#মেঘকন্যা☁️
#Part_14
#Writer_NOVA
মেঘরাজ্য…….
উঁচু টুলের মতো দেখতে একটা বস্তুর উপর বিশাল বড় একটা পাত্র। পাত্র ভর্তি হালকা আকাশি কালার স্বচ্ছ পানি।দেখতে সমুদ্রের পানি মনে হলেও তা নয়।পানির ওপর গোলাপের পাপড়ি ছিটানো।পাত্র ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রাজা,রাণী, মন্ত্রী ও সেনাপতি রাকিন। রাজা খুব বেশি চিন্তিত তার পুত্রের প্রাণ নিয়ে। তবে সবাই এখন দেখতে চাইছে সেদিন উত্তরের ভয়ানক জঙ্গলে কি হয়েছিল? কারণ ইশালের থেকে আয়িশের শক্তি বরাবরের মতোই বেশি। তারপরেও আয়িশ কেন এতো আঘাত পেলো।পানি ভর্তি পাত্রের মধ্যে এখন দম করে ফুঁ দিলেই সেখানে তারা সেদিনের ঘটনা দেখতে পাবে।সবার মনটা আনচান করছে।
রাজাঃ সেনাপতি রাকিন জলদী করে পানিতে দম করো।নয়তো পানির রং কালো হতে শুরু করবে।আমরা কিছুই দেখতে পারবো না।
রাকিনঃ আপনি চিন্তা করবেন না মহারাজ। আমি থাকতে কিছুই হবে না।পানিতে দম করার আগে আমার এখানে আরো একটা গোলাপের পাপড়ি ছিটাতে হবে।পাপড়ি কম হয়ে গেছে।
রাণীঃ আমার সোনার টুকরো পুত্রের সাথে কিরকম করলো শয়তানটা।ওর ভালো জীবনেও হবে না। আল্লাহ সব দেখছেন উপরে।তিনি এর বিচার নিশ্চয়ই করবে।আল্লাহ রক্ষা করেছে বলে আজ আমার কোল খালি হয়নি।যাকে আল্লাহ বাঁচাতে চায় তাকে কি অন্য কেউ ক্ষতি করতে পারে।মহান রাব্বুল আলামীন, তোমার দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া। তুমি আমার মানিক-কে আমার কোলেই রেখেছো।
মন্ত্রীঃ তুমি কিভাবে চিন্তা করতে মানা করো রাকিন?বেলা শেষ হয়ে এলে এই পানির রং কুচকুচে কালো হয়ে যাবে। তাতে আমি শতভাগ নিশ্চিত। সেই পানির থেকে এক প্রকার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছাড়তে থাকবে।যেটা সারা রাজ্যকেও গ্রাস করবে।তুমি ভুলে যেও না এটা কোন রাজ্যের পানি?এটা অঙ্গরাজ্যের জলদীঘীর পানি। ওদের পানির মধ্যেও কালা জাদু করা আছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এটা ভালো থাকবে।সেই সময়ের আগে যদি তুমি কাজ সম্পন্ন করতে পারো তাহলে মঙ্গল। নয়তো সারা রাজ্যে কালো আঁধার নেমে আসবে।গোলাপের পাপড়ি সাবধানে ব্যবহার করো।ঐটা কিন্তু প্রচুর বিষাক্ত।
সেনাপতি রাকিন অঙ্গরাজ্য থেকে ফেরার সময় একটা কাচের বোতল ভর্তি করে জলদীঘীর থেকে পানি নিয়ে এসেছে। তাছাড়া গোলাপ ফুলও সেই রাজ্যের বাগান থেকে তুলে এনেছে। কারণ সেখানকার সব কিছুতেই কালা জাদু করা আছে। পুরো রাজ্যটাই তো কালা জাদুই ঘেরা।কিন্তু পূর্বের ঘটনা দেখতে অঙ্গরাজ্যের পানি ও গোলাপ ছাড়া হবে না। জীবনের ঝুঁকি জেনেও সে এই দুটে জিনিস অঙ্গরাজ্য থেকে নিয়ে এসেছে।
আরেকটা গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাকিন পানিতে দম করলো।ধীরে ধীরে পানিটার রং বিবর্ণ হয়ে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকাতে শুরু করলো। পানির মধ্যে সেদিনের ঘটনা স্পষ্ট দেখা যাতে লাগলো।চলুন আমরাও দেখে আসি।কি হয়েছিল সেদিন????
উত্তরের ভয়ানক জঙ্গল…….
ইশাল উল্টো দিকে ঘুরে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। তার পরিকল্পনা মাফিক সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিক তখনি ওর পেছনে এসে মেঘপুত্র দাঁড়ালো। পরনে তার হালকা আকাশি কালার রাজকীয় পোশাক। কোমড়ের বন্ধনীতে স্বর্ণের তলোয়ার কোষবদ্ধ। চোখ মুখ তার রাগে লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে সামনে যা পাবে তাই ধ্বংস করে দিবে।
ইশালঃ স্বাগতম মেঘপুত্র আবরার আওসাফ আয়িশ।আমার দুনিয়ায় তোমায় স্বাগতম।
আয়িশের রাগে নাকের ডোগা লাল হয়ে আছে। কান দুটো দিয়ে মনে হচ্ছে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আয়িশ রাগে সামনে এগিয়ে আসতে নিলেই ইশাল ওর চারিদিক দিয়ে অদৃশ্য শক্তি দিয়ে ঘিরে দিলো।যেহেতু আকাশে চাঁদ নেই তাই আয়িশ একটু দূর্বল হয়ে পরেছে।ইশাল সামনে এগিয়ে এলো।
ইশালঃ আবরার আওসাফ। একটা ইসলামিক নাম।যার অর্থ ন্যায় গুণাবলি। তা ন্যায়ের প্রতীক আবরার সাহেব, রাগে কি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন নাকি।আকাশের দিকে একটু নজরও দেননি।নিজের প্রিয়তমাকে সাপে কেটেছে বলে একটু দেরী না করেই, কোন দিকে নজর না দিয়ে সোজা উত্তরের ভয়ানক জঙ্গলে চলে এসেছে। অবাক করা কান্ড। আমার চোখ তো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি মেঘরাজ্যের পুত্রকে আমার অধীনের জঙ্গলে দেখছি।
আয়িশঃ সাহস থাকলে আমার সাথে মোকাবিলা কর।কাপুরুষের মতো অদৃশ্য শক্তি দিয়ে আটকে রেখেছিস কেন?তোর মৃত্যু আমার হাতেই আল্লাহ লিখে রেখেছে। আজ হয় তোকে মারবো নয়তো নিজে মরবো।
ইশালঃ ভুল বললি তুই আয়িশ।তোর মৃত্যুটা আমার হাতে লিখে রেখেছে। আজ তুই এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবি না।তোকে মেরে মেঘকন্যাকে নিজের করে ফিরবো পৃথিবীর থেকে।তোর শরীরে এখন আমার পোষা সাপ রিহিসের বিষ আছে।তাই তোর ওপর আমি নিজের শক্তি ব্যবহার করতে পারবো।
আয়িশঃ তোর রিহিসের বিষ আমাকে কোন কাবুই করতে পারবে না।আমি এতটা বোকা নই সেই বিষ এখনো নিজের শরীরে রেখে দিবো।পুরো জঙ্গলটা তোর অধীনে হতে পারে।কিন্তু পুরো পৃথিবীটা আমার মাওলার অধীনে। সে যদি আমাকে বাঁচাতে চায় তোর মতো একটা পুঁচকে শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই আমাকে মারার।
ইশাল রেগে ওর তলোয়ার কোষমুক্ত করে আয়িশের গলায় ধরলো।তাতে আয়িশ বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না।বরং উচ্চবরে হাসতে লাগলো।ওর হাসি দেখে ইশাল কিছুটা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। সেই সুযোগে আয়িশ ওর শক্তি দিয়ে নিজেকে ইশালের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।নিজের কোমড় বন্ধনী থেকে তলোয়ার বের করে দুজনে যুদ্ধ আরম্ভ করলো।
বেশ কিছু সময় তলোয়ার ঠোকাঠুকির পর ইশাল হেরে মাটিতে পরে গেল। সেই সুযোগে আয়িশ ওর সামনে গিয়ে ওর গলায় তলোয়ারের ধারালো মাথা দিয়ে ওর গলায় চেপে বসলো।তার আগে ইশালের বুকের ডান কাঁধের নিচের কিছুটা অংশে তলোয়ারের মাথা অনেকটা অংশ বসিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে।
আয়িশঃ আমাকে হারানো কি এত সোজা নাকি?আমি নিজেকে সবদিক থেকে প্রস্তুত করে এসেছি। তাছাড়া আল্লাহ তো আমার সাথেই আছে।তার দরবারে হাত তুলেই আমি এখানে এসেছি। তিনি আমার জন্য যা ভালো মনে করবেন তাই করবেন।চাঁদের আলো নেই বলে আমার শক্তি নেই এমনটা যদি ভাবিস।তাহলে অনেক বড় ভুল ভেবেছিস।
ইশাল সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে নিজের কাছে শুকনো বালির দেখা পেলো।যখনি আয়িশ সামনে এসে ওকে আঘাত করবে সেই মুহুর্তে ইশাল ওর চোখে দুই হাত ভর্তি করে বালি ছুঁড়ে মারলো। জঙ্গলটা পুরোটা ঝুরঝুরে বালিতে ভর্তি।
আয়িশ তলোয়ার ফেলে নিজের চোখ ডলতে আরম্ভ করলো।ইশাল পেছন থেকে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আয়িশের সারা শরীর তলোয়ারের আঘাত করলো।আয়িশ এখনো চোখ ডলছে।চোখে কিছু দেখছে না।
আয়িশঃ কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আঘাত করছিস কেন?
ইশালঃ পেছন থেকে করছি নাকি সামনে থেকে। সেটা বড় কথা নয়।সবচেয়ে বড় কথা তোকে আমি আঘাত করতে পেরেছি।
ইশাল ওর মুখে অনেকগুলো নখের আঁচড়ও বসিয়ে দিলো।আয়িশ পেছনে পেছাতে গিয়ে ধারালো কাচের সাথে বেজে পা কেটে ফেললো।কাচের টুকরোগুলো ইশাল চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে রেখেছিলো।আয়িশ পা ধরে বসে পরলো।কিন্তু তারপরেও ইশাল থামলো না।একের পর এক আয়িশকে আঘাত করতেই থাকলে।সে বেশ উপভোগ করছে আয়িশকে হামলা করতে।একসময় আয়িশ মাটিতে ঢলে পরলো।ইশাল সামনে গিয়ে আয়িশপর নিশ্বাস পরীক্ষা করলো।আসলে আয়িশ মরার ভান করে পরে আছে।
ইশালঃ এতো তাড়াতাড়ি মরে গেলো।নিশ্বাস চলছে না কেন?আমিতো এখনো মন মতো মারতেই পারিনি।সামান্য কয়েকটা আঘাতে মেঘপুত্র আবরার কপোকাত। অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
আয়িশঃ এতো সহজ নয় আমাকে মারার।
কথাটা বলেই আয়িশ হাত ভর্তি করা বালি ইশালের চোখে ছুঁড়ে, অনেক কষ্ট করে পেছনের দিকে সরে এলো।একটা মোটা গাছের আড়ালে গিয়ে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে রইলো।সারা শরীর রক্তের বন্যা বসে যাচ্ছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। পায়ের থেকে অনরবত রক্ত পরছে। আয়িশের শরীরে কোন শক্তি নেই। ইশাল চোখ খুলে আয়িশকে পেলো না।কিছু সময় এদিক সেদিক খুঁজে হয়রান হয়ে গেলো।তারপর রেগে নিজের রাজ্যে চলে গেলো।
আয়িশ ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল।গোটা একদিন আয়িশ অজ্ঞান অবস্থায় ছিলো।যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে। সেনাপতি রাকিন আয়িশের খোঁজে মেঘরাজ্য থেকে সেই জঙ্গলে চলে এলো।অনেক সময় খোঁজার পর আয়িশের গোঙানির শব্দ পেয়ে ওর কাছে ছুটে এলো।তারপর ওকে ধরে ধরে মেঘাদের বাসার সামনে রেখে চলে গেল। রাকিন ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলো। কিন্তু আয়িশ মানা করে দেয়।আসার সময় দুজন মিলে বাপ-বেটার মধ্যে দ্বন্দ্ব বানানোর ফন্দি এঁটে নিলো।সেই ফন্দিতেই রাকিন অঙ্গরাজ্যে গিয়ে রাজার রূপ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে ফিরেছে।
পুরো বিষয়টা পানির পাত্রে দেখে উপস্থিত সবার রাগ উঠে গেল। কারণ ইশাল কাপুরুষের মতো পেছন থেকে হামলা করেছে। আর এটা কোন যুদ্ধ নিয়ম নয়।তবে অন্যদিকে সবাই খুশি যে তাদের মেঘপুত্র এখন সুস্থ আছে,ভালো আছে।রাণী আচলে মুখে ঢেকে কান্না করছে।আল্লাহ তার পুত্রকে কত বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তা সে নিজ চোখে দেখলো।এক পলক পুত্রকে দেখার জন্য তার মনটা উতলা হয়ে পরলো।তার ইচ্ছে করছে পৃথিবীতে ছুটে গিয়ে নিজের সন্তানের সেবা করতে।কিন্তু তিনি নিরুপায়। চাইলেও এখন পৃথিবীতে যেতে পারবে না।গেলে যে তার পুত্র ও পুত্রবধূর ক্ষতি হতে পারে।সে মা হয়ে তা কি করে হতে দিতে পারে?
#চলবে
অনেক হাত ব্যাথা করছে।সাথে গল্পের থিম সাজাতে পারছি না।তাই বড় করে দিতে পারলাম না।তারপরেও এখানে ১২৫০+ শব্দ আছে। ছোট করে দেওয়ার জন্য সরি।আজকের পর্বটা বোধহয় অগোছালো হয়ে গেছে। কিছুই মনমতো সাজাতে পারিনি।রি-চেইক দেইনি।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ #বোনু গল্প দিতে পারবো কিনা জানি না। তবে সর্বস্ব চেষ্টা করবো দেয়ার।