তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_৩৩ [ প্রথমাংশ ]

0
350

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৩ [ প্রথমাংশ ]

সাদার মধ্যে কালো চেক চেক করা একটি গেঞ্জি আর ট্রাউজার পড়ে আছে নিঝুম। গলায় ঝুলছে একটা উড়না। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে বেচারি ঘুমানোর পুরো বন্দোবস্ত করেছিল যা আহনাফ আর শান্ত’র জন্য পুরো ঘেঁটে গেছে। নিঝুম শান্ত মুখে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। এই নিয়ে ৩ নাম্বার আইসক্রিম খাচ্ছে সে। শান্ত বলে উঠে , “এবার আমাদের উঠা উচিত!

“কেন কেন?

“কেন মানে , তুমি কি আরেকটা আইসক্রিম খাবে নাকি।

নিঝুম মাথা নাড়ল। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল আহনাফের দিকে। সব দোষ তার, না সে এমন ডেয়ার দিত আর না এতো কিছু হতো। আহনাফ হেসে বলল, “নিঝুম!

“হুমম!

“এটা তোমার ৩ নাম্বার আইসক্রিম।

“তো।

“কিছু না , এরপর আর কয়টা খাবা।

নিঝুম হাতের আঙুলে দিয়ে বুঝিয়ে দিল, “এই তো তিনটা আরো।

শান্ত বলে উঠল, “আরো তিনটা।”

“হুম কেন? কি সমস্যা? এতো রাতে আমাকে ভয় দেখিয়ে বাইরে নিয়ে আসার সময় এতো কিছু মনে ছিল না।

“মনেই ছিল। জানতাম তুমি এতো সহজে ছাড়বে না।

নিঝুম দাঁত বের করে হেসে অমি’র দিকে তাকাল। অমি গুটিগুটি মেরে শান্ত’র কোলে বসে আছে। সে মিয়াও বলে ডাক দিতেই নিঝুম আইসক্রিম’র চামচ টা তার একটু কাছে নিয়ে বলল, “খাবে তুমি।

“ও এসব খায় না ‌

“তাহলে আপনি খাবেন।

“না, আমি খাই না।

“তাই তো, ভালো জিনিস কি আর ভালো মানুষের পেটে সহ্য হয়।

শান্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওয়েটার এসে দুটো কোল্ড ড্রিংক দিয়ে গেল শান্ত আর আহনাফ। অমি উঠে শান্ত’র কোল্ড ড্রিংক ধরার জন্য লাফালাফি করতে লাগলো।

ম্যানেজার সাহেব এসে দাঁড়ালেন। আহনাফ জিজ্ঞেস করলেন, “জ্বি!

“স্যার আর কিছু?

নিঝুম মাথা নেড়ে নেড়ে বলল , “হ্যাঁ হ্যাঁ আরো তিনটা আইসক্রিম!

আহনাফ ঠিক কি বলবে বুঝতে পারল না। ম্যানেজার সাহেব আমতা আমতা করতে করতে বলল, “আসলে স্যার, অনেক রাত হয়ে গেছে আর আমাদের সব কিছু এখন বন্ধ করতে হবে তো..

নিঝুম মুখ তুলে তাকাল। তিনজনকেই চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল। আহনাফ হেসে বলে উঠল, “আচ্ছা নিঝুম, আইসক্রিম গুলো প্যাক করে নিলে কেমন হয়!

“খুব ভালো খুব ভালো!

“আচ্ছা আপনি আরো ৩ টা আইসক্রিম প্যাক করে দিন আর বিল টা নিয়ে আসুন।

“জ্বি স্যার!

—-

মাঝ রাস্তায় হাঁটছে তিনজন। শান্ত এপাশে, তার কোলে অমি। সে এতো অন্ধকারে ভয় পেয়ে মিয়াও মিয়াও করে ডেকেই যাচ্ছে। মাঝখানে নিঝুম আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটছে আর তার পাশে আহনাফ!

“নিঝুম! এতো আইসক্রিম খেয়ো না তোমার গলা বসে যাবে।

শান্ত চোখ ঘুরিয়ে বলল, “ভালোই হবে , কথা বলতে পারবে না। বকবকানিও শুনতে হবে না।

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি জানেন, এখানে কি কষ্ট করে এসেছি আমি।

“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি। ৬০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা দিয়ে এসেছো। আর তা উসুলও করেছ।

“করবো না আবার, টাকা কে কি টাকা মনে হয় না আপনার। যদি না আপনারা আমার সাথে এমন চালাকি করতেন তাহলে না হয় অন্য বিষয় ছিল।

আহনাফ হাসল।‌ নিঝুম তার মুখের দিকে তাকাল। শান্ত ভাবে নিঝুমের দিকে ফিরে বলল, “আমি তো ভাবতেই পারি নি তুমি আসবে। তুমি এসে আমাকে হারিয়ে দিলে নিঝুম।

নিঝুম হাসল। শান্ত হেসে বলল, “আমি কখনো হারতে শিখি নি, বুঝলি।

“আপনি তো জিতলেন আমার কারণে, তাহলে আমাকে ট্রিট দিন।

“ট্রিট! এতো আইসক্রিমের পর আবারো।

“তো! আপনি জানেন আমি এখানে ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছি।

“চশমিশ থামো, তোমার এই ১৫০ টাকা ভাড়া শুনতে শুনতে আমার কান গেল।

“তো যাবে না, দ্বিগুনের চেয়ে বেশি ভাড়া দিলাম জানেন আপনি।

শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আহনাফ হাসল। নিঝুম এখনো বক বক করছে। সে উপরে আকাশের দিকে তাকাল। রাতের আকাশের মতো এই রাতটাকেও আজ চমৎকার লাগছে। মাঝ রাস্তায় গভীর রাতে হেঁটে যাচ্ছে তারা তিনজন। কেউ জানে না তাদের ব্যাপারে, কারো কোন আগ্রহ নেই। যদি থাকে সেটা শুধু এই চাঁদের! কি সুন্দর ভাবে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের মাঝে। কি স্নিগ্ধমুখর পরিবেশ!

—-

নিঝুম দরজার সামনে দাঁড়ানো। কলিং বেল বাজাতে ভয় করছে তার। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ১২ টার বেশি বাজে। তার খবর নিশ্চিত এতোক্ষণে সবাই জেনে গেছে। এখন আবার নতুন কোন মিথ্যে বলতে হয় কে জানে। হিনা কে ফোন করল সে। সাথে সাথে দরজা খুলে দিল হিনা। নিঝুম চুপিচুপি বলল, “মা কোথায়?

“ঘুমাচ্ছে!

“বাবা!

হিনা ঘাড় ঘুরাল যার অর্থ সেও ঘুমাচ্ছে। নিঝুম ফিসফিস করে বলল, “আমি বের হয়েছিলাম বলেছিস।

“না, কেউ জিজ্ঞেস করে নি। বাবা তো ১০ টায় ঘুমিয়ে পড়ে আর মা’র মাথাব্যাথা ছিল বলে ঔষধ খেয়ে ঘুম দিয়েছে

“আচ্ছা!

“তোর বন্ধুর খবর কি, কেমন আছে ?

“ভালোই আছে। নে আইসক্রিম খা।

“তুই অসুস্থ মানুষ কে দেখতে গিয়ে আইসক্রিম পেলি কোথায়?

“নিয়ে এলাম তোর জন্য, খেয়ে নে। আমি গেলাম ঘুমাতে। গুড নাইট!

বলেই হামি ছাড়তে ছাড়তে নিঝুম তার ঘরের দিকে আগাল। কিন্তু হিনার কাছে পুরো ঘটনাটা গোলমেলে লাগতে শুরু করল।

—-

আহনাফ বাসে উঠেছে। পৃথিবীর অসহ্যকর কাজের মধ্যে এটাই হচ্ছে তার কাছে প্রথম। কোন ভাবেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে চায় না সে। মানুষের ঠেলাঠেলি অসহ্য লাগে। এর মাঝে একের পর এক লোকজন উঠতেই থাকে। জায়গা হচ্ছে না তবুও মানুষ উঠতেই থাকে। আহনাফের দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে কোনমতে সিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বাস থামল। কিছু লোকজন কমল, ভাগ্য ভালো এই বাস স্ট্যান্ড থেকে কেউ উঠতে আসে নি। আহনাফ জায়গা পেয়ে গেল। সেখানেই বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।

বাস ছুটতে শুরু করল। আবারো থামল! আহনাফের এখন বিরক্ত লাগছে। বাসে শুধু একজন উঠে বসল। আহনাফ সেদিকে ফিরেও তাকাল না। বাইরে তাকিয়ে রইল। পাশের সিটটা খালিই ছিল। সেখানে বসে পড়ল কেউ। হঠাৎ কেমন এক অনুভুতি হতে লাগলো দুজনের। মুখ ফিরিয়ে তাকাল দুজন। নিঝুম হা হয়ে আছে আহনাফ কে দেখে।

“আপনি!

“তুমি!

“আপনি বাসে করে কেন? গাড়ি কি হয়েছে আপনার?

আহনাফ নিঝুমের দিকে তাকিয়ে হাসল। নিঝুম ব্যাগ থেকে রুমাল টা বের করে দিয়ে বলল, “নিন, ঘেমে তো দেখছি একাকার।

আহনাফ হাত বাড়িয়ে রুমাল টা নিল!
“আমি আরো আগে উঠেছি তাই, এতোক্ষণ যা ভিড় ছিল এখন একটু কমেছে।

“বাসে করে আসলে ওরকম একটু আধটু তো হবেই। এই একদিন কষ্ট করুন , রোজ রোজ তো আর আসবেন না।

“না একমাস আসতে হবে।

“কেন?

“ডেয়ার পারি নি বলে আমার পানিশমেন্ট, তুমি তো এসে শান্ত কে জিতিয়ে দিলে!

নিঝুম হাসল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল, “আমাকে ওভাবে ভয় না দেখালেই হতো। নাহলে যখন আপনাকে ফোন করলাম তখন বলে দিতেন নাহলেই তো হতো।

আহনাফ পানি খেয়ে বোতলের ছিপি আটকিয়ে বলল,
“তবে আর যাই বলো, এতোক্ষণ মনে হচ্ছিল আর এক মিনিট ও সম্ভব না আমার পক্ষে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আগামী এক মাস ভালোই কাটবে তোমার সঙ্গ পেলে।

“হ্যাঁ এটা তো সত্যি! আমি যেখানে থাকি আর যার সাথেই থাকি তার মন ভালো করে দিই।

আহনাফ কিঞ্চিত হাসল। দু’জন গল্প করে পুরো রাস্তা পার করল। এমনকি ভার্সিটি অবদি একসাথেই এলো। ভার্সিটিতে ঢুকতেই নিঝুম শান্ত কে দেখতে পেয়ে ডাক দিল, “এই অশান্ত!

—–

তিথি ইফা’র ঘাড়ে মাথা রেখে দুলে যাচ্ছে আর বলছে, “আমার আদনান স্যার ( ভুল বশত সেদিন আদ্রিয়ান লিখে ফেলি। সেজন্য আমি দুঃখিত )

“তুই থামবি!

এর মাঝেই আদনান স্যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। তিথি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “ইফা দেখছিস!

“কি দেখবো?

“বিয়ের পর স্যার আরো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে।

ইফা শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “স্যারের বউও নিশ্চিত সুন্দরী হয়ে গেছে।

“ইফা তুই না, যা কথা নেই তোর সাথে।

“আরে আরে রাগ করিস না বাবা।

“তোরা কেউ আমার আপন না। নিঝুম!

বলেই নিঝুম কে জড়িয়ে ধরল। নিঝুম সবেই পা রেখে আগামাথা কিছু না বুঝেই তিথি কে জড়িয়ে ধরল। তিথি বলে যাচ্ছে, “জানিস জানিস ইফা একটুও ভালো না।

“ও আর কবে ভালো ছিল। একদম ঠিক বলেছিস।

ইফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। পুরো তার সামনেই তিথি আর নিঝুম তার বদনাম করে যাচ্ছে। একজন করছে তো আরেকজন তাল দিচ্ছে। ইফাও
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছে সবটা!

—–

আহনাফ আজ একটু আগেই এলো বাসস্ট্যান্ডে। বাসে উঠতেই সিট না পেয়ে দাড়িয়ে রইল। অতঃপর সিট পাওয়া মাত্র বসে গেল। তার পাশের সিটেও একজন যাত্রী ছিল কিন্তু আহনাফ নিশ্চিত ছিল সামনের স্ট্যান্ডে’ই নেমে যাবে সে। সত্যি সত্যি তাই হলো, সে নেমে গেল। আহনাফ বার বার খালি সিটে তাকাচ্ছে, আরেকবার তাকাচ্ছে গেটের দিকে। নিঝুম এখনো উঠলো না, কোথায় সে?

কয়েকটা যাত্রী উঠে পড়ল এর মাঝে, একটা মেয়ে এগিয়ে এসে সেই সিটে বসতে গেল। আহনাফ সাথে সাথে তার ব্যাগটা সিটে রেখে বলল, “এখানে আমার পার্টনার আছে, ও বসবে!

“কিন্তু বাস তো ছেড়ে দিয়েছে।

“হ্যাঁ কিন্তু আমি এই দুই সিটের ভাড়া দিয়েছি।

মেয়েটা সামান্য অপমান বোধ করল। বিরক্ত চোখে তাকাল আহনাফের দিকে। এর মধ্যেই নিঝুম কে উঠতে দেখা গেল। আহনাফ হেসে বলল, “চলে এসেছে আমার পার্টনার!

মেয়েটা নাক ফুলিয়ে তাকাল নিঝুমের দিকে। সে আসতেই আহনাফ ব্যাগ সরিয়ে দিয়ে তাকে বসতে দিল। মেয়েটা বির বির করতে করতে পিছনে গিয়ে বসল। নিঝুম হাঁপিয়ে গেছে অনেকটা। আহনাফ বলে উঠল, “আরেকটু দেরি হলে কি হতো জানো?

“কি হতো?

“ওই মেয়ে ঝগড়া করে এখানে বসে পড়ত।

নিঝুম পিছনে তাকাল, মেয়েটা দেখে বলল, “যাহ ঝগড়া কেন করতো?

“আমি ওকে এখানে বসতে দেই নি বলে।

“কেন?

“আমি তোমার জন্য সিট ধরে রেখেছিলাম।

নিঝুম হাসতে শুরু করল। হাসতে হাসতে বলল, “আহনাফ এটা কি ক্লাসের বেঞ্চের জায়গা যে আপনি ধরে রাখবেন।

আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বাইরে তাকাল। ব্যাপারটা আসলেই অনেক লজ্জাজনক। সত্যিই তো, কেন করলো সে এটা। বসতো ওই মেয়েটা। এভাবে সিট ধরে রাখা বাচ্চামি ছাড়া আর কিছুই না। সে কি বাচ্চা! নিঝুম এখনো হাসছে তবে মুখ টিপে। বেশ বুঝতে পারল আহনাফ লজ্জা পেয়েছে। বেচারা কে আর লজ্জা দিয়ে লাভ কি!

[ বর্ধিতাংশ কাল দেবো বড় করে। আপাতত এতো ছোট পর্বের জন্য আমি দুঃখিত! ]

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here