#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৬_ও_৭
[ পর্ব অধিক বড় তাই ফেসবুক লাইটে শো নাও করতে পারে! ]
নিঝুম আজ ভার্সিটি যাবার বদলে বিছনায় চাদর মুড়ো দিয়ে শুয়ে আছে। হিনা এসে কতোবার ডাকার পরও যখন নিঝুম উঠলো না হিনা এক টানে চাদর সরিয়ে বলল,
“এমন ভাবে শুয়ে আছিস কেন? ভার্সিটিতে যাবি না।
“না আজ যাবো না।
“কেন?
“অসুস্থ আমি?
“তোর আবার কি হলো, দেখে তো সুস্থ’ই মনে হচ্ছে।
“উফ এতো কথা কেন বলছিস তুই, যা না। বের হ এখান থেকে।
হিনা বের হলো না। বরং বিছানায় এসে বসল। নিঝুমের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, বল তো আবার কি করেছিস?
“আমি আবার কি করলাম?
“তোর চেহারা দেখে খুব বোঝা যাচ্ছে তুই কিছু একটা করেছিস। আবার কি ঝামেলা পাকিয়েছিস সেটা বল।
“বোকার মতো কথা বলবি না তো। ঝামেলা কি পাকানো যায় নাকি, খিচুড়ি পাকানো যায়।
হিনা দাঁত বের করে হেসে বলল, আমার বোন তুই। ঠিক চিনি আমি তোকে। সত্যি সত্যি বল কার সাথে কি করেছিস যার ভয়ে ভার্সিটিতে যাস নি!
নিঝুম খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল হিনা’র দিকে। অতঃপর উঠে বসে বলল, জানিস একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছি।
“আমি জানতাম আপনি এটাই বলবেন, কিন্তু কার সাথে কি করেছেন এটাও তো বলুন!
“আসলে আমি না বুঝতে পারি নি। তুই তো জানিস যখন আমার খুব রাগ হয় তখন আমি কামড়ে ফেলি!
“এবার কাকে কামড়েছিস?
“একটা ছেলেকে!
বলেই বালিশের নিচে মাথা হয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে রইলো। হিনা খানিকক্ষণ থম মেরে বসে রইল। কি বললো সেটাই বুঝতে লাগল। অতঃপর যখন বুঝল তখন এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কি কিইই করেছিস তুই!
“আরে অর্ধেক কথা শুনে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস কেন। পুরো কথা তো শোন!
“তাহলে বল শুনি তোর পুরো কথা!
অতঃপর নিঝুম বলতে শুরু করল। হিনা স্বাভাবিক ভাবে উঠে দাঁড়াল। নিঝুম বলে উঠল, এখন কি করবো আমি?
“আমি কি জানি?
“জানিস মানে, এতোক্ষণ এসব কিছু তোকে কেন বললাম।
“কেন?
“গাধির নাতনি এই কারণে যাতে আমাকে একটা উপায় দিতে পারিস।
“যেই উপাধি আমায় দিলে সেটা নিজের মাথায় নিয়ে নে। কাজ করার আগে খেয়াল ছিল না।
“আরে আমি কি জানতাম এমন কিছু করে ফেলবো।
“তাহলে এখন কেন ভয় পাচ্ছো সোনা।
“তুই জানিস না, ওই অশান্ত ঠিক কতোটা ভয়ানক। একটা মেয়ে তাকে প্রেমপত্র দিয়েছে বলে ছাদের গ্রিলের উপর দাড় করিয়ে বলে লাফ দাও।
“আর তোকে দেখিস জিজ্ঞেসও করবে না। টুক করে ফেলে দেবে।
“ভয় কেন দেখাচ্ছিস।
“এখন এমন কান্না কাটি না করে তখন কাজ করার আগে ভাবা উচিত ছিল।
“বিপদের সময় যা মনে এসেছিল তাই করেছি। ( চাদর মুড়ি দিয়ে ) আমি তো বাবা আজ যাচ্ছি না। অশান্ত নাহলে আজ আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। না না না যাবো না। এতো সাহস দেখানো মোটেও উচিত হয় নি।
হিনা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। চাদর মুড়ি দিয়ে নিঝুম নিজের মনেই বক বক করছে। হঠাৎ চাদর সরিয়ে নিজের চুল নিজেই টানতে থাকে। আর বির বির করছে,
“হায় হায় এটা কি করলাম আমি, কেন করলাম? করার আগে কেন একবার ভাবলাম না। আচ্ছা কামড় কি খুব জোরে দিয়েছিলাম। না আস্তেই দিয়েছিলাম বোধহয়। কিন্তু আস্তে কামড় দিলে তো উনি আর পড়ে যেতেন না। আহহহহ! নিঝুম, তুই আসলেই একটা গাধা!
হিনা বলে উঠে, গাধির নাতনি!
নিঝুম রেগে বালিশ উড়ে মারে। হিনা তা ধরে মিটিয়ে হাসতে থাকে। নিঝুমের কান্না পায়। হঠাৎ করেই চমকে উঠে নিঝুম। হিনা বলে উঠে, কি হয়েছে?
“আচ্ছা আমি ধর কোনমতে অশান্ত’র চোখ পেরিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকে গেলাম। তারপর ক্লাস রুমেও গেলাম।
হিনা ভ্রু নাচিয়ে বলে, আর যখন ক্লাস থেকে বের হবি তখন দেখবি অশান্ত সামনে!
বলেই হি হি করে হাসে।
নিঝুম ও হি হি করে হেসে বলে, বুদ্ধি পেয়ে গেছি। আমি তখন এক দৌড়ে চলে যাবো লেডিস বাধরুমে। অশান্ত তো আর সেখানে যেতে পারবে না।
“বাহ বুদ্ধির তারিফ করতে হচ্ছে! কি বুদ্ধি!
“তাই না, আমি জানতাম!
“ঘোড়ার ডিম!
“কি হলো বুদ্ধি পছন্দ হয় নি.
“তুই কি শান্ত’র ভয়ে বাথরুমেই বসে থাকবি নাকি। বের হবি না!
নিঝুম কতোক্ষণ অবাক হয়ে ভাবতে থাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আসলেই তো! তখন তো তার সামনে পড়বো। আবার তখন’ই হঠাৎ মনে পড়ে তানিশার কথা! তানিশা ও তো বাথরুম চলে আসতে পারবে। বাপরে বাপ! কি তেজ ছিল এই মেয়ের চোখে। মাঝখান দিয়ে এই আহনাফ! কেন এলো সে ধরতে, এখন ভার্সিটিতে গেলে ওই অশান্ত’র থেকে বেঁচে গেলেও এই তানিশার কাছ থেকে কিভাবে বাঁচবো আমি! আহহ কি ঝামেলা। সব ঝামেলা মনে হচ্ছে আমার উপর’ই এসে জুটেছে। কার ক্ষতি করেছিলাম আমি!
হিনা হাম ছেড়ে বলল, আমি মা কে গিয়ে তোর কান্ডকারখানা বলে আসি।
“হিনা!
“কি?
“এমন কেন করছিস বল, তুই তো আমার বোন!
“তিন প্যাকেট চকলেট!
“কিহহ না!
“চার প্যাকেট!
“না না এক প্যাকেট!
“দুই প্যাকেট!
“এক প্যাকেট প্লিজ প্লিজ!
“আচ্ছা ডান!
“এখন বল আমি কি করব?
“কয়েকদিন ভার্সিটিতে যাস না।
“রাগ কি বেড়ে যাবে না।
“বাড়তে বাড়তে একসময় কমে যাবে।
“হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। উম্মাহ! তুই আসলেই আমার বোন! বলেই বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে নিঝুম। হিনা বলে উঠে,
“তা কতোদিন যাবি না!
নিঝুম হাতের তিন আঙুল উঠিয়ে হিনা কে দেখায়। হিনা বলে উঠে,
“ওহ তিন দিন!
“জ্বি না, তিন সপ্তাহ!
“কিহহ?
“হুম! অশান্তর রাগ অনেক। সেটা ঝড়ে পড়তে তিন সপ্তাহ তো লাগবেই। একসময় দেখবো আমাকে ভুলে গেছে! হি হি যা এখন বার হ ঘর থেকে আমাকে ঘুমাতে দে!
“যা ইচ্ছে হয় কর, আমি কিছু জানি না!
বালিশ নিঝুমের দিকে ছুঁড়ে মুখ ভেংচি কেটে চলে যায় হিনা!
—–
নিঝুম থর থর করে কাঁপছে। তার সামনে দাঁড়ানো শান্ত! দাঁত কেলিয়ে হাসছে সে। তার হাসি দেখে নিঝুমের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। নিঝুমের চোখ গেলো শান্ত’র হাতের দিকে। কামড় দেওয়া জায়গাটা ফুলে গেছে। এটা দেখেই নিঝুম অবাক! এতো জোরেই কামড় দিয়েছিল সে। নিঝুম শুকনো ঢোক গিলে বলে,
“সরি!
“সরি বললে তো হবে না!
“আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি এমনটা আর কখনো করব না সত্যি।
“এমন কাজ করার অবস্থায় আর থাকবে না তুমি।
“কেন?
“কারণ তোমাকে আজ আমি ছাদ থেকে ফেলে দেবো! তখন ভূত হয়ে এখান থেকে পালাবে। আমাকে কামড় দিয়ে ভূত বানানোর ধান্দা। আমিই তোমাকে এখান থেকে ফেলে দিয়ে ভূত বানিয়ে দেবো।
“এমনটা করবেন না আমি মরে যাবো।
মুহূর্তেই মনে পড়ল নিঝুম ছাদে দাঁড়ানো। ছাদের একদম কিনারে। শান্ত’র হেসে তার দিকেই আগাচ্ছে। নিঝুমের পুরো শরীর কাঁপছে। হঠাৎ করেই শান্ত তাকে ধাক্কা দিল। সে নিচে পড়ে গেল! হুম সত্যি; বিছানা থেকে খুব জোরেই মেঝেতে পড়ল সে। উঠিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে নিজেকে দেখতে লাগল। না, হাত পা আস্ত’ই আছে তার! শান্ত এসে তার স্বপ্নের মধ্যেও জ্বালাচ্ছে। কি একটা অবস্থা!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝেতেই শুয়ে থাকল। হঠাৎ মনে হলো তার ফোনটা বেজে উঠল। নিঝুম চশমা চোখে দিয়ে ফোন খুঁজতে লাগল। বিছানার এক কোনেই পেল ফোনটা। তিথি’র ফোন!
“কোথায় আছিস, ভার্সিটিতে আসিস নি কেন?
“এভাবেই, তুই বল তোর কি খবর!
“খবর রাখ। আগে কথা শোন! বিকাল ৪ টার সময় দেখা কর!
“কেন?
“শপিং মলে যাবো, কিছু কেনাকাটার আছে।
তখন ওপাশ থেকে আরেকজনের আওয়াজও এলো। ইফা’র স্বর! সে বলছে, আমিও যাবো। চলে আয় খুব মজা হবে!
নিঝুম হেসে বলে, আচ্ছা ৪ টায় দেখা হচ্ছে তাহলে!
“ওকে!
——
শান্ত অনেক আগেই এসেছে ভার্সিটিতে! এসেই বাইক পার্ক করে সেখানে বসে ফোন টিপতে থাকে। কতোক্ষণ পর পরই তাকায় গেটের দিকে। নিঝুম আসলেই সবার আগে তার খবর নিবে এই আশায়। কিন্তু নিঝুম না আসায় খুব বিরক্ত সে। এই বিরক্তি নিয়ে ক্যাম্পাসে বট গাছের নিচে এসে বসল সে। একটা শুকনো পাতা এসে উড়ে আটকালো শান্ত’র চুলের মাঝে। আহনাফ হেসে পাতা সরিয়ে বলে,
“কোথায় ছিলি এতোক্ষণ!
“কোথাও না!
“রেগে আছিস নাকি?
“না রেগে নেই?
আহনাফ মৃদু হেসে শান্ত’র হাত ধরে বলল,
“তোর হাতের অবস্থা কেমন? ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলি। গতকাল তো আর যাওয়া হলো না।
“হুম গিয়েছিলাম।
হঠাৎ এর মাঝেই সামনে এসে হাজির হলো দিয়া! আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাল দিয়ার দিকে। তার হাতে একটা চিরকুট! আহনাফ হেসে তার ব্যাগ থেকে কাঠগোলাপ বের করে দিল দিয়ার কাছে। দিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আর কতোদিন চলতে থাকবে এমনটা?
জবাবে হাসল আহনাফ। শান্ত হেসে সেই ফুল নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“যতদিন না তানিশা এসব বন্ধ করে!
দিয়া চিরকুট গুটিয়ে বলে,
“দুই বন্ধুর মাঝে এরকম কিছু দেখতে আর ভালো লাগে না। একবার চিরকুট নিয়ে তো পড়তে পারিস আহনাফ!
আহনাফ বই বন্ধ করে দিয়ার দিকে ফিরে বলে,
“ইচ্ছে নেই।
শান্ত হেসে বলল,
“খাটি প্রেমিক!
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নীলাভ্র আর আহিম হেসে উঠে শান্ত’র কথা শুনে। আহিম কে দেখে শান্ত তার কাঁধে হাত রেখে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে!
——
“ওই চশমিশ কি আজকে আসে নি!
“না! ( বলেই শান্ত’র দিকে ফিরে মিটিমিটি হাসে। )
“দাঁত কেলিয়ে হাসছিস কেন?
“কিছু না, দেখি দেখি তোর হাত দেখি। চশমিশ বিড়ালের হাতে কামড় খেয়ে হাতের কি অবস্থা!
“একদম মজা করবি না বললাম। ও জানে না শান্ত কি? পাই না একবার!
“আর পাবি তাকে, আজ আসে নি। দেখ আরো কতোদিন যায়। সে নিজেও বুঝে গেছে কতোবড় ভুল করেছে।
“ভুল করেছে তো ভুলের মাসুল কি দিবে না!
আহিম বাঁকা হাসল। শান্ত হেসে সামনে হাঁটা ধরল। তখন’ই দেখা হলো ইফা আর তিথির সাথে। শান্ত এসে ইফার মাথায় বাড়ি দিয়ে বলল,
“তোর চশমিশ বান্ধবীর কি খবর?
“আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো ওর কথা।
“ওমা, ও না তোর ফ্রেন্ড!
“বেস্টু!
আহিম হেসে বলে, তা বেস্টু কোথায়?
“ভার্সিটিতে যখন আসে নি তখন বাসায়’ই থাকবে!
শান্ত মাথা নাড়িয়ে বলল, হুম তাও ঠিক!
বলেই পাশ ফিরিয়ে যেতে নেয়। ইফা বলে উঠে, শান্ত ভাইয়া!
“হুম?
“এই ফুলটা কি করবে?
শান্ত ফিরে তাকায় ফুলের দিকে। চট করে ইফার হাতে দিয়ে বলে, “কিছু না!
বলেই শান্ত আর আহিম চলে গেল। ইফা সেই ফুল হাতে নিয়ে তিথির দিকে তাকাল। আশপাশের মানুষজন এই ফুল দেবার ব্যাপারটা নিয়েও কথা বলাবলি করছে!
—–
তিন বান্ধবী একসাথে আইসক্রিম খেতে খেতে শপিং মলে ঘুরছে। দু একটা দোকানে ঘুরে জিনিসপত্রও কিনছে। হঠাৎ করেই তিনজন আলাদা হয়ে গেল। নিঝুম ঘুরতে ঘুরতে মেয়েদের কালেকশন শেষে ছেলেদের কালেকশনে এসে পড়েছে। এখান থেকে যেই না বের হতে যাবে ওমনি তার চোখ পড়ল দোকানের বাইরের দিকে। কাঁচের গ্লাসের ওপাশে আহনাফ কে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নিঝুম। তাকে দেখেই থমকে গেল নিঝুম। নীলাভ্র আর আফিনের সাথে কথা বলে হাসছে সে। তার হাসিটার মায়ায় আটকে গেল নিঝুম। চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। হঠাৎ করেই তার কানের কাছে শান্ত নামটা ভেসে এলো। মুহূর্তেই তার মন বদল হলো। শান্ত মনটা এখন অস্থির হয়ে উঠল এখান থেকে পালানোর জন্য। নিঝুম তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে কারো কাছে ধাক্কা খেয়ে পিছনে চলে গেল। সামনে তাকাতেই দেখল তার হাতের আইসক্রিম লোকটার হুডি তে লেগে গেছে। কালো রঙের হুডিতে পুরো স্পট দেখা যাচ্ছে। মুখের দিকে তাকাতেই নিঝুমের মুখের রঙ উড়ে গেল। শান্ত বাঁকা হেসে বলল, হাই চশমিশ!
নিঝুম তাড়াহুড়ো করে তার ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে শান্ত’র দিকে ফিরে বলল, সরি সরি আমি দেখতে পায় নি!
বলেই সেই লেগে থাকা আইসক্রিম মুছতে লাগল। শান্ত কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গিয়ে তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা নিঝুম কে দেখতে লাগল। অতঃপর হুট করেই নিঝুমের বাহু ধরে তার থেকে নিজেকে ছুটিয়ে নিল সে। নিজের হুডির দিকে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার এতো সাধের হুডি!
“সত্যি আমি দেখতে পায় নি, সরি সরি!
“এতো গুলো চোখ থাকতেও দেখতে পাও না!
নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে হেসে বলল, সরি!
শান্ত হেসে বলল, আহ সরি বললেই শেষ নাকি। কি করেছিলে ভুলে গেছো?
নিঝুম পালাতে নিবে তখনই দেখল শান্ত তার বাহু ধরে আছে। নিঝুম শুকনো ঢোক গিলল। শান্ত হেসে তাকে নিজের সাথে টেনে নিয়ে বলল, আসো আমার সাথে!
অতঃপর একের পর এক পোশাক নিয়ে দিচ্ছে নিঝুমের হাতে। নিঝুম ও ধরে যাচ্ছে। আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে। কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছে না সে!
“আপনি এসব আমার হাতে কেন দিচ্ছেন!
“আমি কিনবো বলে! ( অতঃপর একটা টি শার্ট হাতে নিয়ে নিজের দিকে ঠেকিয়ে নিঝুম কে বলল ) এটা কেমন?
নিঝুম মাথা নেড়ে বলল, সুন্দর!
“তাহলে নিয়ে নাও!
“এতো কিছু! কতো বছরের শপিং করতে এসেছেন।
“আপাতত কয়েক মাস। তুমি শুধু নিয়ে যাও
“কেন আমি কেন নেবো! নেবো না!
বলেই ধপাস করে সবকিছু ফেলে দিল নিঝুম! শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
“তাই তো তুমি কেন নেবে! তা আমার এতো শখের হুডি’র কি করেছ সেই খেয়াল আছে। জানো এটার দাম কতো! আমি যদি এখন বলি এই হুডির দাম দাও দিতে পারবে।
নিঝুম চোয়াল শক্ত করে বলল, আপনি টাকার দেমাগ দেখাচ্ছেন!
শান্ত হাসল। নিঝুমের দিকে ঝুঁকে বলল, হ্যাঁ দেখাচ্ছি! এছাড়াও ভুলে গেছো সেই কামড়ের কথা। হুম! সেটার পানিশমেন্ট এখনো পাও তুমি। তা তুমি যদি রাজি থাকো এখানে সবার সামনে তোমার হাতে কামড় দিয়ে আমি শোধবোধ করে নিতে পারি। দেবো নাকি আমি একটা কামড়। নাকি অন্যকিছু..
নিঝুম ঢোক গিলে এক পা পিছিয়ে গেল। শান্ত হেসে বলল, চয়েজ ইজ ইউর! কি করবে ভেবে নাও। তাড়াতাড়ি এগুলো তুলো!
বলেই শান্ত ওপাশে গেল। নিঝুম বিরক্তি ভঙিতে সবকিছু উঠাল। অতঃপর শান্ত’র পিছন পিছন যেতে নিল। শান্ত’র এতো জিনিসপত্র নিয়ে তার হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। পুরো হাত জুড়ে প্যাকেট! নিঝুমের ঘাড়ও ব্যাথা করছে এখন। এক দোকান থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো আহনাফের সাথে। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিঝুম হাসার চেষ্টা করল। তানিশা হেসে বলল,
“এই মেয়েকে কোথায় পেলি, আর ও এখানে কি করছে?
“আমার হেল্প দেখছিস না!
আহনাফ বাদে সবাই হেসে উঠলো। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। রিয়া হেসে বলল, তা শুধু কি তোর হেল্প’ই করবে নাকি!
শান্ত রিয়ার গাল টেনে বলল, আমার এখনো শপিং বাকি। তাই তোর টা তুই নিজেই নে!
রিয়া মুখ ভেংচি কাটলো। শান্ত সামনের দিকে হাঁটা ধরে নিঝুম কে বলল, আসো!
নিঝুম শান্ত’র পিছন পিছন যেতে লাগলো। আহনাফ পিছন ফিরে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে!
শান্ত’র সাথে হেঁটে পারছে না নিঝুম। খুব জোরে জোরে হাঁটছে সে। আর নিঝুমের হাতে আগে থেকেই এতো কিছু তাই ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না সে। নিঝুম ক্লান্ত স্বরে বলল, আর কতোকিছু কিনবেন !
“এখনো জুতো বাকি, এরপর পারফিউম, কিছু স্কিন প্রোডাক্টও আছে।
“পাগল হয়েছেন নাকি! আমি কিন্তু আর নিতে পারছি না বলে দিলাম!
বলেই মাথা নিচু করে নিঝুম হাঁটতে লাগল। এর মাঝে যে শান্ত তার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে গেছে সেই খবর নেই তার। অতঃপর সামনে হাঁটতেই কপালের সাথে ধপাস করে বারি গেল শান্ত’র বুকের সাথে। মাথা তুলে একটু জোরে বলল,
“এভাবে সঙ সেজে দাঁড়িয়ে আছেন।
“তুমি আবারো ঝগড়া করছো। এতো পানিশমেন্টও চুপ হলে না তুমি..
“এই না না চুপ আমি। প্লিজ আর বাড়াবাড়ি করবেন না। যা ইচ্ছে হয় কিনুন আমি তো আছি এখানে। কিনুন কিনুন! আপনি কিনুন আর প্যাকেট ধরার জন্য তো আমি আছি। ( বির বির করে ) যেদিন পারবো সেদিন আপনার ঘাড় মটকে দেবো।
“কিছু বললে..
“কই না তো!
অতঃপর শান্ত এবার ঢুকল জুতার দোকানে। নিঝুম এখন একটু স্বস্তি পেল। প্যাকেট গুলো রেখেই ঢক ঢক করে পানি খেল সে। শান্ত’র জুতো কেনা শেষে আরো কয়েকটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিল নিঝুমের।
ইফা আর তিথি নিঝুম কে না পেয়ে ফোন করল। নিঝুম দাঁড়িয়ে গেল। ফোন হাতে নেবার জন্য সে ঘুরতে লাগল। শান্ত নিঝুম কে দাঁড়াতে দেখে তার মাথায় হাত রেখে বলল, কি হয়েছে?
*শুনতে পারছেন না।
“কি?
“আমার ফোন! ফোন বাজচ্ছে। নিন তুলুন এটা!
শান্ত মুখ ভেংচি কেটে বলল, “শান্ত ধরবে মেয়েদের ব্যাগ কখনো না!
“তাহলে নিজের এসব প্যাকেট গুলো ধরুন! কি হলো ধরুন!
শান্ত শব্দ করে শ্বাস ফেলে নিঝুমের ব্যাগ থেকে ফোন করল। এটা এসে ধরল নিঝুমের কানে। হুট করেই হাটা ধরল নিঝুম। তার পিছন পিছন যাচ্ছে শান্ত। তিথি’র ফোন ছিল, সে বলে উঠলো,
“কিরে কোথায় তুই, উধাও হয়ে গেলি যে!
“আমার একটা কাজ পড়ে গেছিল রে। তাই চলে এসেছি।
“মানে!
শান্ত নিঝুমের বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলো!
“বলছি বলছি!
ওপাশ থেকে তিথি বলল, কি বলছিস?
“বলছি আমি বাসায় চলে যাবো। তোরা চিন্তা করিস না।
“তোর সাথে কি কেঊ আছে, কার সাথে কথা বলছিস?
“কারো সাথে না। আচ্ছা আমি এখন রাখছি!
বলেই ফোন কেটে দিল নিঝুম। ইফা ভ্রু নাচিয়ে বলল, কি?
“কেটে দিল!
“ফোন কেটে দিল, মেয়েটা হঠাৎ করে কোথায় উধাও হলো বল তো!
“জানি না, চল ওদিকে চল। আমার কেনাকাটা এখনো বাকি!
——
এতো কিছু নিয়ে নিঝুম এখন আর হাঁটতে পারছে না। তার পা ব্যাথা হয়ে গেছে এই শান্ত নামের অশান্ত লোকের পিছনে দৌড়ে। এই অশান্তর সাথে কি আর পেরে উঠা যায়। হাঁপিয়ে গেছে নিঝুম। এদিকে শান্ত একটু পর পর পিছনে তাকিয়ে নিঝুম কে দেখছে। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে হেটে আসছে সে! নিঝুমের এই হাল দেখে শান্ত মুখ টিপে হাসছে। আজ খুব ভালো মতো জব্দ করেছে নিঝুম কে। কিন্তু এটা শেষ না, আরো আছে।
গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলল শান্ত। নিঝুম এক এক করে সবকিছু ভেতরে রাখল। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের দিকে তাকাল সে। হাত দুটো লাল হয়ে গেছে। তার সাথে খুব ব্যাথাও করছে। শান্ত গাড়ির দরজা ধপাস করে বন্ধ করল। নিঝুম হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল। শান্ত নিঝুমের দিকে ঝুঁকে বলল, আজকের জন্য এতোটুকুই! টাঠা! কাল ঠিক টাইমে ভার্সিটিতে চলে এসো। হ্যাঁ পালিয়ে যাবার ধান্দা করবে না একদম বুঝলে!
বলেই গাড়ির ভেতর বসল শান্ত! সন্ধ্যা নামবে নামবে এই সময়। নিঝুম আকাশের দিকে তাকাল। ইশ! আজকের আকাশ কি সুন্দর ছিল। ঠিক ততোটাই সুন্দর ছিল আজকের দিন। কিন্তু এই অশান্ত’র জন্য সবকিছুই গন্ডগোল হয়ে গেল। ইচ্ছে তো করছে এই অশান্ত কে.. বলেই থেমে গেল নিঝুম। শান্ত’র গাড়ির হর্ণের আওয়াজে লাফিয়ে উঠল আসল। শান্ত ইচ্ছে করে গাড়ি বেক করে আবার সামনে নিল। গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছে শান্ত! নিঝুম পেছন থেকে অনেক গালিগালাজ করছে তাকে। শান্ত গাড়ির আয়নায় নিঝুমের কান্ড দেখে হাসছে…
——
একা রাস্তায় শান্ত কে গালাগাল করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে নিঝুম! হঠাৎ করেই বাইক এসে থামল তার সামনে! নিঝুম থমকে দাঁড়িয়ে গেল। হাত মুঠো করে নিল সে। রাস্তার মাঝে শুধু একা সেইই দাঁড়িয়ে! এই ভর সন্ধ্যায় কে এলো এখানে! অতঃপর..
#চলবে….
[ রি চেক করা হয়নি, ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল ]