#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্ট_১০
মাসুদ সাহেব অনেক খুজলেন কিন্তু নিলয়ের কোনো চিহ্নমাত্র পাননি। তাই একঝাঁক বিরক্তি নিয়ে বাসায় ফিরে আসলেন।
রোহানা বেগম কিছু বুজতে না দিয়ে মাসুদ সাহেবের সাথে আগের মতোই ভালো ব্যবহার করছেন। যা করতে হবে ভেবেচিন্তে,,, নয়তো এই মানুষটি আবার কোনো না কোনো ক্ষতি করে দিবে।
রিয়া ঘুম থেকে উঠে আদ্রিয়ানের রুমে গেল, কিন্তু কোথাও আদ্রিয়ানকে দেখলো না। বারান্দায় যেয়েও দেখেনা। ভাবছিলো ছাদে যেতে পারে, তাই রিয়া ছাদের উদ্দেশ্যে গেল।
—————————————-
বাহ! আদ্রিয়ান মাহমুদকে ফাঁকি দিয়ে চলে আসছি। এখন আমার টিকিটিও খুঁজে পাবেনা😎।
এই ভরদুপুরে কেউ ছাদে আসতে পারে, আদ্রিয়ান মাহমুদ তো জানবেই না। তাই আমাকে খুঁজতেই আসবেনা।
বজ্জাত ছেলে আমার মতো একটা নিরীহ মেয়েকে কি না,,,, (নিজের মুখ নিজেই ঢেকে ফেললো লজ্জায়)
আমি দোষ করছি! শুধু তো ভাইয়াই ডাকছি,,আগেও তো ডাকতাম তখন তো কিছু বলতো না। এখন সব দোষ নন্দ ঘোষ।
জীবনের বউয়ের মুখ তো দেখলি,,,কিন্তু আজকে আর দেখা লাগবেনা। যদি শায়েস্তা না করছি আমিও মিসেস. আদ্রিয়ান মাহমুদ না।
___আমি সাহায্য করতে পারি তোমায়।
—–আচ্ছা। ধন্যবাদ(অন্যদিকে তাকিয়ে)
___তা কি সাহায্য লাগবে বলো। আমি সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।
—– আমি যে ছাদে আছি আপনি ছাড়া যেন কেউ না জানে।
বিশেষ করে, ওই লাল টিকটিকি যেন না জানে।
___লাল টিকটিকি(অবাক হয়ে)। টিকটিকি আবার লাল হয়!!
—- আরে লাল টিকটিকি হচ্ছে গিরগিটি।
আপনি জানেননা!! গিরগিটি দেখতে খানিকটা টিকটিকির মতোই লাগে(এখনও অন্য দিকে তাকিয়ে) । আর সেই গিরগিটি হচ্ছে লুচু আদ্রিয়ান। তাহলে লাল টিকটিকি কে হবে বলুন তো,,,,,,,,,(কথাগুলো বলেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে তাকালাম। কিন্তু সামনের মানুষটি তো রাগে পুরাই এনাকন্ডার রূপ ধারণ করছে। ভয়ে ছাদ থেকে চলে আসতে যাবো তখনই আদ্রিয়ান টান দিয়ে তারসাথে মিশিয়ে নিলো)
—-কি যেন বলছিলে!! তোতাপাখি,,,,, আমি লাল টিকটিকি? গিরগিটি?? বজ্জাত?? আমায় শায়েস্তা করবে!!
আর কি যেন বলছিলে,,, ও হ্যা মনে পড়ছে,,,,,আমি লুচু!!(রেগে)
এবার দেখবা এই লুচু কি করতে পারে(ডেভিলমার্কা হাসি দিয়ে)
___আমতা আমতা করে,,,,,আমি আআসলে(তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছি কিন্তু তার শক্তির কাছে কিছুই পারছিনা। সে আমায় আরও শক্ত করে তার সাথে মিশিয়ে নিলো। যখন বেশি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছুটাছুটি করলাম তখন নিজের আয়ত্তে নিয়ে গেল)
!
আদ্রিয়ানের কাছ থেকে অনেক কষ্টে ছুটে পালালাম
একবার ছাদের দড়জা পর্যন্ত এসে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে।
হুহ!! তাতে আমার কি!! বেটা বজ্জাত সময় পেলেই লুচুগিরি শুরু করে দেয়।
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রিয়াকে দেখলাম ছাদের দিকে আসছে। কিন্তু আমার কি!! আদ্রিয়ান তো এখন আমার নিজেরই,,,তা এত মাথা ঘামালাম না,,,,।
______
একটু উন্নতির পর্যায়ে গেলাম,,,,,। স্টোর রুমে থেকে আদ্রিয়ানের পাশের রুমে আমার জন্য থাকার ব্যবস্থা করছে। যদিও আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা আমাদের কয়েকজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।
রিয়া ও ওর মায়ের ইচ্ছামত হলো না বিষয়টি।
কিন্তু ওদের মুখের অবস্থা দেখে আমার বেশ হাসি পাচ্ছে।
!
!
!
গোসল করে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিলাম। আমি আপন মনে চুলের মুছি,,,,হঠাৎ মনে হলো ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে। এই নিশ্বাস আমার খুবই পরিচিত,,,,। আমি তবুও ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি,,,,,,।
আদ্রিয়ান!! হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,,,নিশ্চয় এখন আবার ১২টা বাজাবে।
আদ্রিয়ান ঃ তোমার ১২টা কিভাবে বাজাবো!! তুমি কি কথা বলার ঘড়ি??(পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে)
আমিঃ কথা বলার ঘড়ি আছে??
আদ্রিয়ান ঃ হ্যা আছে তো। আমার সামনেই তো কথা বলার ঘড়ি।
আমিঃ আমায় দেখে কি ঘড়ি মনে হয়!!(রেগে)
আদ্রিয়ান ঃ আরে আরেহ রেগে যাচ্ছো কেন!! তুমিই তো একটু আগে বললে,,, তোমার ১২টা বাজাবো।
ঘড়ি ছাড়া ১২টা কিভাবে বাজায়!!
তাই তোমার কথা অনুযায়ী আমার মনে হইছে তূমিই ঘড়ি(হেসে)
আমিঃ চুপ কর শালা(রেগে)।
আদ্রিয়ান ঃ কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে,,,,,
কককিই বলোওঅঅঅঅ,,,,,,।
আমিঃ কানে কম শুনো! আজকেই সবাইকে বলবো,,,এই এক-কানীরে ভালো ডাক্তার দেখাতে।
আদ্রিয়ান ঃ এএক-কানীইই৷ কি?(কথাশুনে তুতলে গেল)
আমিঃ ওরেহ বাটপার!! ভাবলাম এক-কানী,,,,এখন আবার তোতলাওও!!!!
!
আরেহ মিয়া!! এক-কানী হইলো,,,কথা শুনেও না শোনার ভান করে যে,,,,।
এটা ভীষণ খারাপ রোগ,,,,মানুষ বিরক্ত করার মহৌষধ।
আদ্রিয়ান ঃ (কথাশুনে পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেল বেচারা,,,,,)
আদ্রিয়ানের অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে। কথা দিয়ে তো জিততে পারলাম,,,,,। এখন খুব শান্তি লাগছে,,,,।
দেখলাম আদ্রিয়ান মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে,,,মায়া মায়া মুখ। স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছে,,,আমি থুতনি ধরে এদিক-ওদিক নাড়ালাম,,,কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছেনা। সেই আগের মতোই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,,,,।
!
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এই দিন-দুপুরে কত কাজ পরে আছে। যদিও তেমন কাজ নেই। রোহানা আন্টি তো পইপই করে বলে গেছে,,,তার এই বুড়ো ছেলেকে সামলাতে হবে।
এর থেকে কাজ করাই ভালো। এই বুড়ো ভাম কেউ সামলাতে পারে,,,!!
!
আমিতো ভাবছি আদ্রিয়ান স্ট্যাচু হয়েই আছে আমার কথা শুনবেনা তাই জোরে জোরেই বলে ফেললাম।
কিন্তু কপাল খারাপ আমার, সামনে তাকিয়ে দেখি চোখদুটো বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।
ভয়ে ঢোক গিললাম,,,, রুম থেকে পালিয়ে আসতে যাবো,, তখনই হাত টান দিয়ে আমায় কাছে নিলো।
!
এই কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা!!! যেকোনো সময়ে সুযোগ পেলেই টানাটানি শুরু করে দেয়,,,,হাত-পা যেন কখন ছিড়ে যায় কে জানে।
~~আআআমি কককিছু দেখিনি। চোখে হাত দিয়ে কথাগুলো বললো এনা।
আর দিনে-দুপুরে এভাবে রোমাঞ্চ করলে দড়জা লাগিয়ে রাখতে হয় জানোনা।
আদ্রিয়ান ঃ ওই দড়জা নক করে আসতে পারোনা,,,,শয়তানের নানি।
এনাঃ কে জানবে যে তোরা এখন এভাবে,,,,,,।আচ্ছা বাদ দে,,, আমি শয়তানের নানি হলে তুই শয়তান। আর আমি তোর নানি।
এনা আপুর কথাশুনে মাটি দুইভাগ করে তার মধ্যে যেতে ইচ্ছে করছে। বজ্জাতটি দড়জা তো লাগিয়ে লুচুগিরি করতে পারতো।
_____________________________
বিকেলে ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। আমি উপরে আসতে চাইছি কিন্তু রোহানা আন্টি জোর করে তার পাশে বসাইছে,,,।
রিয়া ও রাহিমা আন্টি মুখ গোমড়া করে আছে এখনও,,,হয়তো আমার প্রতি এত কেয়ার তাদের পছন্দ না।
মাসুদ আংকেল চুপচাপ খবরের কাগজ পড়ছেন। এবং বারবার সামনের সবার দিকে তাকাচ্ছেন। বিশেষ করে আদ্রিয়ানের দিকে কিছুক্ষন পরপরই।
!
হঠাৎই আদ্রিয়ানের কথায় সবাই চমকে উঠলো,,,,,
আদ্রিয়ান যে এমনকিছু বলতে পারে তা হয়তো কেউই ভাবেনি। কিন্তু সম্মুখে প্রকাশ না করতে পারলেও মাসুদ সাহেব বেশ খুশি হলেন।
#চলবে