#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৯ [ বর্ধিতাংশ ]
পর পর দু”বার কল করার পর ওপাশ থেকে শান্ত ফোনটা রিসিভ করল। তার চোখে এখনো ঘুমের রেশ। ভর সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এখনো তার রেশ রয়ে গেছে তার চোখে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইফা এক নিঃশ্বাসে কতো গুলো কথা বলে ফেলল। শান্ত কিছুই ঠিকমতো বুঝতে পারল না। সে উঠে বসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “তুই একটু দম নিয়ে কথা বল তো। কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, আহনাফের কি হয়েছে আবার!
“আহনাফ ভাইয়া রাগে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেছে।
“কোথায় গেছে? আর রাগ’ই বা করল কার উপর?
“তিশা’র আপুর উপর!
“তিশা! তুই কি পাগল হলি নাকি।
“না আমি পাগল হয় নি। ভাইয়া সত্যি সত্যি তিশা আপুর সাথে ঝগড়া করেছে।
“হয়তো কথা কাটাকাটি করেছে।
শান্ত বিছানা ছেড়ে উঠল। ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে মুখে পুড়ল। ওপাশ থেকে ইফা বলে উঠল, “না কথা কাটাকাটি না। অনেক বড় কিছু হয়েছে। ভাইয়া রাগে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙেছে। তিশা আপু এখনো কাঁদছে। এই রাতে আহনাফ ভাইয়া ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।
“আজ না ওদের বাইরে ডিনার কথা ছিল। আচ্ছা তুই রাখ আমি দেখছি!
বোতলের মুখটা আটকে টেবিলে রাখল শান্ত। মুখে জল ছিটিয়ে একটা জ্যাকেট পড়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল সে।
——
“আহনাফ! আপনি দাঁড়ান।
মুহুর্তেই থেমে গেল আহনাফ। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে। দু হাতে কাঁধের ব্যাগটা কে শক্ত করে ধরে আছে সে। আহনাফের মুখ চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। নিঝুম খুব সাহস জুগিয়ে সামনে এগিয়ে এলো। আহনাফের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল, “মাথা ঠান্ডা করুন আহনাফ। আপনি একটু বেশিই করছেন। এভাবে রেগে গেলে কিছুই ঠিক মতো হয় না।
আহনাফ চট করে বলে উঠল, “তাহলে কি করতে বলছো আমায়!
“কিছুই করতে বলছি না আহনাফ। আপনি ঠান্ডা মাথায় তিশা আপুর সাথে কথা বলুন। যা হয়েছে তা মিটমাট করুন।
“তিশা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে তুমি শুনতে পাও নি।
“আহনাফ! চলে যেতে চাইলেই কি চলে যাওয়া যায়।
আহনাফ শব্দ করে শ্বাস ফেলল। এক পা এগিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল নিঝুমের। দুই হাত দিয়ে নিঝুমের বাহু দু’টো আঁকড়ে ধরল। নিঝুম হতভম্ব! আহনাফ চোয়াল শক্ত করে বলল,
“তুমি যেই কথা বলছো সেটা বইয়ের পাতায় সুন্দর লাগে। কিংবা উপন্যাসে বলা কথাগুলো, যে যেতে চায় তাকে দাও! তাহলেই কি সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আমি ভালোবাসি ওকে, নিজের করে চাই আমি তিশা কে। কিন্তু সে এখন আমার হয়ে থাকতে চায় না। তুমি বুঝছো আমার কষ্ট টা! বুঝছে পারছো!
চেঁচিয়ে উঠল আহনাফ। নিঝুম ভয়ে তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। আহনাফ আবারো বলতে শুরু করল, “ভালোবাসা কি জানো তুমি, কাউকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা বুঝো তুমি! না কখনো বুঝবে না সেটা, কখনো না। বুঝতে পারলে..
ছেড়ে দিল নিঝুম কে। নিঝুম পিছিয়ে গেল সাথে সাথে। আহনাফ সামনে ফিরে আবারো হন হন করে হেঁটে চলে গেল। নিঝুমের দু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। সত্যিই তো, আহনাফের কষ্টটা কি কখনো বুঝতে পারবে সে। কিন্তু তার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পারছে সে। বুঝতে পারছে আহনাফ অনেক কষ্টে আছে। প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট! চোখের পানি মুছে নিঝুম আশপাশ তাকাল। এখানকার এলাকা আবাসিক! একটু চেঁচামেচিতেই আশপাশের বাড়িগুলোর জানালা থেকে মানুষ গুলো উঁকি মারতে শুরু করেছে। নিঝুমের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। ছুটে আবারো বাড়িতে ঢুকল সে। ফিরে এসে দেখল তিথি গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে তিশার সামনে। ইফা সবেমাত্র ঘরে ঢুকেছে।
——
শান্ত গাড়ি চালিয়ে আহনাফের বাসার দিকেই রওনা হয়েছে। রাস্তার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে সে। আহিমকে কল করে সবটা জানিয়েছে। ফোনটা রাখতেই হঠাৎ মনে হলো দূর থেকে আহনাফ কে দেখছে সে। শান্ত গাড়ি থামিয়ে দিল। হ্যাঁ এটা আহনাফ! এলোমেলো চুলে অনেকটা অস্থির লাগছে আহনাফ কে। গাড়ি থেকে নামল শান্ত। চোখাচোখি হলো দুজনের। শান্ত কে কিছুই বলতে হলো না। আহনাফ নিজ থেকেই গাড়িতে উঠে বসল। শান্ত চুপচাপ বসল তার সিটে। আহনাফ সিটের বেল্ট বেঁধে রইল। শান্ত ড্রাইভ শুরু করল। আহনাফ কে কিছুই জিজ্ঞেস করল না সে। পানির বোতল টা বের করে তার দিকে এগিয়ে দিল। আহনাফ চুপচাপ পানি খেল। সামনের আয়নাতে তাকাল সে। শান্ত তার দিকে ফিরছে না, কিছু জিজ্ঞেস করছে না। কেনো করছে না, তার কি কিছু জানার আগ্রহ নেই।
গাড়ি জ্যামে আটকে আছে, এসময় জ্যামে থাকার চেয়ে বিরক্তিকর আর কিছুই নেই। শান্ত চাইছে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরা দরকার। আহনাফ কে যা বলার জিজ্ঞেস করার সবকিছুই বাড়ি ফিরে করবে।
জ্যাম ছেড়েছে। শান্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। শান্ত নির্বিকারে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু হয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে না। আহনাফ হুট করেই বলে উঠল, “তুই জানিস ও আমাকে কি বলেছে?
“না!
“জানতে চাস না!
“না চাই না।
“কেন?
“তুই এখন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে আমাকে বলবি। আহনাফ তুই বড় হয়েছিস এখন আর বাচ্চা নেই।
আহনাফ চোয়াল শক্ত করে বলল, “আমি কাঁদবো না।
“কেন কাঁদবি না।
“কারণ আমি এখন ওকে ভুলে যাবো!
শান্ত হতবাক হলো কিন্তু তবুও প্রকাশ করল না। ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো সে। আহনাফ বাইরের দিকে ফিরল। গলা ধরে আসছিল তার। অভিমান স্বরে বলে উঠল, “ও কিভাবে পারল আমাকে এ কথা বলতে।
“কি বলেছে তোকে?
“ও আর একটা ছেলে..
“ও আর একটা ছেলে!
আহনাফ রুদ্ধ চোখে শান্ত’র দিকে ফিরল। বলে উঠল , “তুই কি কিছুই বুঝতে পারছিস না।
“পারছি! কিন্তু তুই কি এ কারণে রাগ।
“থাকতাম কিন্তু ও যখন সব বলে আমার কাছে বসে কাঁদতে লাগল তখন আর রেগে থাকতে পারি নি।
“তাহলে এখন রেগে আছিস কেন?
“এতো কিছুর পরও ওকে নিজের করে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও থাকতে চায় না তাই!
“আচ্ছা আহনাফ তোর রাগ হচ্ছে না, তুই ছাড়া অন্য একটা ওকে ছুঁয়েছে!
“ছেলেটা রীতিমতো ওকে ফাঁসিয়েছে, এখনো ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে।
“আশ্বাস দিয়েছিলি!
“নিতে রাজি না।
শান্ত কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু বলল না। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে বলে উঠল, “ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে শান্ত!
এতো টুকু কথাটাই যেন শান্ত কে কাঁপিয়ে দিল। গলার স্বরটা কেমন কেমন লাগলো! আহনাফ কি তাহলে কাঁদছে। শান্ত ঢোক গিলল। গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল সে।
—–
আহিম আর আফিন বাইক নিয়ে সবে ঢুকল আহনাফের বাড়িতে। ইফা দরজা খুলে তাদের দেখে মোটেও অবাক হলো না। ঘরের হাল এখনো আগের মতোই। সোফায় এক কোনে শুধু তিশাকে বসে থাকতে দেখল তারা। আহিম শুধু জিজ্ঞেস করল, “আহনাফ এসেছে?
“না!
আফিন বলে উঠল, “বোধহয় শান্ত’র বাড়িতে!
“চল তাহলে ওখানে, ( তিশার দিকে ইশারা করে ) ওর খেয়াল রাখিস আমরা আসছি!
বের হতেই যাবে ওমনি গাড়ির আওয়াজ এলো। ঝড়ের বেগে দৌড়ে এলো তানিশা। তার পিছে পিছে রিয়া আর দিয়া। তানিশার হাল এর মাঝেই অবাক করার মতো। মাথার এলোমেলো চুল , দু চোখ লাল হয়ে আছে। রাগে ঠোঁট কামড়াচ্ছে সে। তিশা কে দেখে সেই রাগ কয়েক গুন বেড়ে গেল। শুধু আহিমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আহনাফ কোথায়?
“জানি না বোধহয় শান্ত’র বাসায়!
তিশা’র দিকে তাকিয়ে, “এই মেয়েটা এখনো এখানে!
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল নিঝুম। তানিশা গলার আওয়াজ শুনে সেখানেই থমকে গেল সে। রিয়া পিছন থেকে বলে উঠলো, “তানিশা শান্ত হ!
“কি শান্ত হবো আমি। এই মেয়েটা.. এই মেয়েটা কি করেছে আহনাফ কে। এতোদিন আহনাফ কে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের করে রাখল। আর আজ! আজ এমন কি হলো যার কারণে আহনাফ ওর উপর এমন রেগে গেল । তুই দেখছিস না ঘরের হাল!
তিশা এবার মুখ তুলে তাকাল। তানিশা আর তিশা মুখোমুখি! তানিশা হন হন করে হেঁটে তিশার সামনে এসে দাঁড়াল। আফিন পেছন থেকে ইশারা করে রিয়া কে বলছে তানিশা কেন এখনো! রিয়া বেচারি যেন ফেসেই গেল। তানিশা কে ফোন করে জানানোটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে তার।
তানিশা তিশার সামনে দাঁড়িয়ে রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠল , “কি বলেছো তুমি আহনাফ কে? আহনাফের তো কখনো এমন রেগে যায় না। তুমি দেখতে পারছো পুরো ঘরের অবস্থা। এসব শুধুই তোমার জন্য? কি করেছো তুমি আহনাফের সাথে!
তিশা হুট করেই হেসে ফেলল। বলে উঠল, “ছেড়ে দিয়েছি, মুক্ত দিয়ে দিয়েছি তাকে। আর আগলে রাখতে পারি নি!
তানিশা দুই পা পিছনে হটে গেল। উপস্থিত সকলে হতভম্ব! নিঝুম এবার ছুটে নিচে এলো। দিয়া বলে উঠল, “কি বললে তুমি! তুমি ছেড়ে দিয়েছ আহনাফ কে? এই সম্পর্ক আর রাখতে চাও না তুমি।
“না আর সম্ভব না।
তানিশা অবাক কন্ঠে বলে উঠল , “কি বললে তুমি ! এটা কিভাবে করতে পারো তুমি, কিভাবে? তুমি জানো না আহনাফ তোমাকে কতোটা ভালোবাসে , এতো গুলো বছর শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিল সে। তাকে এভাবে ধোঁকা দিলে তুমি!
“হতভাগা আমি, এতো সুন্দর ভালোবাসাটা আগলে রাখতে পারলাম না!
তানিশা চেঁচিয়ে বলে উঠল, “কি পারো নি তুমি? কি পারো নি! হতভাগা তুমি নও, আহনাফের ভালোবাসা পেয়েছ তুমি, ক”জন পায় না এই ভালোবাসা। এটা পারলে না নিজের করে রাখতে। জানো আহনাফ কতোটা কষ্ট পেয়েছে? কিভাবে পারো তুমি ওকে কষ্ট দিতে!
রিয়া আর নিঝুম ছুটে যায় তানিশাকে আটকাতে। রেগে তিশার দিকে তেড়ে যেতে চাইলো। আহিম কোনমতে এসে থামালো তাকে। নিঝুম বলে উঠল, “থামো কি করছো তুমি!
“তুমি! তুমিও এখানে!
তিশা উঠে দাঁড়াল। তানিশা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “ভালোবাসতে সবাই জানে না , কিন্তু কষ্ট দিতে জানে। আহনাফের কষ্ট আমি ঠিক আন্দাজ করছে পারছি তবুও কিছু করার নেই আমার। অসহায় আমি!
বলেই তিশা কাঁদতে কাঁদতে উপর চলে গেল। তানিশা রেগে বলে উঠল , “শুনলি তোরা মেয়েটার কথা শুনলি। কি বলল ও! ও নাকি অসহায়।
আহিম বলে উঠল, “থাম তানিশা অনেক হয়েছে! তুই রেগে আছিস, রিয়া ওকে নিয়ে বাসায় যা!
তানিশা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু বলল না। দৌড়ে বাইরে চলে গেল। ইফা আর তিথি ভীত চোখে শুধু তাকিয়ে রইল!
—-
“ঘরে কিছুই নেই, তোকে কি আমি নুডুলস রেঁধে দেবো!
আহনাফ গায়ের স্যুট টা খুলে সোফায় রেখে মেঝেতে বসে পড়ল। শান্ত জবাবের আশা করল না। আহনাফ এখনো কিছু খায় নি এটা সে জানে। রাত অনেক হয়েছে , সে রান্না ঘরের দিকে গেল। চুলোয় গরম পানি বসিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা কোল্ডড্রিক বের করল। বাসায় নতুন অতিথির আগমণ অমি টের পেয়েছে। লেজ নাড়িয়ে এসে হাজির হয়েছে আহনাফের কাছে। অবাক চোখে দেখে যাচ্ছে তাকে। আহনাফ ও তার চোখের দিকে তাকানো। নীল রঙের ভীষণ সুন্দর আঁখি গুলো দেখতে খারাপ লাগছে না। হঠাৎ শান্ত’র আওয়াজে ভড়কে গেল অমি। শান্ত বলে উঠল, “অমি এখান থেকে যাও, আহনাফকে জ্বালাবে না!
অমিও চলে যেত নিল। আহনাফ হুট করেই তাকে ধরে বসল। কোলের মধ্যে বসিয়ে বলল, “থাক ও!
“তুই সিউর!
আহনাফ কিছুই বলল না। কলিং বেল বেজে উঠল। শান্ত দরজা খুলতেই ভড়কে গেল! তানিশার হাল তাকে অবাক করে দিয়েছে। হাঁপিয়ে যাচ্ছে সে। শ্বাস নিতে নিতে বলল, “আহনাফ এখানে!
শান্ত কিছুই বলল না। তবুও তানিশা ঘরে ঢুকে গেল। বসার ঘরে এসে দেখল মেঝেতে বিড়াল কোলে শান্ত ভাবে বসে আছে আহনাফ! মুখখানি মলিন তার, একটু আগে যে ঝড় তার উপর দিয়ে গেছে তার বিন্দুমাত্র আভাস নেই তার মাঝে। এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো তানিশা। আহনাফ মেঝের দিকে তাকিয়ে তানিশার পা পেলো। এক পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আরেক পা ঘসছে তানিশা! আহনাফের হুট করেই যেন হেসে ফেলল। কিন্তু কিসের হাসি সেটা। মুখ তুলে তাকাল তানিশার মুখে। তানিশা চমকে উঠল। আহনাফ মাথা নামিয়ে আবারো বিড়ালকে আদর করতে লাগল। আশ্চর্য! আজ বিড়াল কে ভয় পাচ্ছে না সে। ভালো লাগছে বিড়াল কে তার। বিড়ালটাও আদর পেয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে রইল। এর মাঝেই বড় করে মুখ খুলে হামি ছাড়ল। আহনাফ বলে উঠল,
“দেখলে তানিশা, ভাগ্য কি রকম চক্রের মতো ঘুরে। আমি পারিনি তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে তাই আজ আমার এই করুণ দশা!
আবারো মুখ তুলে তাকাল তানিশার দিকে। তানিশা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফ তানিশার মুখের দিকেই তাকিয়ে বলল, “রাগ করো না তানিশা, আমার মন ভালো না। উল্টো পাল্টা কিছু বলে ফেললে ক্ষমা করে দিও। আচ্ছা তুমি জানো, তিশা চলে যাচ্ছে আমায় ছেড়ে। শুনেছ তাই না!
মুখটা আবারো নামিয়ে ফেলল। তানিশার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আর দাঁড়িয়ে রইল না সে, ছুটে বেরিয়ে গেল। শান্ত সবে গরম পানিতে নুডুলস গুলো ফেলল। এর মাঝেই তানিশা কে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যেতে দেখল। এতোটা অবাক হলো না, হয়তো এটা তার জানাই ছিল।
তানিশা ছুটে এসে বসল গাড়ির ভেতর। ঠোঁট কামড়ে ছিটকে আসা কান্না টাকে আটকাতে চাইছে সে। কিন্তু পারলো না! আহনাফের কষ্টতে খুব কষ্ট পাচ্ছে সে। এমনটা তো না হলেও পারতো, কেন এতো কষ্ট হচ্ছে তার কেন?
শান্ত নুডুলসের বাটি এনে আহনাফের সামনে রাখল। আহনাফ বাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে বলল, “তুই কি আমার বাসায় যাবি একবার!
“কেন?
“তিশা আজ চলে যাবে, ওকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসবি!
“তুই যাবি না।
“কষ্টটা চাপা থাক না এখানে, বাড়িয়ে কি লাভ!
শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। যাবার আগে বলে গেল, খাবারটা খেয়ে নিস!
—–
তিশা তার ব্যাগ হাতে নিচে নামল। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ইফা জিজ্ঞেস করে ফেলল, “কোথায় যাচ্ছ?
“চলে যাচ্ছি !
“এতো রাতে?
“যেতে হবে, অনেক কষ্ট দিলাম তোমাদের। আমি যাবার পরেও এর প্রভাব থেকে যাবে।
নিঝুম বলে উঠল, “তুমি রাত টুকু থাকো!
“না আর না! আর সম্ভব না আমার পক্ষে। দয়া করে জেনেশুনে আগুনে ফেলে দিও না আমায়!
কারোই আর কিছু বলার ছিল না। তিশা ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেল। যে যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। আফিন আর আহিম তিশা’র পিছন পিছন বেরিয়ে গেল। শান্ত গাড়ির পাশেই দাঁড়ানো! তাকে দেখে অনেকটা অবাক হলো তারা। তিশা এগিয়ে এলো। শান্ত গাড়ির দরজা খুলে দিল! আহিম কে ইশারায় তার ওখানে যেতে বলল। অতঃপর নিজে উঠে বসল।
সারা রাস্তায় একটা শব্দ অবদি উচ্চারণ করলো না দুজনের একজন। এয়ারপোর্টের সামনে তিশা কে নামিয়ে দিল শান্ত। গাড়ি থেকে নেমে তিশার দিকে ফিরল সে। তিশা ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল, “তোমার ভরসায় ছেড়ে যাচ্ছি ওকে, নাহলে আমি কখনো পারতাম না শান্ত! দেখে রাখবে তো ওকে।
শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “সাবধানে যেও!
“এখন কেমন আছে ও?
“যেমন টা থাকার কথা তবে কথা দিচ্ছি বেশিদিন থাকবে না।
“ধন্যবাদ তোমায়।
শান্ত আবারো গাড়িতে উঠে বসল। তিশা তার পথের দিকে আগালো। শান্ত অবাক হচ্ছে এটা ভেবেই কতোটা সহজেই না একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। এর শুরুটা তো এমন ছিল না। একটা রাতের মাঝেই সবটা শেষ! কিভাবে? এতোটাই তুচ্ছ কি সম্পর্ক ,ভালোবাসা! কি লাভ এসব মানুষের জীবনে এসে। বেদনা ছাড়া এর কি পেয়েছে মানুষ ভালোবেসে! তবুও কেন বার বার মানুষ ভালোবেসে বসে , কেন করে এমনটা বোকামি। কতোটা বোকা এই মানুষগুলো!
আহিম শান্তর বাসায় দরজার বাইরে। দরজাটা বাইর থেকে বন্ধ। দরজা খুলে ভেতরে এলো তারা। বসার ঘরে এসে দেখল আহনাফ ঘুমাচ্ছে! মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে সে, তার কোলে একটা বিড়াল! সেও ঘুমিয়ে আছে। একবার চোখ মেলে তাদের দেখে আবারো ঘুমালো। পাশে একটা বাটিতে একটু নুঢুলস পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ খেয়েছে! দুজনেই শব্দ করে শ্বাস ফেলল!.
#চলবে….