তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_২৮

0
292

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৮

“তুমি! তুমি এই সময়?

নিঝুম হাতে থাকা প্যাকেট টা নাড়িয়ে বলল, “টা টা নিয়ে এসেছি!

“কি এনেছো?

“বিরিয়ানি! তাও নিজ হাতে রেঁধে..

“খেতে পারবো তো!

“অশান্ত! দেখি সরুন তো।

বলেই অশান্ত কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। শান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিঝুম অনায়াসে তার রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মুখে হাসি হাসি একটা ভাব। মনে হচ্ছে বিরিয়ানি রেঁধে আনতে পেরে বেশ খুশি সে। কিন্তু অশান্ত এখনো সংশয়ে আছে সেই বিরিয়ানি আদৌও খেতে পারবে তো সে।

নিঝুম প্লেটে বিরিয়ানি বাড়ছে। অশান্ত বিরিয়ানির দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি সত্যিই রেধেছো নাকি কোন দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছ?

“কেন বলুন তো!

“চশমিশ! বিরিয়ানি দেখে ঠিকঠাক মনে হচ্ছে কিন্তু এটা তুমি রেঁধেছে এটা বিশ্বাস করতে আমার আপত্তি আছে।

“ওমা! কেন?

“না তেমন কিছু না।

“তেমন কিছু না মানে, খেয়ে দেখুন! কতো ভালো মতো রেধেছি আপনি জানেন সেটা!

বলেই অশান্ত’র সামনে এসে দাঁড়াল প্লেট হাতে। অশান্ত ফোনটা রেখে বিরিয়ানি মুখে দিল। নিঝুম অনেক আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অশান্ত মুখ ফিরিয়ে বলল, “এটা কি রেধেছ?

“কেন বিরিয়ানি!

“এটাকে বিরিয়ানি বলে , বিরিয়ানি এমন ঠান্ডা কেন?

“ওহ এই কথা! আমি ইচ্ছে করেই গরম গরম বিরিয়ানি আনি নি। যদি হট বিরিয়ানি খেয়ে আপনার মাথা আবার হট হয়ে যায়।

“তাই মাথা ঠান্ডা করতে ঠান্ডা বিরিয়ানি!

“না না কুল বিরিয়ানি!

“চশমিশের বাচ্চা…

নিঝুম দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিতেই যাচ্ছিল। কিন্তু এর মাঝেই পায়ের কাছে নরম আলতো কিছুর ছোঁয়া নিচে তাকাতেই বিড়াল কে দেখতে পেল সে। বিড়াল তার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম এক চিৎকারে সোফার উপর দাঁড়িয়ে লাফাতে লাগল।

“বিড়াল বিড়াল বিড়াল!

“বিড়াল কেন বলছো, ওর নাম অমি!

“ওওওই অমি টমি আমি জানি না। এটা আপনার ঘরে কি করছে?

“পুষতে এনেছি!

বলেই অশান্ত অমি কে কোলে নিয়ে নিঝুমের দিকে আগাতে লাগল। নিঝুম আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছে। অমি এর মাঝেই মিয়াও মিয়াও করে ডাকছে। অশান্ত ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল, “দেখো ও কত্তো কিউট!

“এএএই অশান্ত একদম এসব আমার কাছে আনবেন না। আমার খুব ভয় করে।

“কি বলছো এসব? বিড়াল আবার কোন মেয়ে ভয় পায়।

“কেউ না পেলে না পায়। আমি পাই , আপনি সুরুন আমার সামনে থেকে আমি বাসায় যাবো।

“দেখো অমি কি সুন্দর তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, তুমি বরং ওর সাথে একটু খেলো।

“কোনমতে না।

বলেই কোনমতে দৌড়ে দরজার কাছে আসল। অতঃপর ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বলল, “অশান্ত আপনার বাসায় কি এতো ইঁদুর যার জন্য আপনার বিড়াল পুষতে হয়েছে!

“ইঁদুর থাকুক আর না থাকুক, তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য অমি কে এবার রাখতেই হবে।

“আমি আর কখনো আসবো না আপনার বাসায়, দেখিয়েন।

“আহ খুব শান্তি পেলাম কথাটা শুনে।

“অশান্ত..

“হি হি হি তুমি পুরো আহনাফের মতো। আহনাফও বিড়াল প্রচুর ভয় পায়।

নিঝুম অবাক চোখে বলল, “সত্যি!

“হুম, তুমি চশমিশ তোমার বিড়াল কে ভয় পাওয়ার কারণ কি , তুমি তো নিজেই একটা বিড়াল। সারাক্ষণ কামড় আর খামচাখামচি করো।

“অশান্ত!

“আহ রেগে যাচ্ছ নাকি, যাও বাসায় গিয়ে ঠান্ডা ধুর কুল বিরিয়ানি খাও রাগ পড়ে যাবো ‌

“😒 , চলে যাচ্ছি আমি।

“যাও! যাবার আগে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে যাও।

নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে জোরে দরজা বাড়ি মেরে চলে গেল। অশান্ত বলে উঠল, “আরে দরজা ভেঙে তোমায় মাথা পড়বে তো।

অশান্ত’র কথার জবাবে নিঝুম যেতে যেতে জিহ্বা ভেঙিয়ে দিল। অশান্ত হেসে অমি কে নিচে নামিয়ে দিল। অতঃপর বিরিয়ানির দিকে তাকাল। হাতে বিরিয়ানির প্লেটে এলো রান্না ঘরের দিকে। চশমিশ এতো ভালো রাঁধতে পারে এটা তার জানাই ছিল না। অশান্ত এখন আবার এগুলো কে গরম করতে লাগলো। একটা কথা বলা হয় নি, বিরিয়ানিতে লবণ কম ছিল, ছিল না বোধহয় এই মেয়ে লবণ দিতেই ভুলে গেছিল। এই কথাটা আর বলা হয় নি। অশান্ত হঠাৎ করেই হেসে উঠলো। ফোন থেকে হ্যালো হ্যালো শব্দ আসছে। শান্ত’র এতোক্ষণে মনে পড়ল নানাজান ফোনের ওপাশে অপেক্ষা করছে। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে বলল, “সরি, আসলে আমি..

“মেয়েটা কে?

“ও! ও হচ্ছে একটা‌ বিপদ।

“কই আমার তো মনে হলো তোর গার্লফ্রেন্ড..

“গার্লফ্রেন্ড তাও আমার, এটা আবার কে? চশমিশ! নানাজান তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো। পৃথিবীতে ওই একটা মেয়ে থাকলেও আমি তার কাছে যাচ্ছি না।

“আচ্ছা কি করছিস?

“বিরিয়ানি গরম করছি?

“কেন?

“খাবো বলে?

“ভালো হয়েছে!

“হ্যাঁ এতোটা খারাপ না। তবে লবণ দেই নি!

“লবণ ছাড়া কিছুই খেতে ভালো লাগে না!

“হুম জানি!

বলেই শান্ত সেগুলোর উপর একটু লবণ ছিটিয়ে দিল। ওপাশ থেকে নানাজান হেসে বলল, “এতো কেন করছিস? ভালো যখন হয় নি তাহলে খাবারের এতো আয়োজন কেন। ফেলে রাখ না।

“কি বলছো তুমি?

“কিছু না, মেয়েটা তোকে অশান্ত ডাকে কেন?

“ওর মাথায় সমস্যা, ঠিক মতো কিছুই বলতে পারে না।

“আর তুমি কি ডাকিস চশ..

“মিস চশমিস!

‘তাহলে তোর মাথায়ও কি সমস্যা?

“নানাজান!

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ পাওয়া গেল দ্বিতীয়বার। শান্ত বলে উঠল, “রাখছি আমি। তোমার ঔষধের টাইম হয়ে গেছে। নার্স এখনি এসে ঔষধ খাওয়াবে। চুপচাপ খেয়ে বিশ্রাম নাও।

নানাজান কিছু বলতে যেয়ে দেখল কেবিনে সত্যি সত্যি নার্স এসে পড়েছে। তিনি কিঞ্চিত হেসে ফোন রাখলেন। শান্ত বিরিয়ানি আবারো প্লেটে রেখে সোফায় এসে বসল। চামচ মুখে বিরিয়ানি মুখে দিচ্ছে আর হাসছে। ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম সত্যিই বিরিয়ানি রেঁধে নিয়ে আসবে এটা সে ভাবতেই পারে নি। পাগল মেয়ে বটে একটা! অমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শান্ত কি করছে তা উপলব্ধি করছে। শান্ত তাকে কোলে বসিয়ে দিতেই খাবারের প্লেট শুঁকতে লাগলো সে।

—–

বাসায় আজ কুরুক্ষেত্র বেজেছে! নিঝুম পুরো রান্না ঘরে যুদ্ধ লাগিয়েছে। মা এসব পরিষ্কার করছেন আর বকে যাচ্ছেন। খাবার টেবিলে তিনজন’ই চুপচাপ বসে খাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। বাবা বলে উঠেন, “হঠাৎ রাধতে গেলি কেন?

“আরে বাবা আমার এক বন্ধু রেগে গিয়েছিল আমার উপর। তাই তাকে কুল করতে বিরিয়ানি নিয়েছিলাম!

হিনা বলে উঠল, “বিরিয়ানি তোর মুখে ছুঁড়ে মারে নি তোর ভাগ্য ভালো।

“কেনো কেনো?

“তুই তো বিরিয়ানিতে লবণ’ই দিস নি। আম্মু এসব আবার ঠিক করেছে। কিন্তু বেচারার টা..

বলেই হাসতে লাগলো। নিঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সত্যিই কি এমনটা হয়েছিল নাকি।‌ বাবা নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, “থাক মা এতো ভাববার কিছু নেই, প্রথমবার এমন হতেই পারে। তোকে তোর ফ্রেন্ড কিছু বলেনি।

“কই না তো।

“তাহলে নিশ্চিত তার ভালোই লেগেছিল!

নিঝুম কিছু একটা ভাববার চেষ্টা করল। এর মাঝেই মায়ের গলার আওয়াজ পেলো , “নবাবজাদি রাঁধতে এসে আমার রান্না ঘরের হাল বেহাল করেছে। তুই আসিস আরেকবার এই রান্না ঘরে। তোর পা ভেঙ্গে রেখে দেব!

তিন তিনজনের মুখে চাওয়াচাওয়ি করে আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিল!

—–

তিশা অনেকটা বিচলিত হয়ে আছে। একের পর এক মেসেজ এসে চলেছে তার ফোনে। কোন মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে ফোনটা বেজে উঠলো মুহুর্তেই। তিশা কাঁপতে লাগলো ‌। হাত থেকে ফোনটা নিমিষেই পড়ে গেল মেঝেতে। ভয়ার্ত চোখে সেই ফোনের দিকেই তাকিয়ে আছে সে। গলা ক্রমশ শুকিয়ে আসছে তার। ফোনের টিং টিং আওয়াজ একসময় থেমে গেল। খানিকটা শান্ত বোধ হতে লাগল তখন। তিশা মেঝেতে বসে ধীরে ধীরে ফোনটা হাতে নিতেই আবারো বেজে উঠল। তিশা আঁতকে উঠলো। ফোন না ধরা অবদি এভাবেই বাজতে থাকবে নাকি। আবারো বাজা বন্ধ হয়ে গেল ফোনটা। তিশা হাতে চেপে রইল ফোনটা। এবার ফোন কেঁপে উঠল। মেসেজ এসেছে। ফোন স্ক্রিনের উপরে ভেসে উঠল মেসেজ। ইংরেজি করা মেসেজের বাংলা অনুবাদ এমনটা ছিল, “ফোন ধরো, নাহলে আমি সব কিছু শেষ করে। তুমি কি এমনটা চাও!

তিশা পেছনে আসতে আসতে দেওয়ালের সাথে ঠেকল। ওপাশ থেকে এবার ফোন বাজার সাথে সাথে সে ফোন রিসিভ করল। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ে পড়ছে। শ্বাস ফেলে কোনমতে বলে উঠল, “হ্যালো !

ওপাশ থেকে তখনই এক হাসির শব্দ। তার সাথে বলা কিছু তিক্ত কথাবার্তা। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটা একজন ভিনদেশী! তার ভাষায় কথা বলে যাচ্ছে সে। তিশা তার প্রতিটা কথায় কেঁপে উঠছে। শরীর শিউরে উঠছে তার। কোনমতে ফোনটা রেখে দিল সে। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। এর সাথে ভেসে আসা মিষ্টি কন্ঠে ডেকে যাচ্ছে আহনাফ! খুব মধুর লাগছে তার গলায় নিজের নামটা শুনে! তিশা দ্রুত উঠে বিছানার কাছে যাচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ। কোনমতে নিজেকে ঠিক করে ঘুমানোর ভান ধরে শুয়ে রইলো সে। আহনাফ ঘরে ঢুকা মাত্র তাকে ঘুমাতে দেখে চলে গেল। দরজা লক করার স্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলো সে। দ্রুত উঠে এসে দরজা লক করে দিল। দৌড়ে গেল ওয়াশরুমে। মুখে ইচ্ছেমতো পানি ছিটাতে লাগল সে। আয়নায় নিজের মুখটা দেখতে লাগল। ঘৃণা ইচ্ছে এখন নিজের উপর। কিভাবে পারছে সে এমন একটা মানুষকে ধোঁকা দিতে। কিভাবে? কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল তিশা। মেঝেতে ধপ করে বসে হাঁউমাঁউ করে কাঁদতে লাগল। আহনাফ কে কষ্ট দিতে যতটা না কষ্ট লাগছে এর চেয়েও বেশি কষ্ট লাগছে এটা ভেবে আহনাফ এটা কিভাবে সহ্য করবে। পারবে তো সহ্য করতে। আহনাফ তাকে কতোটা ভালোবাসে এটা সে নিজেও জানে। সবকিছু জেনেও কিভাবে তাকে ধোঁকা দিতে পারল সে। কাঁদতে লাগল সে, এই কান্নার আওয়াজ চাপা পড়ল দরজার ভেতরেই।

আহনাফ দ্বিতীয় বার খাবার হাতে এসে উপস্থিত হলো। কিন্তু এবার দরজা বন্ধ থাকতে দেখে নক করল সে। কিন্তু ওপাশ থেকে কোন শব্দ’ই পেলো না। মনে দ্বিতীয় ভাবনা আনলো না। হয়তো তিশা ঘুমাচ্ছে, হয়তো চাইছে না কেউ তাকে ডিস্টার্ব করুক। ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে পা পিছিয়ে নিল সে।

—–

আফিন হন হন করে হেঁটে এসে কোনমতে বসে পড়ল। নীলাভ্র তার দিকে তাকাতেই বলে উঠল, “কোন খোঁজ পাই নি!

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বলল, “আজব তো! মেয়েটা কি হাওয়া নাকি যে খুঁজে পাবি না।

শান্ত শব্দ করে হেসে বলল, “আমার শত্রু বলে কথা, কাঁচা কাজ করে কিভাবে?

আহিম ঢকঢক করে পানি খেয়ে বলল, হুম বহুত চালাক!

তার কথায় রিয়া আর দিয়া শব্দ করে হেসে ফেলল। তানিশা বলে উঠল, “এই কোন ভাষায় কথা বলছিস! মনে হচ্ছে মুরব্বি মুরব্বি!

“হুম আমি নাহয় মুরব্বি’ই হলাম। কদিন পর দেখবি আমার দাড়ি গজাবে, পেকে সাদা হবে।

রিয়া মাঝখানে বলে উঠল , “ভুড়িও বেড়ে যাবে!

একদল হাসির রোল পড়ে গেল। আহিমও হাসতে হাসতে বলে উঠল, “সেটা তোকে বিয়ে করবার পর আফিনের হালও এমনই হবে।

আফিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “কি বলছিস?

আহনাফ হালকা কেশে বলল, “বিয়ের পর বউয়ের হাতে রান্না খেয়ে সব বরের একটু আকটু ভুড়ি বারেই!

রিয়া বলে উঠল , “ওই ভুড়ি ওয়ালা বর আমার দরকার নেই ভাই!

দিয়া বলে উঠল, “তাহলে কি করবি। ছেড়ে দিবি নাকি বিয়েই করবি না!

“দ্বিধাতে ভুগছি!

নীলাভ্র আহনাফ’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “শুধু আফিন কেন? তোরও হাল তাই হবে। দেখিস..

শান্ত বলে উঠে, “চান্স কম! তিশা রাঁধতে জানে না।

“কেল্লাফতে তাহলে..

তানিশা ফোড়ন কেটে বলে উঠে, “তিশা তার বরমশাইয়ের হাতে রান্না খেতে খেতে অস্থির হবে, এই তো!

ইফা , তিথি আর নিঝুমের আগমন ঘটল তখন। তিথি গাছের সাথে হেলান দিয়ে বলল, “কিসের কথা হচ্ছে?

“বিবাহ অভিযান!

“বিয়ে কার বিয়ে..

“তোমার!

“ইশ! কি বলে..

তিথির বাচ্চামো দেখে সবাই হেসে অস্থির। ইফা হাসি থামিয়ে বলে, “এতো হাসাহাসি রেখে কাজের কথা বলো।

নিঝুম এর মাঝেই অশান্ত’র পাশে বসে তার কানে কানে বলতে শুরু করে, “এই অশান্ত! কাল বিরিয়ানিতে কি লবণ ছিল না!

অশান্ত চোখ ঘুরিয়ে তাকাল তার দিকে। আহনাফ বলে উঠল, “না কাজের কিছুই হয় নি। মেয়েটা কে খুঁজে পাওয়া যায় নি।

“একটা পুলিশ কেস করবে নাকি!

শান্ত বলে উঠল, “না!

নিঝুম চিমটি মেরে বসল। অশান্ত চেঁচিয়ে উঠলো। সবার নজর সেখানে। আফিন বলে উঠল, “কি হলো আবার?

আহিম হেসে বলল, “কি আর হবে, বিড়ালের সাথে আছে, তাই বিড়ালও কামড় দিয়েছে।

নিঝুম বলে উঠল, “বিড়াল! ( অশান্ত’র দিকে ফিরে কিছু শুকতে লাগল।)

শান্ত হতভম্ব! আহিম বলল, “দেখলি বিড়ালের মতো এখন শুকছে!

নিঝুম মুখের ভঙ্গি বদলে দাঁড়িয়ে বলল, “ছিঃ! আপনার গা থেকে বিড়ালের গন্ধ আসছে!

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আহনাফ হেসে বলল, “কি বললে বিড়াল!

তানিশা মুখ ভেংচি কেটে বলল, “ওর গায়ে বিড়ালের গন্ধ আসবে কেন?

“সারা দিন রাত বিড়াল কে কোলে করে রাখলে তো গন্ধ আসবেই!

শান্ত দাঁড়িয়ে নিঝুমের মাথায় বাড়ি মেরে বলল, “ওর নাম বিড়াল না অমি ঠিক আছে চশমিস!

“জাত তো বিড়াল’ই তাই না!

নীলাভ্র জিজ্ঞেস করল, “অমি কে?

সবার চোখে এক প্রশ্ন। শান্ত হেসে বলল, “আমার ছোট্ট নাদুসনুদুস বিড়ালের বাচ্চা!

আহনাফ দাঁড়িয়ে বলল, “কিহহ ? বিড়াল! তততুই বিড়াল পালতে শুরু করলি কবে থেকে?

“দুদিন হবে ?

“শান্ত! যা আমি আর তোর বাসায় যাবো না। এতো কিছু থাকতে শেষে কি না বিড়াল।

“আসিস না। দাওয়াত তো দেই না তবুও সবাই এসে ঘামটি মেরে বসে থাকিস! তোরা না আসলে আমিও একটু শান্তি পাই।

আহিম বলে উঠল, “বিড়ালে আমার সমস্যা নেই। কুকুর হলে যেতাম না।

“চিন্তা করিস না। সেটাও পালা শুরু করবো।

নিঝুম নাক ছিটকে বলল, “ছিঃ ছিঃ ঘরগুলো সব কুকুর আর বিড়ালের আস্তানা হবে।

“হলে বেশ হবে। এতে তোমার কি?

নিঝুম নাক ফুলিয়ে জোরে এক চিমটি মেরে দৌড়ে দূরে এসে বলল, “গতকাল বিড়ালের ভয় দেখানোর জন্য আপনার শাস্তি। এরপর আমার সাথে এমন করলে আপনাকে ইঁদুর বানিয়ে বিড়ালের সাথে ছেড়ে দেবো।

অশান্ত ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে। নিঝুমের পিছন এখন দৌড়ে লাভ নেই। সে এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল নখ বসে আছে। আরে এই তো তাকে খামচি দিয়েছে। কতো বড় বড় নখ কে জানে। ওর নখ গুলো একদিন ধরে কেটে দিবে তারপর দেখবে কিভাবে এমন খামচি দেয়।

বলেই মুখ ফুলিয়ে নিজের জায়গায় বসে পড়ল। সবাই শান্ত’র দিকে তাকিয়ে হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করছে!

—–

তিশা কে বেশ কয়েকদিন ধরেই কেমন অগোছালো অগোছালো লাগছে। আহনাফের কেবলি মনে হচ্ছে তিশা কে সে সময় দিতে পারছে না বলে এই অবস্থা তার। কিছু একটা করে তিশা’র মন ভালো করা উচিত।

অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। তিশা কে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাবে। পছন্দ মতো একটা রেস্টুরেন্টেও ঠিক করা হলো। তাদের কাজ বুঝিয়ে দিল। তিশা এখানে আসা মাত্র’ই তাকে খুশি করবার যেন সব চেষ্টা করা হয়।

আহনাফের বাবা বাড়িতে নেই। দুদিনের জন্য শহরের
বাইরে গেছে। আহনাফ আর তিশা আজ রাতে ডিনার করতে বাইরে যাবে। ফিরতে তাহলে বেশ রাত’ই হবে।ইফা আড্ডা মারার জন্য নিঝুম আর তিথি কে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলো। নিঝুমের মনটা একটু খারাপ আহনাফ
আর তিশা বাইরে যাবে শুনে। কিন্তু সে এবার মন
বোঝাতে শিখে গেছে। তিনজন’ই হাসতে হাসতে বাড়ির কাছে এসে পৌঁছাল। অতঃপর বাড়ির দরজা খুলতেই কিছু একটা পড়তে শুনে তিনজন’ই থমকে গেল। নিঝুম সামনে তাকিয়ে দেখল আহনাফ রেগে তাকিয়ে আছে তিশা’র সামনে। তিশা কেঁদে চলেছে নির্বিকারে। ঘরের জিনিসপত্র পড়ে আছে মেঝেতে। আহনাফ মুহুর্তেই মধ্যেই চেঁচিয়ে উঠল। নিঝুম ভয়ে পিছিয়ে গেল। পুরো শরীর কম্পিত হলো তার। এ আহনাফের কেমন রুপ। ভয়ে আতকে উঠল তিশা! অতঃপর…

#চলবে….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here