তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_৩৩ [ বর্ধিতাংশ ]

0
338

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৩ [ বর্ধিতাংশ ]

রাত তখন অতোটা গভীর নয়, তবে লোডশেডিং’র কারণে চারদিকে অন্ধকার। তিথি ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ফোনের আলোতে সামনে হাঁটা তো যাচ্ছে কিন্তু তার ভয় কমছে না। হঠাৎ হঠাৎই মনে হচ্ছে কেউ তার পিছন পিছন আসছে।‌ ভয়ে ছুটে যেতেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে গেল। তিথি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইতে লাগল। বয়স্ক এক মহিলা, ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন তিথি’র দিকে। যদিও ফোনের স্ক্রিনেই দুজন দেখছে দুজন কে। তিথি নিজ থেকেই বলছে, “সরি সরি সরি আন্টি। আমি সত্যি দেখতে পাই নি। হঠাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ আমার কাছে আসছে। তাই ভয়ে সামনে ছুটে যেতেই আপনার সাথে ধাক্কা। মাফ করবেন আন্টি ‌। আপনি ঠিক আছেন তো, কোথাও লাগে নি আপনার!

রাহেলা বেগম এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন তিথি’র দিকে। হঠাৎ করেই হেসে বলে উঠেন, “অনেক হয়েছে এবার থামো। ধাক্কা এতোটা জোরেও লাগে নি। তার আগে তুমি বলো, তোমার পেছনে কে ছিল।

“জানি না, তবে খুব ভয় করছে আমার।

“তাহলে তুমি চাইলে আমার বাড়িতে এসে বসো। এই অন্ধকারে তো বাড়িতে যাওয়া আর সম্ভব না। কারেন্ট এলে না হয় যেও।

“কিন্তু আন্টি!

“আসো, এটা আমার বাসা।

বলেই সামনের বাড়িটার দিকে তিনি পা বাড়ালেন। তিথির কাছে মনে হলো এই অন্ধকারে হাঁটার চেয়ে তার বাড়িতে বসে থাকা বেশ ভালো। তাই সেও পা বাড়াল। সবটা অন্ধকার হলেও এই বাড়িতে আলো জ্বলছে। মনে হয় আইপিএস আছে। তিথি এতোক্ষণে ভদ্রমহিলার মুখখানি দেখলেন। মুখটা অনেক সহজ সরল , চোখে চিকন ফ্রেমের এক চশমা। তার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, যে কারো মন ভালো করে দিতে পারে। তিথি কে সোফায় বসতে অনুরোধ করলেন তিনি। স্টাফ ছুটে এলেন, তিনি তাকে ঠান্ডা শরবত আনতে পাঠালেন। তিথি এতোক্ষণে বুঝল সে কোন বাড়িতে আসে। এই বাড়ি থেকে তার বাড়িতে যেতে বোধহয় আর ২৫ মিনিটের পথ। বাড়িটা বেশ সুন্দর, এর আগেও কয়েকবার বাইরে থেকেই দেখেছে এই বাড়িতে। সাদা রঙের চমৎকার বাড়ি! বেশ কয়েকবার ইচ্ছেও হয়েছিল এই বাড়িতে আসার, কিন্তু আজ যে সেটা পূরণ হবে এটা স্বপ্নেও ভাবেনি।

“আপনাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর!

“অন্ধকারে এই কথা বলছো, আলোতে আরো সুন্দর লাগবে।

“না না, আমি এর আগেও কয়েকবার দেখেছি। এখন বুঝতে পারলাম এটা কোন বাড়ি।

“তুমি কি এই এলাকায় থাকো।

“না, তবে এখান থেকে যেতে ২৫ বা ৩০ মিনিটের মতো লাগবে।

“ওহ আচ্ছা!

স্টাফ এর মাঝেই শরবত নিয়ে এলো। রাহেলা বেগম বললেন, “নাও, শরবত খাও।

তিথি হেসে শরবতের গ্লাস হাতে নিল। সাথে সাথে কারেন্ট চলে এলো। ভদ্রমহিলা কে এখন আরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খুব রূপবতী তিনি, আর তার চোখের দৃষ্টি বেশ শান্ত! তিথির যেন হঠাৎ করেই খুব পছন্দ হলো তাকে। দোতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ডাকতে ডাকতে একটা ছেলে নেমে আসছে, “মা! মা!

রাহেলা বেগম শান্ত গলায় জবাব দিলেন,”আমি এখানে!

“ওয়াইফাই আসছে না তো।

“দুটো মিনিট সবুর কর, কারেন্ট তো মাত্র এলো। ধৈর্য্য বলে কিছু কি নেই তোর।

“না নেই!

বলতে বলতে বসার ঘরে চলে এলো। তিথি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে পিছন ফিরল। সে এখন খানিকটা বিস্মিত! আহিম অবাক কণ্ঠে বলল, “তুমি! তুমি আমার বাড়িতে কি করছো?

“এটা আপনার বাড়ি!

রাহেলা বেগম বিরক্ত গলায় বলল, “এটা কেমন কথা, ও আমাদের বাড়ির অতিথি। ঠিক মতো কথা বল।‌ তা তোমার নাম জানি কি মা?

“তিথি!

“তোমার কি চিনো একজন আরেকজনকে?

আহিম মুখ ভেংচি কেটে রাহেলা বেগমের পাশে বসতে বসতে বলল, “চিনি না আবার, আমার সাথে পড়ে এক ভার্সিটিতে!

“তোমার কি বন্ধু!

“না, ভাইয়া তো আমার সিনিয়র। কিন্তু আপনি যে এখানে থাকেন এটা তো আমার জানা ছিল না।

আহিম কথার জবাবে মাথা রেখে ফোনের মাঝে ঢুকে গেল। রাহেলা বেগম মাথা নাড়িয়ে বললেন, “ওহ আচ্ছা!

তিথি উঠে দাঁড়াল। হেসে বলল, “আচ্ছা আন্টি, আমি এখন তাহলে আসছি।

“হুম তোমাকে আটকিয়ে রাখবো না। বেশ রাত হয়েছে। আহিম যা ওকে এগিয়ে দিয়ে আয়।

“কেন আমি কেন যাবো।

“কারণ ও একা যেতে ভয় পায়।

আহিম তিথির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। তিথিও বলে বসল, “না থাক আন্টি, আমি একাই চলে যাবো।

“না এখন অনেক রাত। আহিম!

আহিম উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল এর অর্থ আমি যাচ্ছি। তিথি রাহেলা বেগমকে বিদায় দিয়ে হাঁটা ধরল। সত্যি বলতে তিথি মেয়েটাকে রাহেলা বেগমের অসম্ভব ভালো লেগেছে। তিনি কিছু একটা ভাবছেন।

“এতো রাতে কে তোমার পিছু নিচ্ছিল, ভূত!

“মামদো ভূত!

“ধরে নিয়ে গেল না কেন?

“কেন কেন ধরে নিয়ে গেলে কি আপনি বেশ খুশি হতেন।

“না তবে ভালো হতো, রোজ রোজ আর আদনান স্যার কে দেখে তোমার কষ্ট লাগতো না।

“এই যে মিস্টার, ঠিক করে কথা বলুন।

“সত্যিই তো বলছি, তা স্যারের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে।

“জানি আমি , মনে করিয়ে দেবার মতো কিছু না এটা।

আহিম মুচকি হাসল। তিথি নাক মুখ ফুলিয়ে আহিমের মুখের দিকে ফিরল। বির বির করে তাকে গাল মন্দ করছে। কতো বজ্জাত লোক , তাকে কি নিয়ে হাসছে।

গলি পেরিয়ে এলো দুজনেই। রাস্তাটা ভীষণ ফাঁকা, এর কারণ গভীর রাত নয়। এর কারণ নামাজের সময় হয়ে গেছে। বেশিরভাগ লোকজন’ই এখন নামাজে, তাই রাস্তাটা একটু বেশিই ফাঁকা। শুক্রবারে রাস্তা ঘাট জমে রাত জমলে। সেইসময় চলে আসছে।

হঠাৎ একটা কুকুর দেখেই দাঁড়িয়ে গেল তিথি। সে এক পা পিছিয়ে গেল। আহিমও এক পা পিছালো। তিথি হেসে বলল, “আপনি ভয় পান নাকি কুকুর কে!

“কি বলছো যা তা, ভয় কেন পাবো।

“তাই!

আহিম চোখ বাঁকিয়ে তাকাল। হঠাৎ করেই কুকুর টা ডাকতে শুরু করল। তিথি আহিমের পিছনে এসে দাঁড়াল। আহিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।‌ তার গলা শুকিয়ে আসছে ক্রশম। কুকুর দেখলেই হঠাৎ এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে তার মধ্যে।‌ যখন ছোট ছিল তখন আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছিল একটা কুকুর কিভাবে একটা ছেলেকে কাম*ড়াচ্ছে। ভয়টা সেখান থেকেই।

কুকুর আরো আরো জোরে ডাকছে। তিথি এবার ভয়ে পেছন থেকে আহিমের শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল, “ভাইয়া তাড়িয়ে দিন এটাকে।

“আআআমি! আমি কিভাবে তাড়াবো।

“আমি কি জানি? খুব ভয় করছে আমার।

আহিম জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।‌ ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, এদিকে কুকুরটা হঠাৎ করেই এগিয়ে আসছে। খুব অস্বস্তি লাগছে, কি করবে এখন। কুকুরের মালিক এর মাঝেই ছুটে এলো। এসেই কুকুরটাকে ধরে বললেন, “টমি! টমি শান্ত হও।

আহিম আর তিথি দুজনেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আহিম মালিক কে চিনত। সে আংকেল বলে ডেকে উঠল। মালিক তার দিকে ফিরে বললেন, “আরে আহিম নাকি!

“হ্যাঁ আংকেল, এটা কি আপনার কুকুর।

“আর বলো না। শখ করে এনেছিলাম, এখন দেখছে ঘরেই টিকতে চাইছে না।

“ওহ আচ্ছা।

পেছন থেকে তিথি বেরিয়ে এলো। তিনি তিথির দিকে ফিরে বললেন, “বন্ধু হয় তোমার!

আহিম তিথির মাথায় হাত রেখে বললেন, “হ্যাঁ এই তো ছোট বোনের মতো।

এর মাঝেই কুকুর আবারো ডাকা শুরু করল। আংকেল কোনমতে তাকে টেনেটুনে আবারো ঘরে নিয়ে গেলেন। দু’জনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তিথি মুখ ঘুরিয়ে চট করে বলে উঠল , “আমি আপনার ছোট বোনের মতো, এই আপনার বোন আছে।

“হ্যাঁ আছে একটা ছোট কেন?

“তাহলে তাকে গিয়ে বোন ডাকুন, আমায় কেন ডাকছেন। আজব।

বলেই হন হন করে সামনে এগিয়ে গেল। আহিম বুঝতেই পারল না ভুলটা কি বলল সে। রাগের বসে একটু জলদি জলদি হাঁটতে লাগল সে। এই গলি পেরিয়ে ওই গলিতে যেতেই চিৎকার করে ধপাস করে পড়ে গেল। আহিম ছুটে এলো তিথির কাছে। সামনে তাকিয়ে দেখল গাড়ির লাইটের আলো পড়ছে। আরেকটু জন্য এক্সি*ডেন্ট থেকে বেঁচে গেল তিথি। গাড়ির ড্রাইভার আর মিঃ ইকবাল হোসেন বের হয়ে এলেন। তিথির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে, “তুমি ঠিক আছে তো মা!

তিথি ফিরে তাকাল। এক গাল হেসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি।

আহিম হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, “উঠে আসো। দেখলে তো অন্যের সাথে শুধু শুধু ঝগড়া করলে কি হয়?

তিথি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“এই আপনি চুপ থাকুন তো, একটু বেশিই কথা বলেন সবসময়!

মিঃ ইকবাল হোসেন ভ্রূ কুঁচকে নিলেন তাদের কথাবার্তা শুনে। কাছে এগিয়ে এসে দেখলেন তাদের। আহিমকে দেখে খানিকটা চমকে গেলেন তিনি।‌ তিথি আহিমের হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। মিঃ ইকবাল হোসেন আহিমের দিকে আঙুল তুলে বললেন, “তুমি!

আহিম পেছন ফিরল। ইকবাল হোসেন কে দেখতে পেয়ে খানিকটা বিস্মিত হলো। অতঃপর বলে উঠল, “আমি.. আসলে!

কথার মাঝে তিথি ফোড়ন কেটে বলে উঠল, “উনি আমার বড় ভাই আর আমি উনার ছোট বোন!

আহিম আর ইকবাল হোসেন দুজনেই তিথি’র দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। তিথি হেসে আহিমের দিকে ফিরে বলল, “তাই না ভাইয়া।

“এসব কি বলছো?

“আহ যা সত্যি তাই তো বলছি। আংকেল আমরা কিন্তু সত্যি সত্যি ভাই-বোন। আমাদের ডিএনএ ও এক!

আহিম হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন ইকবাল হোসেনের দিকে। ভদ্রলোক হালকা হেসে বলল, “ওহ আচ্ছা! তাই নাকি!

আহিম মাথা নেড়ে না না করছে। তিথি তার মাথায় চট করে বারি মেরে বলল, “না না কি করছেন। চলেন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আংকেল আসি!

বলেই আহিমের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। ইকবাল হোসেন রুমাল দিয়ে তার মাথার ঘাম মুছলেন। আবারো বসলেন গাড়িতে।

আহিম হাত ছাড়িয়ে বলে উঠল, “কি করছো কি তুমি?

“যা বাবা কি করলাম? যা সত্যি তাই তো বলছি!

“এতো সত্যি কথা বলতে কে বলেছে তোমায়। কার সামনে কি বলেছো জানো?

“না জানার শখ নেই!

“না থাকলেও শুনো, আমার বাবা তিনি!

“কিহহহহ?

“বুঝতে পারছো এখন বাসায় গেলে আমার কি হাল হবে।

তিথি মুখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে বলল, না!

“থাক আর দরকার নেই, চলো এখন!

“আচ্ছা সরি!

“রাখো তোমার সরি!

বলেই হন হন করে হেঁটে চলল আহিম, তার পিছন পিছন ছুটে যাচ্ছে তিথি!

এতো টুকু গল্প সবাইকে শোনানো মাত্র হাসতে হাসতে সবার পেট ব্যাথা হয়ে গেল। নিঝুম হাসতে হাসতে ভুল বশত শান্ত’র গায়ে থাপ্পড় মেরে বসল। যদিও এটা কেউই খেয়াল করল না তবুও শান্ত অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। নিঝুম একটু একটু দূরত্ব করে সরে দাঁড়াল। তিথি মাথা চুলকাচ্ছে। কি বলবে বুঝে না উঠতে পেরে জিজ্ঞেস করল, “আংকেল আপনাকে কিছু বলেছে!

আহিম চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। বলে উঠল, “নাহ কি আর বলবে। শুধু বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করল, “আমি তো আর বিয়ে টিয়ে করি নি। তাহলে তুই এক ডিএনএ’র বোন কোথায় পেলি।

আহনাফ হাসতে হাসতে মাথায় হাত রাখল। ইফা তিথির ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “তুই পুরো ঝেড়ে দিলি ইয়ার!

“থাম তুই, আমি কি জানতাম নাকি এতো কিছু। ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জার আমার মাথা কা*টা যাচ্ছে।

“তাহলে কে*টে ফেলো, বসে আছো কেন?

তিথি চোখ গরম করে তাকাল আহিমের দিকে। আহিম সেদিকে তেমন একটা পাত্তা দিল না।

—-

শান্ত’র বাড়ি থেকে সার্ভেন্ট’রা তাদের কাজ সেড়ে বেরিয়ে গেছে। শান্ত এসময়টা আজ বাড়িতেই ছিল। সে দরজা বন্ধ করে ঘরে ফিরল। অমি কে খাবার দেওয়া দরকার। অমি কে ডেকে যাচ্ছে সে, কিন্তু তার কোন খোঁজ নেই। শান্ত খাবারটা নিচে রাখল, আবারো তাকে ডাকল। হঠাৎ যেন সবকিছুই নিশ্চুপ হয়ে গেল। শান্ত চুপ হয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করল, আর বুঝতেও পারল। অমি তার বাসাতেই নেই। মুহুর্তেই শান্ত অস্থির হয়ে উঠল। সার্ভেন্টরা চলে যাবার অনেকক্ষণ পরে গিয়েই দরজা বন্ধ করেছিল সে, অমি ততোক্ষণে বাইরে চলে যাই নি তো। শান্ত ছুটল, ছুটে বাইরে এলো। বাইরে পুরো করিডোর খুঁজে বেরাল, কিন্তু অমি কে পেলো না। শান্ত এবার উত্তেজিত হয়ে গেল। লিফটের বদলে সিড়ি বেয়েই নিচে নামতে নিল। হঠাৎ তার মনে হলো কেউ তার নাম ধরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। শান্ত খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করল। তার নামটা কেউ বিকৃত করে ডাকছে। অশান্ত অশান্ত বলে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। আর এই কাজটা মিস চশমিশের ছাড়া আর কারোই হতে পারে না।

নিঝুম লাফিয়ে যাচ্ছে, অমিও তাকে দেখাদেখি লাফাচ্ছে। বোধহয় সে খুব মজা পাচ্ছে। নিঝুম সামনে তাকিয়ে দেখল অশান্ত নেমে আসছে। তার মুখে কোন প্রকার কৌতুহল নেই। নির্বিকার শান্ত না কুল মুখে হেঁটে আসছে সে। নিঝুম তাকে দৌড়ে এসে অশান্ত’র পিছনে এসে দাঁড়াল। ভয়ে কুঁকড়িয়ে বলল, “অশান্ত দেখুন এই বিড়াল কেমন করছে?

“ওর নাম অমি!

“আরে যেটা ইচ্ছে সেটা হোক। আপনি আগে দেখুন ওকে। আমার সাথে কেমন করছে।

শান্ত অমির মুখের দিকে তাকাল। অমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত বলে উঠল, “অমি একটা একদম ঠিক না, তুমি আমায় না বলে এখানে কেন চলে এলো।

পেছন থেকে চশমিস বলে উঠল , “হ্যাঁ হ্যাঁ কেন এলে, আর এসে আমাকে জ্বালাচ্ছো কেন?

“অমি খুব ভালো ও কাউকে জ্বালায় না।

নিঝুম অমি’র দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, “ও খুব পঁচা!

“তুমি আঙুল তোলা বন্ধ করো, নিজেকে কি সাধু মনে করো নাকি?

“আপনি আমার চেয়ে ভালো আরেকটা নিঝুম এনে দেখাতে পারবেন

“থামো! তোমাকেই নিয়ে অশান্তির শেষ নেই আবার আরেকটা। পাগল নাকি আমি!

“অশান্তি মূল তো আপনি অশান্ত।

“তাই! রেখে গেলাম তোমাকে অমি’র কাছে। অমি তোমাকে আমি আর আমার কাছে নিয়ে যাবো না। তুমি যখন সেচ্ছায় এসেই পড়লে তখন থাকো চশমিসের সাথে। আমার ঘরে তোমার আর জায়গা নেই।

বলেই পেছন ফিরল। নিঝুম যেন অষ্টম আশ্চর্য দেখছে। অশান্ত মুখ ভেংচি কেটে তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। সে সত্যি চলে যাচ্ছে। নিঝুম মুখ ফুটে বলল, “অশান্ত আপনি সত্যি চলে যাচ্ছেন!

“তা নয় তো কি? তুমি কি ভাবলে!

“অশান্ত দেখুন, ওকে এখান থেকে নিয়ে যান। আমি এক্ষুনি চলে যাবো।

“তো যাও!

“ওকে পথ ছাড়তে বলুন।

অশান্ত বাঁকা হাসল। নিঝুম রেগে হাঁটা ধরল। অমিও তার পিছন পিছন যেতে লাগল। লাফালাফি আবার শুরু, যেখানে নিঝুম যাচ্ছে, অমিও যাচ্ছে সেখানে। শান্ত দাঁড়িয়ে হাসছে, বেশ মজা পাচ্ছে সে। নিঝুম দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ঠেকল শান্ত’র কাছে। শান্ত’র পিছনে গিয়ে আড়াল হলো।‌কাজ হলো না এতে, অমিও তার পিছন পিছন সেখানে গেল। নিঝুম এবার শান্ত’র চারদিকে ঘুরতে লাগল। পরিস্থিতি এখন হাতের বাইরে। শান্ত বুঝে উঠার আগেই নিঝুম সিঁড়ির এখানে পা পিছলে পড়ে যেতে নিল। শান্ত সাথে সাথে নিঝুমের কোমড় আঁকড়ে ধরল। নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অশান্ত দিকে। অশান্ত মিস চশমিশের অনেকটাই কাছে। চশমার আড়ালে তার চোখ গুলো দেখছে সে। অপলক দৃষ্টিতে সেই চোখের দিকে তাকিয়ে রইল শান্ত। এমন সুন্দর চোখ কম’ই দেখলো সে। কই আগে তো এই চোখ, এই দৃষ্টি খেয়াল করি সে। হঠাৎ আজ এতোটা প্রভাব ফেলল তার উপর! কিন্তু কেন?

“মিয়াও! বলে ডেকে উঠল অমি। শান্ত দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাল তার দিকে। অমি ঘাড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে দেখছে তাদের।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here