#অপ্রিয়_জনাব
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_১৩
রাতে দ্বার লাগিয়ে কক্ষে মোমবাতি জ্বালিয়ে একটা কাগজ নিয়ে বিছানায় বসে উপমা। যেদিন তুলি মারা গেলো সেদিন রাতে কী মনে করে যেনো উপমা তুলির কক্ষে গিয়েছিলো। সহসা তার নজর যায় চকির পাশের কপাটে। প্রথম কপাট খুলে তেমন কিছুই পায় না। দ্বিতীয় কপাট খুলতেই কয়েকটা বইয়ের নিচে একটা কাগজ লুকানো পায়। সম্ভবত চিঠিটা তার জন্যেই লিখেছিলো! তুলি মোটামোটি পড়ালেখা পারতো। ছায়া তাকে অবসর সময়ে অনেক কিছুই শিখিয়েছিলো। উপমা সেইসময় আর কাগজটা খুলে না। চুপচাপ সেটা নিয়ে নিজ কক্ষে এসে পরে।
কয়েকবার সে চিঠিটা পড়েছে। হাতের লেখা বুঝতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো তার। প্রথম যেদিন চিঠিটা পরলো সেদিন স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষন বসেছিলো উপমা। অবিশ্বাস ভঙ্গিতে বার বার চোখ বুলিয়েছিল। আজ আবারও সেই চিঠিটা নিয়ে বসেছে। কম্পিত হাতে চিঠিটা খুলে সামনে ধরে। সেটায় আধো আধো হাতে লেখা ছিলো,
“আমি জানি না আমার এই পত্র কার হাতে পরবো যদি আপনের হাতে পরে তাইলে ছোডু ভাবিজান মন দিয়া পইড়েন। আমারে মন্দ ভাইববেন না। আমি আত্মহত্যা করতাম না। কোনো মানুষেরই মরতে মন চায় না। আমরাও মন চায় নাই ভাবিজান। আমার মরার পিছনে হুদা সোহরাব মির্জা দায়ী। তারে আপনেরা ভালা ভাইববেন না। আলাউদ্দিন মির্জা হইলো ফুটাইন্না শয়”তান আর হেয় হইলো ভিতর ভিতর শয়”তান। হের বাপের কুকর্ম ঢাকতে সন্ধ্যার পর হেয় আমার কাসে আইছিলো। আমারে কইসে আমি আমার সন্তানরে মাইরা ফালাই নাইলে হেরা আমারে মাইরা ফালাইবো। আমি ভাইজানরে অনেক ভালা জানতাম। হেই আমারে এইডা কইবো আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমি যহন কইলাম আমার সন্তানরে আমি মারুম না। আমি আমার সন্তান রে নিয়ে মেল্লা দূরে চইলা যামু তহন হেয় রাইগ্গা উঠে। অহনই আমার কক্ষ থেকা বাইর হইসে আমারে ধমকাইয়া। আমি আমার সন্তানরে মারতে চাই না ভাবিজান। আমি যদি পারতাম আমি নিজেই আলাউদ্দিন মির্জার খাওনের বিষ মিলাইয়া দিতাম। আমি বাইচ্চা থাকনের কোনো আশাই খুইজ্জা পাইতাসি না। আমি আত্মহত্যা করলেও খোদা আমারে মাফ করবো না আবার সন্তান রে মারলেও মাফ করবো না। আমার লেগা মইরা যাওনই ভালা। আলাউদ্দিন মির্জা আর সোহরাব মির্জা রে আপনেরা চাইরেন না ভাবিজান। হেগো উচিত শাস্তি দিয়েন। আমার মন কয় আপনে পারবেন ভাবিজান।
আমার হাতে আর বেশিসময় নাই। একটু পরই আমি গলায় ফাঁসি দিমু। নিজের খেয়াল রাইখেন আপনেরা। ”
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো উপমা। চিঠিটা নিজের আলমিরায় লুকিয়ে রাখলো। বুক ভার ভার লাগছে তার। মস্তিক জ্বল জ্বল করছে প্রতিশোধের নেশায়। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
-জুলুমকারীকে আল্লাহও মাফ করবেন না তাঁদের কী একটুও মৃত্যু ভয় নেই! কী ভয়ংকর শাস্তি হবে তাঁদের!
প্রথমদিন সোহরাবকে দেখে তার মনে হয়েছিলো পিতা খারাপ হলেও পুত্র ভালো হয়েছে। কী সুন্দর তার ব্যবহার। ধীরে ধীরে সময় গেলো উপমার চিন্তাও পরিবর্তন হয়ে গেলো। বর্তমান সোহরাবের একের পর এক নতুন রুপ দেখে হতবাক হয়ে পরছে উপমা। সে কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছে ছায়াও সোহরাবকে এড়িয়ে চলছে। সোহরাবের কোনো কাজই সে করে না। নিজের মতো খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরে। উপমার সাথেও দরকার ছাড়া বেশি কথা বলে না। সোহরাব কেমন যেনো চোখে চোখে রাখে তাকে। অনেকদিন ধরে শহরে যায় না।
উপমা ধীর পায়ে আলমিরা খুলে একটি কাগজের পুটলি বের করে। ভিতরে কালো রঙের কিছু জিনিস। সেটা হাতের মুঠোয় নিয়ে। বাঁকা হাসে উপমা।
নিত্যদিনের মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে রসইকক্ষে আসে উপমা। সাইয়েরা আগের থেকেই কাজ করছিলো। ফাতুকে একা দেখে বুকে পীড়া অনুভব করলো উপমা। কেমন একটা হাঁসফাঁস করে উঠলো তার মনে। কোনোরকম নিজেকে শক্ত করে মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
-ছোট আম্মা আব্বাজানের পছন্দের খাবার কী? তার সাথে মন্দ ব্যবহার করে আমার মনটা কেমন যেনো উস্কখুস্ক করছে তাই ভেবেছি তার প্রিয় কিছু রান্না করে মনকে শান্ত করবো।
উপমার কথা শেষ হতেই রসইকক্ষে পা রাখে ছায়া। উপমার কথা শুনে কপাল কুঁচকে যায় কিছুটা। সাইয়েরার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়? অনেকটা বিরক্ত নিয়েই বলল,
-মাংসের কোরমা আর রুটি তার সবচেয়ে পছন্দের খাবার।
-ওহ!তাহলে আজ আমি এটাই রান্না করবো আব্বাজানের জন্য।
ছায়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ফাতুকে জিগ্যেস করলো,
-তোর ভাইজান এখনও ঘুম থেকে উঠলো না ফাতু?
-ভাইজান তো ভোরবেলাই শহুরে চইল্লা গেছে বড় ভাবিজান। হের বলে গুরুত্বপূর্ণ কাম আছে আবার আইয়া পরবো।
ফাতুর কথায় উপমার মুখের হাসি আরো বড় হলো। ছায়া ভিতর ভিতর আঁতকে উঠলো উপমার হাসি দেখে। তার মনের ভয় সোহরাবের জন্য নয় বরং উপমার জন্য। সোহরাবের প্রতি সেইদিন রাত থেকে কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না ছায়ার। সোহরাবের ওপর থেকে মন বিষিয়ে গিয়েছে তার। কিন্তু উপমার যদি কিছু হয়ে যায়! ক্রোধে সোহরাব যদি উপমাকে কিছু করে ফেলে!
না আর ভাবতে পারলো না সে। মস্তিকে বেশি চাপ দিলেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে তার। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারে না। একবার অসহায় দৃষ্টিতে উপমাকে দেখে রসইকক্ষ থেকে প্রস্থান করে।
উপমা ইয়ামিনকে ডাকতে উঠানে এসেছিলো দুপুরে। ইয়ামিন দুষ্টামি করতে করতে ছুটে যায় সদর দ্বারে। উপমাও তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। কোথায় থেকে তাহসিয়া এসে উপমার হাত ধরে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। আকস্মিক তাহসিয়ার এহেন আচরণের মানে বুঝলো না উপমা। চমকিত হয়ে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই তাহসিয়া চাপা কণ্ঠে বলল,
-আমি মাত্রই শুনলাম আলাউদ্দিন মির্জা তোকে মারার পরিকল্পনা করছে উপমা। তুই এখান থেকে চলে যা।
-আমি চলে যেতে আসিনি তাহসিয়া।
তাহসিয়ার কণ্ঠে অস্থিরতা কাজ করছে। উপমার জন্য ভীত সে। করুণ কণ্ঠে বলল,
-তুই পারবি?
-আলবাদ পারবো।
অনেকটা আত্মনির্ভর হয়ে কথাটা বলল উপমা। তাহসিয়ার মাথা থেকে একটু দুশ্চিন্তা কমলো। শান্ত স্বরে বলল,
-তুই যা মন চায় কর। আলাউদ্দিন মির্জা মারা গেলে ভুলেও আমাকে জানাবি না। কাউকে বলবিও না আমাকে জানাতে। বুঝতে পারছিস?
তাহসিয়া শেষের কথাটা কম্পিত কণ্ঠে বলল। যতই ঘৃণা করুক রক্তের টান আছে না!একটু তো কষ্ট হবেই।
তাহসিয়া পুনরায় বলল,
-আমি দুপুরের পর চলে যাচ্ছি। আমাকে প্রয়োজন হলে টেলিফোন করবি।
-আচ্ছা।
_________________________
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো। মনের মধুর্য মিশিয়ে আলাউদ্দিনের সব প্রিয় প্রিয় খাবার রান্না করেছে উপমা। নিজ হস্তে আলাদা আলাদা করে খাবার বেড়ে তুলসী, সাইয়েরা আর ছায়ার কক্ষে পাঠিয়ে দেয়। যেহেতু পুরুষ শুধু আলাউদ্দিন একাই তাই খাবার সে একাই খাবে। ভোজনশালায় আজ ভৃত্যদের সাহায্যে নিলো না উপমা। নিজেই টেবিলে সুন্দর করে সকল খাবার পরিবেশ করে।
মুখ থেকে হাসি আজ যেনো সরছেই না তার। পরিবেশ করা শেষ হলে সযত্নে শাড়ীর আঁচল থেকে সেই কাগজের পুটলিটা বের করে। কাগজের সবটুকু পদার্থ মাংসের কোরমায় দিয়ে দিলো। তারপর ভালোভাবে মিশিয়ে সরে দাঁড়ালো।
একজন পুরুষ ভৃত্যের সাথে কথা বলতে বলতে ভোজনশালায় উপস্থিত হলো আলাউদ্দিন। উপমা ঘোমটা ধরে নত মাথায় দাঁড়িয়ে রইলো। উপমাকে দেখে আলাউদ্দিন বড় একটি হাসি দিলো। এতো এতো খাবারের পদ দেখে অবাক হয়ে বলো,
-এতো খাবার আজকে?
উপমা খানিকটা অপরাধী মুখ করে তাকালো আলাউদ্দিনের পানে। অনুতপ্ত স্বরে বলল,
-আমি সেইদিন আপনার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলাম আব্বাজান। তাই ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার জন্যে এইসব করেছি।
আলাউদ্দিন হাসলো। উপমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আলাউদ্দিনের ছোঁয়া অনেক কষ্টে সহ্য করলো উপমা। চেয়ারে বসে আলাউদ্দিন জিগ্যেস করলো,
-নিজ হাতে রান্না করেছিস আম্মা?
-জী আব্বাজান। এখন আপনার পছন্দ হলেই আমার স্বার্থক।
আলাউদ্দিন প্রসন্ন হলো। উপমা তার সত্যিটা জানেনা ভেবে খুশিতে পুলকিত হয়ে উঠলো তার মন। চাতক মন প্রহর গুনছে। কখন আলাউদ্দিন খাবার খাবে কখন তার শেষ চাওয়া পূরণ হবে! গরম গরম রুটির সাথে মাংসের কোরমা মুখে পুরে আলাউদ্দিন। প্রশংসনীয় স্বরে বলল,
-বাহ্! তুখোড় হয়েছে কোরমাটা।
পূর্ণিমার চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করে উঠলো উপমার সুশ্রী মুখ।
একে একে সব খাবার শেষ করে আলাউদ্দিন। তৃপ্তির ঢেঁক তুলে। খাওয়া শেষ হতেই হাসিমুখে নিজ কক্ষে চলে যায়।
উপমা তার যাওযার পানে তাকিয়ে গুনগুন গান গাইতে শুরু করে। এখন অপেক্ষা করতে থাকলো আলাউদ্দিন মির্জার শেষ পরিণতি দেখার।
অশান্ত মন নিয়ে বিছানায় শুয়িত ছায়া। মন অস্থির হয়ে আছে তার। অকারণেই কেমন বিতৃষ্ণা লাগছে। ঘড়িতে রাত এগারোটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। অস্থির মনকে বুঝ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকলো সে।
আজ অমবস্যার রজনী। পূর্ব আকাশে চাঁদটি মৃদু মৃদু করে নিজের উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। চন্দ্রের অস্পষ্ট আলোতে দেখা যাচ্ছে নারী কাঠামো ধপ ধপ পা ফেলে গৃহের পিছনের দিকে যাচ্ছে। কালো রঙের শাড়ীতে তিমিরের সাথে নিজেকে লুকানোর প্রয়াস মাত্র। গৃহের পিছনে নিদিষ্ট একটি খোলা জানালার স্মুখীন এসে পা’জোড়া থেমে যায় নারী মূর্তির। আলাউদ্দিন নিচ তলার একদম কিনারের কক্ষটিতে থাকে। পুকুরপাড়ে এই কক্ষের একটি জানালা আছে। শয়”তানের বিনাশ নিজ নয়নে দেখতে লুকিয়ে এখানে এসেছে উপমা। ভাগ্যক্রমে জানালা খোলাই ছিলো। আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে জানালার ভিতরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
আয়েস করে বেতের চেয়ারে বসে বই পড়ছিলো আলাউদ্দিন। কক্ষের দ্বার খোল। সে সবসময় দ্বার খোলা রেখেই ঘুমায়। এখনও আলাউদ্দিনকে স্বাভাবিক দেখে পিলে চমকে যায় উপমা। কলিজা ধক ধক করছে তার। হটাৎই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আলাউদ্দিন। শ্যামবর্ণ গায়ের রুপ হটাৎই পরিবর্তন হয়ে যায়। হাতের বই জমিনে পরে যায়। উপমার অধীর অপেক্ষার অবসান ঘটলো তবে। মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো তার। আলাউদ্দিন সামনে পা বাড়াবে তার পূর্বেই ধপাস করে জমিনে পরে যায়। বিষক্রিয়ার প্রভাবে জমিনে পরে ছটফট করতে থাকে। গলা চেপে ধরে চিৎকার করতে চায় কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজই বের হলো না।
উপমা এই সুন্দর মুহূর্ত স্মুখীন দাঁড়িয়ে দেখে উপভোগ করতে চাইছে। তাই সে সেখানে থেকে গৃহে ফিরে আসে। ধুরুম ধুরুম পা ফেলে আলাউদ্দিনের কক্ষে উপস্থিত হয়। উপমাকে দেখে একটু আশা পায় আলাউদ্দিন। গোঙাতে গোঙাতে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
-আমা আমাকে বাঁচা মা। আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমার হৃদপিন্ড পুড়ে যাচ্ছে। বাঁচা আমারে।
উপমা দ্বার লাগিয়ে এগিয়ে গেলো আলাউদ্দিনের নিকট। শক্ত চোয়াল মুখশ্রী। আঁখিজোড়া বেয়ে এক ফোঁটা দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরছে তার। এই অশ্রুকণা আলাউদ্দিনের জন্য নয়। অভাবেই আগুনে পুড়ে তড়পাতে তড়পাতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তার বাবা, মা, বড় ভাই। কত কষ্ট হয়েছিলো তাঁদের! জেন্ত মানুষ একটু একটু করে আগুনে পুড়েছিল তাঁদের সম্পূর্ণ শরীর! কী যন্ত্রনাই না হয়েছিলো!
দুঃখে আর ক্রোধে আলাউদ্দিনের পাশেই বসে পরে উপমা। শান্ত স্বরে বিচলিত হয়ে বলল,
-অনেক কষ্ট লাগছে আব্বাজান?
আলাউদ্দিন কোনো উত্তর দিতে পারলো না। পেটে হাত দিয়ে গড়গড় করে বমি করে দিলো। উপমার দুঃখিত মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে গেলো। ক্রোধে চিৎকার করে বলল,
-তুই মানুষ না অমানুষ। তোর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলাম আমি। তোর কোনো অধিকার নেই বেঁচে থাকার। আজ তোর জন্যে আমি পিতা মাতা হারা। তোর জন্যে আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি। আমাকে এতিম করে দিয়েছিস তুই জা’নো’য়ার।
ডুকরে উঠলো উপমা। আরেকটু ঝুঁকে বসলো স্মুখীন আলাউদ্দিনের শেষ পরিণতি ভালোভাবে দেখতে। বড় নিঃশাস নিয়ে বলল,
-আগুন লাগানোর পর সেইদিন তুইই এসেছিলি না আমার বাবার কাছে! কী বলেছিলি জানি? ওহ হ্যাঁ, এই জমিদার বাড়ি তোর!তুই ছাড়া অন্যকাউকে রাজ করতে দিবি না। হুমায়ুদ্দিন মির্জাকে সহ পরিবার ধ্বংস করে দিবি! তাঁদের নাম নিশাসও রাখবি না। এটাই তো বলেছিলি? আমার বাবা এতো করে বলল আমাদের বাঁচাও ভাইজান তুই তখন কী করলি! সদর দ্বার লাগিয়ে চলে গেলি। দেখ আজ তোর শেষ পরিণতি দেখ আলাউদ্দিন মির্জা। হুমায়ুদ্দিন মির্জার অংশই আজ তোকে শেষ করছে। জানিস তোর এইরকম করুণ অবস্থা দেখে আমার যে কী শান্তি লাগছে। আমার চিত্তে অনেক বছর পর বর্ষণ নেমেছে আজ!
বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আলাউদ্দিন। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই চিরকালের জন্য পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে।
উপমার আরো অনেক কিছু বলতে মন চাচ্ছিলো কিন্তু কণ্ঠনালি দিয়ে কোনো আওয়াজই বের হলো না। কাঁপতে থাকলো তার পুরো শরীর। উপমা শেষ বিড়বিড় করে বলল,
-ওপারে ভালো থাকবেন আব্বাজান। আমার বাবার সাথে দেখা হলে বলবেন আমি তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছি। তার হুমাশা সফল হয়েছে।
পাগলের মতো বিলাপ পারলো কিছুক্ষন উপমা। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে এলো আলাউদ্দিন মির্জার। সারাজীবনের জন্য নিঃশাস ত্যাগ করলো সে।
উপমা এলোমেলো অবস্থায় উঠে দাঁড়ালো। মুখে তার হাসি অথচ চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরছে। বিধ্বস্ত অবস্থায় কক্ষের বাহিরে আসে। কাঁপা কাঁপা পায়ে পুকুরপাড়ে যেয়ে রাতের আঁধারে কিছুক্ষন সাঁতার কেটে নিজের কক্ষে যেয়ে ঘুমিয়ে পরে।
_______________________
অন্ধকারে আচ্ছন্ন রাতের পর এক উজ্জ্বল সকাল এলো উপমার জীবনে। বাহিরে মানুষের কান্না আর বিলাপের শব্দে সুন্দর ঘুমটা ভেঙে যায় তার। হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে। মুখে তার সুন্দর একটি হাসি। সুন্দর একটি দিনকে সুন্দর একটি হাসি উপহার না দিলেই নয়!
অনেক আনন্দ অনুভব হচ্ছে তার বাহিরের মানুষের কান্না শুনে। শাড়ী ঠিক করে বড় একটি ঘোমটা দেয়। আয়নার স্মুখীন দাঁড়িয়ে মুখে একটু দুঃখী দুঃখী ভাব আনে। গ্লাস থেকে এক ফোঁটা পানি নিয়ে চোখে ছিটিয়ে নকলি অশ্রু বানিয়ে নেয়। কোমর দুলিয়ে হেঁটে দ্বারের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা খোলার চেষ্টা করে বুঝতে পারে ঐপাশ থেকে কেউ তার কক্ষের দরজা লাগিয়ে রাখছে।
ভ্রু কুঁচকে যায় উপমার। তার কক্ষের দরজা কে লাগাতে যাবে! কেনোই বা লাগিয়েছে? এইরকম নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে উপমার মস্তিকে।
>>>>চলবে।
(শয়’তা’নের বিনাশে সবাই চিয়ার্স করি🥂।)