চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় #মিমি_মুসকান #পর্ব_৭

0
411

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৭

ফরহাত পিঠ চাপড়ে বলে উঠল, “সাবাশ ব্যাটা! যা করেছিস ভালো করেছিস। একদম বাঘের বাচ্চা। ওর তো এরকমই একটা শিক্ষা হবার দরকার ছিল। তোর বউয়ের দিকে নজর দিবে আর তুই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবি নাকি!”

“চুপ কর। আমার মাথা ব্যাথা করছে!“ তিক্তস্বরে কথাটা বলে উঠল সারফারাজ।

“তোর উচিত এখন গিয়ে বাড়িতে বসে বউয়ের হাতের গরম চা খাওয়া। আহা! চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বুঝবি এর স্বাদ। বউয়ের হাতে বানানো গরম চায়ের কাপে প্রথম চুমুক তাকে চুমু খাবার মতোই!”

“তোর লু/চ্চামি কথা রাখ তো।”

“লুচ্চা/মি বউয়ের সাথে করবি না তো কার সাথে করবি। শা লা এতোদিন বসে থেকে কি ঢ্যারা পিটালি, এখন এসে বউয়ের সাথে প্রেম করতে পারো না।”

সারফারাজ বিরক্তি স্বরে জবাব দিল, ”লাইক সিরিয়াসলি ফরহাত! তোর মনে হয় আমি এই বাচ্চার সাথে প্রেম করব। যাকে ক বললে গ বুঝে! এক লাইন বেশি বুঝে বসে থাকে।”

“থাকলে থাকবে। তুই ও পাল্টা চাল দিবি।”

“অসম্ভব! আমি এই মেয়ের কথা আর একবিন্দু ভাবছি না। কালই আমি ঢাকা ফিরছি। এখানে আর একদিনও থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে।”

”আমি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে রাখব?”

“ফাজলামির একটা লিমিট থাকে ফরহাত!”

”আচ্ছা! চুপ আমি। ( বলার পর দু সেকেন্ড চুপ থেকে বলল) ওহ যেটা বলার ছিলো।”

“কি?”

“আঙ্কেল ফোন করেছিলো। শিকদার সাহেব তোমার বাড়ীতে হা/না দিয়েছে। নাও ইউ গেট আউট!”

সারফারাজ তড়িখড়ি করে উঠে দাঁড়াল। আশ্চর্য! কেউ একটা কাজের না। বাবা ফোন করেছে সেই কখন আর ফরহাত এখন এসে তাকে বলছে। ”এতোক্ষণ পর এখন বললি এই কথা!“

“আরে বৎস সামলে। তোমার একটা ভাব আছে না। ডাকবে আর তুমি চলে যাবা এতো তোমায় পেলে তাহলে ঘাড়ে চ/ড়ে বসবে। রিল্যাক্স মুডে বাড়ি ফিরো। দেখো ভাব যেন না চেঞ্জ হয়। তোমার বল তোমার হাতে। আশীর্বাদ করি হে বৎস!” সত্যি সত্যি হাতটা তার মাথায় রেখে দিল ফরহাত। সারফারাজ দাঁত চেপে উঠে দাঁড়াল। শা লার ভীমরতি ধরেছে এই বয়সে। বের হবার পথে চাচী শুধলো, “রাত টা থেকে যাও।”

“না চাচী। বাবা ফোন করেছে।“

“তাহলে রাতের খাবারটা….

“বাবা ফোন করেছে অনেকক্ষণ। আমি আসি!”

বের হয়ে গেল। চাচী আর থামালো না। জানে, কথার নড়চড় হবে না। ফারাজ তার বাবার অতি বাধ্য ছেলে!
.
বাড়িতে ফিরে দেখল মেহমান কঠোর দৃষ্টিতে চোয়াল শক্ত করে বসে আছে সোফার উপরে। বাবার স্টাডি ঘর। বাবা শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। সারফারাজ বাবার সামনে খানিকটা নিশ্চুপ হয়ে গেল। বাবার সামনে তার গলার স্বর উঁচু কি রুক্ষ কখনো হয় না। তবুও তার কঠিন দৃষ্টিপাত শিকদার সাহেবের উপর। আরিফ হাসান ছেলেকে শুধালেন, ”শুনলাম তুমি নিয়াজ কে খুব
মেরে/ছো! এর কারণ কি ফারাজ?”

ইয়াতিম শিকদার তরতর করে উঠলেন। “কি? খুব মা/রছে? বলেন জানো/য়ারের মতো মার/ছে। এই পোলা আমার পোলার মুখ চোখ সব মাইরা ন/ষ্ট কইরা দিছে। পিঠের ছা/ল উঠাইয়া দিছে , বিশ্বাস না করলে চলেন আমার সাথে!”

আরিফ হাসান ছেলের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। সারফারাজ শিকদার সাহেবের চোখে চোখ রেখে বলে উঠল, “আমি সারফারাজ শেহদাত। আপনার ছেলেকে শুধু মারি/নি মে/রে ফেলতে চেয়েছিলাম। আমার বউয়ের দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকালে আমি বসে থাকব এমন শিক্ষা আমার বাবা আমায় দেয়নি।

শিকদার সাহেব চোখমুখ বড় করে কঠিন স্বরে বলল, “মে/রে ফেলতা। দেখলেন আপনে হাসান সাহেব, দেখলেন। আপনার ছেলে আপনার সামনে বলতাছে আমার ছেলেকে মে/রে ফেলতো। তাইলেই বুঝেন এবার।

“ফারাজ! তুমি শুরু থেকে বলো কি হয়েছে?”

সারফারাজ এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার চোখেতে তেজ ফিরেছে। কণ্ঠের স্বর ও এবার খানিকটা রূঢ়। বলে উঠল, “আমার বউয়ের দিকে খারাপ নজ/রে তাকালে আমি তার এমন হালই করব। আমার বউ সে! তোমার বোনের মেয়ে কিংবা তার ভাইয়ের মেয়ে না। আমার বউয়ের দায়িত্ব আমার। ওই রাসকেল, ইডিয়েট টা আমার বউয়ের ঘরে উঁ/কি মারছিলো আর তখন… ঠোঁট চেপে ধরল ফারাজ। রাগে তার ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। বাবার দিকে ফিরে অসহায় ভঙ্গিতে বলল, ”ছাড়ো বাবা! আমার রুচি হয় না এসব বলার।”

আরিফ হাসান ভ্রু কুঁচকে শিকদার সাহেবের দিকে ফিরলেন। শিকদার সাহেব উঁচু গলায় বলল, ”এসব মিথ্যে কথা! অর্নিলা এসব বলছে!”

“মিথ্যে কেন হবে শিকদার সাহেব। আপনার ছেলে কি এমনটা করতে পারে না। এর আগেও তো এমন রুচিহীন কাজ করে নিজেকে জাহির করেছে। এখন মেনে নিতে আপত্তি কোথায়? আর শিকদার সাহেব,‌এখন অর্নিলার অভিভাবক আমরা না। তার স্বামী! তার স্বামী যা বলবে তাই হবে!”

শিকদার সাহেব দাঁত কিড়/মিড় করতে লাগলেন। বাপ ছেলে দুটো একজোট হয়েছে। তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল, “ঠিক বলছেন ভাই,‌ ঠিক বলছেন। কিন্তু মনে রাইখেন,‌ এক মাঘে শীত যায় না!”
আরিফ হাসান নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন শুধু। মৃদু হাসলেন। সেই হাসিতে ছিলো গর্ব, তার ছেলের জন্য তার গর্ব হচ্ছে। নিজের স্ত্রীর দায়িত্ব তার ছেলে কাঁধে নিয়েছে। বিয়ের সিদ্ধান্ত অনেকটা হেলাফেলায় নিলেও, বউয়ের দায়িত্ব হেলাফেলায় যাবে না।

শাহিনুর বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাইচারি করছেন। টেনশনে তার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে। কে জানে ভেতরে কি হচ্ছে? আত্মীয়দের সাথে কথা কাটাকাটি,‌তর্ক তার কোনদিনই পছন্দ না। সবসময় চান শান্তিমতো থাকতে। ছোট থেকে একাই বড় হয়েছেন। কোন ভাই বোন ছিলো না তার। একা বেড়ে উঠার কিশোরীর ইচ্ছে ছিল ভরা জমজমাট একটা বাড়ীতে বিয়ে করবেন। ছোটবেলা যতোটা একা ছিলেন এখন ঠিক ততোই মানুষে তার বাড়ি গম গম করবে। এজন্য কারো সাথে ঝগড়া করে সম্পর্ক ছি/ন্ন করতে বেশ ভয় পান তিনি। সারফারাজ নিয়াজ কে মেরে/ছে। এটা অ/ন্যায় হয়েছে। কিন্তু অবশ্য নিয়াজ ও ভালো কিছু করেনি। সে যা করেছে এটাই তার পাওনা ছিলো। তবুও ভয় আঁকড়ে ধরছে। একটু পর পর আচমকা দরজার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠেন। এই মনে হয় দরজা খুলে ফেলার শব্দ। অর্নিলা এখন ঘুমাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাক্তার এসে মেয়েটার হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। ওতো বেশি কাটেনি। তার ঘরে শ্রেয়মীকে রেখে এসেছেন। অর্নিলা তার ছেলের বউ হবার আগে তার মেয়ে। ছোট এই অর্নিলা কে তিনিই মানুষ করেছেন। ননদ দুদিন পর পর ঝগড়া করে এই কোলের বাচ্চা কে নিয়ে তার বাড়িতে উঠতো। তখন মেয়েটার পুরো দায়িত্ব থাকত শুধুই তার। খুব শখ ছিলো, অর্নিলার মতো একটা মেয়ে তার নিজের ও হবে। কিন্তু তা কখনোই সম্ভব হয়নি। যেই অপ্রাপ্তি তার মনকে ভার করে তুলছিলো, ছোট শিশু অর্নিলার আগমন তার প্রাণকে ততোটাই জীবিত করে তুলল। মনে হলো এই মেয়ে তো তারই।

ননদের মৃ/ত্যু তাকে ভয়াবহ ভাবে আঁকড়ে ধরেছিলো। কিন্তু অর্নিলা ছিল তার ননদের মেয়ে। সেই সম্পর্কের জোর এতোটা তিনি দিতে পারে নি। পারলে মেয়েকে নিজের কাছেই আগলে রাখতেন। অর্নিলার বাবা কতোবার চাইল আরেকটি বিয়ে করতে, তখন তারা গিয়ে বার বার বাঁধা দিয়েছিল। বলেছিলো, এই মেয়েকে তারাই মানুষ করবে। এজন্য কোন বিয়ে শাদি করে মা আনার দরকার নেই। সত্যি তারা জানত, নতুন মা আনা তো একটা অজুহাত মাত্র, আসল যুক্তিটা অন্য কোথায়। চরিত্রের দিক দিয়ে ক/লঙ্ক থাকলেও মেয়ের জন্য এতোটুকু হলেও ভালোবাসা ছিল শামসুর শিকদারের মনে। নাহলে তাদের মতো তুচ্ছ মানুষের কথা শুনে দ্বিতীয় বিয়ে থেকে পিছিয়ে আসতে পারতেন না। কিন্তু তবুও তার অ/বৈধ সম্পর্কের অস্তিত্ব কম ছিলো না। এজন্য ছোট মেয়েটা কখনো তাদের বাড়িতে নয়তো কখনো গিয়ে থাকত তার ছোট ফুফুর বাড়িতে। চাচার বাড়ীতে চাচি না থাকায় সেখানে থাকা আর নিজের বাড়িতে থাকা সমান কথা। তখন অর্নিলার মায়ের প্রয়োজন ছিল। শাহিনুর বেগম আর ছোট ফুফু দুজন মা মিলে একজন মায়ের অভাব পূরণ করেছিলো!

দরজায় ধপ করে শব্দ হলো। শাহিনুর বেগম হকচকিয়ে তাকাল। ইয়াতিম শিকদার হম্ভিতম্ভি করে বের হয়ে চলে গেলেন। এই বাড়িতে আর একবিন্দু নয়। শাহিনুর বেগম কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। পরক্ষণেই লক্ষ্য করলেন আরিফ হাসান আর সারফারাজ বের হয়ে আসছে। ছুটে গেলেন সেদিকে। আরিফ হাসান মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “অর্নিলা খেয়েছে?”

”না, ঘুমাচ্ছে। অনেক জোর করেও কিছু খাওয়াতে পারি নি।”

“অসুবিধে নেই, মাঝরাতে ওর ঘুম ভেঙে যাবে তখন আমি খাইয়ে দিবো।”

শাহিনুর বেগম বিচলিত হয়ে সারফারাজ কে শুধালো, “বাবা, তুমি খাবে না?”

“খাবো মা। একটু ফ্রেস হয়ে আসি!”

মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। তড়িখড়ি করে চলে গেল রান্নাঘরে। খাবার গুলো গরম করা দরকার। আরাফাত কেও ডাকতে হবে। সেও না খেয়ে বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে। শ্রেয়মী মেয়েটাও বোধহয় না খেয়েই এসেছে। রাত অনেক হয়েছে!

শ্রেয়মী বিছানার পাশে বসে ফোন টিপছে। বিছানায় শুয়ে আছে অর্নিলা। সারফারাজ ঘরে ঢুকতেই বিছানা ছেড়ে নামল শ্রেয়মী!

“ভাইয়া তুমি?”

“মা তোকে ডাকছে, যা!“ তার মিথ্যে কথায় অবিলম্বে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল শ্রেয়মী। সারফারাজ এগিয়ে এলো। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে নিজের অর্ধাঙ্গিনী কে দেখতে লাগল। সুশ্রী মুখ, মায়া কাড়া চেহারা। গলুমলু গাল দুটো আলুর মতো। সে হাসলে তার চোখ দেখা যায় না, শুধু গাল দেখা যায়! আচমকা হেসে উঠল ফারাজ। আবারো বিষণ্ণ হয়ে গেল তার মন। অনির প্রতি তার আজকের আচর/ণ তাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না সে। বোধহয় কখনোই পারবে না। পারবে না এই মেয়েটার স্বামী হয়ে উঠতে। স্বামী হওয়া বিরাট বড় কাজ, সারাজীবনের জন্য কোন মেয়ের দায়িত্ব নেওয়াই শুধু নয়, তাকে আগলে রাখাও। তার হাতটা শক্ত করে ধরে সামনের স্বপ্ন গুলো একসাথে দেখা। কিন্তু কই? তারা তো এমন কিছু ভাবে না। এভাবে কি সংসার চলে? তাদের সংসারে তো ভালোবাসাই নেই। ভালোবাসা না থাকলে সংসার চলবে কি করে? কি ভাবে হয়ে উঠবে সে স্বামী! অর্নিলা ডান হাতের তালু সাদা রঙের ব্যান্ডেজ দিয়ে বাধানো। অপ/রাধী হয়ে উঠেছিল ফারাজ। তার হৃদয় কে চূর্ণ/বিচূর্ণ করে দিচ্ছিল তার আত্না। আজকের তার আচরণ তাকে লজ্জায় মাথা নত করতে বাধ্য করছিলো। নিজের এমন আত্ম/ঘাতি কোনভাবেই মেনে নিতে পাচ্ছিল না সে। নিজেই নিজের কাছে বড্ড অপ/রাধী হয়ে উঠল সে। হঠাৎ করেই উত্তেজিত হয়ে উঠল। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল দ্রুত। আজকের রাতটা যেন এখানে থাকলে তার দম/বন্ধ হয়ে যায়। এখানে কোনভাবেই থাকতে পারবে না সে। কোনভাবেই পারবে না অনির মুখোমুখি হতে। সে চলে যাবে, থাকবে না এখানে। আর কখনো আসবে না। কখনো না! ঝোঁকের বশে দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিল সারফারাজ। রাতেই চলে যাবে সে। এখুনি মানে এখুনি! ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এলো ঘর ছেড়ে।
.

দীর্ঘ দু বছর পর বাড়ী ফিরছে ফারাজ। তার চেহারায় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। চেহারায় খানিকটা গম্ভীরতা ছোঁয়া। থিতুনির দাঁড়ির ঘনত্ব বেড়েছে অনেকখানি। এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তার সে। এখনো পুরোপুরি ভাবে ডাক্তার বলা কি ঠিক হবে? ইর্ন্টানশিপ শুরু হতে এখনো এক মাস বাকি। এই একটি মাসের জন্য এখন বাড়ীতে যাওয়া। এই দু বছরে অনেক কিছু বদলেছে। সে বদলেছে, সময় বদলেছে। সবকিছু্ই বদলে গেছে। হয়তো অনিও বদলে গেছে। হ্যাঁ, একদিন আরাফাত বলল অনি নাকি এখন অনেকটা বদলে গেছে। এখন আর আগের মতো চিৎকার চেঁচামেচি করে না সে, লাফালাফি ও কমেছে অনেকটা। ছিঁচকাদুনে মেয়েটা এখন আর কথায় কথায় কান্না করে না। আগের মতো মায়ের কাছে খাওয়ার বায়নাও করে না। হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বাড়ির সবাই একটু হতভম্ব হলো বটে। তবে ধরে নিচ্ছে এটা তার বয়সের প্রভাব। মেয়েটার বুদ্ধি বাড়ছে। সবকিছু বুঝতে শিখেছে। কিন্তু কতোটা?

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো, আজ তো রেজাল্ট দেবার কথা। ট্রেন চলছে খুব দ্রুত। কিন্তু মনে হচ্ছে, ট্রেনের গতির চেয়েও তার সময় যেন দ্রুত গেল। এই তো সেদিন রাতে, হঠাৎ ব্যাগপত্র নিয়ে হাজির হলো সে। তার সিন্ধান্তে সে অটুট। এখনি চলে যাবে। থাকবে না এই বাড়িতে। তার অনেক পড়াশোনা বাকি। এখানে এসে শুধুই সময় নষ্ট হলো আর কিছু না। কারো কথা শুনল না। না খেয়েই বেরিয়ে গেলো রাতের মধ্যে। সেদিন কেন জানি, বাবাও তাকে থামাল না। হয়তো সে টের পেয়েছিল তার মনের কথা।

এই যে বের হলো, আর কখনো ফিরা হলো না। এই অজুহাত, সেই অজুহাত দিয়ে কাটিয়ে দিল। অনেক পড়াশোনা বাকি তার, সামনেই ফাইনাল পরিক্ষা। সময় নষ্ট করার মতো সময়ও নেই তার হাতে। আর কুরবানী ঈদে আসা হলো না। গরুর হাটে গিয়ে গরু কিনে বাসায় ফিরা এখন স্মৃতি মাত্র। দিন এতোগুলো সব কেটে গেল চার দেয়ালের ঘরের মধ্যে বন্দি থেকে।

দীর্ঘ নিঃশ্বাসে সবকিছু ভুলে গেল। ভাবছে সামনের টুকু নিয়ে। কি হবে এখন? ট্রেন থামল মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে। ব্যাগ পত্র নিয়ে নামল সারফারাজ। আগের থেকেও এখন যেন বেশি খিটখিটে লাগছে তাকে। একটা সিএনজি ভাড়া করে উঠে পড়ল। তার চিরচেনা গ্রাম আর বদলে গেছে। রাস্তাঘাট এখন আগের চেয়েও ভালো। মানুষ ও বদলে গেছে অনেক। শুধু রয়ে গেছে পুরোনো বাড়িটা আগের মতো। তার বাড়ি “নিকুঞ্জ নিবাস!” ভাড়া মিটিয়ে নামল সারফারাজ। ব্যাগ হাতে ঢুকল বাড়ির মধ্যে। মনের মধ্যে বিশাল এক অস্থিরতা। মাথা ভনভন করছে। মন বলছে উল্টো পায়ে চলে যেত। অথচ তবুও দরজায় কড়া নাড়ল সে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। দরজা খোলার শব্দে আচমকা চমকে উঠল সে। হকচকিয়ে তাকাল সামনের দিকে। এক চিরচেনা মুখ ভেসে উঠল সামনে। সময়ের স্রোতে গা ভেসাল সে। সামনের রমনী অবাক চোখে তাকে দেখছে। চেনার চেষ্টা করছে নিশ্চয়ই। সারফারাজ মৃদু হাসি হাসল। সামনের রমনী অবাক কণ্ঠে বলে উঠল, ”ফারাজ ভাই!”

#চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here