তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 #মিমি_মুসকান #পর্ব_৩৫

0
359

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৫

বরাবরের মতো আজও আহনাফ ভেবেছিল নিঝুমের জন্য আগে থেকে সিটের জায়গা রেখে দেবে। কিন্তু বাসে উঠতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা টা খেলো সে। সেই দিনকার মেয়েটা আজ বাসের এক কোনে জানালার সিটে বসে আছে। তার আর মেয়েটার চোখাচোখি হতেই আহনাফের মনে হলো মেয়েটা হাসল। কেন হাসল তার জানা নেই। জায়গা আর আশেপাশে খালি নেই, আহনাফের এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। তবে অন্যদিনের মতো আজ তেমন ভিড়ও ছিল না। আহনাফ বুঝে উঠতে পারল না আজকের দিনটাই কেন এমন হচ্ছে। আজই মাসের দিন, আগামীকাল থেকে তাকে আর বাসে করে আসতে হবে না। তাই খুব করে চেয়েছিল নিঝুমের সাথে বসে খানিকক্ষণ গল্প করতে। মনে হচ্ছে এখন চাওয়াটা মনের মাঝেই দমিয়ে রাখতে হবে।

বাস থামল, কয়েকজন নামল। তবে যারা নামল তারা অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। শুধু মেয়েটার পাশের সিটটাই খালি পড়ে রইল। একমাত্র বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ। ব্যাপারটা বোধগম্য নয়। খানিকটা বিব্রত হয়ে বসে পড়ল মেয়েটার পাশে। আহনাফের এখন মনে হলো মেয়েটা আবারো শব্দ করে হাসল। মেয়েটা কেন হাসল, তার কাছে কি এটা কোন খেলা মনে হচ্ছে। সেদিন তাকে নিজের পাশে বসতে দেই নি বলে সে খেলায় হেরে কিন্তু আজ তাকে তার পাশে বসিয়ে জিতে গেল তাই খুশিতে সে হাসছে। অচেনা কোন মেয়ের দিকে প্রয়োজন ছাড়া তাকানোর স্বভাব টা আহনাফের নেই কিন্তু এখন ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে দেখতে। সেদিন কথা বলার সময় হয়তো দেখেছিল কিন্তু এখন মনে করতে পারছে না।

নিঝুম উঠলো এবার। তাকে দেখতে পেয়েই আহনাফ উঠে দাঁড়াল। নিঝুম হেসে বসল আহনাফের সিটটাতে। এখন আর ওই মেয়েটার কথা মনে আসছে না আহনাফের। নিঝুম হেসে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল, “দাঁড়িয়ে গেলেন কেন?

“সমস্যা নেই, তুমি বসো।

দেখতে দেখতে নিঝুমের ওপাশের সিটটা খালি হয়ে গেল। আহনাফ বসল সেখানে, নিঝুম হেসে বলল, “বাসে চড়া এখন আপনার স্বভাব হয়ে গেছে তাই না আহনাফ।

“হুম খানিকটা।

“তো আজ তো আপনার শেষ দিন।

আহনাফ ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা দিল। নিঝুম বলে উঠল, “জানেন তো আহনাফ, আপনাকে খুব মিস করবো। এখন আর আপনার সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া হবে না।

“তুমি বলতে চাইছো কাল থেকে আমি আবারো তোমার সাথে বাসে চড়ে আসি।

“না না! এক মাসের জন্য টিকে ছিলেন কিন্তু নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেলে আবার বিপদ।

আহনাফ কিঞ্চিত পরিমাণ হাসল। তবে তার মন আজ খানিকটা ক্ষুব্ধ হলো। পাশের সিটে বসলে যেভাবে গল্প করা হতো তেমনটা আজ হলো না। অনেক আশা করে এসেছিল তবে।

বাস থেকে নামল দুজন। আহনাফ নিঝুম কে জিজ্ঞেস করে বসল, “আচার খাবে নিঝুম!

নিঝুম চশমার আড়ালে চোখ গুলো বড় বড় করে বলল, কি বললেন?

আহনাফ ইশারায় দেখালো, ভ্যান গাড়ি করে আচার ওয়ালা যাচ্ছে। নিঝুম এক গাল হেসে সেখানে দূর দিল। আহনাফ ও পিছন পিছন গেলো তার।
নিঝুমের হাতে আচারের প্যাকেট, সে একটু একটু করে আচার খেতে খেতে ভার্সিটিতে ঢুকল। তানিশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে গেটের দিকে। আহনাফ আর নিঝুম কে একসাথে ঢুকতে দেখে তার কলিজাটা কেমন কেঁপে উঠলো। অচেনা এক অনুভুতি, তবে এই অনুভূতিতে শুধু জড়িয়ে আছে কষ্ট! গত এক মাস ধরে শুধু এই এক অনুভুতি হয়ে আসছে তার।

নিঝুম ভার্সিটিতে পা রাখতেই দেখল অশান্ত, আফিন আর নীলাভ্র দাঁড়িয়ে আছে। দূরে তিথি আর আহিম! তিথি সমানে বোতল থেকে পানি বের করে ছুঁড়ে মারছে আহিমের কাছে। আহিম বেচারার বেশ নাজেহাল অবস্থা। তারা তিন বন্ধু মজা নিচ্ছে। ভবনের দোতলা বারান্দা থেকে ইফা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সেও সমানে হেসে যাচ্ছে।

নিঝুম এক দৌড়ে এসে উপস্থিত হলো অশান্ত’র কাছে। অশান্ত’র মুখের কাছে আচারের প্যাকেট টা ধরে বলল, “নিন।

“এসব কি?

“আচার!

“ছিঃ! আমি এসব খাই না।

“আচার কে ছিঃ বলছেন, খাবারকে সম্মান করতে জানেন না

“এসব অখাদ্য কে কি এখন সম্মান জানাতে হবে চশমিস।

“ছাগল কোথাকার।

“এই আমাকে ছাগল বলবে না একদম

নিঝুমের কিছু যায় না শান্ত’র ধমকানিতে। সে নির্বিকারে মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল। গিয়ে প্রথমে থামাল তিথি কে। তিথি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “নিঝুম ছাড় আমায়!

“কেন কেন? কি হয়েছে?

“আজ তো এই আহিমের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো।

আহিম দূরে সরে গিয়ে বলল, “বজ্জাত মেয়ে একটা।

“দেখলি, দেখলি ও আবার আমাকে বজ্জাত বলল। আজ তো ওর একদিন না তো আমার একদিন।

নিঝুম কোনমতেই তিথি কে নিয়ে গেল। আহিম হাফাচ্ছে, শান্ত হেসে তার পিঠ চাপড়ে বলল, “চশমিসের বান্ধবী বলে কথা, ওমন একটু আটকু তোকে সইতে হবে।

“একটু এসে বাঁচা”লি না তোরা আমায়।

“তোরা যেভাবে ঝগড়া করছিলি, মাঝখানে গিয়ে কি আমরা গণধোলাই খেতাম নাকি! ( মুখ টিপে কথা টা বলল নীলাভ্র )

আহিম চোখ রাঙিয়ে তাকাল। আহনাফ হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো।

——

পরদিন, আহনাফ যেন আজ গাড়ি করে এসে স্বস্তি পেল। তবুও কোথাও কি একটা যেন ছেড়ে গেল। ওই নিঝুমের সাথে বসে গল্প করা, ওর বাচ্চামি কথা গুলো যেন কানে বাজছিলো তার। শান্ত হুট করে এসে আহনাফের সামনে এসে দাঁড়াল। আহনাফ খানিকটা হতভম্ব! ঠোঁটের কোনের হাসি রেখে বলে উঠল, “তুই তো দেখছি নিঝুমের স্বভাব পেয়েছিস!

“কি বলছিস এসব তুই, শেষে কি না এই চশমিস!

“হুম, নিঝুমের মতো হুটহাট করে লাফিয়ে চলে আছিস। ওর ভূত এখন তোর ঘাড়ে চেপেছে।

“আহনাফ তুই বাড়াবাড়ি করছিস, তোর মাথায় মনে হয় সারাদিন নিঝুম ঘুরপাক খাচ্ছে।

আহনাফ শব্দ করে হাসল। কিন্তু মনের মাঝে কথাটা যেন গেধে গেল। সত্যি মনে হচ্ছে তাই! নিঝুম কে নিয়ে ইদানিং বেশ ভাবছে সে, কোন কারণ ছাড়াই ভাবছে। কিন্তু কেন? কোন দরকার কি আছে এতে!

“কি রে কি হলো?

আহনাফ কিঞ্চিত হাসল। হাতের বইটা বন্ধ করে বসে পড়ল বেঞ্চিতে। বলে উঠল, “তোর ডেয়ার টা ভালো ছিল শান্ত।

“এমন ডেয়ার আরো চাও নাকি।

শব্দ করে হেসে বলল, “বিশেষ কিছু তো ছিল!

“কিন্তু কি?

“জানি না তবে মনে হচ্ছে সেটা তোর চশমিস!

শান্ত’র মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। কেমন এক অজানা আতঙ্ক। কিন্তু মুহুর্তেই নিজেকে সামলিয়ে বলল, “ওর কাজ হচ্ছে নিজেকে সবসময় বিশেষ কেউ মনে করানো।

“তোর সাথেও কি এমনটা করে নাকি!

শান্ত নিশ্চুপ। স্মৃতিচারণ করল তার আর চশমিসের কাটানো কিছু মুহুর্ত। আশ্চর্যের বিষয় হলো তখন’ই কেউ দূর থেকে ডেকে বসল, “এই অশান্ত!

শান্ত চোয়াল শক্ত করে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল, “শুরু হয়ে গেল। এই মেয়েটার একটাই কাজ বুঝলি।

“তোকে জ্বালানো!

বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আহনাফ। শান্ত অলপক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। এই হাসিটা নকল ছিল না। তিশা চলে যাবার অনেকদিন পর মনে হলো আহনাফ মন খুলে হাসছে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে আহনাফ দাঁড়িয়ে গেল। “নিঝুম” বলে ডেকেই দৌড়ে সেদিকে গেল ‌। শান্ত পিছন থেকে তাকাতেই দেখল চশমিস পড়ে গেছে। আশেপাশে ছোট খাটো একটা ভিড়ও জমে গেছে। শান্ত সেদিকে ছুটল।

নিঝুম হাত ভিড়িয়ে তার চশমা খুঁজে যাচ্ছে। আহনাফ নিচ থেকে চশমাটা তুলে নিঝুমের হাতে দেবার আগে দেখল চশমা টা ভেঙে গেছে। এদিকে নিঝুম চশমা এখনো খুঁজে যাচ্ছে। ইফা আর তিথি নিঝুম কে পড়ে যেতে দেখে দৌড়ে এলো। শান্ত বলে উঠল, “চশমা ভে*ঙে গেছে, আর খুঁজে লাভ নেই।

“যাহ ভে*ঙে গেল।

“চশমা পড়েও কি তুমি ঠিকমতো হাঁটতে পারো না চশমিস!

তিথি আর ইফা ততোক্ষণে নিঝুম কে তুলে দাঁড় করালো। নিঝুম বলে উঠল, “হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছি, খেয়াল করি নি।

তার কণ্ঠে ছিল বিষণ্নতা। আহনাফ শান্ত কে থামিয়ে দিয়ে বলল, “বাদ দে, তা নিঝুম চশমা কি আর আছে।

“বোধহয় আছে ব্যাগে। মা তো রেখে দেয় সবসময়

শান্ত বিরক্ত স্বরে বলল, “বোধহয় মানে, তুমি তো জানো চশমা ছাড়া তুমি অচল। এক্সট্রা একটা তো রাখতেই হয় না সাথে।

নিঝুম চেঁচিয়ে বলে উঠল, “আমি জানি, মনে করানোর কিছু নেই।

বলেই রেগে হাঁটতে শুরু করল। ইফা আর তিথি তাকে শান্ত করতে তার পিছন পিছন গেল। আহনাফ চোখ বাঁকিয়ে বলল, “তুই রাগিয়ে দিলি ওকে।

“বাদ দে, দু মিনিট পর দেখবি এসে আমার সাথেই ঝগড়া করছে।
বলেই হাঁটা ধরল শান্ত। আহনাফ চোখ নামিয়ে হাতে দেখল। ভা*ঙা চশমাটা এখনো তার হাতে। সেটা হাতেই রেখে দিল সে।

—–

শান্ত’র কথা সত্যি হলো। ক্লাস শেষে আহনাফ দেখল বটতলায় নিঝুম আর শান্ত দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে। হঠাৎ তার মনে হলো, শান্ত বেশ বুঝতে পারে নিঝুম কে।

“তুমি এখানে কেন? ( বেশ চওড়া গলায় বলল শান্ত )

নিঝুম মুখ ফিরিয়ে বলল, “এভাবেই আপনার কি?

“ওদিক তাকিয়ে কি বলছো।

“আপনার মুখ দেখার ইচ্ছে নেই আমার।

“তাহলে কথা বলতে এসেছ কেন?

“এভাবেই ইচ্ছে হলো। যাচ্ছি আমি!

হন হন করে চলে যেত নিল।‌ আচমকা শান্ত একটা কান্ড করে বসল। হাত ধরে আটকে দিল নিঝুম কে। নিঝুম বেশ অবাক, তার সাথে শান্ত’র চোখে মুখেও অবাকের ছাপ। এটা করতে চায় নি সে কিন্তু কি করে হলো বুঝতে পারল না। শুকনো ঢোক গিলল সে। তখনকার ওভাবে বলা উচিত হয় নি, কিন্তু সরাসরি সেই কথা বলতে পারছে না শান্ত।

“কি হয়েছে?

শান্ত নিজেকে সামলিয়ে, “বসো এখানে!

নিঝুম চট করে বসে পড়ল। হয়তো এটার আশায়’ই ছিল সে। মুখ ওদিকে ঘুরিয়ে বসল। শান্ত ভ্রু কুঁচকে বলল, “মুখ এখনো ওদিক করে রেখেছ?

“সরি বলুন আগে?

“কেন?

নিঝুম চশমা ঠিক করে বলল, “আমাকে তখন ওভাবে বকাঝকা করার জন্য।

“আমি তোমাকে বকি নি?

“থমক তো দিয়েছেন। কটূ কথা বলেছেন, তাই সরি বলুন।

“বয়েই গেছে সরি বলতে, যাও চলে যাও।

“আচ্ছা যাচ্ছি!

নিঝুম আবারো উঠে দাঁড়াল। শান্ত মোটেও ভাবে নি নিঝুম এমন কিছু একটা করবে। সে হালকা কাশল। নিঝুম বাঁকা হেসে বলল, “কিছু বলবেন?

“আচ্ছা বলো কি কারণে এসেছো?

নিঝুম চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে।‌ শান্ত সেই চাহনি উপেক্ষা করতে পারল না। হাল ছেড়ে মাথা নামিয়ে নিল। নিঝুম আবারো বসতে বসতে বলল, “আচ্ছা অশান্ত ছাড়ুন, আমি মাফ করে দিয়েছি আপনাকে। এভাবেও বন্ধুর উপর রেগে থাকতে নেই।

“আমি কিন্তু তোমায় সরি..

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে নিঝুম বলল, “হ্যাঁ শুনেছি, সরি বললেন!

“তুমিও!

“আচ্ছা অশান্ত শুনুন একটা বিপদে পড়েছি।

“কি বিপদ!

“এভাবে না, চলুন হাঁটতে হাঁটতে বলি।

বলেই শান্ত’র হাত ধরে ফেলল। শান্তকে টেনে নিয়ে গেল বাইরের দিকে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল তাদের দুজনের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে দুজনেই বাইরে গেল। নিঝুম আমতা করতে করতে বলল, “অশান্ত!

“কি?

“আসলে কি হয়েছে, জানেন?

“কখন থেকে তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি!

হঠাৎ নিঝুম অনেকটা উত্তেজিত হয়ে পড়ল। শান্ত কে টেনে এনে দূরের চায়ের টং এ ইশারা করে বলল, “ওই ওই ছেলেটা কে দেখছেন?

শান্ত কপাল কুঁচকে ছেলেটা কে দেখল। লম্বা একটা ছেলে, লম্বাটে মুখ। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আছে তার মুখে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে সে আর রাস্তার এদিক থেকে ওদিক দেখছে। শান্ত ভ্রু উঠিয়ে বলল, “তুমি পছন্দ করো ছেলেটাকে।

নিঝুম মুখ ফুলিয়ে শান্ত’র মাথায় বারি মেরে বলল, “পাগল হলেন। আমি কেন পছন্দ করতে যাবো।

শান্ত মুচকি হেসে বলল, “ও হ্যাঁ তাই তো, তোমার পছন্দ তো আহনাফ!

নিঝুম মুখ ঘুরিয়ে নিল। বলে উঠল, “ছেলেটা আমাকে জ্বালাচ্ছে ইদানিং ধরে।

“ওহ আচ্ছা !

“কিসের ওহ আচ্ছা। এতদিন শুধু বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে জ্বালাতো। আজ তো একদম ধৈর্য্যের সীমা পার করল। আমার সাথে বাসে উঠে পড়ল। ফলো করতে করতে এখান অবদি এসেছে।

“তাহলে তুমি বলছো না কেন তুমি পছন্দ করো না।

“বলেছি , কিন্তু ছেলেটা নাছড়বান্দা। কোনদিন নাকি তাকে জিহ্ব বের করিয়ে ভেঙিয়ে দিয়েছিলাম সেখান থেকেই আমার প্রেমে পড়ে গেছি।

“আমি তো জানতাম মেয়েরা রাস্তা ঘাটে ছেলেদের দেখলে চোখ টিপ দেয়, তোমার পদ্ধতি দেখছি আলাদা।

“অশান্ত! ( বলেই খামচি দিয়ে বসল )

“তুমি আবার শুরু করলে।

“সাহায্য করুন আমার। আমি ওকে বলেছি আমার একজন অনেক হ্যান্ডসাম বিএফ আছে। তাই সম্ভব না, কিন্তু ও মানতে রাজি না।

“তো আমি কি করবো?

নিঝুম হেসে শান্ত’র চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল, “আমি জানি আপনি ওতোটাও হ্যান্ডসাম না তবুও চলবে।

“কি বললে তুমি, আমি হ্যান্ডসাম না্।

“না মানে..

বলেই ওদিকে তাকাল। ছেলেটা আর নিঝুমের চোখাচোখি হলো। নিঝুম ফিসফিস করতে করতে বলল, “দেখুন দেখুন ছেলেটা আসছে। আপনি তো বুঝতেই পারছেন আপনাকে কি করতে হবে।

“আমার কি দায় পড়েছে, আমি কেন করবো। তুমি যাও আহনাফ কে বলো গিয়ে।

“অশান্ত!

“কি?

“প্লিজ…

শান্ত মুখ ফিরিয়ে নিল। ছেলেটা দেখতে দেখতে তাদের সামনে চলে এলো। এসেই বলে বসল, “হাই নিঝুম।

অনিচ্ছাকৃত ভাবে নিঝুম ও বলল, “হাই!

শান্ত অদ্ভুত ভাবে ছেলেটা কে দেখছে। ছেলেটা কেমন ভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসছে নিঝুম কে দেখে। অসহ্য লাগছে তার। ইচ্ছে করছে নিঝুম কে টেনে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে। হালকা কেশে ছেলেটা বলল, “তুমি কি আমায় দুটো মিনিট সময় দেবে।”

শান্ত চোখ বড় বড় করে তাকাল। নিঝুম শান্ত’র দিকে ফিরল। শান্ত মুখ ফিরিয়ে নিল। নিঝুম মুখ ফুলিয়ে বলল, “ঠিক আছে!

হতভম্ব হয়ে গেল শান্ত। ছেলেটা হেসে বলল, “আচ্ছা তাহলে..

কথা শেষ করবার আগে শান্ত নিঝুমের হাত ধরে বলল, “তুমি না বললে আইসক্রিম খাবে, তাহলে এখানে কি করছো দাঁড়িয়ে। চলো আমার সাথে!

বলেই নিঝুম কে টেনে নিয়ে নিল। নিঝুম যেমন অবাক হলো ছেলেটাও তেমন অবাক। নিঝুম বেশ পিছন ফিরে ছেলেটাকে দেখল। তার বেশ মজা লাগছে। শান্ত বেশ শক্ত করেই নিঝুমের হাত ধরে অনেক খানি পথ চলে এলো। হাত ছেড়ে দিতেই নিঝুম দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, “এইতো আমার ভালো অশান্ত!

শান্ত মুখ ভেংচি কেটে বলল, “যাও এবার।

“আহ কোথাও যাবো, আইসক্রিম কোথায় আমার।

“কিসের আইসক্রিম? ওটা তো আমি এভাবেই বলেছিলাম।

“এভাবেই একটা কিনে দিন আমায়।

“যাও নিজে কিনে নাও।

“এই এই অশান্ত, শুনুন না।

“কি?

শান্ত ছোট ছোট চোখ করে তাকাল। নিঝুম হাত দিয়ে চশমাটা ঠিক করে বলল, “এভাবে একদম তাকাবেন না। আইসক্রিম’র কথাটা তো আপনিই বললেন। এখন আমার খেতে ইচ্ছে করছে।

“হ্যাঁ তো!

নিঝুম মিনমিনয়ে বলল,
“আমার কাছে টাকা নেই, আজ আব্বুর থেকে টাকা চাইতাম কিন্তু তার আগেই আব্বু চলে গেল। আমার লেট হয়ে গেছে তাই আম্মুর কাছেও টাকা নিতে পারি নি। যা আছে যেতে ভাড়া লাগবে, আপনি না হয় আমাকে আজ আইসক্রিম খাবার টাকাটা ধার দিন। আমি দিয়ে দেব।

শান্ত কিছু না বলে দোকানের দিকে হাটা ধরল। নিঝুম মুখ ফুলিয়ে বলল, “কি কিপ্টা রে বাবা, এতোক্ষণ বলে বললাম কিছুই হলো না। যেই বললাম ধার দিন অমনি সুর সুর করে চলে গেল। হুহ কাল’ই টাকা ফেরত দিয়ে দেব।

অতঃপর সেও ছুটল শান্ত’র পিছু। শান্ত দুই হাত বাহুতে গুঁজে বলল, “নাও কোনটা নিবে।

নিঝুম এদিক তাকাল। কি মনে করে বাইরে তাকিয়ে বলল, “এগুলো খাবো না।

“তাহলে?

“ওই আইসক্রিমের গোলা খাবো।

“ওগুলো কে খায়।

“আমি খাবো, চলুন!

বলেই শান্ত’র হাত ধরে রাস্তার ওপারে নিয়ে গেল। দুটো আইসক্রিমের গোলা দিতে বলল নিঝুম। শান্ত বলে উঠল,
“দুটো কেন?

“একটা আপনার একটা আমার!

“আমি এসব খাবো না।

“ঠিক আছে আংকেল, আমি তবুও দুটো দিন।

“কেন?

“আমি খাবো।

“দুটোই।

“হ্যাঁ দুটোই।

বলেই খিলখিলিয়ে হাসল নিঝুম। দুটো আইসক্রিমের গোলাই হাতে নিল সে। শান্ত টাকাটা দিয়ে নিঝুমের হাত থেকে একটা আইসক্রিমের গোলা কেড়ে নিল। নিঝুম হা হয়ে তাকিয়ে রইল। শান্ত নির্বিকারে আইসক্রিমের গোলা খেয়ে যাচ্ছে। এই তো বলল খাবে না, এখন আবার কেড়ে নিয়ে খাচ্ছে। মুখ ভেংচি কেটে নিঝুম নিজের আইসক্রিমের গোলা খেতে লাগল। দুজনেই আবার ভার্সিটিতে ফিরল। নিঝুম এসেই গেল ইফা আর তিথির সাথে দেখা করতে। আহনাফ শান্ত’র দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

“তুই এসব কি খাচ্ছিস শান্ত!

“আইসক্রিমের গোলা।

“কবে থেকে?

“আজ থেকেই বাট খেতে ভালো।

আহনাফ মুখ টিপে হাসল। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাল। দুজনেই হাঁটতে লাগল। ফোনটা বের করে অন করল আহনাফ। শান্ত নজর গেল ফোনের স্ক্রিনের দিকে। তিশা হাস্যউজ্জ্বল মুখটা দেখা যাচ্ছে। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা বন্ধ করে রাখল। শান্ত ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “তোর মনে হয় এখন এসব থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

“হুম উচিত!

“তুই কি তাহলে আবার নতুন করে শুরু করবি।

“ও তো করছে!

“আমি তোর কথা জিজ্ঞেস করছি আহনাফ!

আহনাফ কিঞ্চিত হাসল। সামনে তাকাল। নিঝুম, তিথি আর ইফা বেরিয়ে যাচ্ছে। আহনাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। শান্ত’র নজর থেকে আড়াল হলো না তা। আহনাফ শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “হুম আমি পেয়ে গেছি।

“কি?

“নতুন ভাবে শুরুর পথ!

“পথচলার সঙ্গীটি কে?

কথাটা বলতে গিয়ে শান্ত’র স্বর খানিকটা কেঁপে উঠলো। হঠাৎ কেন তার মন এতো উতালা হলো।

“তুই তাকে চিনিস!

কথাটা বলেই আহনাফ এগিয়ে গেল। শান্ত’র কেমন অস্থিরতা বোধ হলো। আহনাফ গাড়ি বের করল। শান্ত হুট করে এসে গাড়ির ভেতর বসে পড়ল। আহনাফ খানিকটা হতভম্ব বোধ করে বলল, “তুই আমার গাড়িতে !

“মেয়েটা কে আহনাফ?

আহনাফ কিঞ্চিত হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল। শান্ত ঠোঁট কামড়ে আছে। আহনাফ বলল, “অনেকটা অস্থির হয়ে আছিস দেখছি।

“তুই কি আমাকে বলবি না।

“এমন কখনো হয়েছে আমি তোকে কিছু না বলে থেকেছি।

“তাহলে? কে সে?

ভার্সিটির কাছের পার্কটার কাছে আহনাফ গাড়ি থামাল। গাড়ি থেকে বের হলো সে। শান্ত ও নামল! আহনাফ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। আকাশটা আজ চমৎকার লাগছে তার কাছে। এখানে শান্ত’র মন পুরোটা অস্থিরতা ভরা। কেন স্বস্তি পাচ্ছে না সে। বার বার মনে হচ্ছে আহনাফ এখনই নিঝুমের নামটা নিবে। আচ্ছা নিলেই বা কি? এতে তার এতো অস্থির হবার কি দরকার! নিঝুম ও আহনাফে পছন্দ করে!

এতো টুকু ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল শান্ত। আহনাফ শান্ত’র দিকে ফিরে বলল, “নিঝুম!

শান্ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। আহনাফ স্পষ্ট স্বরে বলল, “আমি ভেবে নিয়েছি সঙ্গিনী কে হবে, নিঝুম!

শান্ত চট করে বলে উঠল, “তোর কি মনে হয় চশমিস রাজি হবে।

আহনাফ নিশ্চুপ হয়ে গেল। শান্ত’র মন বলছে আহনাফ হয়তো নিঝুমের মনের কথা জানে না। কিন্তু তার কানে বাজল অন্য কথা। সে বিস্মিত চোখে আবার ফিরল আহনাফের দিকে। আহনাফ স্পষ্ট বলে উঠল, “নিঝুম আমায় পছন্দ করে!

“তোকে চশমিস নিজে বলেছে?

“না!

“তাহলে..

“আমি জানি?

শান্ত ভ্রু কুঁচকে নিল। আহনাফ হেসে বলল, “অবাক হচ্ছিস। পুরোটা শুনলে আরো অবাক হবি। তুই হয়তো জানিস না, তিশা কে রিসিভ করতে যখন গিয়েছিলাম সেদিন নিঝুম ও আমার সাথেই ছিল। এক গুচ্ছ ফুল আর একটা কার্ড ছিল তার হাতে। আমি জানতাম না সেটা আমার জন্য’ই ছিল। তবে বেচারি হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে কারণ সেদিন অবদি হয়তো ও জানতো না তিশা’র কথা। তিশা কে দেখে হয়তো রেগে কার্ড গাড়িতে ফেলেই চলে গেছিল।

“তুই কি সেই কার্ড পড়েছিস!

“হুম পড়েছিলাম, তবে তখন কিছুই আমার হাতে ছিল না। কিন্তু এখন বোধহয় আছে।

বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো আহনাফ। শান্ত হঠাৎ করেই অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেল। আজ অবদি সে ভেবেছিল আহনাফ হয়তো সেই কার্ড দেখতে পায় নি। কিন্তু না, আহনাফ তা পেয়েছে, পড়েওছে। চশমিসের মনের খবর সে জানে। তাহলে তো ভালোই হচ্ছে। চশমিস পেয়ে যাচ্ছে আহনাফকে। কিন্তু এখানে তার মন এতো বিচলিত কেন? আহনাফের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো তখন তার কানে, “এই শান্ত, কার্ডটা আমি পড়ে আর খুঁজে পেলাম না কেন?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here