তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_৩৬

0
363

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৬

রাত তখন ১২ টা। ফোন বাজছে শান্ত। গুটিগুটি মেরে সোফার এক কোনে পরে ছিল। ঘুমের রেশ বোধহয় তখনো কাটেনি। ফোনটা হাতে নিয়ে কোনমতে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দিয়া’র কণ্ঠ ভেসে এলো তার কানে। হতচকিয়ে গেল শান্ত। বাইকের চাবি নিয়ে ছুটে বের হয়ে গেল সে। যেতে যেতে কল করলো আহনাফ কে। গন্ড*গোল লেগেছে আহিম আর নীলাভ্রের সাথে। সেখানকার অবস্থা যেকোনো সময়ে বেগতিক হতে পারে।

শান্ত তড়িখড়ি করে ঢুকল ক্লাবে। মানুষজন তেমন একটা নেই। বোধহয় গন্ডগোল লাগতেই সব পালিয়েছে। এক কোনে দিয়া বসে নীলাভ্রের হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। শান্ত সেদিকেই ছুটে গেল। ক্লাবের চেয়ার সব উলোট পালোট হয়ে আছে। জিনিসও ভাঙচুর হয়েছে। ম্যানেজার সাহেব চেঁচিয়ে যাচ্ছে। “কাউকে ছাড়বো না, কাউকে না, এখানে এসে মারা*মারি। কি ভেবেছে কি। ওই পুলিশ কে কল করো। এদের সবগুলোকেই জে*লে ঢুকবো আমি।”

শান্ত একবার সেদিকে তাকাল। আহিম অন্যদিকে বসে চুপচাপ বিয়ারে মুখ দিচ্ছে। পু*লিশের কথা শুনেও কোন ভাবান্তর নেই ওদের মুখে। দুজনকেই অনেকটা ক্লান্ত লাগছে, মুখে আঘাতে ছাপও। আহিম’র ঠোঁটের নিচ টাও কেটে গেছে। আফিন, রিয়া আর তানিশা দৌড়াদৌড়ি করে ঢুকল। ম্যানেজার সাহেব যেন আরো রেগে গেলেন। স্টাফ কে এবার দাঁড়িয়ে থেকে বললেন পুলিশ কে কল দিতে। তানিশা বাঁকা হেসে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “পু*লিশ কে কল করতেই পারেন। অসুবিধে নেই কিন্তু সমস্যা আপনার’ই বাড়বে।

“মানে! কি বলতে চান আপনি।

“প্রথমে আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলা বন্ধ করুন। পু*লিশ কে কল করলে যে ক্ষতিপূরণ টা পেতেন সেটাও পাবেন না।

ম্যানেজার সাহেব রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেন,
“মানে? কি বলছেন কি এসব। আপনি জানেন আপনাদের জন্য কতো ক্ষতিপূরণ হয়েছে আমাদের?

“আপনি জানেন আমি কে?

ম্যানেজার সাহেব এবার নিমিয়ে গেলেন। তানিশা কে পরখ করতে লাগলেন তিনি। তিনি এটাও জানেন ক্লাবে কখনো গরিব ঘরের মেয়েরা আসে না। যারা আসে তারা যথেষ্ট বড়লোক। তানিশা ব্যাগ থেকে কার্ডটা বের করে ম্যানেজার সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “কার্ডে লেখা নাম্বারে ফোন করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে নিবেন। এসে দিয়ে যাবে!”

বলেই চলে এলো সেখান থেকে। ম্যানেজার সাহেব এবার মাথা ঠান্ডা করলেন। নিচের লেখা নাম্বারে কল করলেন তিনি। কেউ এলো এবার। তানিশা ফিরে তাকিয়ে দেখল আহনাফ! দেখেই মনে হচ্ছে ঘুম থেকে ছুটে এসেছে। উসকোখুসকো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। আহনাফ ছুটে গেল আহিমের কাছে। গাল ধরে এদিক থেকে ওদিক করে বলল, “কে মেরেছে এমন ভাবে?

আহিম মুখ ঘুরিয়ে নিল। শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “চিনিস তোরা তাদের?

রিয়া ধমকের সুরে বলল, “তোদের এসব কথা বন্ধ কর। আগে ডাক্তারের কাছে নেবার ব্যবস্থা কর এদের।

আহিম উঠে দাঁড়াল। হন হন করে চলে যেতে নিল। আফিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “রেগে যাচ্ছিস কেন এভাবে?

আহিম রেগে আফিন কে ধাক্কা মেরে বলল, “রেগে থাকবো না তো কি করবো? এই প্রথম এমনটা হয় নি। এর আগেও রিয়া আর তানিশা কে নিয়ে বাজে কথা বলেছে ঈশানরা। শুধু তোদের জন্য কিছু বলেনি সেদিন। কিন্তু আজ, আজ কি করলো দিয়ার গায়ে হাত..

বলেই থেমে গেল। রাগে আহিমের পুরো শরীর কাঁপছে। নীলাভ্র রেগে দাঁতে দাঁত চেপে নিল। দিয়া বলে উঠল, “থাম তোরা! অনেক হয়েছে?

শান্ত বলে উঠল, “যা হয়েছে সকালে দেখা যাবে, সবাই এখন বাড়িতে যা। নীলাভ্র আর আহিম দুজনেই চল আমার সাথে। আমার বাড়ি থাকবি।

বলেই শান্ত বের হয়ে গেল। আহনাফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখল, শান্ত হঠাৎ এতোটা শান্ত হলো কি করে? কখনোই এমন হয় না সে, ওর বন্ধুকে মে*রেছে আর ও চুপচাপ বসে থাকবে অসম্ভব।

আফিন রিয়া আর দিয়া কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ফের আবার গেল শান্ত’র বাড়িতে। আহনাফও সেখানেই ছিল। তানিশা একা বাড়ি ফিরে নি, কিন্তু আহনাফের সাথেও ফিরে নি। তবে এখানে একটা কান্ড হয়েছে, তানিশা নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে গেছে। আহনাফ গাড়ি থেকে গেছে তার পিছু পিছু। বাড়ির সামনে গাড়ি যেতেই আহনাফ সোজা পথে গাড়ি নিয়ে চলে এলো। তানিশা সব দেখল, কিছুটা ভালোও লাগল তার। অন্যভাবেই হোক না কেন? আহনাফ তার চিন্তা করেছে, এটাই তার কাছে অনেক কিছু।

শান্ত কারো সাথে কথা বলা শেষ করে পিছু ফিরতেই দেখল আহনাফ তার সামনে। নিজেকে সামলে নিয়ে পাশ ফিরিয়ে চলে যেতেই আহনাফ বলে উঠল, “তুই কি করতে চলেছিস শান্ত!

“কিছুই না।

“মিথ্যে কেন বলছিস? তুই কিছু করবি না এটা হতেই পারে না।

“আচ্ছা তোর রাগ হচ্ছে না, ওরা আহিম আর নীল কে ( নীলাভ্র কে ছোট করে নীল ডাকল ) এভাবে মারল , ওদের ছেড়ে দিতে বলছিস।

আহনাফ বলতে নিবে অমনি আফিন বলে উঠল, “তুই মারবি, এরপর আবার ওরাও তোকে মারবে। এভাবেই চলতে থাকবে শান্ত। আমি ভাবছি সকালে পুলিশের কাছে গিয়ে…

কথা শেষ হবার আগেই শান্ত বলে উঠল, “আমি মার*বো এটা তোকে কে বলল?

সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত বাঁকা হেসে বলল, “সাপ ও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। লোক ভাড়া করেছি মা*রার জন্য। শুধু হাত পা ভাঙলেই চলবে, বেশি কিছু না। এতে ওরা জানবেও না আমি মা*রিয়েছি না অন্যকেউ!

আহনাফ সোফায় বসতে বসতে বলল, “তবে এটা এখন না, আরো কিছুদিন পর!

“হুম সেটাই, এখন কিছু করছি না। দিন যাক, সময় আসুক। লোক লাগিয়ে রেখেছি। একেকটা মারে*র জবাব দেবো। ওরা কি ভেবেছে লোক ভাড়া করে শুধু ওরাই মার*তে মারে।

আহিম আর নীলের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল শান্ত। সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো এটাই যে, কিছু উটকো ছেলেরা এসব কাজ করেছে। ক্লাবে এসে মাতলামি করে মেয়েদের গায়ে দেওয়া, খারাপ কথা বলা এটাই তাদের কাজের মধ্যে পড়ে। দিয়া কে কিছু বলায় সে চড় মেরে চলে এসেছে। এসেই দলবল নিয়ে এসেছে দিয়া কে অপমান করতে। যদিও আহিম আর নীলাভ্রের জন্য সেটা সম্ভব হয় নি।

পরদিন ভার্সিটিতে যেতেই সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইল নীলাভ্র আর আহিমের দিকে। একেকজন ঘুরে ঘুরে দেখছে তাদের। চোখের কাছে কালচে দাগ হয়ে আছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ঘু*সি মেরে কেউ এমনটা করেছে। নিঝুম হা হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আহনাফ শব্দ করে হাসতেই নিঝুম তার দিকে ফিরল। বলে উঠল, “আপনারা মারা*মারি করেছিলেন?

“শুধু ওরা দুজন।

“কিন্তু কেন?

শান্ত চোখ বাঁকিয়ে বলল, “শখ হয়েছিল তাই।

“এই এই আপনি আমার কথার শুধু উল্টো জবাব দেন কেন?

শান্ত মুখ ভেংচি কেটে মুখ সরিয়ে নিল। আহনাফ হেসে বলল, “এভাবেই ঝামেলা লেগেছিল কিছু ছেলেদের সাথে।

নিঝুম মাথা দুলিয়ে বলল, “ওহ আচ্ছা!

তানিশা দাঁড়িয়ে বলল, “গেলাম আমি, এসব ঢং দেখার কোন ইচ্ছে নেই।

তার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল দিয়া আর রিয়া। নিঝুম ফিসফিস করে বলল, “আমি মোটেও ঢঢঢঢং করে কথা বলি না।

কথাটা গেল আহনাফের কানে। মুখ টিপে হাসল সে। তানিশা খানিকটা বিরক্ত হলো। ইফা আর তিথি এসেই চক্ষু চড়কগাছ! তিথি তো ধরেই নিল ওরা দুজন মেকআপ করে এসেছে। সে এগিয়ে এসে বলল, “এভাবে মেকআপ করেছেন কেন আপনারা?

নিঝুম তার মাথায় বাড়ি মেরে বলল, “গাধি রে ওরা সত্যি’ই মা’র খেয়েছে?

“শুধুই বসে বসে মা*র খেলো। দিতে পারল না।

আহিম বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে গেল। হন হন করে হেঁটে চলে গেল সে। আহনাফ তিথির দিকে ফিরে বলল, “যাহ! তিথি তুমি দেখি রাগিয়ে দিলে আহিম কে?

“উনি রেগে গেল বুঝি?

নীলাভ্র হেসে বলল, “হ্যাঁ রেগেই গেছে, কারণ আমরা শুধু মা*র খায় নি, দিয়েও এসেছি।

ইফা নীলের পাশে বসতে বসতে বলল, “কাজটা কে করলো?

“ঈশান!

——

আহিম একা বসে ছিল বেঞ্চিতে। হঠাৎ কেমন এক অনুভুতি হলো, মুখ ফিরিয়ে তাকাতেই দেখল তার পাশে বসে আছে তিথি। তার চোখে এখনো রাজ্যের বিস্ময়। আহিম একটু সরে বসে বলল, “এখানে কি করতে এসেছে?

“চেক করতে, সত্যি সত্যি কি আপনি ব্যাথা পেয়েছেন।

“তোমার কি মনে হয়, এগুলো মেকআপ!

তিথি হেসে একটু এগিয়ে বসে বলল, “আমি ইউটিউবে দেখেছি এমন মেকআপ করতে।

আহিম ভ্রু কুঁচকে নিল। তিথি হাত বাড়িয়ে দিল। ঠোঁটের কাছে কাটা দাগটা তার লক্ষ্য! ঠোঁটে হাত রাখতেই আহিম স্থির হয়ে গেল। তার পুরো শরীর কম্পিত হলো। তিথি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মেকআপ কিভাবে করে এগুলোর একেকটা বর্ণনা করছে। আহিম একটু সরে গেল। তিথিও হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, “আপনিও তাদের মে*রেছেন তাই না। তাদেরও এমন গাল ঘু*সি মেরেছেন তাই না।

“তোমার আজেবাজে কথা রাখো তো।

বলেই উঠতে নিল। তিথি তাকে বসিয়ে দিয়ে বলল, “দেখি দেখি!

বলেই তার ঘাড়ের দিকে হাত বাড়াল। শার্টের কলার টা একটু সরিয়ে দিয়ে বলল, “এখানে দাগ হলো কিভাবে? কি দিয়ে মা*রল আপনাকে।

আহিমের যেমন রাগ হচ্ছে তেমন অদ্ভুত ও লাগছে। মেয়েটা এমন ভাবে বলছে যেন এসব মারা*মারি এই প্রথম দেখছে সে। তিথি হাত দিয়ে সেই ঘাড় স্পর্শ করতেই আহিম হতচকিয়ে গেল। সে ওদিক ফিরে বলল, “ওই দেখো আদনান স্যার।

তিথি মনোযোগ সাথে সাথে বদলে গেল। সে দ্রুত দাঁড়িয়ে বলল, আদনানের স্যারের ক্লাস, আমি গেলাম বাই বাই।

বলেই সেদিকে ছুটল। আহিম যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা ঝাকালো সে। হঠাৎ কিসব উদ্ভোট চিন্তাভাবনা এসে জড়ো হলো তার মাথায়।

—–

চশমিস যদি আহনাফের হয়ে যায় এতে যেমন এক দিকে শান্ত খুশি হবে অন্যদিকে তার মনে অস্থিরতা। কিন্তু এই অস্থিরতা কেন? চশমিস তো আহনাফ কেই ভালোবাসে, এখন আহনাফ তাই ভাবছে যদিও নিঝুম কে সরাসরি কিছুই বলে নি তবে টের পাওয়া যাচ্ছে সেই সময় দূরে নয়। তবুও এই অস্থিরতার সত্যি কি কোন মানে আছে। নিজেকে এখন কেমন তৃতীয় ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে শান্ত’র। চশমিস আর আহনাফের মাঝে ঢুকে পড়তে চাইছে সে। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা ধরল শান্ত। তার গন্তব্য কোথায় এটা সে নিজেও জানে না। হঠাৎ করেই চশমিসের আর্বিভাব।
“এই অশান্ত!

“তুমি এখানে?

“কি ভাবছেন এতো মনোযোগ দিয়ে আপনি, কতোবার ডেকেছি আপনাকে জানেন।

শান্ত ভ্রু কুঁচকে নিল। সত্যি কি তবে এতোটাই মগ্ন ছিল সে। চশমিসের ঠোঁটের কোনে হাসি, হাসি রেখেই বলল, “আমি কিন্তু জানি আপনি কি ভাবছেন?

ধক করে উঠল শান্ত’র বুক। শুকনো ঢোক গিলে বলল, “কি জানো?

চশমিস একটু কাছে কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “আপনি ভাবছেন কি করে তাদের শিক্ষা দিবেন তাই না।

“কাদের?

“যাহ বাবা! যারা আহিম আর নীলাভ্র কে মার*ল তাদের। সত্যি না!

“তো এতে তোমার কি?

“কিছুই না, আমিও আপনাদের ঝগড়া দেখতে চাই না।

“তোমার কি মনে হচ্ছে এটা মজার কিছু।

“তাই নয় কি?

শান্ত বিরক্ত মুখে তাকাল। তবে সত্যি এতোটা বিরক্ত হয় নি সে। পা বাড়াল সে। নিঝুম বলে উঠল, “এই অশান্ত কোথায় যাচ্ছেন?

“মর*তে যাবে?

“হঠাৎ করে ম*রার শখ কেন জাগল। আজকের আকাশটা দেখছেন। দারুন লাগছে না!

শান্ত আকাশের দিকে তাকাল। সত্যি আজ আকাশ অনেক সুন্দর। দুদিন মেঘ করে ছিল কিন্তু বৃষ্টি হয় নি। আজ আকাশটা তেমন না। খুব পরিষ্কার, রোদ পড়ছে কিন্তু এই রোদের তাপ লাগছে না। এছাড়া আবহাওয়া টাও খুব শীতল ধরণের।

নিঝুম হাত উঠিয়ে বলল, “চলুন ছাদে যাই!

“কেন?

“আকাশ দেখবো বলে।

“তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও।

“আমি তো যাবোই , আচ্ছা অশান্ত আপনি ছবি তুলতে পারেন। আমায় কয়েকটা ছবি তুলে দেবেন।

“তোমার ফটোগ্রাফার মনে হয় আমাকে।

“বন্ধুর ছবি তো তুলেই দিতে পারেন।

শান্ত ধমকের সুরে বলল, “যাও!

“যাচ্ছি! তার আগে জুসের প্যাকেট আনতে পারবেন।

“আমাকে তোমার কি মনে হয় বলো তো?

“বোকা অশান্ত!

বলেই খিলখিলিয়ে হাসল নিঝুম। শান্ত শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। নিঝুম চট করে বলে উঠল , “আচ্ছা প্যাকেটের জুস আনবেন কিন্তু?

অশান্ত বাঁকা হেসে বলল, “আমি জানি, তুমি কেন প্যাকেটের জুস খেতে চাচ্ছো?

“কেন?

“যাতে এর ভাগ কাউকে দিতে না হয়, চশমিস তুমি খুব হিংসুটে!

নিঝুম নাক ফুলিয়ে চশমা ঠিক করে বলল, “আপনিও খুব কিপ্টে বুঝলেন। ( ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ) সেদিন ধার নিয়েছিলাম সেটা আর আজকে জুসের দাম ঠিক আছে।

শান্ত মুখ ভেংচি কেটে টাকা নিল। নিঝুম সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “আমি যাচ্ছি আপনি আসুন ওকে!

নির্বিকারে হেঁটে চলে গেল নিঝুম। শান্ত তাকিয়ে রইল চলে যাবার দিকে।‌ কেন এতো অধিকার ফলায় এই মেয়েটা আর সবচেয়ে বড় কথা শান্ত কেন দিচ্ছে অধিকার ফলাতে।

—–

শান্ত আনবে না আনবে না করেও চশমিসের জন্য জুসের প্যাকেট নিয়ে ছাদের দিকে রওনা দিল। দরজা দিয়ে ছাদে ঢুকতেই থেমে গেল সে। আহনাফ আর চশমিস একসাথে দাঁড়িয়ে ‌। শান্ত যেখানে ছিল সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আহনাফ হেসে হেসে কথা বলছে নিঝুমের সাথে। নিঝুম দাঁড়িয়ে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে আবার জবাবও দিচ্ছে। তার হাতেও একটা জুসের প্যাকেট। শান্ত নিজের হাতের দিকে তাকাল। একই রকম জুসের প্যাকেট তো তার হাতেও আছে তাহলে চশমিস ওটা পেলো কোথায়? আহনাফ দিয়েছে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল শান্ত। দুজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে থাকতে চায় না সে।

এদিকে নিঝুম ছাদে উঠতেই দেখতে পায় আহনাফ ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। প্রথমে খানিকটা অবাক হলেও দ্রুত তা সামনে বলল, “আহনাফ আপনি!

“আরে নিঝুম তুমি? এখানে কি করতে এসেছো?

“আকাশ দেখতে, আপনি?

“তাই বলতে পারো।

নিঝুম পা এগিয়ে সামনে গেল। দুজন মুখোমুখি। আহনাফের ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি, নিঝুম মুগ্ধ হয়ে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ কে আজ হঠাৎ চমৎকার লাগছে তার কাছে। কেন সে নিজেও জানে। হঠাৎ কি মনে হলো, পেছনে তাকাল সে? আহনাফ জিজ্ঞেস করে বসল, “কি হলো?

“অশান্ত’র আসার কথা, আমি বলেছি জুসের প্যাকেট নিয়ে আসতে। আসবে কি না কে জানে?

“তুমি শান্ত কে অর্ডার করেছো?

নিঝুম এক গাল হেসে মাথা নাড়ল। আহনাফ একটু এগিয়ে গিয়ে এক কোনে রাখা ব্যাগ থেকে জুসের প্যাকেট টা বের করে নিঝুমের হাতে দিয়ে বলল, “নাও!

“এই আপনি এটা কোথায় পেলেন?

“তোমার অশান্ত’র জন্য কিনেছিলাম। ওর তো এটা বেশ পছন্দ!

“আমারও!

“যাক, একদিকে তো মিল পাওয়া গেল?

“না না, আরেকদিকেও আছে।

আহনাফ ভ্রু কুঁচকালো‌। নিঝুম বলে উঠল, “আপনি!

“মানে?

“আপনি অশান্ত’র ও ভালো বন্ধু আর আমারও! হলো তো মিল!

দুজনেই একসাথে হেসে উঠল। আহনাফ অলপক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। হঠাৎ তার প্রতি এতো ভালোলাগা কেন তার! এদিকে নিঝুম জুসের প্যাকেট থেকে মুখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাল। মনে মনে প্রশ্ন জাগল, “অশান্ত এখনো এলো না কেন? কোথায় আপনি অশান্ত!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here