#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৪৫
“আমিও বুঝতে পারছি না। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করেনা। সকালের খাবার দুপুরে, দুপুরের খাবার রাতে খায় যদি আমি মনে করে দেই। খাবারের কথা বললে কেমন করে তাকায়। খাবার নিজের হাতে সাজিয়ে হাতে দিলাম, কিছুক্ষণ পর দেখি দিঘিতে ফেলে দিচ্ছে। কাজের কথা বললে, আলসেমি করে।” মল্লিকা সায় দিল জাহানারার সাথে। আরু যেন চণ্ডাবতী হয়ে উঠল। তেড়ে বলে, “কী বলতে চাইছ, ‘আমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরি। কোনো কাজ করি না।’ এখন তো আমাকে ভালো লাগবেই না। সুমি ভাবীই ভালো।”
“তুই ভুল ভাবছিস আরু।” অনিতা আরুকে সামলানোর চেষ্টা করে।
“আমার এইটুকু বোঝার বয়স হয়েছে।” আরু উত্তেজিত হয়ে বলে। অপূর্ব পাশেই দাঁড়ানো ছিল। মায়ের প্রতি স্ত্রীর এমন কথা শুনে হতভগ্ন হয়ে গেল। সিঁড়ি থেকে নিচে নামতে নামতে ধমকায় অপূর্ব, “এক চড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো আরু। মায়ের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোকে? শাসন করছি না বলে বে/য়া/দ/ব হয়ে যাচ্ছিস দিনদিন।”
প্রিয়তমর মুখে এমন ধমক শুনে অশ্রু এসে ভিড় করল আরুর চোখে। অপূর্বও আরুকে বুঝতে পারেনা? আরুকে বজ্রকণ্ঠে ধমকেছিল, তাই ঘরের সবাই বাইরে এলো। মোতাহার আহসান সংশয় নিয়ে বলেন, “কী হয়েছে এখানে? এত চিৎকার চ্যাঁচামেচি কেন?”
“আপনার ভাগনিকে জিজ্ঞেস করুন। সাত ভাইয়ের এক বোন, এক ভাগনি। কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, এখনো জানে না।” অপূর্ব অন্যদিকে ফিরে বলে। আরুর সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে শুরু করল। চোখ মুছে শুরু করল তার অভিযোগ, “বোন, ভাগনি। দাম দিয়েছেন তাদের? ভাইঝির বিয়ে, অথচ বোন দুলাভাই হিসেবে আমার মা-বাবা জানে না। বংশের সবাই উপস্থিত কিন্তু আমার মা-বাবা নেই। তিস্তা আপু দূর থেকে চলে এসেছে, অথচ আমার মা কাছে থেকেও নেই। তারপরেও আপনারা কীভাবে আশা করেন, আপনাদের সাথে আমি ভালো ব্যবহার করব?”
উপস্থিত সবাই যেন বিস্মিত, হতবাক, বাকরুদ্ধ। অনিতা রান্না রেখে আরুর কাঁধে হাত রেখে বলেন, “তুই তো জানিস, আমরা কতটা ব্যস্ত আছি। তোর কি উচিত ছিলনা, পারুলকে খবর দেওয়ার? অন্তত একবার আমাদের জানাতি।”
“আপনার ছেলে কী করে? তিয়াস ভাই তার বোনকে খবর দিয়ে নিয়ে এসেছে। ওনিও আমার মাকে নিয়ে আসত। সে আমাকে মা/রা/র জন্য ব্যস্ত থাকে। কালরাতে ভুলে পানের পিক ফেলেছিলাম, ওনার শার্টে। এতে ওনি আমাকে হুমকি দিয়েছে, পানের দাগ না উঠলে আমাকে মে/রে হাসপাতালে ভর্তি করবে। তাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওনার শার্ট ধুয়ে এই বাড়িতে এসেছি।
আসলে ওনার কোনো দোষ নেই, বিদেশে ছিল তো। বিদেশিনী দেখে চোখ জুড়িয়েছে, এখন আমার মতো গ্ৰামের মেয়েকে ওনার ভালো লাগছে না।” বলতে বলতে আরু কেঁদে ফেলল। মধ্যবয়স্করা হতভগ্ন হলেও যুবক-যুবতিরা আশ্চর্যান্বিত। অপূর্ব অন্য ইঙ্গিতে বলছিল, আরু তার অন্য মানে বের করছে। এই লজ্জাজনক কথার জন্য অপূর্বর পক্ষ নিয়ে কেউ কথা বলল না। মোতাহার আহসান থমথমে গলায় বললেন, “এজন্য তুই আজানের পর দিঘিতে গিয়েছিলিস?”
“হুঁ।”
“অপূর্ব, আহসান বাড়ির ছেলেরা কখনো কাপুরুষের মতো স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে না। তোমার কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করিনি।” বলেই মোতাহার আহসান ঘরে চলে গেলেন ভাইদের নিয়ে। অপরাধ না করেও বাবার চোখে নত হলো অপূর্ব। রাগে হাত টিনের সাথে আঘাত করল অপূর্ব। জং ধরা টিন ভেঙে হাত ভেতরে চলে গেল। কা/ট/ল অনেকটা। প্রাণনাথের এমন অবস্থা দেখে আরু এগিয়ে এলো। অপূর্ব কা/টা হাতের দিতে তাকিয়ে বলে, “আরু, আমার মাথা গরম আছে। সামনে এসে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।”
“শুনুন।”
“আমি এই বাড়ি থেকে যেতে বলেছি তোকে।”
“আপনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে।”
“আরু… এখান থেকে যা।” অপূর্বর ধমকে আরু খানিক কেঁপে উঠল। হুট করে আরু ফের রেগে গেল। রাগান্বিত হয়ে বলে, “আপনি আমাকে বাড়িতে চলে যেতে বলছেন? ঠিক আছে।”
আরু আরু পেছনে তাকাল না। ছুটে গেল বাড়ির দিকে। তুর, সুমি, তিস্তা থামানোর প্রচেষ্টা করল। কিন্তু আরু আজকাল কারোর কথায় গুরুত্ব দেয় না। চম্পা তখন উনুনের কাছে বসে কৌতূহল নিয়ে বলেন, “আমার কেন জানি মনে হয়, আরু পোয়াতি। মোতাহার যখন আমার গর্ভে এসেছিল, তখন আমি হুটহাট রেগে যেতাম। এখন মোতাহারের রাগ সবার উর্ধ্বে।”
“আম্মা। আরু কখনো বলেনি ওর মাথা ঘুরে, বমি পায়, অস্থির লাগে। আমার মনে হয় পারুল বুবুকে খবর দেইনি বলেই রেগে ছিল।” মল্লিক বাক্য করে।
“কে বলেছে আরু বমি করেনি? কালকে রাতে রাস্তায় করেছিল, আবার স্কুলে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিল। ওর শরীর নাকি ভালো লাগছে না।” তুরের কথায় ছোটোখাটো ভূমিকম্প হলো এখানে। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে। মল্লিকা উৎফুল্লিত হয়ে বলেন, “আমাদের অপু সবার পরে বিয়ে করে ছক্কা হাঁকাবে, আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি। ভাবী, তুমি দাদি হচ্ছো, মিষ্টি দাও।”
“আমি কি একা দাদি হচ্ছি, তোমরা হচ্ছো না? মিষ্টি খাওয়াবে আম্মা, সে প্রথমবার পুতির মুখ দেখতে চলেছে।” অনিতা বললেন। জবাবে একগাল হেসে চম্পা বলেন, “তা আর বলতে? কিন্তু অপূর্বর মনোচিকিৎসার ওপরে আমার সন্দেহ হচ্ছে। আরু যে পোয়াতি, এটা কেন স্বামী হয়ে ও বুঝল না?”
অপূর্ব এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তাকিয়ে আছে আরুর গমনপথের দিকে। আরুকে দেখা যাচ্ছেনা, অথচ মস্তিষ্ক আরুর মুখ থেকে শুনতে চাইছে সত্যটা। চম্পার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অপূর্ব হাঁটা দিল বাড়ির দিকে। আহসান বাড়ি থেকে কালাচাঁনদের বাড়ি পাঁচ মিনিটের রাস্তা। আজকে সেখানে পাঁচ মিনিট পাঁচ যুগের মতো লাগল অপূর্বর কাছে। কাঠের দরজায় মস্ত এক তালা দেখে সন্দিহান হলো। কোথায় গেল আরু? হাতের ইশারায় কাছে ডাকে এক প্রহরীকে। নিকটে আসতেই বলে, “আরুকে দেখেছেন ভাই?”
“ভাবী তো আপনাদের সাথেই বের হয়েছে আর ফেরেনি।”
“চাবিটা দিন তবে।”
প্রহরী চাবি এগিয়ে দিতেই অপূর্ব তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। আরু কোথায় গেছে, অপূর্ব অনুমান করেছে। সিঁড়ি পেরিয়ে সোজা দোতলা ঘরে গেল। মাথায় হাত রেখে বিছানায় বসতেই ময়নাপাখি ডেকে উঠল, “আরুপাখি, আরুপাখি, আরুপাখি।”
ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে কালাচাঁনদের বাড়িতে গিয়েছিল পরিবার। তখন ঘুমন্ত ছিল পাখিরা। আরুও খাবার দেয়নি। অপূর্ব টিনের কৌটা থেকে খাবার বের করে খাঁচার ভেতরে দিল। পুনরায় কৌটা টেবিলে রাখতে নিলেই হাতের ধাক্কায় কাঠের ফুলদানিটা মাটিতে পড়ল ঠক করল। বিরক্ত নিয়ে ঝুঁকে ফুলদানিটা তুলতে গেলে অবাধ্য দৃষ্টি আটকালো খাটের নিচে। অপ্রত্যাশিত ও পরিচিত প্যাকট দেখে অপূর্ব খাটের তলা থেকে বের করে আনল। আগের মতো দেখে রাগল ভীষণ। মেয়েটা অবাধ্য হয়েছে, কিশোরী জীবন নিয়ে খেলছে। এই বয়সে গর্ভধারণ মানে জানে ও?
অপূর্ব ছুটল মৃধা বাড়ির দিকে।
_
দিঘির পাড়ে বসে আছে মাছওয়ালা। তার পাত্র থেকে মাছ গুনে গুনে অয়নের হাতে দিচ্ছে। অয়ন তা গুনে দিঘিতে ফেলছে। বেশ কিছুদিন আগে দিঘির পানি পালটে আবার নতুন পানিতে ভরতি করেছে। মাছের পোনা ফেলছে আজ। পাঁচশো পোনা মাছ ফেলার পর পারুল আঁচলে হাত মুছে অয়নকে আদেশ দেয়, “বালিশের ভেতরে আমার ছোটো ব্যাগ আছে। ওটা নিয়ে আয়।”
অয়ন ছুটে ঘরে গিয়ে বালিশের তলা থেকে ব্যাগ বের করে ফের রওনা হলো দিঘির দিকে। আচমকা ডানে নজর যেতেই মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল আরুকে। অয়ন ছুটে গিয়ে আরুকে ঠ্যালা দিয়ে বলে, “বুবু, এই বুবু ওঠ। মা দেখো, বুবু এখানে পড়ে আছে।”
অয়নের চিৎকারে ছুটে এলো পারুল। মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে চমকে গেছে।
চলবে.. ইন শা আল্লাহ
গ্ৰামে গিয়ে ফোন পানিতে ফেলেছিলাম ভুলে। তখন সমস্যা না হলেও এখন.. 😶
নি/র্বা/চনে/র পর ফোন কিনব।
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/