#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২২
[ ৩০০০ শব্দের চেয়ে অধিক শব্দের পর্ব আজ। লাইটে শো না করলে দয়া করে মেইন ফেসবুক দিয়ে পড়ে নিবেন ]
শান্ত চোখ মেলে তাকাল। থিতুনি বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। যতক্ষণে চারদিক তার কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করল ততক্ষনে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আহনাফ কে চোখে পড়ল তার। ছোট ছোট চোখ করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ তাকে টানছে। তার শার্টের পেছনের অংশ খামচে ধরে আছে কেউ। তার শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ শান্ত’র কান অবদি ঠেকেছে। এর মানে কতোটা কাছে সে!
তানিশা অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “শশশান্ত তুই!
শান্ত চোখ আবারো বন্ধ! ঘটনার সেখান থেকে মনে করতে লাগলো, নিঝুম সবে এক পা এগিয়ে জোড় গলায় বলে উঠে, “এটা তুমি একদম ঠিক করো নি!
নিঝুমের গলার স্বর পেতেই রেগে যায় তানিশা। দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় পাশে থাকা পানি ভর্তি গ্লাসে। শক্ত গলায় বলে উঠে, “ঠিক ভুল এখন তুমি আমায় শিখাবে!
বলেই গ্লাস হাতে নেয়। নিঝুম তা লক্ষ্য করা মাত্রই পাশে যে ছিল তাকেই টেনে তার সামনে ধরে। পাশের লোকটা যে শান্ত ছিল এতে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। তানিশা পানি ছুঁড়ে মারলে অশান্ত’র মুখেই ছুঁড়ে মারুক। তার মুখে মারবে কেন? মাঝখান দিয়ে ফেঁসে গেল বেচারা শান্ত।
তানিশা আবারো বলে মনে উঠে, “শান্ত তুই কি এই মেয়ে টাকে বাঁচাতে সামনে এলি! এবার তার কন্ঠে রাগ, অবাক আর বিস্ময় তিনটাই লক্ষ্য করা যায়। শান্ত কিছু বলবে এর আগেই পেছন থেকে নিঝুম জোড় গলায় বলল, “হুম! তুমি যা ভাবছো তাই। অশান্ত আমার বন্ধু তাই আমাকে বাঁচাতে উনি এগিয়ে এসেছেন!
অশান্ত চোখ বড় বড় করে সামনে তাকাল। উপস্থিত সবাই অবাক, কেমন একটা গুঞ্জন রটিয়ে গেছে সবখানে। আহনাফ কে দেখে মনে হচ্ছে বেশ মজা পেয়েছে। খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছে সবটা। বোঝাই যাচ্ছে নিঝুম শান্ত কে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। শান্ত ফিসফিসিয়ে বলল, “এসব কি বলছো তুমি!
পেছন থেকে নিঝুম মিনমিনিয়ে বলল, “যা বলছি তাই করুন! মনে রাখবেন আপনার গুলুমলু ছবি কিন্তু আমার কাছে। আমার কথা না শুনলে একদম ভাইরাল করে দেবো আপনাকে!
“কিইই – চেঁচিয়ে উঠে শান্ত!
নিঝুম পেছন থেকে বলে, “অশান্তর বাচ্চা।
শান্ত ঢোক গিলল। রিয়া বলে উঠল, “কি হলো!
“ননা কিছু না।
“নিঝুম যা বলল তা কি সত্যি!
শান্ত ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নাড়ল। তানিশা রেগে হাতের খালি গ্লাসটা ছুঁ*ড়ে ফেলল। সবাই কেঁ*পে উঠলো। হন হন করে হেঁটে বেরিয়ে গেল সে। চোখাচোখি হলো আহনাফের সাথে। আহনাফ দরজায় হেলান দিয়ে শান্ত কে দেখে মুখ টিপে হাসছে। শান্ত’র চোখে মুখে আফসোসের চিহ্ন। এই কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ল সে। এদিকে নিঝুম তার হাত ছাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইফা আর তিথি এতোক্ষণ শুধু নিরব দর্শকের মতোই সবটা দেখছিল। কিছু জিজ্ঞেস করবে করবে করেও আর করা হলো না। আহিম শান্ত:র হাতে রুমাল ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা কি হলো!
শান্ত স্থির চোখে তার দিকেই তাকিয়ে রইল!
——
আহনাফের বেঞ্চিতে বসা নিঝুম। ইফা আর তিথি ক্লাসে, কিন্তু সে যায় নি। কোন মুড নেই এখন ক্লাসের। মনটা ভীষণ খারাপ! ফুলটা রাখতে পারল না, তানিশা কে*ড়ে নিয়ে চলে গেল। আচ্ছা তানিশা কি এভাবেই সবকিছু কে*ড়ে নিবে তার থেকে। অদ্ভুত! এসব কি ভাবছে সে। তার কাছে এমন কি আছে যে তানিশা কে*ড়ে নিবে। আহনাফ! আহনাফ কি তার নাকি যে তানিশা তার থেকে কে*ড়ে নেবে। আদৌও কি এমন কোন সম্পর্ক আছে তার আর আহনাফের মধ্যে। কিন্তু যতদিন তানিশা আছে ততোদিন আহনাফের কাছে ঘেসে থাকা মানে নিজের প্রাণ জল্লাদের হাতে দেওয়া। এর কোন মানে হয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিঝুম। আচ্ছা তার মনে কি আহনাফের জন্য আসলেই কোন অনুভূতি আছে। যদি থেকেও থাকে তাহলে এর নাম কি? ভালোবাসা!
“অসম্ভব নয়, আহনাফ এমন একজন যাকে যে কোন রমনী ভালোবেসে ফেলবে! – কথাটা কানের কাছে কেউ বলল! চমকে উঠল নিঝুম। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল অশান্ত বসা। নিঝুম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,”আপনি এখানে!
“কেন? কোন সমস্যা তোমার?
“না আমার কি সমস্যা হবে।
“তাহলে!
“তাহলে আমার কানের কাছে আবোলতাবোল এসব কি বলছেন।
“আহ আমি তো শুধু তোমার মনের কথাই বললাম। কনফিউশনে ভুগছিলে সলভ করে দিলাম।
“আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছি আমি।
“যাহ বাবা! একটু আগেই সবার সামনে আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়ে এলে আর এখন এই কথা বলছো।যাই হোক! তুমি আহনাফ কে ভালোবাসো এই নিয়ে কোন দ্বিমত আছে নাকি তোমার মনে। থাকলে মেনে নাও নাহলে তানিশা তোমাকে ছাড়*বে না।
“অশান্ত আপনি কি আমায় ভ*য় দেখাচ্ছেন!
শান্ত হেসে নিঝুমের দিকে ফিরল। তার চোখের চশমাটা ঠিক করে দিয়ে বলল, “মিস চশমিশ! আমি যা বলছি তা কি মিথ্যে! তুমি কি তানিশার ভ*য়ে পিছু ফিরে যাচ্ছো না।
নিঝুম উঠে দাঁড়াল। ঠোঁট কামড়ে বলে উঠল, ” কে বললো আপনাকে আমি তানিশা কে ভ*য় পাচ্ছি। আর আমার মনে কি আছে না আছে তা আমি আপনাকে বলতে যাবো কেন? কে আপনি?
শান্ত উঠে দাঁড়াল। নিঝুমের চোঁখে চোখ রেখে বলল, “যদি আমি বলি, তোমার মনে আহনাফের জন্য যেই অনুভূতি সেই একই অনুভূতি:র আভাস আহনাফের মনে পেয়েছি তোমার জন্য তাহলে তুমি কি বলবে!
নিঝুম কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। নিজের কান দুটো কে বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর। হঠাৎ করেই পুরো শরীর কম্পিত হলো। আদৌও কি এটা সত্যি নাকি অশান্ত তাকে ফাসা*চ্ছে।
শান্ত তার মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলল, “যদি তুমি আমায় কথা দাও আমার ওসব ছবি ডিলেট করে দেবে তাহলে আমি তোমায় বলবো আহনাফের প্রিয় ফুল কি!
“অশান্ত আপনি বলছেন আমায়, আহনাফ কে প্রপোজ করতে!
“পেয়ার কা ইজহার আব করভি দো!
“আমি প্রপোজ করলেই তিনি হ্যাঁ করবে এটার সত্যতা কি!
আমি সত্যতার কথা কি বলছি। দেখো তানিশা অনেকদিন ধরেই আছে এই লাইনে কিন্তু তাকে ছেড়ে আহনাফের নজর তোমার দিকে। এর মানে কিছু একটা তো আছে তাই না
*আপনি সত্যি বলছেন!
“তুমিই ভেবে দেখো!
বলেই শান্ত চলে যেতে নিল। নিঝুম চট করে বলে উঠল, “ফুলের নামটা তো বলে যান!
“আগে তুমি কথা দাও!
নিঝুম কিছুক্ষণ অস্বস্তিতে ভুগল। একবার কি চান্স নিয়ে দেখবে সে। অশান্ত কে বিশ্বাস করে আবার ঠকবে না তো। বিচলিত সে। লাফাতে লাগল হুট করেই। শান্ত ভ্রু কুঁচকে নিল। অতঃপর শব্দ করে শ্বাস ফেলে নিঝুম হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, “ডান! আপনার সমস্ত পিক আমি ডিলেট করে দেবো। আপনি শুধু ফুলের নাম বলুন!
“কথা দিচ্ছ!
“নিঝুমের মুখের কথা নড়বড় হবে না।
শান্ত হেসে হাত বাড়াল। দুজনেই হাত মিলাল। শান্ত হেসে বলল, “কাঠগোলাপ! আর প্রতিদিন বিকালের সময় আহনাফের মন অনেক ভালো থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিন বিকেলবেলায় পার্কে বসে বই পড়তে ভালোবাসে সে।
নাও সব বলে দিলাম!
নিঝুম একগাল হেসে বলল, “আচ্ছা!
বলেই হাত ছাড়িয়ে নিল। হাতের ফোনটা বের করল সে।শান্ত নিশ্চুপ! এতোক্ষণ ঠিক থাকলেও এখন কেন জানি তার অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইল সে। নিঝুম হাতটা ছাড়িয়ে নিতেই মনে হলো কিছু একটা হারিয়ে ফেলছে সে।
নিঝুম ফোনটা শান্ত:র মুখের সামনে ধরে বলল, “ডিলেট!
শান্ত কিঞ্চিত হেসে বলল , “ঠিক আছে!
অতঃপর যেতে নিতেই নিঝুম তার বাহু ধরে আটকালো। ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে শান্ত:র দিকে এগিয়ে বলল, “আমাদের বন্ধুত্বের সূচনা!
শান্ত হেসে চকলেট হাতে নিল। অতঃপর ঠোঁট কামড়ে পিছনে ঘুরল। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। এসবের কিছুই বলতো না যতক্ষণ না নিঝুমের মনের কথা টের পেতো। হ্যাঁ আহনাফ কে নিঝুমের কানে ফুল গুঁজতে দেখেছে সে। তখনো কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছিল। বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছিল। কিন্তু সেই ব্যাথার অনুভব কমে গেল তখনি যখন নিঝুমের মুখের কথা শুনল। আহনাফ কে সে পছন্দ করে এতে কোন দ্বিমত নেই। তাহলে তারা থাকুক না একসাথে। এভাবেও আহনাফের সে ফিরে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। হয়তো আহনাফ নিঝুম কে মেনে নিতেও পারে। হ্যাঁ ভালোবাসা কি সেটা হয়তো সে বুঝে না। কিন্তু আহনাফের মনের কথা ঠিক টের পেয়েছিল সে। তার আর নিঝুমের মধ্যে যা হয়েছে সেটা একটা এক্সিডেন্ট এটা মেনে নিতে এখন আর কোন দ্বিধা নেই। হাতের চকলেটের দিকে একবার চোখ বুলাল। না চকলেট এতোও পছন্দ না তার। ছুঁড়ে ফেলে দিল সেটা। হন হন করে হেঁটে চলে গেল সে।
কিছুদূর আগাতেই আবার দাঁড়িয়ে পড়ল। চকলেট তার পছন্দ না কিন্তু নিঝুমের মুখের উপর সেই কথা কেন বলল না সে। আরো আগ বাড়িয়ে চকলেট নেবার কি দরকার ছিল। একটা কথা মনে রাখা উচিত! এখানে নিঝুম আর আহনাফ কে এক করার মাঝে তার স্বার্থ জড়িত। নিঝুমের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতেই এই ব্যবস্থা করেছে সে। এখন আর কোথায় আটকা পড়বে না।
কোন কারণ ছাড়াই আবারো পিছু ফিরল। পড়ে থাকা সেই চকলেট টা উঠিয়ে নিল। ফেলে যখন দিয়েছে তখন উঠানোর কি দরকার ছিল। উফ! তার মন কি করছে এসব। হাতে চকলেট মুঠ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পেছন থেকে আহনাফের গলা, “এখানে কি করছিস? ক্লাসে যাবি না।
“হুমম! বলেই পিছন ফিরল।
“তোর হাতে চকলেট? – অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল আহনাফ!
শান্ত একগাল হেসে বলল, “তোর জন্য, নে ধর!
বলেই আহনাফকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে ফেলল।আহনাফ হেসে চকলেট ধরে ফেলল। অতঃপর প্যাকেট ছিঁড়ে খেতে শুরু করল। শান্ত কে সাধল কিন্তু সে একটিবারও মুখে তুলল না।
——
নিঝুম রাতভর টেবিলে বসে একটা কার্ড বানাল। এই কার্ডে নিজের মনের কথা লিখে অতঃপর এর সাথে এই গুচ্ছ কাঠগোলাপ জড়িয়ে তারপর দেবে আহনাফ কে। কার্ড টা তার নিজের তৈরি। বিভিন্ন রঙের কালি আর স্টিকার দিয়ে বানানো। নিঝুমের হাতের লেখা দরুন সুন্দর! তাই সুন্দর করেই লিখল,
“আই লাভ ইউ আহনাফ!
– নিঝুম!
লেখা শেষ করে ঘাড়ে হাত রাখল।উফ ঘাড় ব্যাথায় আর পারছে না সে। এতোটা কষ্ট করে যদি একটু পড়ালেখা করত তবুও কাজে দিত কিন্তু এটা তো আর অকাজের কিছু নেই। লেখাটা দ্বিতীয়বার পড়তেই লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেল। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা। নাহ আর পারছে না সে। উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকাল সে। কতোটা সুন্দরী সে! খুব সুন্দরী কিংবা আহামরি নয় তবে নিজের মন থেকেই অনেক সুন্দর। কথাটা ভাবতেই একগাল হাসল। বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুয আসছে না তার।সারারাত কি জেগে জেগে কাটিয়ে দেবে নাকি। না না তাহলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যাবে। হুহ এটা হয় না, কাল নিজের ক্রাশের সামনে যেতে হলে যথাসম্ভব সুন্দর থাকতে হবে তাকে। সে যেকোন মূল্যে হোক। কিন্তু ঘুম:ই আসছে না তার। এই অবস্থায় এখন কি করবে সে।
হঠাৎ করেই মনে পড়ল অশান্ত:র কথা। তাকে মেসেজ দিয়ে ফেলল দ্বিতীয় বার না ভেবেই। কিন্তু রিপ্লাই আসছিল না। নিঝুম ধরে নিল হয়তো অশান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর বালিশে মুখ গুজতেই টুং টুং করে ফোনট বেজে উঠল। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে দেখল অশান্ত:র মেসেজ!
“চশমিশ!
“অশান্ত আমি ঘুমিয়ে পড়েছেন!
শান্ত বাইরের দিকে তাকাল। বেলকনির গ্রিলের উপর বসে এতোক্ষণ চিপস খাচ্ছিল সে। তার চোখ থেকে ঘুম উধাও তবুও বলে উঠল, “মাত্র ঘুমানোর তোড়জোড় করছিলাম আর তুমি সব ভেস্তে দিলে।
“অশান্ত আমার ঘুম আসছে না।
“তো আমি করব? ডাক্তার কে ফোন কর।
“আহ! আপনি বুঝতে পারছেন না। জানেন আমার কার্ড বানানো শেষ।
“কিসের কার্ড!
“আচ্ছা ওয়েট! বলেই দ্রুত কার্ডের ছবি তুলে শান্ত কে দিল। খানিকক্ষণ বাদেই টুং শব্দের আওয়াজে ফোন হাতে নিল শান্ত। চশমিশের দেওয়া ছবিট ক্লিক করতেই আহনাফ কে লেখা চিঠি’র লেখাটা স্পষ্ট তার কাছে। কিঞ্চিত হেসে টাইপিং করল।
নিঝুমের ফোন কেঁপে উঠতেই চটপট সেটা হাতে নিল।অশান্ত লিখেছে, “হুম সুন্দর, আহনাফের পছন্দ হবে। আচ্ছা চশমিশ আমার ঘুম পাচ্ছে। টাঠা!
নিঝুম ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে ফোন অফ করল। বালিশে আলতো করে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিল। যেভাবেই হোক এখন ঘুমোতে হবেই।
শান্ত ফোনের দিকে একবার তাকাল। মিস চশমিশ মেসেজ সীন করেছে দেখে ফোনটা অফ করে রেখে দিল। আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে মুখে চিপস পুরল। মনে হচ্ছে বাকিটা রাত আজ আর ঘুম আসবে না। পুরোটা রাত বোধ হয় জেগেই থাকতে হবে তাকে!
—–
বিশাল এই নীল আকাশ আর স্থির! সাদা টুকরো মেঘগুলো ঘুড়ে যাচ্ছে নির্ধিদ্বায়। নিঝুম জানালা খুলে আকাশের দিকে তাকাল। আবহাওয়া টায় দারুন। না বেশি গরম না শীত। একটা পারফেক্ট টাইম বলা যেতে পারে। কিঞ্চিত হেসে দৌড়ে আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে বাথরুমে ছুটল সে। দৌড়াদৌড়ি করে বের হয়ে এলো আয়নার সামনে। দেরি করলে একদম চলবে না আজ! হিনা দরজায় উঁকি মেরে দেখছে নিঝুম কে। লাল রঙের একটা থ্রি পিস পড়নে তারা। চিরুনি দিয়ে টেনে টেনে চুল গুলো আঁচড়ে নিচ্ছে। হিনা জোড় গলায় বলে উঠল, “আস্তে আস্তে, ওই তো একটু খানি চুল মাথায়। এতো জোড়ে আঁচড়ে নিলে তো টাক হতে সময় লাগবে না।
“এই তুই এখানে কি করছিস?
“কি আর করব তোর কান্ড দেখছি! বের হচ্ছিস নাকি?
নিঝুম কানে দুল পড়তে পড়তে বলল, “হুম!
হিনা ভ্রু কুঁচকালো। এবার ঘরের ভিতর ঠুকলো সে। আয়নার ওপাশে এসে দাঁড়াল। নিঝুম ঠোঁটে হালকা লাল রঙের লিপস্টিক দিচ্ছিল। হাতে লাল রঙের চুড়ি পড়তেই হিনা জিজ্ঞেস করে উঠলো, “কোথায় যাচ্ছিস? আর এতো সাজগোজের কি আছে?
“কিছু না;
বলেই পারফিউম টা বের করল। হিনা’র চক্ষু চড়কগাছ। দ্রুত হাত থেকে ছিনিয়ে বলল, *তুই এটা দিবি আজ!
“হ্যাঁ কেন?
“নো ওয়ে? এটা শুধু বিশেষ দিনের জন্য। তোর ফালতু মার্কা দিনে এই পারফিউম ওয়েস্ট করার কোন মানে হয় না।
“আজ আমার জন্য বিশেষ দিন!
“মানে!
নিঝুম দ্রুত পারফিউমটা ছিনিয়ে নিয়ে হাতে মাখল। ঘ্রাণ নিতেই শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “দারুন!
“অনেক হয়েছে রাখ! একদিনেই কি পুরোটা দিয়ে শেষ করবি নাকি।
“চুপ কর হিংসু টে!
আয়নার এদিক থেকে ওদিক ঘুড়ে ফিরে বলল, “কোন কিছু বাদ পড়েছে বল তো!
“না!
নিঝুম তবুও ভ্রু কুঁচকে খানিকক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল, “পড়েছে! আমার চোখের কাজল!
“ওই তো বড় বড় দুটো গোল চশমা পড়ে থাকিস। তোর চশমা রেখে চোখের দিকে নজর কে দিবে বল আমায়।
নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল। অতঃপর চশমা খুলে টিস্যু দিয়ে একটু মুছে নিয়ে বলল, “নতুন একটা চশমা কেনার দরকার ছিল।
“কি শুরু করলি তুই! এতো সেজেগুজে..
কথা শেষ না করেই বিছানার দিকে নজর গেল। নিঝুম তার উড়না ঠিক করছে। হিনা কার্ড টা হাতে নিয়ে বলল, “কিসের কার্ড এইটা!
হিনার হাত থেকে তৎক্ষণাৎ ছিনিয়ে নিয়ে নিঝুম বলে উঠল, “সেটা তোকে দেখতে হবে না । বের হচ্ছি দরজা আটকে দে!
বলেই হন হন করে বেড়িয়ে পড়ল নিঝুম। হিনা মুখ ভেংচি কাটল। বাইরে তো এসে পড়েছে কিন্তু এখন কি করবে। ওহ হ্যাঁ ফুল কিনতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ! নিঝুম পা বাড়াল ফুলের দোকানে!
এক গুচ্ছ কাঠগোলাপ কিনল সে। দোকানের ছোট ছেলেটা কে বলতেই সে ফুলগুলো মুড়ে সাজিয়ে দিতে লাগল। নিঝুম ভাবছে আহনাফের কথা। হঠাৎ তার শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। কেমন এক অনুভুতি। ভেতর থেকে এক ধরণের অস্থিরতা কাজ করছে। কি হবে কিছু জানা নেই। আচ্ছা সে যেটা করছে সেটা ভুল। আহনাফ মানবে তো! উফ বোঝা যাচ্ছে না কিছু। মাথা সবকিছু ঝট পাকিয়ে যাচ্ছে!
এসব চিন্তা ভাবনায় যখন সে বিভোর তখন হঠাৎ কানের কাছে কেউ বলে উঠল, “আরে নিঝুম তুমি এখানে!
নিঝুম ফিরে তাকাল। মুহুর্তে তার চোখ স্থির। আশেপাশে কেউ আছে কি না সেই নজর তার নেই কিন্তু সামনের মানুষটার থেকে নজর সরানো যাবে না ভুলেও। নিঝুম অনেকটা বিভোর হয়ে গেল। কেন জানি আজ আহনাফ কে একটু বেশিই সুন্দর লাগছিল তার কাছে। এর কারণ আছে বটে। আহনাফের পোশাকে আজ কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। চেহারায় এক ধরণের লাবণ্য!
“তুমি এখানে!
ঘাবড়ে গিয়ে, “আসলে!
তখনি ছেলে টা এসে ফুল গুলো দিল নিঝুমের হাতে। নিঝুম ফুল গুলো বাড়িয়ে নিতেই আহনাফ বলে উঠল, “ফুল নিতে এসেছ?
“হুম!
“বাহ কাঠগোলাপ! আমার প্রিয়!
কথাটা শুনে কিছুটা স্বস্তি এলো। এর মানে অশান্ত তাকে মিথ্যে বলে নি। হঠাৎ আহনাফ বলে উঠল, “তোমায় আজ অনেক সুন্দর লাগছে তো! সেজেছো দেখছি!
কথাটা শুনেই খানিকটা লজ্জা পেতে লাগল। ঠোঁট কামড়ে ধরল নিঝুম। হঠাৎ দেখল আহনাফও ছেলেটার কাছ থেকে ফুলের তোড়া নিচ্ছে। কিন্তু এই তোড়াটা আলাদা, আগে থেকেই তৈরি করা ছিল। হয়তো আগে থেকেই অর্ডার করে রেখেছিল। আহনাফের পছন্দ কাঠগোলাপ কিন্তু সে কেনো গোলাপের তোড়া নিল। বিভ্রান্ত নিঝুম জিজ্ঞেস করল বসল, “কাউকে দিবেন এটা!
আহনাফ ফুলের দিকে তাকিয়ে হাসল। অতঃপর নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, “হুম!
*কে সে?
আহনাফ ঘড়ির দিকে তাকাল। অতঃপর ঠোঁট ভিজিয়ে নিঝুম কে বলল, “তুমি কি এখন ব্যস্ত!
নিঝুম মাথা নেড়ে না বলতেই আহনাফ চট করে তার হাত টেনে ধরে বলল , “আমার সাথে এসো তাহলে!
বলেই তাকে গাড়িতে বসাল। নিঝুম একটু অবাক হলো। আহনাফ অনেক তাড়াহুড়ো করছে। বোধহয় কোথায় যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আহনাফ বলে উঠল, “আজ আমার জন্য একটা বিশেষ দিন। এসময় তোমার মতো একটা সঙ্গী থাকলে খারাপ হবে না।
নিঝুম মুখ ফিরে তাকাল। আহনাফ গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল। নিঝুম আমতা আমতা করে বলেই উঠল,”আমরা কোথায় যাচ্ছি!
“এয়ারপোর্ট এ!
“এয়ারপোর্ট! কারো কি আসার কথা আজ।
“হুম!
বলেই আহনাফ সামনে তাকাল। নিঝুম খানিকটা অবাক হলো। সবকিছু যেন তার কাছে অনেকটা ঘোলাটে লাগছে। নিঝুম পেছনের সিটে তাকাল। তাজা গোলাপের তোড়া খুব যত্নে রাখা সেখানে। এর সাথে এক প্যাকেট চকলেটের বক্স। শুকনো ঢোক গিলল নিঝুম। আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে বার বার একটা কথাই উঁকি দিচ্ছে! যে আসছে সে হয়তো আহনাফের অনেক কাছের কেউ। ঠিক কতোটা কাছের সে জানে না তবে তার থেকে বেশি কাছের কেউ।
এক হাত দিয়ে অন্য হাত চেপে ধরল। উত্তেজনায় পুরো শরীর কাঁপছে তার। জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না কে আসছে। এর মাঝেই হঠাৎ আহনাফ কাউকে ফোন করতে থাকে। তার কানে ব্লুটুথ। অনেকবার কল করে যাচ্ছে কিন্তু কেউই ধরছে না। নিঝুম জিজ্ঞেস করল, “এতোবার কাকে কল করছেন!
“শান্ত কে! আই মিন অশান্ত। কিন্তু ও ফোন’ই তুলছে না। বলো দেখি কেমনটা লাগে। তিশা এসে আমার পরেই ওকে খুঁজবে কিন্তু আজ ওর পাত্তা নেই।
“তিশা! কে তিশা!
আহনাফ কেমন চুপ হয়ে গেল। নিঝুমের দৃষ্টি তার উপর। আনহাফের চোখ মুখ যেন বলে দিচ্ছে কে তিশা। এটা ভাবতেই তার বুকে কামড় দিয়ে উঠল। হাতের ফুল গুলোকে মুচড়ে ধরল সে। আহনাফ কি বলতে চলেছে সে। আহনাফ কিঞ্চিত হাসল। চোখে মুখে লজ্জার ছাপ নিশ্চিত। ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “যার অপেক্ষা আমি এতো বছর ধরে করছিলাম সে আসছে নিঝুম। অনেক অপেক্ষা করেছি আমি তার জন্য। আজ আমার অপেক্ষার অবসান ঘটবে!
নিঝুম নিশ্চুপ। তার শরীর ঝিম মেরে বসে আছে। কান দুটো বিশ্বাস করতে চাইছে না আহনাফের মুখের কথা গুলো। ভাগ্যের কাছে বিনীত করছে সব যেন মিথ্যে হয়ে যায়।
——–
শান্ত আজ সারাটা দিন ঘুমিয়ে কাটাল। মাঝে একবার উঠে গোসল সেড়ে জুম্মার নামাজ আদায় করে না খেয়েই আবার শুয়েছে। গতকাল সারারাত জাগার ফল এইটা। সেই কখন থেকে কানের ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। অনেকটা বিরক্ত হয়েই ফোন ধরল। শেষ কলটাও মিস করল শান্ত। সব কল আহনাফের। প্রায় ৩০+! কিন্তু এতো কল কেন? মেসেজ ও আছে অনেকটা। শান্ত একটা মেসেজ ওপেন করল। ঘুমের ঘোরে যা দেখল তা দেখেই চমকে উঠলো সে। চোখ দুটো কে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পুরো এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠলো। আবারো পড়তে লাগলো মেসেজটা!
“তিশা আসছে, এয়ালপোর্ট এ দেখা কর!
এতো টুকুই লেখা শুধু। কি মানে এর! তিশা আসছে, কবে আসছে কখন আসছে মানে কি? কিভাবে হয় এসব। আজ হঠাৎ তিশা! কিছুই মাথায় ঢুকছিল না শান্ত’র। আবারো আহনাফ কে কল করল সে । কিন্তু আহনাফ কল তুলছে না। মূলত কল যাচ্ছে না, নেটওয়ার্ক এ প্রবলেম। হঠাৎ মনে পড়ল চশমিশের কথা। আজ চশমিশ যাবে আহনাফের কাছে। একথা ভাবতেই দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকল সে। কোনমতে চেঞ্জ করে বাইকের চাবি নিয়ে ছুটল। কি হবে এখন? মিস চশমিশ ঠিক থাকবে তো!
আহনাফ গাড়ির সামনের আয়নার দিকে তাকাল। নিঝুম কে বিচলিত লাগছে কিন্তু এর মাঝে তাকে বেশ সুন্দরও লাগছে। হুট করেই সে বলে উঠল, “নিঝুম তুমি কিন্তু বেশ সাজতে পারো। কোন বিশেষ দিন কি আজকে!
নিঝুম হতচকিয়ে গেল। বার বার বলে উঠল, “না না না! তেমন কিছু না।
“আহ এতো উত্তেজিত হবার কি আছে? আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম!
বলেই একগাল হাসল। গাড়ি ব্রেক কসল। চোখ ফিরে সামনে তাকাল নিঝুম। আহনাফ গাড়ি থেকে নামল। সেই দেখাদেখি নিঝুমও নামল। আহনাফের ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, “এসো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো ওকে। তোমাকে দেখলে খুব খুশি হবে। আমি তোমার অনেক গল্প বলেছি তিশা কে!
নিঝুম হাসার চেষ্টা করল। আহনাফ ফোন হাতে নিয়ে দেখল নেটওয়ার্কের প্রবলেম। সে একটু আগে আগে হাঁটতে লাগল। পিছনে নিঝুম গুটিগুটি পায়ে আসছে। তার ইচ্ছে করছে না যেতে। মনে চাইছে এখান থেকেই পালিয়ে যাবে। তাহলে হয়তো কষ্টটা একটু কম পাবে। কিন্তু যেতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার ভাবনা সব মিথ্যে মিলিয়ে যাবো।
আরেকটু আগাতেই একটা মেয়ে কে দেখল দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরতে আহনাফ কে। থেমে গেল নিঝুম। তার দৃষ্টি স্থির। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে সাবলীলভাবে। আশপাশের মানুষ তাকিয়ে আছে, কিন্তু এতে তাদের কোন ভাবনা নেই। নিঝুম তবুও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মেয়েটার মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না সে। তার মুখের উপর সানগ্লাস! সে বলে উঠল, “ফাইনালি! ফাইনালি এতোদিন পর আমাদের দেখা হলো। ইন নো আহনাফ, কতোটা মিস করেছি তোমায় আমি!
বলেই হুট করে তার ঘাড়ে চুমু খেল। হাসির শব্দ ভেসে এলো আহনাফের। সে তিশা কে ছেড়ে দিল। কানের কাছে হাত রেখে কপালে চুমু খেল। হাসির রেখা দেখা গেল তিশা’র মুখেও। একমাত্র ছলছল চোখে একজন’ই তাকিয়ে আছে, সে হচ্ছে নিঝুম! এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দূরে চলে গেল সেখান থেকে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না তার। বাইরে আসতেই একটা ট্যাক্সি দেখে তাতে উঠে গেল। গাড়ির মধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। বার বার মনে হচ্ছে এসব মিথ্যে! যদি মিথ্যেই হয় তাহলে পালিয়ে যাচ্ছে কেন সে। আহনাফের ভালোবাসার মানুষ কি তবে সত্যি আছে, যদি এমন’ই হয় তাহলে অশান্ত কে বললো তাকে এই কথা। মিথ্যে সুখের আশা দেখিয়ে দুঃখ বাড়ানোর কি দরকার ছিল। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে আছে তবুও কান্নার শব্দ হচ্ছে। এতোটা কষ্ট আগে কখনো পায় নি। কষ্ট যেনো থামার নাম নিচ্ছে না। চোঁখের চশমা খুলে রেখে এবার পুরো মুখ হাত দিয়ে ঢেকে রাখল। ড্রাইভার একটু পর পরই আড়চোখে তাকাচ্ছে। তিনি বিরবির করে বলছে, “হয়তো বেচারির আপন কেউ আজ চলে গেছে, এজন্য এভাবে কাঁদছে! মুখে কিছু না বলে গাড়ির গতি বাড়ালেন তিনি!
“কেমন আসা হলো?
“দারুন! কিন্তু তুমি লেট।
“আহ রাস্তায় জ্যাম ছিল।
“বাংলাদেশের একটা পার্মানেন্ট অজুহাত রাস্তায় জ্যাম ছিল।
“আহ আমি সত্যি বলছি।
“হয়েছে রাখো! শান্ত কোথায়? ওর সাথে দেখা হয় না অনেকদিন, কথাও হয় না। ভাবলাম আজ আসবে আসে নি।
“আসছে, তার আগে ওর সাথে পরিচয় হও। নি..
তিশা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে, “কে?
“নিঝুম! মানে এখানেই ছিল এতোক্ষণ। কিন্তু কোথায় গেল ?
“মনে হচ্ছে তুমি তোমার এক গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এসেছো আরেক গার্লফ্রেন্ড দেখানোর জন্য তাই বেচারি ভয়ে পালিয়েছে।
“তিশা!
“আহ মজা করছি।
“কিন্তু মেয়েটা গেলো কোথায়? বড় চঞ্চল ও।
“বাহ ভালোই জানো দেখছি।
আহনাফ হেসে তিশার হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে বলল, “চলো!
বলেই এগিয়ে যেতে লাগল। বাইরে এসেও নিঝুম কে পেলো না আহনাফ। অতঃপর তিশার হাত ছেড়ে গাড়ির দরজা খুলে চেক করল। না ভেতরে ও নেই। এর মাঝেই দ্রুত গতিতে বাইকের আওয়াজে সামনে ফিরল। শান্ত কে দেখে কিঞ্চিত হাসল আহনাফ। গাড়ির উপর হাত রেখে বলল, “আসলি তবে!
হেলমেট খুলে, “সরি লেট!
তিশা বলে উঠে, “মনে পড়ে আমাকে!
শান্ত হেসে বলল, “ফাইনালি কিন্তু হুট করেই।
“ভাবলাম একটু সারপ্রাইজ দেই আর কি! হি হি..
শান্ত এগিয়ে আসতেই তাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে করল। আহনাফ পেছনের সিট থেকে ফুল গুলো বের করতেই হঠাৎ নিঝুমের আনা সেই ফুল গুলো তার সিটে পড়ে থাকতে দেখল। এগুলো আগেও দেখেছিল কিন্তু এখন একটু অবাক হলো তার কারণ এখানে একটা কার্ডও আছে। এটা আগে চোখে পড়ে নি তার। আহনাফ সেটা হাতে নিল। শুধু কৌতুহল বশত তা খুলে দেখতে নিল। এদিকে শান্ত চোখ ফিরিয়ে আহনাফের দিকে তাকাল। চশিমশ কে নিয়ে তার অস্থিরতা বাড়ছে। তার সাথে কি আহনাফের দেখা হয়েছিল নাকি। কিছু কি বলেছে, কিছু কি হয়েছে? ভাবতে ভাবতেই হুট করে দেখল আহনাফের হাতের সেই কার্ড। মুখ রক্তশূন্য! আহনাফ কি কার্ডটা পড়ে ফেলল নাকি!
#চলবে….