তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২
.
.
.
“সর্বনাশ! একি করলে তুমি। ফুলটা আবারো কেন তুললে মাটি থেকে!
নিঝুম হাত দিয়ে ফুলটাকে ছুঁইয়ে দিয়ে বলল, “তাহলে কি বলছো? এতো সুন্দর ফুলটা কে এভাবে ফেলে দিতাম!
“অনেক বড় ভুল করেছ তুমি! অনেক বড়! তানিশা যদি জানতে পারে আহাদের দেওয়া ফুল সে ছাড়া অন্য কোন মেয়ে ছুঁয়েছে তাহলে তার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে!
নিঝুম বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। একটা ফুল ধরলে এমন কি হতে পারে এটাই বুঝতে পারছে না সে। তার সামনের দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা আশপাশ তাকিয়ে বলল, তোমার ভাগ্য ভালো, কেউ দেখতে পায় নি এখনো নাহলে..
“দেখেছে!
“কি বললে তুমি!
“একজন দেখেছে!
“কে সে?
নিঝুম হাত দিয়ে ইশারা করে বেঞ্চিতে বসে থাকা সেই ছেলেটার দিকে বাড়াল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বিস্তারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিঝুমের হাত শক্ত করে ধরে বলল, আহাদ! পালাও এখান থেকে তাড়াতাড়ি।
অতঃপর দুজনে দৌড়ে এসে এক কোনে জড়ো হলো। নিঝুম ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল, ধন্যবাদ তোমাকে! কিন্তু তোমার নাম কি?
“আমি! আমার নাম তিথি! তোমার নাম?
“নিঝুম! আচ্ছা তিথি তুমি এভাবে দৌড়ে এলে কেন? ওই ছেলেটা তো অনেক ভালো।
“তুমি কি আহাদের কথা বলছো!
“ওর নাম বুঝি আহাদ!
“হুম, আমার ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যারের একমাত্র ছেলে! অবশ্য একটা বোনও আছে তার।
“ওহ আচ্ছা!
“তুমি এখনো ফুলটা কে হাতে নিয়ে আছো।
“কিন্তু ওই মেয়েটা তো ফুলটা ফেলে দিল। এখন আমি নিলেও কি খুব সমস্যা হবে।
“খুব সমস্যা না বিরাট সমস্যা। আহাদের দেওয়া ফুলটা শুধু তানিশা’ই নিতে পারে!
নিঝুম কিছু বলার প্রয়াস করতেই কয়েকজনের কথা শুনতে পেল। দু’জনেই আড়াল হয়ে গেল। উঁকি দিয়ে দেখল এগুলো তানিশার দল! তিথি ফিসফিস করে নিঝুম কে বলল, আজ কি তোমার প্রথম দিন!
নিঝুম মাথা নাড়ল। তিথি হাত দেখিয়ে বলল, তাহলে তো তুমি কিছুই জানো না। আমি বলছি শোন, ওই যে মেয়েটা দেখছ।
“অনেক সুন্দরী!
“পেত্নি একটা, ওর নাম’ই তানিশা। পাশে দুটো চামচা রিয়া আর দিয়া! আর এই যে দেখছো ছেলেটা…
“আমার হাতে যে চিরকুট দিল!
“অনেক বদমাইশ একটা ছেলে, ওর নাম আহিম। তার পাশের একটার নাম নীলাভ্র আর আফিন!
“ওহ আচ্ছা!
“আরো আছে। এরা হচ্ছে এখানকার ফেমাস সিনিয়র গ্যাং! এদের দাপট বরাবর চলে এখানে। সবাইকে সবসময় হেনস্তা করে থাকে এরা। এদের কে এখানে সবাই gang devil বলে ডাকে।
“কি ভয়ানক!
তিথি নিঝুমের মুখ চেপে ধরল। তানিশার দল এখনো এখানে। চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে। তিথি ভাবল তানিশা হয়তো এখানে আসবে। তানিশা আগালো কিন্তু এলো না। নিঝুম শুনতে পেল আহাদের থেকে ফুল পাওয়ায় তার বেশ রাগ হচ্ছে। তবে কেন? ফুলের থেকেও আর বেশি কিছু কি’ই বা থাকতে পারে। এটা পেলে কে সে রাগ করবে! তানিশা দলবল নিয়ে চলে গেল। তিথি হাত ছেড়ে দিল। দু’জনেই চাপা শ্বাস ফেলল। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। নিঝুম বলে উঠল, তুমি তো অনেক কিউট আর সুইটও!
“তবে তোমার সময় এখন ভালো যাচ্ছে না। আমি বলছি তোমায়, কথা শোন gang devil ‘র লিডার হচ্ছে আহাদ আহমেদ আর শান্ত চৌধুরী!
“কিইইই?
“এখন বুঝলে তো তোমাকে কেন আহাদের থেকে দূরে সরিয়ে আনলাম। আমার কথা শোন, তানিশা ফুল পাবার পর যদি তা ফেলে দেয় তাহলে ভার্সিটির কোন মেয়ের বা ছেলের কারো’ই সেই ফুল নেবার অধিকার নেই?
“তাহলে এতো সুন্দর ফুলটা কি এভাবে পড়ে থাকবে মাটিতে..
“কখনো না, শান্ত এসে তুলবে না। ফুলের অধিকার যদি দ্বিতীয় কারো থাকে তবে সেটা শুধু মাত্র শান্ত। আমি তোমাকে বলছি শোন, গতকালও একটা মেয়ে হুট করে এমন ফুলটা তোলায় তানিশা তাকে খুব খারাপ ভাবে হেনস্তা করিয়েছে। এমনকি সবার সামনে তার চুল গুলো অবদি কেটে দিয়েছে।
“অ্যাআআআআ!
“হুম! তবে পুরো চুল কাটে নি। কিন্তু মেয়েটার চুল অনেক সুন্দর আর লম্বা ছিল। সেগুলো কেটে ছোট করে দিয়েছে।
“কেউ কিছু বলেনি।
“দেখেছে সবাই তবে কেউই কারও সাহস নেই, কেউ এসে স্যার কে বিচার দিবে না। কে চায় বলো নিজের ক্ষতি করতে!
নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে নিজের চুলের দিকে তাকাল। এই একটু খানি চুল।যদি এগুলো কেটে দেয় তখন…
নিঝুম চেঁচিয়ে বলল না! লাফাতে লাগলো। তিথি কে ধরে বলল, বলো বলো এখন আমি কি করবো। তাড়াতাড়ি বলো!
“একটাই কাজ করতে পারো, ফুলটা যেখানে ছিল সেখানে রেখে আসো। তবে সাবধান! কেউ যাতে না দেখে। শান্ত এখনো আসে নি তবে এসে পড়বে। আর সবার আগে এই ফুলটা কেই নিতে আসবে! তাই তাড়াতাড়ি যাও তুমি!
নিঝুম আর দাঁড়াল না। ফুল হাতে দৌড়ে কাজে আসতেই যেমন তেমন করে দাঁড়িয়ে গেল। কারণ তানিশার দল সেখানেই দাঁড়ানো। নিঝুম উঁকি দিয়ে দেখছে তানিশা আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আহাদের চোখ এখন তার বইয়ের ভিতর। কি সব কথাও বলছে কিন্তু নিঝুমের কানে তা এলো না। কান একটু খাড়া করল কিছু শোনার জন্য পরক্ষণে চুল কাটার কথা মনে পড়ল। না না যদি দেখতে পায় তখন তার কানও কেটে দিতে পারে!
নিঝুম তার দুই কান হাত দিয়ে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। আহাদের চোখ গেল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নিঝুমের দিকে। দুই কান হাতে দিয়ে কি ভাবছে মেয়েটা। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ পড়ল ফুল তার হাতে। এটা দেখেই কিঞ্চিত হাসল সে!
দোয়া দরুদ যা জানা ছিল তা সব পড়ল। কোন টাই বাদ রাখল না। চোখ বন্ধ করে পড়েই যাচ্ছে। তানিশার দল যেন এখান থেকে চলে যায় সেই দোয়ায় করছে। দোয়ার ফল কাজে দিয়েছে। তারা চলে গেছে। নিঝুমের খুশি আর দেখে কে। খুশিতে লাফাচ্ছে সে। আহাদ বিষয়টা লক্ষ্য করছে। নিঝুম ফুল হাতে সেখানে এসে দাঁড়াল। কিন্তু ফুলটা কোথায় পড়েছিল সেটাই বুঝতে পারল না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে’ই ঘুরপাক খেতে লাগল। অতঃপর নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি মেরে বলল, পাগল গেছিস তুমি নিঝুম, কোথায় পড়েছিল এটা কোন ম্যাটার হলো। এক জায়গায় রাখলেই তো হলো!
অতঃপর নিঝুম ফুলটার দিকে তাকিয়ে বলল, আহ অনেক সুন্দর দেখতে তুমি কিছু আজ এই সৌন্দর্য আমার জন্য না। অতঃপর তাকে নিচে রেখে যেই না হাত উঠাতে যাবে ওমনি দেখল একটা বাইক দ্রুত গতিতে তার দিকেই ধেয়ে আসছে। নিঝুম ভয়ে চোখ মুখ খিচে নিল! আহাদ উঠে দাঁড়াল। বাইক এসে নিঝুমের পাশ দিয়ে ঘেসে গেল। বাইক থামল সামনেই। বাইক থেকে পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসতে লাগলো নিঝুমের কানে,
“এই মেয়ে! তোমার সাহস কি করে হয় ফুলটার দিকে হাত বাড়ানো।
চোখ মেলে তাকাল নিঝুম। সেই ছেলেটা এসে পড়ে থাকা ফুলটাকে হাতে নিল। মাথার হেলমেট খুলে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম কে এক থমক দিয়ে বলল, ফুলটার দিকে হাত বাড়িয়েছ, এতো সাহস হয় কিভাবে তোমার।
“আমি ধরি নি তো, ফুল তো আমি ধরি নি।
“কি বললে!
তখনি দৌড়ে এলো তিথি। চট করে বলল, সরি ভাইয়া। ও নতুন তাই কিছু বুঝতে পারে নি। কিন্তু ফুলটা ও ছুঁইয়ে দেখে নি। সত্যি বলছি!
নিঝুম মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি সত্যি আমি ফুল ছুঁইয়ে দেখে নি!
শান্ত আড় চোখে তাকাল। কিছু না বলে চলে গেল। দু’জনেই হাফ ছেড়ে বাঁচল!
—–
শান্ত ফুল হাতে আসল আহাদের কাছে। পাশে বসে বলল, তানিশা আজও রিজেক্ট হয়েছে?
আহাদ কিঞ্চিত হাসল। শান্ত আহাদের বই টা সামনে থেকে সরিয়ে বলল, তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আমি বই না।
“হুম তোর কথা তো শুনছিলাম।
“তাহলে মনোযোগ দিয়ে শোন।
“কি শুনবো।
“তুই এখনো তার অপেক্ষা করবি, তোর মনে হয় সে ফিরে আসবে।
“আমাকে কথা দিয়েছিল সে।
“তানিশা কি দেখতে খারাপ
“না সুন্দরী!
“তাহলে..
“কিন্তু আমার মনে এখন সে বন্দি!
শান্ত হাসল। ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল, ফুল দিয়ে রিজেক্ট করার কারণ কি জানতে পারি!
আহাদ হেসে বলল, ভালোবাসা আমার কাছে খুব মধুর একটা বিষয়। মৌমাছি ফুল থেকেই সেই মধু আহরণ করে। তার মানে ফুল মধুর উৎপত্তি! ভালোবাসা কে অবহেলা করা উচিত না। ভালোবাসার মধুরতা অনেক খানি, তাই আমি সেই ভালোবাসার ফুল দিয়েই তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।
“কিন্তু সবাই এর কদর বুঝে না।
“কেউ একজন তো আছে যে বুঝবে!
শান্ত মৃদু হাসল। আহাদ তার ব্যাগ থেকে দুটো ব্রেসলেট বের করল। শান্ত’র হাত ধরে ব্রেসলেট সে হাতে পড়িয়ে দিয়েছিল বলল, আমাদের বন্ধুত্বের চিহ্ন এটা!
“এসবের কোন দরকার নেই বুঝলি!
“হুম, নে আমাকে পড়িয়ে দে।
শান্ত হেসে আহাদের হাতে ব্রেসলেট পড়িয়ে দিল। চিকন চেইনের রুপোর রঙের ব্রেসলেট!
—-
“আজ খুব বেঁচে গেছি।
“অনেক বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। কিন্তু একটা কথা আমি এখনো বুঝতে পারি নি জানো।
“কোন কথা?
“তানিশা চিরকুটে কি লিখেছিল?
“প্রেমপত্র!
“মানে..
“আসলে আহাদ একটা মেয়ে কে ভালোবাসে। তবে সেই ভালোবাসা তার নেই এখানে। তাই তানিশা রোজ একটা করে চিরকুট পাঠায় আহাদের কাছে। তাতে অবশ্য ভালোবাসার কিছু কথা লিখা থাকে কিন্তু আহাদ আজ অবদি সেই চিরকুট পড়ে দেখে নি।
“ফুল দেবার কারণ!
“চিরকুট প্রত্যাখ্যান করেছে তাই!
“কি!
“হুম!
“এই ভালোবাসা তো দারুন। ফুল দেবার মাধ্যমে নিজের মত জানানো। যেখানে সেই মতের উওর না।
“দারুন না বিষয়টা!
“অনেক অনেক দারুন!
পেছন থেকে একজন বলে উঠল,
“কোন দারুন বিষয় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে!
নিঝুম আর তিথি দুজনেই পিছন ফেরল। একটা মেয়ে দাঁড়ানো। মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দরী। বিশেষ সুন্দর তার টানা টানা চোখ গুলো! তিথি এসে তার হাত ধরে বলল,
“এ হচ্ছে ইফা! ইফা আহমেদ! আহাদের বোন।
ইফা হেসে বলল, চাচাত বোন!
নিঝুম হেসে বলল, আমি নিঝুম!
তিথি বলে উঠল, নিঝুম মজার বিষয় হচ্ছে ইফা gang devil এর বন্ধু হয়েও তাদের সদস্য না। ও আমাদের বন্ধু! আর ইফা, নিঝুম হচ্ছে আমাদের নতুন বন্ধু!
ইফা হাত বাড়িয়ে এসে নিঝুম কে জড়িয়ে ধরল। নিঝুমের বেশ ভালো লাগল। তিথি লাফিয়ে বলল, আমাদের তিন বান্ধবীর গ্যাং! উফফ কি মজা!
ইফা আর নিঝুম হেসে দিল!
—-
ক্যাম্পাসে একা দাঁড়িয়ে নিঝুম। ইফা আর তিথি গেছে আইসক্রিম আনতে। নিঝুম দাঁড়িয়ে ভাবছে আজকের এই একদিনে কতো কিছু হয়ে গেল। বাবা ভাবা যায় না, নিঝুম আজ তুই কতো কান্ড করলি! হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ বলে উঠল, তুমি সেই মেয়েটা না, যে ফুলটা আগে তুলেছিলে!
নিঝুমের আত্মা কেঁপে উঠলো। তার পুরো শরীর কাঁপছে। তবুও সাহস নিয়ে পেছন ফিরে বলতে নিবে, আমি তো..
কিন্তু বলার আগেই চুপ হয়ে গেল সে। অতঃপর!
#চলবে….