নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৪৩

0
345

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৪৩

অতিবাহিত হয়েছে কয়েকমাস। চোখের পলকে পেরিয়ে এসেছে সময়। সামনে আরু, শেফালী ও তুরের টেস্ট পরীক্ষা। আজ স্কুল থেকে রুটিন দিয়েছে। তন্বীসহ চার বান্ধুবী পরীক্ষা নিয়ে কথা বলতে বলতে ফিরছিল বাড়ির পথে। হঠাৎ তাদের সামনে একটা সাইকেল থামে। প্রয়াস মুচকি হেসে তুরের দিকে তাকায়‌। কাশি দিয়ে বলে, “আমার তুরের সাথে কথা ছিল। আপনারা একটু ওকে আমার সাথে ছাড়বেন?”
তিন বান্ধবী একত্রে সালাম দিল, “আসসালামু আলাইকুম ভাই।”
সালাম না দিয়ে প্রেমিকাকে চাওয়াতে খানিক লজ্জা পেল প্রয়াস। মাথানত করে বলে, “ওয়া আলাইকুম সালাম।” পরপর আরুকে বলে, “আরু, অপূর্ব ভাইয়ের সাথে কেমন চলছে তোমার দিনকাল?”

“নাম ধরে নয়, ভাবী বলুন। সম্পর্কে অপূর্ব ভাই আপনার বউ, তার স্ত্রী আপনার বড়ো হবে।”

“জি।”

“শেফালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুরকে কবে বিয়ে করবেন? তৃতীয় ব্যক্তি যাতে আপনাদের সম্পর্কে না ঢুকে। চল আমরা আগে আগে যাই।” শেফালী ও তন্বীর হাত ধরে সামনে সামনে পথ ধরে আরু। মাঝপথে তন্বীকে বিদায় দিয়ে কিছুটা পথ এগিয়ে যেতেই দেখা মিলল কালাচাঁনের। আড়চোখে শেফালীর দিকে তাকিয়ে বইখাতা গুলো শক্ত করে ধরে আগে আগে পেরিয়ে যায় পথ‌। বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেখতে পেল অন্য দরজা দিয়ে অপূর্ব ভেতরে প্রবেশ করছে। হাতে বাজারের থলে থাকার সত্ত্বেও, সেই থলে থেকে চুইসে চুইসে রক্ত ঝরে পড়ছে। অপূর্ব থলেটা অনিতার দিকে দিয়ে বলে, “আমার এক কলিগের পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে। দুটো খাসি দিয়ে আকিকা দিয়েছে। পরিচিত সবার জন্য খাসির মাংস এনেছে। ভালোবেসে নিয়ে এসেছে, তাই নিয়ে এলাম। রান্না করে আরুর জন্য দুই টুকরো রেখে সবাইকে দিও‌।”

“আরুর জন্য আমি কেন আলাদা করে রাখব? ও খাসি মাংস খেতে ভালোভাবে। যতটা খেতে পারে খাবে, প্রয়োজনে আমি রাখাল ভাইকে আবার বাজারে পাঠিয়ে দিবো কাল সকালে।” বলে অপূর্বর থেকে মাংস নিয়ে হাঁটা দিল। আরু বইখাতার সোফার উপরে রেখে ফিরে এলো। অনিতার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বলে, “আমি এক্ষুনি ধুয়ে বসিয়ে দেই। টাটকা খেতে বেশি ভালো লাগে।”

“তোর সামনে পরীক্ষা, তোকে রান্না করতে হবে না।”

“আমি তো এই বাড়ির বউ। ভাবীও এই বাড়ির বউ। আমার উচিত তার থেকে বেশি কাজ করা। কারণ আমি বড়ো বউ।” তারপরে মাংসগুলো নিজের মনের মতো টুকরো করে নিল। ভালোভাবে ধুয়ে বসিয়ে দিল উনুনে। মশলা দিয়ে মাংসগুলো উনুনে রেখে বই নিয়ে বসল ইশরা। উনুনে লাকড়ি দিতে দিতে বই পড়ছে। অন্যদিকে অপূর্ব গোসল সেরে আরুর কাছে এলো। আরুকে এভাবে রান্নার পাশাপাশি পড়তে দেখে প্রসন্ন হলো। আরুর কাজ সহজ করতে অপূর্ব নিজেও বসল উনুনের কাছে‌। আগুনে কাঠ পুড়ে ছাই হলে দুই একটা কাঠ ভেতরে দিচ্ছে। অপূর্ব বলে, “আজ এত আগ্রহ নিয়ে পড়ছিস। কবে পরীক্ষা, কিছু জানিয়েছে?”
“রুটিন দিয়েছে।” বলে আরু তার বইয়ের ভেতরে থেকে অপূর্বকে রুটিন বের করে দিল। রুটিন পর্যবেক্ষণ করে অপূর্ব বলে, “এখনো এক সপ্তাহ।”

সময়টা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে। মৃদু শীতের আবহাওয়া। সবাই এসে উনুনের কাছে বসে। আরু লক্ষ্য করে শেফালী নেই। উঁকিঝুঁকি দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে, “মা, শেফালী ঘরে এক একা কী করছে?”

মণি আঁতকে বলে, “ওকে তো দেখলাম না। আসলে আমার সাথে আগে দেখা করে।”

“তাই তো! আমিও দেখিনি।” অনিতা তাল মেলায়। অনিতার হতে সবাই সহমত হয় কেউ দেখেনি। সবাই তো সন্দেহজনক দৃষ্টিতে আরু ও তুরের দিকে তাকায়। আরু নতজানু হয়ে আমতা-আমতা করে বলে, “কালাচাঁন এসেছিস সেখানে। শেফালীর সাথে কথা বলবে, তাই আমি ওকে রেখে এগিয়ে এসেছি। পেছনে তুর ছিল।”

“আমি ফেরার পথে শেফুকে দেখিনি। আমি জানি, তোরা দুজনে একসাথে‌।”

অপূর্ব বিরক্ত হয়ে বলে, “আজব ব্যাপার! তোরা তিনজনে সামনে পেছনে হেঁটেছিস কেন? তোরা না সবসময় হাত ধরে হাঁটিস?”

কেউ কোনো জবাব দিতে পারল না। অপূর্ব বিরক্ত নিয়ে মোতাহার আহসানকে কল দিল। কালাচাঁনের ফোন নাম্বার অপূর্বর কাছে নেই। রিসিভ হতেই অপূর্ব বিরাগী হয়ে বলে, “বাবা, শেফালী বাড়ি ফেরেনি। কালাচাঁন ওদের স্কুলের সামনে গিয়েছিল।”

“শেফালী কালাচাঁনদের বাড়িতে গেছে। বাসন ধুতে গিয়ে ঘাটলা ভেঙে বেয়ান দিঘিতে পড়ে গেছে। হাত ভেঙে গেছে বোধহয়। তুমি ডাক্তার, তোমাকে আর বোঝাতে হবেনা আশা করি।” ওপাশ থেকে মোতাহার আহসান।

“কিন্তু বাবা, ওদের এখনো বিয়ে হয়নি।”

“বেয়ানের‌ সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছে, কাজি নিয়ে যেতে। তোমরা সবাই তৈরি হয়ে নাও। তারপরে কালাচাঁনদের বাড়ির দিকে এগোও। আমি তিয়াসকে ফোন করে কাজি নিয়ে আসতে বলেছি।” তারপরে ফোন রেখে দিল মোতাহার আহসান। পরক্ষণে মহিলাদের আদেশ দিল অপূর্ব, “কালাচাঁনের মায়ের হাত ভেঙেছে, তাই কালাচাঁন শেফালীকে নিয়ে গেছে ওদের বাড়িতে। বাবা সবাইকে তৈরি হয়ে ওদিকে যেতে বলেছে। কাজি ডেকে আজ শেফালীকে কালাচাঁনের হাতে তুলে দিবে। এই অবস্থায় সংসার সামলাতে শেফালীকে সেখানে প্রয়োজন।”

অপূর্বর কথা শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে গেল সবাই। তৈরি হতে চলে গেল। অপূর্ব ফ্রেশ হয়ে বসে ছিল বিদায় আর তৈরি হতে গেল না। আরুর পরনে এখনো স্কুলের পোশাক। একদিকে উনুন জ্বালানো অন্যদিকে শেফালীর কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কী করবে ভাবছে আরু! অপূর্ব বাটি থেকে পানি ফেলে উনুনের কাছে বসে কষানো মাংস নেওয়া চেষ্টা করছে। আরু বাটিটা নিয়ে কয়েক টুকরো মাংস দিয়ে বলে, “আমি কি যাবো না-কি থাকব?”

“বাবা সবাইকে যেতে বলেছে। বাড়ি পাহারা দেওয়ার মানুষ আছে। তোর যদি যেতে ইচ্ছে না করে তাহলে থাকতে পারিস।” বলে অপূর্ব মাংস টেনে ছেঁড়া চেষ্টা করে। ভালোভাবে সিদ্ধ না হওয়াতে কোষ আলাদা হচ্ছে না। অপূর্ব থমথমে গলায় বলে, “এটা খাসির মাংস না-কি গন্ডারের? ওরা ভুলে খাসির বদলে গন্ডার দিয়ে ফেলে না-তো? চিবুতেই পারছি না।”

“সিদ্ধ হতে দিয়েছেন? জিভ থেকে জল পড়ছে।” ভেংচি দিয়ে আরু বলে। তারপরে ছুটে গেল ভেতরে। টাঙ্গাইলের শাড়ি পরে মাথায় কাপড় টেনে ঘর থেকে নামে আরু। তুর ব্যতীত সবার পরনে শাড়ি। সবার শেষে ঘরে থেকে নামে অনিতা। দরজায় বড়ো তালা ঝুলিয়ে একটা খিল্লি পান এনে চম্পার হাতে দেয়। চম্পা আঁচলে গিট দিয়ে নেয়। আরু অতি সাবধানে চম্পার পাশে হাঁটতে হাঁটতে আঁচল থেকে পান খুলে মুখে দেয়।
হেঁটে হেঁটে তাঁরা পৌঁছে যায় কালাচাঁনদের বাড়িতে। বাবা ও পাঁচ ছেলে চেয়ারে বসে খোঁজ নিচ্ছে সুন্দরীর। সুন্দরীর হাত প্রাকৃতিক জরিবুটি দিয়ে বাঁধা। অনেকটা ফুলে উঠেছে। নিঃসন্দেহে ভেঙে গেছে। মণি বেয়ানের পাশে বসে বলে, “বেয়ান হাত ভাঙল কীভাবে?”

“ঘাটলা থেকে পড়ে। এইদিকে তেমন বাড়ি ঘর নেই। সন্ধ্যা হলে আমি ঘরে ঢুকি আর বের হই না। শরীর খারাপ থাকায় দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে দেখি মাগরিবের আজান দিচ্ছে। আছরের নামাজ শেষ। অন্যদিকে দূরের বাড়ি থেকে পানি আনতে হবে, পুকুর খেতে পানি এনে বালতি ভরতে হবে, মাগরিবের নামাজ পড়তে হবে। তাড়াতাড়ি ওজু করে কলস নিয়ে ঘরে যাওয়ার সময় পা পিছলে ঘাটলা নিয়ে পড়ে যাই। রাতে মনে করেছি, সামান্য ব্যথা। ঘুম থেকে উঠে দেখি ফুলে উঠেছে। কালাচাঁন আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল বিকালে। কিছু টেস্ট করেছে। আগামীকাল বলবে, হাত ভেঙেছে কি-না। রিপোর্ট ভাঙা আসলে গ্ৰামের বাইরে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।”

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পান চিবাচ্ছে আর কথা শুনছে আরু। মুখ ফিরিয়ে পানের পিক ফেলতে গিয়ে অপূর্বর শার্টে ফেলল। অন্ধকারে অপূর্ব ঠাওর করতে না পেরে মুখ খোলে, “কী ফেলেছিস? যেখানে-সেখানে এগুলো কী ফেলছিস?”

আরুর পরবর্তী দৃশ্য দেখার আগেই ভয়ে পেছনের দিকে গেল। সেখানে শেফালী রান্না করছে আর সুমি তাকে সাহায্য করছে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚
বছর শেষের দিকে। এই সময়ে এত ব্যস্ত। পারিবারিক সমস্যা, সব মিলিয়ে আমার নাজেহাল অবস্থা। গল্পটা বেশি বড় হবে না..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here