#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৯ [ প্রথমাংশ ]
“তিশা!
তিশা হতভম্ব হয়ে পিছনে তাকাল। দরজার কাছে দাঁড়ানো আহনাফ। তার কথাই এতোক্ষণ ভাবছিল সে। হুট করেই দেখতে পেয়ে যেন ভয় পেয়ে গেল । আহনাফ কিঞ্চিত হেসে এগিয়ে এলো। পেছন থেকে দুই বাহুতে তিশা কে জড়িয়ে ধরে বলল, “কি হলো? ভয় পেয়ে গেলে নাকি!
“না হুট করে মানে তাই একটু..
আহনাফ নিজের থিতুনি টা রাখল তিশা’র ঘাড়ে। তিশা’র অস্বস্তি লাগতে শুরু করছে। নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে বারবার। আহনাফ তার গালে আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিল। তিশা ঠোঁট গিলল। ধীর কন্ঠে বলে উঠল, “ছাড়ো আমায়!
আহনাফ তাকে ছেড়ে দিল। হাতের প্যাকেট টা তার হাতে দিয়ে বলল, “তৈরি হয়ে আসো!
“কেন?
নিজের মুখটা তার কানের কাছে নিয়ে বলল, “তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে! আমি আসছি তুমি তৈরি হয়ে নাও।
বলেই বেরিয়ে গেল আহনাফ। তিশা দাঁড়িয়ে রইল। না এভাবে আর চলতে পারে না। এর পর হয়তো না বললে আহনাফ আরো বেশি কষ্ট পাবে। এর চেয়ে ভালো না এখনি তাকে সবটা বলে দেওয়া। এখনি বলবে!
মনে করেই পেছন পেছন গেলো সে। আহনাফ সিঁড়ির কাছেই দাঁড়ানো ছিল। তিশা ছুটে গেল তার কাছে। আহনাফ কে ডাকতে যাবে অমনি তার ফোনটা বেজে উঠল। আহনাফ তার ফোনে মগ্ন! ওপাশ থেকে কারো সাথে বলার শব্দ আসছে। কথাটা তিশা কে নিয়েই হচ্ছে। তার সাথে আজ সময় কাটানোর সমস্ত মুহুর্ত বলছে কাউকে। আর সাহস হলো না তার। যেমন ভাবে ছুটে এসেছিল ঠিক তেমনি নিঃশব্দে চলে গেল সে। বিছানার ওপাশে বসেই কাঁদতে শুরু করল সে। কি করবে কিছুই পারছে না। এসময় তার ফোনে মেসেজের টুং শব্দ এলো। চোখের পানি মুছে ফোনটা হাতে নিল সে। এটা তার মেসেজ! স্পষ্ট ভাষায় লেখা তাকে আজ’ই ফ্লাইটে উঠার কথা বলা হয়েছে। না হয় কাল সে আসবে!
তিশা নিঃশব্দে ফোনটা রেখে দিল। কোন জবাব না দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিল আহনাফের দেওয়া প্যাকেট টা! লাল রঙের খুব সুন্দর একটা গাউন! লাল রঙ তিশা’র বেশ পছন্দ, আহনাফ ভুলে নি সেটা। তিশা ড্রেস টা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। বেশ মানাবে তাকে। আহনাফের পছন্দ বরাবরই সুন্দর!
ঠোঁটে লাল রঙের গাঢ় দিয়ে সাজ শেষ করল তিশা! আহনাফ দরজায় কড়া নাড়ল। ওপাশ থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে, “তিশা তৈরি তুমি!
তিশা উঠে দাঁড়াল। ফোনটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে সামনাসামনি হলো আহনাফের। আহনাফ বিস্মিত চোখে শুধু তাকিয়ে আছে তিশা’র দিকেই।
“কি দেখছো ওমন ভাবে!
আহনাফ লজ্জা পেয়ে গেল। নিজের চোখ সরিয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বলল, “না কিছু না!
“আহনাফ আমি তোমায় কিছু বলতে চাই!
“আচ্ছা শুনবো, কিন্তু তার আগে এসো আমার সাথে..
বলেই তিশা’র হাত ধরল সে। দ্বিতীয় বার দৃষ্টি মেলে তাকাল তিশা’র দিকে। বেশ সুন্দর লাগছে আজ তাকে। আহনাফের পড়নে আজ সাদা রঙের স্যুট! লালের পাশে সাদা! হ্যাঁ দারুন লাগবে। আজ তাকে আর আহনাফ কে সবচেয়ে সুন্দর কাপলের মধ্যে একজন লাগবে। আহনাফ তিশা’র নরম দুটি হাত নিজের আয়ত্তে এনে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিশা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। যেভাবেই হোক আহনাফ কে আজ সবটা বলবে সে। আজ বলতেই হবে তার!
“আহনাফ! আমার কথাটা একটু শোন!
“বললাম তো সব শুনবো। তুমি আমার সাথে এসো।
“কথাটা খুব জরুরী আহনাফ..
কথা বলতে বলতে তিশা’র গলা ধরে এলো। আহনাফ ততোক্ষণে তার হাত ধরে নিচে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। সে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল তিশা’র চোখের কোনে অশ্রু জমে আছে। যে কোন মুহূর্তেই তা গড়িয়ে পড়বে। আহনাফ বিচলিত হয়ে পড়ল। তিশার দুই গালে হাত রেখে বলে উঠল, “কি হলো তিশা, তুমি কাঁদছো কেন কেন? কি হয়েছে?
মুহুর্তেই আহনাফ কে জড়িয়ে ধরল তিশা। শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল সে। হাউমাউ করে কাঁদছে তিশা, আহনাফ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কি হলো এমন, কেনো কাঁদছে তিশা!
হাতের ফোনটা আবারো শব্দ করল। তিশা এবার কান্না থামাল! দু চোখ মুছে তাকাল ফোনের স্ক্রিনে! কোন একটা ভিডিও সেন্ড হয়েছে এই মাত্র। তিশা সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল। দুটো কাঁপছে তার। আহনাফ তিশার এমন হাল কে খুব অবাক হলো। তার দিকে এগিয়ে যাবার আগেই ফোনটাকে জোরে আছাড় মারল তিশা। আহনাফ হতবাক। তিশা কে আগলে নিতে চাইলে তিশা তার থেকে ততোটাই দূরে সরে যেতে চাইলো। আহনাফ ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “কি হয়েছে তিশা!
তিশা মুখ ফিরল আহনাফের দিকে। আহনাফের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল, “অনেক কিছু হয়েছে আহনাফ? অনেক কিছু! আর যা হয়েছে সবটাই খারাপ হয়েছে। কি করবো এখন আমি!
এগিয়ে এলো সে। তিশার দুই বাহু আগলে ধরে বলল, “আমায় বলো কি হয়েছে?
আবারো কেঁদে ফেলল তিশা। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমাকে ক্ষমা করো আহনাফ! আমি পারি নি তোমার কথা রাখতে, আমি পারি নি। তুমি এক মনে শুধু আমায় ভালোবেসে গেছো আর আমি.. আমি ধোঁকা দিলাম তোমায়। আহনাফ বিশ্বাস করো, বিশ্বাস করো আমি জেনেশুনে কিছু করি নি। ওই রাতে, ওই রাতে ড্রিংক করার পর…
আর কিছুই বলতে পারল না তিশা। নিজের প্রতি ঘৃণা আর ধিক্কারে সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে তার। কিন্তু আহনাফ বোধ হয় সবটাই বুঝল। তবুও শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?
তিশা অবাক চোখে তাকাল তার দিকে। আহনাফ এগিয়ে এলো। তিশার গালে দু হাত রেখে বলল, “কি হয়েছে তিশা!
“আহহহনাফ! আহনাফ আমি..
“তিশা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! গত ৬ টা বছর আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। শুধু তোমার জন্য। আমার এতো বছরের সাধনা তুমি ওই এক রাতে শেষ করে দিলে।
“আহনাফ বিশ্বাস করো আমায়..
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি তিশা। খুব বিশ্বাস করি, এখনো করি!
আহনাফের কথায় ভেঙ্গে পড়ল তিশা। কাঁদতে শুরু করল সে। আহনাফ গলার কলার ধরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, “কেনো এতো ভালোবাসো তুমি আমায়, কেনো আহনাফ কেনো? আমি পারিনি তোমার ভালোবাসা আগলে রাখতে, পারি নি আমি। ঠকিয়েছি তোমায়, নিজের ভালোবাসার কাছে ঠকে গেছি আমি। এমন একটা মেয়েকে এখনো কিভাবে ভালোবাসতে পারো তুমি কিভাবে?
তিশা মুহুর্তেই মেঝেতে বসে পড়ল। এখনো কাঁদছে সে। তার কান্নার শব্দ কানে বাজছে আহনাফের। আহনাফ দুই পা পিছনে সরে গেল। তার চোখে অশ্রু জমছে। কোনমতে সেই অশ্রুকণা লুকিয়ে নিল সে। শুকনো ঠোক গিলে এগিয়ে এসে বসল তিশা’র কাছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কান্না থামাও তিশা! কাঁদছো কেন তুমি?
তিশা মুখ তুলে তাকাল। আহনাফ তার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে উঠে দাড় করাল তাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের উপর হাত রেখে বলল, “তিশা তুমি আমার। শত ভুল করার পরও তুমি শুধুই আমার। আমি তোমাকে ভালোবাসি তিশা, শুধু তোমাকে! আমি এখনো তোমাকেই চাই!
তিশা হাত দুটো ছাড়িয়ে নিল। আহনাফ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। খুব অসহায় লাগছে তাকে। তিশা পিছিয়ে যেতেই আহনাফের মুখের রঙ বদলে গেল। মুখ থেকে শুধু একটি শব্দ বের করলো সে , “তিশা!
তিশা মাথা নেড়ে বলতে লাগলো, “না আহনাফ এটা হয় না। আমি পারবো না এমনটা করতে।
“তিশা আমি বলছি তো!
“তুমি বুঝতে পারছো না আহনাফ , ওর কাছে সেই রাতের ভিডিও। আমাকে যেতে হবে ওর কাছে। না হলে…
“আমি আছি তিশা তোমার সাথে, তবুও তুমি ভয় পাচ্ছো!
“আহনাফ তুমি বোঝার চেষ্টা করো!
“কি বুঝবো আমি, কি বুঝাতে চাইছো!
বলেই পাশে থাকা ফুলদানি টা জোরে আ*ছাড় মারে তিশার পায়ের কাছে। তিশা ভয়ে কুঁকড়িয়ে উঠে। আহনাফ এখন মারা*ত্মক রেগে গেছে। ঘরের সব জিনিসপত্র ভে*ঙে অস্থির সে।
নিঝুম, তিথি আর ইফা তিনজন’ই ভয়ে আতকে উঠে। আহনাফের এমন রুপ যেন তাদের হতবাক করে দিল। তিশা দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছে নির্বিকারে। আহনাফ তার সামনে এগিয়ে আসতেই ভয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকালো সে। আহনাফ দুই হাত তার বাহুতে জোরে চেপে ধরল। চিৎকার করে বলে উঠল, “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, কিভাবে পারো তুমি এমনটা বলতে, কিভাবে? আমি তো বলছি তোমার সাথে থাকবো, আগলে রাখবো তোমায় তবুও কেন এতো দ্বিধা তোমার, কেন তিশা! জবাব দাও তুমি, আমি উওর শুনতে চাই। এই ভালোবাসলে তুমি আমায় এই!
বলেই তাকে ছুঁড়ে মারল আবারো দেওয়ালের দিকে। তিশা দেওয়ালে আটকে থেকেই কাঁদতে লাগলো! আহনাফ তার চোয়াল শক্ত করে এদিক তাকাল। কারো দিকে না ফিরে হন হন করে হেঁটে বের হয়ে গেল সে। তিনজন’ই অস্থির হয়ে উঠল। কি করবে এখন? নিঝুম বলে উঠল, আমি আহনাফের পিছন যাচ্ছি!
ইফা বলল, “আমি শান্ত ভাইয়া কে কল করছি!
দুজনেই সরে গেল। তিথি এগিয়ে এলো তিশা’র সামনে। হাঁটু গেড়ে চুপচাপ বসে আছে সে। মুহুর্তেই কান্না থেমে গেছে তার। মুখ ফিরিয়ে তাকাল তিথির দিকে!
#চলবে….
[