উপরে বসে খেতে থাকে। গরম হওয়াতে নাক থেকে পানি ঝরতে থাকে। আরু বেজায় বিরক্ত হয়ে বলে, “ইচ্ছে করছে নাকটা কেটে ফেলে দেই। অসুস্থতা আমাকে কাবু করতে না পারলেও, একমাত্র এই ঠান্ডা লাগাটা আমার বিরক্ত লাগে। হা করে শ্বাস নিতে হয়।”

মল্লিকা তখন অপূর্বর জন্য তেল গরম করে ফিরে এসেছে। গতকাল রাতে অপূর্বর পা মচকে গিয়েছিল বিধায় ঠিকভাবে হাঁটতে পারছে না সে। অপূর্ব তেলের বাটিট নিয়ে ঘরের দিকে যেতে যেতে আরুকে ইঙ্গিত দেয় তার ঘরে যাবার, “জ্ঞান ফিরে সবার কথা ভেবেছিস, অথচ তোর বিরহে অপূর্বর পা মচকে হাঁটতে পারছেন না – সেটা তোর চোখে পড়ছে না। খেয়ে আমার সেবা করবি।” অপূর্ব প্রস্থান করলে সবাই খাওয়াতে ব্যস্ত হলো। শেফালীর আজ ঈর্ষা জাগল, এ সাধারণ ঈর্ষা নয়। শেফালী যাকে ভালোবাসে সে তাকে ভালোবাসে না, অথচ আরুকে একসাথে দুজন মানুষ প্রচণ্ড ভালোবাসে। মৃত্যুকেও হার মানায়। আচ্ছা, শেফালী যদি আরুর মতো রূপবতী নারী হতো, তাহলে অপূর্ব ভাই তো তাকে ভালোবাসতো। দেখা যেত তিয়াসও তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকেই চাইত। ও ভাবনার মাঝে অনুভব করল, এক গ্লাস পানি টেবিলে ফেলে দিয়েছে আরু। খানিকটা ছিটে ওর দেহে পতিত হতেই উঠে ঝাঁজালো গলায় বলে, “এই বয়সে চোখের মাথা খেয়েছিস? সবাই তোকে ভালোবাসে বলে নিজেকে মহারানী ভাবছিস?”

তিস্তা বিরক্ত হয়ে বলে, “একটু পানিই তো ফেলেছে, এভাবে রিয়েক্ট করার কী আছে?”

“আছে। আমার সামান্য জ্বর আসলে কারো কিছু যায় আসবে না, তাই রিয়েক্ট করার অনেক কিছু আছে। আরুর তো অনেকে আছে।” শেফালীর ত্যাড়া প্রতুক্তিতে অসুস্থতার পর তিয়াস এই প্রথম শেফালীর সাথে তর্ক ধরল, “বে/য়া/দ/ব একটা, কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা নেই। তোর জন্য এই মেয়েটা মরতে বসেছিল। আরেকটু দেরি হলে..! অথচ এখন তার সাথে রিষ করছে, কৃতজ্ঞতার ছিটেফোঁটাও নেই ওর। তোর কাজের পর নিজেকে ছোট মনে হয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে বেশ করেছি।”

তীব্র লাঞ্ছনায় বিলম্ব করল না মুহুর্ত। ছুটে গেল নিজের ঘরে। ‘যত দ্রুত সম্ভব এই বাড়ি ত্যাগ করাই শ্রেয়’- আনমনে ভেবে লোকমা মুখে তুলে হাঁচি দিতে দিতে অপূর্বর ঘরে চলে গেল। অপূর্ব নিজেও ঠান্ডায় কুপোকাত। তেল মালিশ করতে ব্যস্ত ছিল দীর্ঘক্ষণ, আরুকে দেখে সেই কাজটা থামিয়ে দিল। আরু অপূর্বর পায়ের নিকটে বসে মচকে যাওয়া পা নিজের কোলে তুলে নেয়। উষ্ণ তেলে হাত ডুবিয়ে অপূর্বর চুলের মাঝবরাবর সিঁথি করে তালু ম্যাসাজ করে দেয়। সরিষার তেলে রসুনের মিশ্রণ থাকার ফলে ঝাঁঝ লাগে নাকে। পরনের শার্টটা টানতে টানতে বলে, “এটা খুলুন, বুকে একটু লাগিয়ে দেই, ঠান্ডা চলে যাবে।”

অপূর্ব হেলান ছেড়ে শার্টের বোতাম খুলে নগ্ন হতেই আরু সেদিক চেয়ে রইল অপলক। তার প্রিয় ভাঁজকাটা দেহ। পুনরায় তেলে হাত ডুবিয়ে ম্যাসাজ করে দিতে লাগল বুকে। অপূর্ব এক দৃষ্টিতে চাওয়া মুখপানে। আরু সেই চোখে চেয়ে চেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে। অতঃপর পায়ের আঙুল দৃঢ় করে ধরে তেল লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকল। প্রথম দিকে ব্যথায় টনটন করলেও বেশ খানিকক্ষণ আরাম অনুভূত হলো। অপূর্ব আরুর রুগ্‌ণ মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “পদ্মবতীর মন ভার কেন? আমি ডেকেছি বলে?”

“না!”

“তবে?”

আরুর নিজের কাজে ব্যস্ত হওয়ার ভান ধরে অপূর্বর প্রশ্নের জবাব সে দিল না। আরুর হাতটা ধরে পুনরায় একই প্রশ্ন করলে আরু হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। টেবিলের উপরে উঠে বসে পা দোলাতে দোলাতে জবাবে জানায়, “স্বজ্ঞানে কালাচাঁন আমার কোনো ক্ষতি করেনি, করেনি আমার যত্নে কোনো কমতি। তবুও অনেকে বলছে, কালাচাঁন আমাকে কুমারী রাখে নি।”

বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। বিষয়টাকে কর্পূরের ন্যায় উড়িয়ে দিতে ভ্রু কুঁচকে অপূর্ব বলে, “তো? কী হয়েছে তাতে?”

“কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। আর আমিও মোটা যৌতুক দিয়ে বিয়ে করব না। আমাদের ঘরের পেছনের খুঁটিটা পোকে নষ্ট করে‌ ফেলেছে। বাবাকে বলব, প্রয়োজনে ঐ খুঁটিতে আমাকে গেঁথে রাখতে। তবুও যাতে মোটা যৌতুকে আমাকে বিয়ে না দেয়।”

“এই ঘরটা ভালোভাবে দেখ আরু, টিনের চাল থেকে মাঝে মাঝে পানি পড়ে ভেসে যায়। ভাবছি এখানে পদ্ম আনব। পানিতে বেশ সতেজ থাকবে। তুই কি হবি, সেই পদ্ম! পদ্মবতী?”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
আমার অসুস্থতা, দাদি চলে যাওয়াতে গ্ৰামে যাওয়া, সেখানে বৃষ্টিতে দুই দিন নেট না থাকা, একদিন করেন্ট না থাকা, ফোন পানিতে পড়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ থাকা, বাসে ঢাকা ফেরার কারণে মাথা ঘুরা।

এতকিছুর পরেও আপনাদের মনে হয়..🙃

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here