নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৪৯

0
349

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৪৯

অপূর্ব সবাইকে সামলাতে নাজেহাল হয়ে উঠল। দশ জনের ভেতরে সে বড়ো। দরজার ছিটকিনি তুলে বিছানার দিকে এগুতেই লক্ষ করল সুন্দরী নেই, তবে তুর আছে। অপূর্বর হাত ছেড়ে আরু বিছানায় উঠে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। অপূর্ব কিঞ্চিৎ সন্দেহ নিয়ে বলেন, “শেফালী তোর শাশুড়ি কোথায়?”

“জীবন বাঁচানো ফরজ। তাই নূপুরের আওয়াজ কানে আসতেই চিৎকার করে কালাচাঁনকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছি। বের হয়ে দেখি সবাই বাইরে।” শেফালীকে করা অপূর্বর প্রশ্নের জবাব দেয় তুর। কারণ সন্ধ্যা রাতে সুন্দরীর সাথে সে ছিল।

“কতবার ঠ্যালা দিলাম। উঠল না। নূপুরের শব্দ শুনে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, জানি না।”

তিস্তা পালটা প্রশ্ন করে, “শ্বাস পড়ছিল কি-না পরীক্ষা করেছিস? তাঁর কিছু হয়ে গেলে কালাচাঁন কিন্তু আমাদের ধরবে।”

কালাচাঁনের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। গ্ৰামে থাকতে রাতবিরেতে রাস্তা দিয়ে বাড়িতে যেত। সুন্দরী থাকত একা বাড়িতে। মনে কিঞ্চিৎ ভয়ও নেই। শেফালীর জন্য বাধ্য হয়ে এখানে এসেছে। অপূর্ব বিরক্ত হয়ে বলে, “থামবি তোরা? উনি রাতে বোধ হয় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছেন তাই নূপুরের শব্দ শুনতে পায়নি।” সবাই নির্বাক হতেই অপূর্বর ফের বলে, “হারিকেন কোথায় তোদের? মায়ের কাছে শুনেছি আগুন থাকলে তাঁরা আশেপাশে আসে না।”

“ঘরে। সময় পাইনি নিয়ে আসার।”

“অপূর্ব ভাই, আপনি একবার ইলিয়াস চাচাকে ফোন করুন। দেখুন কী বলে?” তিয়াসের কথায় অপূর্ব কল করল। তবে লাভ হলো না। কারণ ঘন কুয়াশায় নেটওয়ার্ক সমস্যা। বিছানায় উঠে সবাই গুটিয়ে বসে থাকল।
_
কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের রশ্মি পতিত হতেই ব্যাগপত্র নিয়ে নিচে নামল অপূর্ব। আরুর হাত ধরে অপেক্ষা করতে থাকল বাকিরা আসার। ঘুমের ওভার ডোজের কারণে গতরাতে সুন্দরীর ঘুম না ভাঙলে এবার ভাঙল। সবাই এসে ভিড় করল বড়ো বৈঠকখানায়। প্রয়াস পীড়া দিয়ে বলে, “দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন? তাড়াতাড়ি চলুন।”

“চাচা আসুক। আমাদের যাওয়ার কথা তাকে জানানো উচিত। তিনি এসে আমাদের খোঁজ করবেন।” অপূর্বর কথায় সম্মতি দিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে ইলিয়াস আলীর আসার। কিছুক্ষণ পর ইলিয়াস আলী টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে মির্জা বাড়িতে ঢুকল। সবাই তৈরি দেখে আগ বাড়িয়ে বলে, “আপনারা এত তাড়াতাড়ি উঠলেন কেন? শীতের ভেতরে একটু দেরি করে উঠতেন।”

“এই বাড়িতে যে ভূত আছে। আগে কেন বলেননি চাচা? আমরা আর এই বাড়িতে থাকছি না। গতরাতের কথা মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়।”

“ভূত? ভূত এলো কোথা থেকে?”

“মাঝরাতে আমরা সবাই নূপুরের শব্দ পেয়েছি।” তুর বলে। ইলিয়াস আলী মৌনাবলম্বন করে বলে, “কালকে তো রাস পূর্ণিমা ছিল। আমার একদম খেয়াল ছিল না। আগে এই মির্জা বাড়িতে বাইজি আসর হতো। এখন এখানে না হলেও কিছু দূরে বটতলায় বাইজি আসর বসে। আর এই আসর বসে রাস পূর্ণিমায়। বোধ হয় আপনারা সেই ঘুঙুরের শব্দ শুনেছেন।”

সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সামান্য এই কারণে তাঁরা ভয়ে জবুথবু। অপূর্ব ফের প্রশ্ন করে, “কতদিন হয় এই নাচ?”

“তিন দিন। পূর্ণিমা, পূর্ণিমার আগেরদিন ও পরেরদিন। এখনও কি আপনারা চলে যাবেন?” ইলিয়াসের প্রশ্নে সবাই না-বোধক মাথা নাড়ে। ব্যাগপত্র রেখে তৈরি হতে যায়, যার যার কক্ষে। ইলিয়াস আলী হাতের ইশারায় অপূর্বকে দোতলার ঘরটিকে দেখিয়ে বলে, “ঐ কোনায় যে ঘরটা দেখতে পারছেন, ওটা ছিল ইস্কান্দার মির্জার। মানে আপনার বুড়ো বাবার। তিনি ঐ গোপন ঘরে স্ত্রী মমতাজকে নিয়ে থাকতেন।”

অপূর্ব অবাক না হয়ে পারল না। কারণ আরুকে নিয়ে সে গতরাতে ঐ ঘরে ছিল। অপূর্বকে নিয়ে ইলিয়াস আলী বাড়ি ঘুরে দেখাতে লাগলেন। সবাই এসে যোগ দিল বাড়ি দেখতে। এক এক করে তালাবদ্ধ ও গুপ্ত ঘরগুলো দেখাতে লাগলেন। বললেন, “আগে এই বাড়ি ছিল জমজমাট। ছয় ভাই এই বাড়িতে জমিয়ে দিন কা/টাতো। কিন্তু আফসোস এই বাড়ি আলো করে আর কোনো পুত্র সন্তান এলো না। মেয়েদের বিয়ের পর থেকে ক্রমশ ফাঁকা হতে থাকল বাড়ি। এখন মাঝে মাঝে নাতিপুতি নিয়ে ঘুরতে আসে তারা।”

বেশিক্ষণ এই বাড়ি দেখল না তারা‌। সুন্দরীকে নিয়ে নিয়ে অপূর্ব, কালাচাঁন ও ইলিয়াস আলী গেলেন ডাক্তারের কাছে। বাড়ি বসে রইল বাকিরা। যাওয়ার আগে অবশ্য সকালের খাবার সবাইকে খেয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিল। তবে আরুরা রোদ প্রখর না হওয়া পর্যন্ত, অনশন করেছে। এক পর্যায়ে হাঁটতে বের হলো সকলে। নতুন পরিবেশে হাঁটতে বেশ লাগছে সকলের। ‘ছিক, ছিক’ শব্দ করে তুরকে ইঙ্গিতে পেছনে যাওয়ার নির্দেশ দিল। তুর ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেল। প্রখর রাগ দেখিয়ে ব্যঙ্গ করে বলে, “আমি পরিত্যক্ত বাড়ি ভ্রমণ করতে চেয়েছিলাম, ভূতের বাড়ি না। ভূত দেখে ওমনি আমার প্রতি ভালোবাসা কর্পূরের মত উড়ে গেল? সব আপনার নাটক।”

প্রয়াস মাথা চুলকায়। ইতস্তত নিয়ে বলে, “ভূতের বাড়ি জানলে কি তোমাকে আসতে দিতাম? দাঁড়াও ছবি তুলে দেই।”

তুর চাদর আঁকড়ে ধরে গাছের সাথে হেলান দিল। প্রয়াস অবিরাম ছবি তুলতে থাকল তুরের। দূর থেকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দুজনকে দেখছে তিয়াস। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, “এই প্রয়াস নামের ছেলেটা অদ্ভুত টাইপের। এখন পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলল না, অথচ তুরের সাথে সখিত্ব গড়ে তুলেছে। মনে হচ্ছে, আগে থেকেই একে অপরকে চেনে।”

আরু ও শেফালী দৃষ্টি বিনিময় করে হাঁক দেয়, “তুর, এদিকে আয়‌। গ্ৰাম ভালো না, একা ছেলেমেয়েকে একসাথে দেখলে খারাপ ভাববে‌। তাছাড়া রাস্তাঘাট কেউ চিনি না। হারিয়ে গেলে?”

“ছেলেটা ভালো ছবি তোলে। আমার ছবি এখন পর্যন্ত তোলে নি। তাই ভাবলাম তুলে নেই।” বলতে বলতে এগিয়ে এসে সবার সাথে পা মেলাল তুর। কিছুটা পথ এগিয়ে যেতেই দেখা মিলল একটা খালের। রাস্তা থেকে খালের দূরত্ব একটা মাঝারি সাইজের দূর্বা ভরতি মাঠ। রোদ্দুর জেঁকে বসেছে সেই মাঠে। তাই আগ্রহ নিয়ে সবাই মাঠে নামে। মাঠের এক কিনারে রয়েছে কলাগাছ। জায়গাটা সরকারি হলেও জনগণ মনোমতো ক্ষণস্থায়ী গাছ লাগাতে পারে। দাঁত দিয়ে কলাপাতা কে/টে আসন পেতে বসেছে অনেকে। আরুর মনে পড়ে পুরনো এক অতীত। খাল দেখলে এখন এড়িয়ে যায়, আগে কত মাছ ধরত। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আরু বলে, “এই শীতের সময় খালে কুঁচো চিংড়ি পাওয়া যায়। আমি আর অয়ন ওড়না দিয়ে ধরেছি। রাতে মা সেই চিংড়ি ও ডাল দিয়ে বড়া বানিয়ে দিত। এখনো জিভে লেগে আছে।”

তিস্তা প্রিঞ্চ করে বলে, “খালি বড়া খেয়েছিস? ফুফুর মা/র খাসনি? মাছ ধরে ঠান্ডা লাগাতি আর ফুফু তোকে মা/রত। মা/র থেকে বাঁচতে আমাদের বাড়িতে এসে লুকাতি। মা/র খেয়েও তুই বড়া খাওয়া ছাড়তে পারতি না।”

অপূর্ব নদীর ওপার দিয়ে ফিরছিল। পরিচিত পোশাকের মানুষগুলো দেখে রাস্তা থেকে নদীর পাড়ে নেমে বলে, “তোরা এখানে কী করছিস?”

“রোদ পোহাচ্ছি। আপনিও আসুন।”

“বেলা এগারোটা ছাড়িয়ে গেছে। কুয়াশা ছাড়ছে না তাই সময় বোঝা যাচ্ছেনা। সবগুলো এই নদীতে নেমে গোসল সেড়ে নে। আমরা সবাই ইলিয়াস চাচার বাড়িতে দুপুরের খাবার খাবো।” ওপার থেকে অপূর্ব বলে।

তিয়াস ব্যতিক্রম স্বরে বলে, “এই শীতে গোসল করলে বাঁচব না। আর এই নদীতে তো অসম্ভব। যদি কেউ এই নদীতে নেমে এক ডুব দিতে পারে, তাহলে ধান ছাড়া খেতে কাকতাড়ুয়া সেজে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকব।”

“পারবি তো?”

“পারব?”

“১০০% সিউর?”

“১০০০% সিউর।”
তিয়াস থামার পূর্বেই পানির শব্দ কানে এলো। চেয়ে দেখল অপূর্ব নেই। সবাই স্বাভাবিক চোখে তাকালেও আরু অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখল। এখনো কেন উঠছে না। অপূর্ব তো সাঁতার জানে না। হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here