#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৮
একা রাস্তায় শান্ত কে গালাগাল করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে নিঝুম! হঠাৎ করেই একটা বাইক এসে থামল তার সামনে! নিঝুম থমকে দাঁড়িয়ে গেল। হাত মুঠো করে নিল সে। রাস্তার মাঝে শুধু একা সেইই দাঁড়িয়ে! এই ভর সন্ধ্যায় কে এলো এখানে!
বাইকের হেলমেট খুলে নিঝুমের দিকে ফিরল আহনাফ! নিঝুম অবাক চোখে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ কিঞ্চিত হেসে বাইক ছেড়ে উঠলো। নিঝুম স্থির চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে! আহনাফ হেসে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছো?
“হুম!
“জিজ্ঞেস করছি কেমন আছো!
ঘোর ভাঙল নিঝুমের। চট করেই বলে উঠল,
“হুম ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আহনাফ হাসল। জবাব না দিয়ে ওদিকে তাকিয়ে বলল,
“আইসক্রিম খাবে!
নিঝুম চোখ ফিরিয়ে তাকাল। দূরেই একটা আইসক্রিম পার্লার দেখা যাচ্ছে। আহনাফ নিঝুমের দিকে ফিরতেই নিঝুম মুচকি হাসল।
নিঝুমের হাতে একটা আইসক্রিম। আহনাফ দুই হাত প্যান্টের প্যাকেটে দিয়ে বলল, হাতে কি খুব বেশি ব্যাথা!
নিঝুম আইসক্রিম মুখে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল, না! আইসক্রিম খাবার খুশিতে হাতের ব্যাথা চলে গেছে।
আহনাফ হাসল। নিঝুমের সেদিকে খেয়াল নেই। নিজের মনে দাড়িয়ে খুশিতে আইসক্রিম খাচ্ছে সে। আগের আইসক্রিম টা অশান্ত’র জন্য খেতে পারি নি মনে খুব দুঃখ ছিল। সেই দুঃখ এবার কমেছে। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে তার খাওয়া দেখছে। হালকা কেশে আহনাফ বলে উঠে,
“আজ শান্ত তোমাকে বেশ খাটিয়েছে!
“শুধু খাটিয়েছে! আপনি জানেন উনি কি কি করেছে। শুনুন, আমাকে নিয়ে পুরো মল ঘুরিয়েছে। পুরো তিন বছরের কেনাকাটা আজ একদিনেই করেছে। বুঝলেন সব হচ্ছে আমাকে জ্বালানোর ধান্দা। জব্দ করার ধান্দা।
“তাহলে তুমি ওর সামনে যাও কেন?
“আমি যায়নি তো, উনিই জানি কোথা থেকে উড়ে চলে আসে।
“ওর ভয়ে আজ ভার্সিটিতে আসো নি নাহ!
আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে আহনাফের দিকে ফিরে মুখ টিপে হাসলো নিঝুম। আহনাফও হেসে দিল ওর সাথে। নিঝুম বলে উঠল,
“আমি তো ভেবেছিলাম ৩ সপ্তাহ যাবো না।
“তিন সপ্তাহ! এতো দিন।
“হুম হুম। এই অশান্ত’র রাগ ঝড়ে যাবার জন্য ৩ সপ্তাহ ঠিক ছিল।
“অশান্ত!
“হুম হুম। উনি একটা অশান্ত। আসলে অশান্ত না বলে অশান্তি বলা দরকার। অশান্তির মূল উনি!
আহনাফ জোরে হেসে দিল। নিঝুম আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে আহনাফের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকল। হাসির শব্দ কানে বাজছে তার। আহনাফ থেমে বলল,
“তুমি পারেও বটে। কোন ধারণা নেই তোমার। যদি শান্ত এসব জানতে পারে তাহলে তোমার কি করবে?
“কচু করবে? উনাকে ভয় পাই নাকি আমি।
“তাও ঠিক! ( কাছে এসে নিঝুমের মাথায় হাত রেখে বলে ) অনেক সাহসী তুমি!
নিঝুম মুচকি হাসল। লজ্জায় তার দু গাল লাল হয়ে যাচ্ছে। আহনাফ বাইকের হেলমেট পড়তে পড়তে বলে,
“তো বাসায় ফিরবে তো!
নিঝুম মাথা নাড়িয়ে বলে, “এই তো এখান থেকে ৫ মিনিটের পথ। আমি একাই যেতে পারবো
“ঠিক তো!
নিঝুম মাথা নাড়ল। অতঃপর আহনাফ বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। নিঝুম আইসক্রিম খাবার ধান্দায় এতোক্ষণে কি বলল এখন সেটাই ভাবতে লাগল। আহনাফ চলে গেছে। যাবার আগে “ঠিক তো” জিজ্ঞেস করেছিল। এর মানে কি? তবে কি আহনাফ নিজের বাইকে করে তাকে নিয়ে যেত। এটা তার মাথায় আসতে এতোক্ষণ লাগল। রেগে এখন নিজের মাথার চুল নিজের’ই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার। চোখ বন্ধ করে দুই পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করছে। ইশ! কিভাবে পারল ও না করতে। আহনাফের বাইকে উঠে তার সাথে যেতে পারতো। আআআআআ! কতোটা না ভালো লাগতো। নিঝুম! তুই আসলেই গাধির নাতনি! নাহলে এতোবড় বোকামি কিভাবে করলি তুই। কিছু হবে না তোর দ্বারা কিছু না।
এক বস্তা দুঃখ নিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতেই পা বাড়াল বাড়ির দিকে। এই রাস্তাটা এখন একাই যেতে হবে তার। সুযোগ তো ছিল’ই , আহনাফ জিজ্ঞেস ও করেছিল কিন্তু না তো সেইই করেদিল!
—–
আহনাফের বাইকে চড়তে না পারার আক্ষেপ এখন অবদি রয়ে গেল নিঝুমের। টেবিলে বসে পড়ার বদলে সেই কথাই এখন ভাবছে সে। ভাবতেই রাগ হচ্ছে। আর রাগ হতেই নিজের চুল নিজেই টানছে। হিনা এসে এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে কতোক্ষণ তাকিয়ে রইল। অতঃপর মার ঘরের দিকে যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলল, মা মা তোমার বড় মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। নিজের মাথার চুল নিজেই টানছে।
নিঝুমের মা অবাক কন্ঠে বলে, “কি বললি?
“হ্যাঁ গো মা, সত্যি বলছি।
নিঝুমের মা অবাক হয়ে ডেসিন টেবিলের দিকে তাকালেন।
খানিকক্ষণ পর নিঝুমের ঘরে এলো তার মা। টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে নিঝুম। মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, কিরে তোর কি হয়েছে?
“কিছু না!
“শুনলাম নিজের চুল নিজে টানছিস!
“হুম।
“কেন?
“এমনেই ভালো লাগছে না।
“ভালো লাগবে কিভাবে? চুলের যেই হাল, একটু তেল পানি দিস। তেল দিলে চুল ভালো থাকবে। চুল ভালো থাকলে মাথা ভালো থাকবে আর মাথা ভালো থাকলে..
“উফ মা থামো তো। বচন শুরু করো না।
“বচন শুরু করছি না। শেষে কবে মাথায় একটু তেল দিয়েছিল বল তো। চুলের যেই হাল, এখন’ই পড়তে শুরু করেছে। বলি কি আমরা যখন বিয়ে করেছিলাম তখন আমাদের কি চুল ছিল। দেখার মতো।
“তাহলে এখন সব কোথায়?
“ঝড়ে গেছে। তোর জন্মের পর আস্তে আস্তে সব চুল ঝড়ে গেছে।
“বেশ হয়েছে। আমিও তোমার মতোই হচ্ছি।
“না, হচ্ছিস না। তাও তো বিয়ের সময় আমার ঘন চুল ছিল তোর তো এখন থেকেই নেই। এরপর বিয়ে শাদির পর তো মাথায় টাক পড়ে যাবে।
“মা শোন, চুল ঝড়বে আমার গজাবে।
“কিভাবে গজাবে। যত্ন না নিলে কিভাবে গজাবে
“কেন গাছের যত্ন না নিলেও গাছ জন্মায়, জন্মায় না।
“গাছ মাটিতে পোতা হয় আর তোর যেই মাথা, এটাতে গোবর ছাড়া আর কিছু নেই।
“মা গোবর এক ধরণের সার!
“চুপ কর তুই। খালি মুখে মুখে তর্ক। এখানে আয় বস!
“আম্মু না,আমি চুলে তেল দেবো না।
“দিতে হবে, এই বয়সেই ভাল লাগেনা রোগ ধরেছে। হুহ কথার কি ছিড়ি!
“আহ!
মা নিঝুমের চুল টেনে টেনে তেল পাকিয়ে দিচ্ছে। নিঝুম মুখ গুমড়ে বসে আছে। এভাবেই তার কাছে অশান্তি তার মধ্যে মাথায় তেল দেবার অবস্থা। ইচ্ছে করছে কোন পুকুরে খানিকক্ষণ ঢুব দিয়ে বসে থাকতে!
ভোর সকালে উঠে গোসল করল নিঝুম। কারণ একটাই মাথার এই শ্যাম্পু! যদিও রাতে তার ঘুম ভালোই হয়েছে তবুও এই তেল দেওয়া মাথায় তো আর ভার্সিটিতে যেতে পারে না সে। অতঃপর ভার্সিটির উদ্দেশ্য বাসা থেকে বের হলো নিঝুম। বের হতেই হঠাৎ করে সামনে এসে দাঁড়াল হিনা। অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“তুই না তিন সপ্তাহ পর যাবি ভার্সিটিতে!
নিঝুম অসহায় দৃষ্টিতে চোখের চশমা ঠিক করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, যার ভাগ্যে আগে থেকেই সবকিছু ঠিক করা তার কোন কথাই ফলে না রে।
“মানে!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কিছু না!
পাশ বেরিয়ে চলে গেল সে। হিনা দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করল হয়েছে তো হয়েছেটা কি!
ভার্সিটিতে এসেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। গ্যাং ডেভিলের কারোট সাথে দেখা হয় নি তার ব্যতিক্রম আহনাফ। যদিও আহনাফ কে দেখেই তার মন ফুরফুরে! দূরে বেঞ্চিতে বসে বই পড়ছে আহনাফ। নিঝুম দূর থেকেই দেখছে তাকে। হায়! গতকাল তাকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছে সে। এটা ভাবতেই গাল দুটো লাল হয়ে গেল। বির বির করতে লাগলো নিজের মনেই,
“কেন এতো কিউট ও কেন? কত্তো সুইট! কিন্তু খারাপ একটাই গ্যাং ডেভিলের সদস্য! কি করে যে হয় এমনটা বুঝতে পারি না। তার সাথে কি এসব মিল খায়। সবচেয়ে বড় অমিল তো ওই অশান্ত! কিভাবে বেস্ট ফ্রেন্ড হয় তারা। আকাশ পাতাল তফাৎ! জলে আর পানিতে তো মিশ খায় না, কিন্তু এখানে খেল কিভাবে?
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই থেমে গেল সে। কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কেউ! নিঝুম চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল আহিম। আহিম তাকে দেখে মুখ টিপে হাসছে। তার হাসি দেখে নিঝুম ও দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল,
“হাসছেন কেন?
আহিম হাসি থামিয়ে, “তা শেষমেষ এসেই পড়লে ভার্সিটিতে!
“কেন আসবো না কেন?
“না গতকাল যা হয়রানি করল এরপর যে আসবে এটা ভেবেই অবাক লাগছে।
“অবাক লাগলে অবাক হোন!
বলেই পাশ দিয়ে যেতে নিল। তখন আহিমের একটা কথা কানে এলো তার! “বিড়ার চশমিশ! এটা শুনেই থেমে গেল সে। চশমিশ তো সে! না মানে চশমিশ না , এটা ওই অশান্ত ডাকে! কিন্তু বিড়াল যোগ হলো কবে থেকে! ভাবতে ভাবতে এবার ক্লাসের দিকে পা বাড়াল। তখনই খুব জোরে তার হাতে বাড়ি মারল কেউ। নিঝুম কেঁপে তাকিয়ে দেখল ইফা আর তিথি দাঁড়ানো! নিঝুম হেসে বলল,
“হাই!
“হাই!
ইফাও হেসে বলল, হুম হাই! কোথায় উধাও হলি সেদিন।
তিথি বলে উঠল, শুনলাম শান্ত’র সাথে ছিলি।
নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, দু্ঃখের কথা মনে করিয়ে দিস না প্লিজ!
“মানে, কি হয়েছে?
“বলছি ক্লাসে চল!
“না ক্লাসে যাবো না!.
“কেন?
তিথি নিঝুমের হাত ঘুরিয়ে বলল, শুধু শুধু লেকচার শুনে কি লাভ বল তো। কি হবে এসব শুনে!
নিঝুম হাত ছাড়িয়ে বলল, তাই তো! তোর তো বিয়ে বিয়ে করে। বিয়েটা করে ফেললেই তো কাহিনী শেষ!
“দোয়াও তো করতে পারিস, তাহলে অবশ্য একটা দাওয়াত পাবো।
ইফা তিথির ঘাড়ে হাত রেখে বলে, হুম তাই তো!
নিঝুম এসব শুনে মুখ ভেংচি কাটলো!
——
ক্যান্টিনে তিন জন বসে একসাথে আড্ডা দিচ্ছে। তখনই সেখানে তানিশা’র দল এলো। নিঝুম তানিশা’র দিকে একবার তাকাল। কিন্তু তানিশা কে আজ একটু অন্যরকম অন্যরকম লাগল তার কাছে। কারণ তানিশা তার দিকে ফিরল না। দূরে এক টেবিলে বসল তারা। তিথি বলে উঠল, চল আমরা এখান থেকে চলে যায়!
ইফাও মত দিল। নিঝুম উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তোরা যা, আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
“জলদি আসবি, ওরা কিন্তু এখানেই আছে!
নিঝুম মাথা নাড়ল। কিন্তু তার মনে হচ্ছে তানিশা হয়তো সবকিছু্ই ভুলে গেছে। কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো তখন যখন ওয়াশরুম থেকে বের হতে যাবে তখনই তানিশা তাদের দল এসে ঢুকল। নিঝুম তবুও পাশ দিয়ে যেতে নিল তখন’ই দিয়া তার বাহু ধরে জোরে ধাক্কা দিয়ে সামনে আনল। নিঝুম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সামনে এসে দাঁড়াল তানিশা। দুই হাত বাহুতে গুঁজে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। নিঝুম তাকিয়ে আছে তার’ই চোখের দিকে। একটিবারের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না নিঝুম। তানিশা হেসে নিঝুমের থিতুনি তে হাত রেখে বলল, সিনিয়রদের চোখ রাঙানি দিচ্ছ!
“আমাকে এখান থেকে যেতে দাও!
“কি? কি বললে তুমি!
“আমাকে এখানে আটকে কেন রেখেছ, যেতে দাও!
তানিশা জোরে বলে উঠল, গলা নামিয়ে কথা বল! কার সাথে উচু গলায় কথা বলছো তুমি!
তানিশা’র ধমক শুনে খানিকটা থমকে গেল নিঝুম। এর মাঝেই বাইরে থেকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে গেল দরজার সামনে। দরজা ভেতর থেকেই বন্ধ করা। নিঝুম ঢোক গিলে বলল, আমি তো এবার কিছু করে নি। তাহলে আমার সাথে এমন করছো কেন?
“এখন তো করো নি আগে তো করেছ? কি তাই নয় কি? ভুলে গেছো সেদিনের কথা। আহনাফ হাত ধরেছিল তোমার? আহ! কিভাবে?
“আমি তো বলে নি হাত ধরতে!
“ন্যাকা সাজছো? আমার কাছে ন্যাকা সাজছো। দোষ ছিল না তোমার। দেখি তো সারাক্ষণ এসে আহনাফের কাছেই ঘোরাঘুরি করো। কি করো না!
“আমি কিছু করেনি আমাকে যেতে দাও!
তানিশা এবার জোরে হেস উঠলো। তার হাসির সাথে তাল মিলায় লাগল দিয়া আর রিয়া। তানিশা হাসতে হাসতে বলল, শুনলি! ও কিছু করেনি। কিছু করেনি ও। তাহলে এভাবে ওকে আটকে কেন রেখেছিস। যেতে দে! যেতে দে ওকে?
দিয়া আর রিয়া সরে গিয়ে পথ দেয় নিঝুম কে। নিঝুম কাঁধের হাতের বইটা কে শক্ত করে ধরে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়। তখন’ই তানিশার ইশারায় দিয়া আর রিয়া হঠাৎ করেই তার বাহু ধরে ফেলে! নিঝুম এমন কিছু হওয়াতে অবাক হয়ে যায়। ছোটাছুটি শুরু করে দেয় সে। কিন্তু এই দুজনের শক্তিতে পেরে উঠে না সে। নিঝুম তানিশার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে। তানিশা হেসে নিঝুমের বইটা নিচ থেকে নিয়ে বলে, ভাঙবে তবু মচকাবে না। এখনো আমার দিকে চোখ রাঙাচ্ছো তুমি!
“আমি কিন্তু চেচাবো। ছাড়ো আমায়!
“তাই নাকি? নেও চেচাও?
নিঝুম ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল। চেঁচাতে শুরু করল সে। বাঁচাও বাঁচাও করে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। বাইরের সবাই তার চেঁচামেচি শুনছে কিন্তু কেও পা এগিয়ে সামনে আসছে না। আরো পিছিয়ে যাচ্ছে। তানিশা হেসে উঠে। নিঝুম থেমে যায়। তানিশা হেসে বল,
“কোথায়? কারোই তো কথা শুনছি না আমি! কেউই আসছে না তোমাকে বাঁচাতে।একা একা কিভাবে বাচবে তুমিও। এভাবে চোখ রাঙিয়ে!
নিঝুমের রাগ হচ্ছে! ছোটাছোটি করছে অনেক তবু কোনভাবেই পেরে উঠছে না সে। আবারো চেঁচাতে লাগল সে। দিয়া বলে উঠে,
“আর কানের পোকা বের করে দেবে এই মেয়ে!
তানিশা হেসে নিঝুমের বই খুলছে! নিঝুম বলে উঠে,
“এই কি করছো তুমি? আমার বই খুলছো কেন? শোন আমাকে ছেড়ে দাও। নাহলে আমি কিন্তু প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে বিচার দেবো তোমাদের নাম..
বলার আগেই তানিশা বইয়ের পৃষ্ঠা ছেড়ে তা মুখে পুড়ে দেয় নিঝুমের। নিঝুম উমম উমম করে যাচ্ছে। এখন আর কথা বলতে পারছে না। তানিশা হেসে নিঝুমের গাল চেপে ধরে বলে, কারো কাছে বিচার দিয়েই কোন লাভ হবে না তোমার। সবাই চাইবে প্রুফ! কে দেবে সেই প্রুফ তুমি নাকি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো। কেউ দেবে না কেউ না!
নিঝুম রাগে ফুঁসছে। ছোটছোটির করছে তার সব শক্তি দিয়ে। এদিকে রিয়া আর দিয়া ঠিক ততোটা জোর দিয়েই ধরে রেখেছে তাকে। তানিশা রেগে নিঝুমের চুলের মুঠি ধরল। ব্যাথায় চুপ হয়ে গেল নিঝুম। তানিশা নিঝুমের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল, চুপ! একদম চুপ। বেশি ছটফটানি করবে না। যত ছটফটাবে ততোটাই কষ্ট পাবে। আমি তোমাকে আজ শুধু ওয়ার্নিং দিতে এলাম। এরপর কখনো যেন তোমাকে আমার আহনাফের ধারে কাছে না দেখি! যদি দেখি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর এখন তো বুঝেই গেলে আমি ঠিক কতোটা খারাপ। কি কি করতে পারি তোমার সাথে!
নিঝুম চোখ নামিয়ে ফেলল এবার। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে তার। এদিকে নিঝুমের আসতে দেরি হওয়ায় ইফা আর তিথি এসে হাজির। এখানে এসে দেখল ভিড় হয়ে আছে। ভেতরে কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করতে পেরে দুজনেই দরজা ধাক্কাতে থাকে। তানিশা হেসে বলল, নাও! এসে পড়েছে তোমার বান্ধবী গন!
দিয়া আর রিয়া হেসে ছেড়ে দিল নিঝুম কে। তানিশা নিঝুম কে ছেড়ে দিয়ে ফেলে দিলো মেঝেতে। মেঝেতে পড়ে গেল নিঝুম। মুখ থেকে কাগজ গুলো বের করে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল সে। তানিশার হাসির আওয়াজ পেয়ে উপরের দিক তাকাল। তানিশা হেসে বলল, আমার কথা মনে রেখো কিন্তু। এরপর যাতে আর কিছু বলতে না হয় আমার!
বলেই দরজা খুলে বের হলো তারা। মেঝেতে পড়ে থাকা নিঝুম হাত দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে! ইফা আর তানিশা মুখোমুখি! তানিশা তাকে রেখে বাঁকা হেসে বের হয়ে যায়। ইফা আর তিথি ছুটে ভেতরে এসে নিঝুমের এই হাল দেখে চমকে উঠে!
#চলবে….